থানাহাজতে গেদার সঙ্গ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন স্ত্রী নূরজাহান by ওয়েছ খছরু
থানাহাজতে
সোর্স গেদার সঙ্গ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তার স্ত্রী নূরজহান বেগম।
বলেছিলেন, ‘আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। ওদের নিয়ে আমি কোন খুনির সঙ্গে থাকতে
পারি না। প্রয়োজনে গেদার সঙ্গ ত্যাগ করে ফেলবো।’ পুলিশের সন্দেহের কারণে এক
রাত থানাহাজতে ছিলেন নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি পুলিশের কাছেও স্বীকার
করেছিলেন, ‘২-৩ দিন ধরে গেদাকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছিল। আমি বারবার কারণ
জানতে চেয়েছি। কিন্তু গেদা কিছুই বলেনি।’ পুলিশের তদন্তে অপহরণ ও খুনের
ঘটনার সঙ্গে স্ত্রী নূরজাহানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায়
থানাহাজত থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু হাজতে দেয়া কথা রাখেননি
নূরজাহান। ১৪ই মার্চ নগরীর রায়নগর ঝেরঝেরিপাড়ার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের
বাসা থেকে স্কুলছাত্র আবু সাঈদের লাশ উদ্ধারের দিনই পুলিশ আটক করেছিল
র্যাবের কথিত সোর্স আতাউর রহমান গেদা মিয়াকে। পরে পুলিশ গেদার স্ত্রী
নূরজাহান বেগমকেও আটক করে। গেদা মিয়ার মূল বাড়ি ছাতক উপজেলার মঈনপুর
গ্রামে। তার পিতা মৃত হাবিবুর রহমান। সিলেট নগরীর ঝরনার পাড় আবাসিক এলাকার
৭২ নম্বর জামাল উদ্দিন ও লুৎফুর রহমানের মালিকানাধীন বাসার নিচ তলায় সে
বসবাস করতো। পুলিশ ওই বাসা থেকে আটক করেছিল গেদার স্ত্রীকে। প্রথমেই
পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল এ ঘটনার সঙ্গে গেদার স্ত্রী নূরজাহানের সম্পৃক্ততা
থাকতে পারে। থানায় নিয়ে পুলিশ নূরজাহানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ
জানিয়েছে, থানাহাজতে গেদার মতো গেদার স্ত্রী প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্তি
করার চেষ্টা চালায়। তবে, শেষ মুহূর্তে নূরজাহান তার তিনটি সন্তান রয়েছে বলে
জানিয়েছে। ওই তিনটি সন্তানকে এত দিন গেদাই লালনপালন করতো। এখন থেকে তিনি
লালনপালন করবেন। আর খুনি গেদার সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না। এ সময় পুলিশের
কাছে নূরজাহান নিজেকে সন্তানসম্ভাবা বলেও দাবি করেন। গত দুই-তিন ধরে
গেদাকে বেশ অস্থির দেখাতো দাবি করেন নূরজাহান। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গেদা
সেটিও এড়িয়ে যান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা গতকাল জানিয়েছেন,
ঘটনার সঙ্গে গেদার স্ত্রী নূরজাহানের সম্পর্কের কোন প্রমাণ মিলেনি। এ কারণে
তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে গেদাকে যখন আদালতে আনা-নেয়া হতো তখন আদালতের
হাজতখানায় ছুটে যেতেন নূরজাহান। কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে অনেকটা
নির্বিঘ্নেই আদালত প্রাঙ্গণে ছুটে যান তিনি। এ সময় সাংবাদিকরা গেদার ছবি
তুলতে ভিড় জমালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নূরজাহান। তার স্বামীর ছবির না
তোলার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে টাকা দেবে বলেও ‘অফার’
করে। গেদার স্ত্রীর এমন আচরণে সাংবাদিকরা বিব্রত হন। গেদাকে যখন শেষ দিন
আদালতে হাজির করা হয় তখন সাংবাদিকরা নুরজাহানের ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন।
আর এ বিষয়টি বুঝে ফেলায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গা-ঢাকা দেয় নূরজাহান। ওদিকে
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এবাদুর ও রাকিব জানিয়েছিল,
অপহরণের পর প্রথমে গেদার বাসায় নেয়া হয়েছিল স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে। শিশু
সাঈদ অপহরণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে নূরজাহানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশ না
পেলেও আগে গেদার অনেক অপরাধের সঙ্গে নূরজাহানের সম্পৃক্ততা ছিল। গেদা
গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে নূরজাহানের উগ্র আচরণের বিষয়টি এলাকায় রটছে। আর
ঘটনার পর থেকে ভাড়াটে বাসা ছেড়ে অন্যত্র রয়েছে নূরজাহান। থানাহাজত থেকে
ছাড়া পাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে কাউকে না বলেই ঝরনার পাড় বাসা থেকে চলে
গেছে। ১১ দিন ধরে আর ওই এলাকায় যাচ্ছেন না নূরজাহান। তবে, ওই বাসায় এখনও
মালপত্র রয়ে গেছে। ঝরনারপাড় এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গেদার স্ত্রী নূরজাহান
ঝরনারপাড় এলাকায় স্বামীর দাপটে বেশ প্রভাব খাটাতো। এদিকে, রায়নগর,
ঝরনারপাড়, ঝেরঝেরিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন সময় ইভটিজিংসহ নানা
ঘটনায় অসহায় মানুষদের ফাঁসানো হতো। এরপর পুলিশের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়
টাকাও। এলাকার ছত্তার মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে নানা অজুহাতে ২০
হাজার হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান এলাকার মানুষ।
No comments