নারীর ক্ষমতায়নে পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক শিক্ষা জরুরি by নাসরীন গীতি
শুরু
করতে হচ্ছে নজরুলের কবিতার সেই জনপ্রিয় দু’টি পংক্তি দিয়েই- “কোন কালে একা
হয়নিক’ জয়ী পুরুষের তরবারী, শক্তি দিয়াছে প্রেরণা দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী
নারী”। আমাদের জাতীয় কবির উপলব্ধিতে এত শক্তিধর যে নারী তার ক্ষমতায়ন
প্রসঙ্গে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বারবার কেন আওয়াজ তুলতে হচ্ছে? অনেক ভাবনার
পর, বিভিন্ন জনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পর, খুঁজে পাওয়া গেল কারণ
একটাই, যথার্থ শিক্ষার ঘাটতি। কেননা এই শিক্ষার সাথেই জড়িয়ে আছে তার
বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশ। সেইসাথে নিজের অবস্থান দৃঢ় করা। তবে সোজাভাবে যা
বলছি, বিষয়টি এত সহজে বুঝার নয়। এর গভীরতা খুঁজতে দ্বারস্থ হতে হবে
ইতিহাসের এবং সভ্যতার শুরুর সেইক্ষণের।
বলছি মানব জাতির ইতিহাসের শুরুর দিকের কথা। সেই সময় একজন নারীই ছিলেন সবচেয়ে বেশি শক্তিধর। কারণ নারী শিশুপালন, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে শিকারও করতেন। এইজন্য সেইসময় নেতৃত্বে ছিলেন নারী। কিন্তু কালক্রমে পুরুষের মাথায় একটি বিষয়ে ত্বরিৎ বুদ্ধি খেলে গেল যে, নারী যখন সন্তান ধারণ করে ও জন্ম দেয় তখন অনেকটা সময় সে শিকারে যেতে পারে না। পুরুষ সঙ্গীটিই তার খাদ্যের যোগানদাতা হন সেইসময়টুকুর জন্য। তখন তারা একটি পরিকল্পনা করলো যে, পুরুষের যেহেতু এই ঝামেলা নেই, তাই তারাই শিকার করবে আর নারীরা গৃহস্থালীর কাজ ও সন্তান লালন-পালন করবে। এই ভাবনাতেই এগুতে থাকলো আমাদের পুরুষ সমাজ। আর প্রতিনিয়ত পশু শিকার করতে গিয়ে দিনকে দিন নানা কৌশল অবলম্বন করতে করতে, এক পর্যায়ে নারীদের করে দিল অন্দরমহলের বাসিন্দা। ধীরে ধীরে নারীরাও ভুলে যেতে থাকলেন নানা কৌশলে কাজ করা। আর তখনই গোত্রপতি বা সমাজপতি হয়ে উঠতে থাকলেন পুরুষরা। ভেঙ্গে পড়ে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। গড়ে উঠে পুরুষতন্ত্র। সেই থেকে তারা নারীদের করে রাখছেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ধরেই নেয়া হয়, তার কোন বুদ্ধি নেই, বিবেচনা নেই।
অথচ, ইতিহাস ঘাটলে প্রায়শই দেখা যাবে নারী যখনই কোন শীর্ষ স্থানে ছিলেন, কিংবা নেতৃত্বে গেছেন- নিজ গুণেই তাতে তিনি সফল হয়ে উঠেন। আর তার বহি:প্রকাশ এখনও দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়। নারীরা যেখানেই সুযোগ পান সেখানেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন - কি ঘরে, কি বাইরে। উপমহাদেশের নারী নেত্রী ইলা মিত্র দেখিয়েছেন কী ভাবে পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার দেখিয়েছেন কী ভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। বর্তমান বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান। দেশে সরকার প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী এখন নারী। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রধান হিসেবেও বাংলাদেশে নারীদের স্থান লক্ষ্যণীয়।
