খালেদার মামলার আইনী কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বৃটেন
সাবেক
প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার আইনী
কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বৃটেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও
আইনের শাসনের প্রতি আস্থা স্থাপনের জন্য অবশ্যই যা করণীয় তা হলো, বাংলাদেশে
ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা হতে হবে পক্ষপাতহীন। তাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে
যেকোন পদক্ষেপ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাতে নেয়া হয় এমনটা
প্রত্যাশা বৃটেনের। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক যে অধিকার পায়,
খালেদা জিয়াকেও যেন সেই অধিকার দেয়া হয়। বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ
হাউজ অব লর্ডসে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেছেন কমনওয়েলথ ও পররাষ্ট্র
বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস জয়সে অ্যানিলে। গত ১৭ই মার্চ তার কাছে লিখিত
প্রশ্নে লর্ড অ্যাভাবুরি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চান। তিনি
প্রশ্নে বলেনÑ গত ১১ই মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খালেদার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে বিষয়ে বৃটিশ সরকারের অবস্থান কি।
বুধবার ২৫শে মার্চ হাউজ অব লর্ডসে তার এ প্রশ্নের উত্তর দেন ব্যারোনেস
অ্যানিলে। উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে
দুর্নীতির দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এক্ষেত্রে আইনগত
বিষয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও আইনের
শাসনের প্রতি আস্থা স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা
পক্ষপাতহীন হওয়া অত্যাবশ্যক। তারপরও আমরা আশা করি যে, খালেদার বিরুদ্ধে যে
কোন পদক্ষেপ নিতে হবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। বাংলাদেশের প্রতিটি
নাগরিক যে অধিকার ভোগ করেন খালেদা জিয়াকেও সে অধিকার দিতে হবে। এখানে
উল্লেখ্য, লর্ড অ্যাভাবুরি হাউজ অব লর্ডসের প্রভাবশালী সদস্য। পার্বত্য
চট্টগ্রাম (সিএইচটি) কমিশনের সহ-সভাপতি তিনি। এই কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে
শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। উল্লেখ্য, এর আগে লর্ড
অ্যাভাবুরির ২৩শে ফেব্রুয়ারির এক প্রশ্নের জবাবে ৯ই মার্চ ব্যারোনেস লর্ড
অ্যানিলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততাকে অব্যাহতভাবে
উৎসাহিত করে যুক্তরাজ্য। দেশব্যাপী সহিংসতা ও উত্তেজনার অবসানে সব দলকে
একে অন্যের ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যারোনেস অ্যানিলের কাছে লর্ড অ্যাভাবুরি জানতে চান, জাতিসংঘ মহাসচিব বান
কি মুনের কাছে যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি প্রস্তাব দেবে কিনা,
যাতে বলা হবে বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন
মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে আমন্ত্রণ জানাতে
বলা হবে কিনা, যাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারে।
তাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর হয়। জবাবে ব্যারোনেস অ্যানিলে বলেন,
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী
দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন চিঠি লিখেছেন।
এ খবর পেয়েছি আমরা। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অন্যদিকে, বাংলাদেশী
বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক ও ব্লগার অভিজিত হত্যাকা- নিয়েও ওইদিন আলোচনা হয়
বৃটিশ পার্লামেন্টে। এ নিয়ে ৯ই মার্চ প্রশ্ন করেন লিভারপুরের লর্ড
অ্যাল্টন। তিনি জানতে চান, ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ১৮
অনুচ্ছেদের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে
বৃটিশ সরকার তার অবস্থান জানিয়েছে কিনা? এদিনই তার এ প্রশ্নের উত্তর দেন
ব্যারোনেস অ্যানিলে। তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারের বিষয়গুলো অত্যন্ত
গুরুত্বের সঙ্গে নিই। বিশ্বাসযোগ্য কোন অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে
আমরা তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছি। আমরা আহ্বান জানাই সকল ঘটনা যেন দ্রুত,
স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়। ২০১৩’র ২৯শে এপ্রিল,
মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের ২য় ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ে ঝুঁকির
মুখে থাকা দলগুলোকে সুরক্ষা করতে আরও বেশি কিছু করতে বাংলাদেশ সরকারের
প্রতি আহবান জানায় যুক্তরাজ্য। মার্কিন নিবাসী অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা- এবং
তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় বৃটেনের তরফ থেকে
উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার।
No comments