আয়না- একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী। ছোট বেলাতে বেড়েও উঠেছেন শিক্ষিত আর সচেতন মানুষের সংস্পর্শে। বর্তমানে সে একজন সফল পেশাজীবী। ঘরেও সুগৃহিণী। সবকিছুই ঠিকঠাক দেখতে চান তিনি। সেইভাবে কাজও করেন। তবে শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় তার এ উন্নতি হয়েছে তা নয়, শিখেছেন পরিবার, পরিজন আর সমাজ থেকেও। যখন বাইরের জগতে বেরিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তই আয়না শিখেছেন কিভাবে সবার মাঝে নিজের আসন তৈরি করতে হয়। সবার মতকে আমলে নিয়ে নিজের মতের প্রতিফলন ঘটানোর কায়দাও তিনি রপ্ত করেছেন বিভিন্ন ধাপে নানাজনের সাথে মিশে। নারীর নিজস্ব পরিচয় তথা স্বকীয়তার জন্য এই শিক্ষাটাই নিতে হবে সবার আগে।
এরকম একটা বোধ থেকেই আমাদের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বেরিয়ে এসেছিলেন পথে। চার দেয়ালের বেষ্টনি আর পর্দা প্রথার কড়া বিধি-নিষেধের সময় নিজের তাগিদ থেকেই শিক্ষা অর্জনে মনোনিবেশ করেন তিনি। বাবার কড়া নিষেধ উপেক্ষা করে বড় দু’ভাই, পরবর্তীতে স্বামীর সহযোগিতায় কিশোরী রোকেয়া নিজের মধ্যে জ্বেলেছেন জ্ঞানের আলো। স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, নারীমুক্তি তথা নারীর উন্নতির জন্য প্রথমেই দরকার আদর্শ ও প্রকৃত শিক্ষা। কিন্তু কিভাবে এই বোধ জাগাবেন অন্দর মহলের রন্ধনশিল্পীদের মনে। শুরু করেন লড়াই। নিজে সফলও হন। কিন্তু প্রায় দুই শতাব্দী পেরিয়ে এলেও আমরা এখনও সেই রোকেয়ার শুরুর জগতেই আছি বলেই মনে হয়।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন, দীর্ঘদিনের অনভ্যাসবশত মেয়েদের বেশিরভাগই এখন আর পরিশ্রম করতে চান না। এই আধুনিক সভ্যতায়ও অনেক নারীকে বলতে শোনা যায় যে, এত পড়ালেখা করে দরকার কি? আমি তো স্বামীর ঘাড়ে বসেই খাব। আবার কেউ কেউ পুঁথিগত শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মনের আসল শিক্ষাটি অর্জন করেননি। অথচ একজন নারীকে সংসার সামলিয়ে অফিস-আদালত করতে হচ্ছে। যাদের এইসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার উপযুক্ত শিক্ষাটা অর্জিত হয় নি, তারা ঘরকন্যার কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠেন, আবার অনেকে শুধু বাইরের কর্মক্ষেত্র সামলিয়েই অস্থির হয়ে উঠেন। তবে এখন অনেকটাই এ ব্যাপারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ এখন অনেকেই নিজের বিকাশে পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক জ্ঞানটা প্রথমেই পরিবার থেকে এবং পরে বন্ধু, প্রতিবেশি থেকে আহরণ করে নেন।
উর্মি লোহানী, গুণীজন ফাউন্ডেশনের কর্ণধার। যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপশি জন্ম থেকেই পরিবেশটা পেয়েছেন জ্ঞান আহরণের। তারপরও কর্মক্ষেত্রে এসে অনেকের কাছে শুনতে হয়েছে এটা তুমি পারবে না, ওটা ওকে দিয়ে হবে না ইত্যাদি নানা কথা। অতঃপর নিজের যোগ্যতা আর শিক্ষা দিয়েই অর্জন করে চলেছেন সফলতার অভিজ্ঞতা। এই উদীয়মান সফল ব্যক্তিত্ব উর্মিও বিশ্বাস করেন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক শিক্ষাটা দরকার সবার আগে। আর নারীর ক্ষমতায়ন কার্যকর করতে বাস্তবিক অর্থে পুরুষদেরও এ ব্যাপারে জ্ঞান থাকা জরুরি বলে মনে করেন ঊর্মি। কেননা শুধু সমাজে তো নারীর একা বিচরণ নয়!
অনেকে আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে বলেন যে, নারীশিক্ষা ও বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন কোন তথ্য পবিত্র কুরআন শরীফে তো না-ই, ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ আছে এটা কেউই বলতে পারবে না। কারণ কোরআন শরীফেই জ্ঞানচর্চার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেখানে কোথাও বলা হয়নি শিক্ষা শুধু পুরুষের জন্য। আবার ইসলামে নারীর ক্ষমতায়নেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কোরআন শরীফেই বলা হয়েছে, মেয়েরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। আর তাতে যে আয় হবে, তা মেয়েদের নিজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে। কোরআন শরীফের চার নম্বর সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নারীর আয় নারীর, পুরুষের আয় পুরুষের। এতো গেল নারীর ক্ষমতায়নের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী।
এদিকে, সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বহুল প্রচলিত সেই উক্তিটিও কিন্তু অর্থবহ। তিনি বলেছিলেন-একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। তাই যুগের সাথে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নারী শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর শুধু গ্রন্থগত বিদ্যা নয়, দরকার সামাজিক শিক্ষাও। আর এই দুইয়ের সমন্বয়েই সমাজ-দেশ হবে উন্নত। গঠিত হবে সুস্থ জাতি। কারণ প্রচলিত প্রবচনটি সবারই জানা- যে হাত দোলনা দোলায়, সে হাত বিশ্ব শাসন করে।
লেখক: সিনিয়র নিউজরূম এডিটর, বাংলাভিশন
বলছি মানব জাতির ইতিহাসের শুরুর দিকের কথা। সেই সময় একজন নারীই ছিলেন সবচেয়ে বেশি শক্তিধর। কারণ নারী শিশুপালন, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে শিকারও করতেন। এইজন্য সেইসময় নেতৃত্বে ছিলেন নারী। কিন্তু কালক্রমে পুরুষের মাথায় একটি বিষয়ে ত্বরিৎ বুদ্ধি খেলে গেল যে, নারী যখন সন্তান ধারণ করে ও জন্ম দেয় তখন অনেকটা সময় সে শিকারে যেতে পারে না। পুরুষ সঙ্গীটিই তার খাদ্যের যোগানদাতা হন সেইসময়টুকুর জন্য। তখন তারা একটি পরিকল্পনা করলো যে, পুরুষের যেহেতু এই ঝামেলা নেই, তাই তারাই শিকার করবে আর নারীরা গৃহস্থালীর কাজ ও সন্তান লালন-পালন করবে। এই ভাবনাতেই এগুতে থাকলো আমাদের পুরুষ সমাজ। আর প্রতিনিয়ত পশু শিকার করতে গিয়ে দিনকে দিন নানা কৌশল অবলম্বন করতে করতে, এক পর্যায়ে নারীদের করে দিল অন্দরমহলের বাসিন্দা। ধীরে ধীরে নারীরাও ভুলে যেতে থাকলেন নানা কৌশলে কাজ করা। আর তখনই গোত্রপতি বা সমাজপতি হয়ে উঠতে থাকলেন পুরুষরা। ভেঙ্গে পড়ে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। গড়ে উঠে পুরুষতন্ত্র। সেই থেকে তারা নারীদের করে রাখছেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ধরেই নেয়া হয়, তার কোন বুদ্ধি নেই, বিবেচনা নেই।
অথচ, ইতিহাস ঘাটলে প্রায়শই দেখা যাবে নারী যখনই কোন শীর্ষ স্থানে ছিলেন, কিংবা নেতৃত্বে গেছেন- নিজ গুণেই তাতে তিনি সফল হয়ে উঠেন। আর তার বহি:প্রকাশ এখনও দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়। নারীরা যেখানেই সুযোগ পান সেখানেই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন - কি ঘরে, কি বাইরে। উপমহাদেশের নারী নেত্রী ইলা মিত্র দেখিয়েছেন কী ভাবে পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার দেখিয়েছেন কী ভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। বর্তমান বাংলাদেশেও নারীর ক্ষমতায়ন দৃশ্যমান। দেশে সরকার প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী এখন নারী। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রধান হিসেবেও বাংলাদেশে নারীদের স্থান লক্ষ্যণীয়।
আয়না- একজন উচ্চ শিক্ষিত নারী। ছোট বেলাতে বেড়েও উঠেছেন শিক্ষিত আর সচেতন মানুষের সংস্পর্শে। বর্তমানে সে একজন সফল পেশাজীবী। ঘরেও সুগৃহিণী। সবকিছুই ঠিকঠাক দেখতে চান তিনি। সেইভাবে কাজও করেন। তবে শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় তার এ উন্নতি হয়েছে তা নয়, শিখেছেন পরিবার, পরিজন আর সমাজ থেকেও। যখন বাইরের জগতে বেরিয়েছেন প্রতিটি মুহূর্তই আয়না শিখেছেন কিভাবে সবার মাঝে নিজের আসন তৈরি করতে হয়। সবার মতকে আমলে নিয়ে নিজের মতের প্রতিফলন ঘটানোর কায়দাও তিনি রপ্ত করেছেন বিভিন্ন ধাপে নানাজনের সাথে মিশে। নারীর নিজস্ব পরিচয় তথা স্বকীয়তার জন্য এই শিক্ষাটাই নিতে হবে সবার আগে।
এরকম একটা বোধ থেকেই আমাদের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বেরিয়ে এসেছিলেন পথে। চার দেয়ালের বেষ্টনি আর পর্দা প্রথার কড়া বিধি-নিষেধের সময় নিজের তাগিদ থেকেই শিক্ষা অর্জনে মনোনিবেশ করেন তিনি। বাবার কড়া নিষেধ উপেক্ষা করে বড় দু’ভাই, পরবর্তীতে স্বামীর সহযোগিতায় কিশোরী রোকেয়া নিজের মধ্যে জ্বেলেছেন জ্ঞানের আলো। স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, নারীমুক্তি তথা নারীর উন্নতির জন্য প্রথমেই দরকার আদর্শ ও প্রকৃত শিক্ষা। কিন্তু কিভাবে এই বোধ জাগাবেন অন্দর মহলের রন্ধনশিল্পীদের মনে। শুরু করেন লড়াই। নিজে সফলও হন। কিন্তু প্রায় দুই শতাব্দী পেরিয়ে এলেও আমরা এখনও সেই রোকেয়ার শুরুর জগতেই আছি বলেই মনে হয়।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন, দীর্ঘদিনের অনভ্যাসবশত মেয়েদের বেশিরভাগই এখন আর পরিশ্রম করতে চান না। এই আধুনিক সভ্যতায়ও অনেক নারীকে বলতে শোনা যায় যে, এত পড়ালেখা করে দরকার কি? আমি তো স্বামীর ঘাড়ে বসেই খাব। আবার কেউ কেউ পুঁথিগত শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মনের আসল শিক্ষাটি অর্জন করেননি। অথচ একজন নারীকে সংসার সামলিয়ে অফিস-আদালত করতে হচ্ছে। যাদের এইসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার উপযুক্ত শিক্ষাটা অর্জিত হয় নি, তারা ঘরকন্যার কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠেন, আবার অনেকে শুধু বাইরের কর্মক্ষেত্র সামলিয়েই অস্থির হয়ে উঠেন। তবে এখন অনেকটাই এ ব্যাপারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ এখন অনেকেই নিজের বিকাশে পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক জ্ঞানটা প্রথমেই পরিবার থেকে এবং পরে বন্ধু, প্রতিবেশি থেকে আহরণ করে নেন।
উর্মি লোহানী, গুণীজন ফাউন্ডেশনের কর্ণধার। যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপশি জন্ম থেকেই পরিবেশটা পেয়েছেন জ্ঞান আহরণের। তারপরও কর্মক্ষেত্রে এসে অনেকের কাছে শুনতে হয়েছে এটা তুমি পারবে না, ওটা ওকে দিয়ে হবে না ইত্যাদি নানা কথা। অতঃপর নিজের যোগ্যতা আর শিক্ষা দিয়েই অর্জন করে চলেছেন সফলতার অভিজ্ঞতা। এই উদীয়মান সফল ব্যক্তিত্ব উর্মিও বিশ্বাস করেন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক শিক্ষাটা দরকার সবার আগে। আর নারীর ক্ষমতায়ন কার্যকর করতে বাস্তবিক অর্থে পুরুষদেরও এ ব্যাপারে জ্ঞান থাকা জরুরি বলে মনে করেন ঊর্মি। কেননা শুধু সমাজে তো নারীর একা বিচরণ নয়!
অনেকে আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে বলেন যে, নারীশিক্ষা ও বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন কোন তথ্য পবিত্র কুরআন শরীফে তো না-ই, ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ আছে এটা কেউই বলতে পারবে না। কারণ কোরআন শরীফেই জ্ঞানচর্চার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেখানে কোথাও বলা হয়নি শিক্ষা শুধু পুরুষের জন্য। আবার ইসলামে নারীর ক্ষমতায়নেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কোরআন শরীফেই বলা হয়েছে, মেয়েরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। আর তাতে যে আয় হবে, তা মেয়েদের নিজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে। কোরআন শরীফের চার নম্বর সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নারীর আয় নারীর, পুরুষের আয় পুরুষের। এতো গেল নারীর ক্ষমতায়নের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী।
এদিকে, সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বহুল প্রচলিত সেই উক্তিটিও কিন্তু অর্থবহ। তিনি বলেছিলেন-একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। তাই যুগের সাথে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নারী শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর শুধু গ্রন্থগত বিদ্যা নয়, দরকার সামাজিক শিক্ষাও। আর এই দুইয়ের সমন্বয়েই সমাজ-দেশ হবে উন্নত। গঠিত হবে সুস্থ জাতি। কারণ প্রচলিত প্রবচনটি সবারই জানা- যে হাত দোলনা দোলায়, সে হাত বিশ্ব শাসন করে।
লেখক: সিনিয়র নিউজরূম এডিটর, বাংলাভিশন
No comments