একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে বোমাবাজ, সিলেটে আতঙ্ক by ওয়েছ খছরু
যেখানেই জটলা, সেখানেই ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। চালাচ্ছে ধরপাকড়। মোটরসাইকেল, লেগুনা ও মাইক্রোবাসে করেই চলছে এ ধরপাকড় অভিযান। এতে করে শুধু বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরেরই নয় সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। সন্ধ্যা নামলেই লোক চলাচলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে রাস্তায়। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। অন্যদিকে, নাশকতা ঠেকাতে সিলেটে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। খোদ মহানগরীতে প্রতিদিন গড়ে বিএনপি ও জামায়াতের ১৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিএনপি ও জামায়াত বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন, মাঠের রাজনীতি বানচাল করতে ইতিমধ্যে পুলিশ শীর্ষ ২০ নেতা সহ সিলেটের ২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে একাধিক মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। গতকাল দিনেও পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এতে করে আন্দোলনের মাঠ হয়ে পড়ছে ফাঁকা। আর যারা বাইরে আছেন তারাও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গতকাল বেলা দুইটায় নগরীর শেখঘাট কলোনির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন ছাত্র। তারা খাট কিনতে সেখানে আসেন। এমন সময় পুলিশের মোটরসাইকেল পার্টি তাদের ঘিরে ফেলে। এতে করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। পুলিশ তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। এদিকে, পুলিশ চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্ররা আর বেশি সময় সেখানে অবস্থান করেনি। এভাবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মানুষের জটলা দেখলেই পুলিশ গিয়ে হাজির। পুলিশি জেরার মুখে পড়েছেন সাধারণ মানুষও। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তারা বাইরে এলেই পুলিশি জেরার কিংবা ধরপাকড়ের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রোববার ওসমানীনগর থেকে সিলেট শহরে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সিলেট শহরে এসেছিলেন দুই মাদরাসা ছাত্র। তারা বন্দরবাজার এলাকা থেকে খেলার সামগ্রী ক্রয় করছিলেন। এমন সময় পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। ওই রাতে টাকা দিয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানা হাজত থেকে তারা মুক্তি পান। এভাবেই গোটা নগরীতে সন্দেহের ভিত্তিতে ধরপাকড় চালাচ্ছে পুলিশ। পরে যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্দোষ হলেও টাকার বিনিময়ে থানা হাজত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন তারা। পুলিশের এ ধরপাকড়ে সিলেটে পাড়া-মহল্লায় রীতিমত আতঙ্ক নেমে এসেছে। একে তো হরতাল। রাস্তাঘাটে থমথমে পরিস্থিতি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। পাশাপাশি পুলিশের ধরপাকড়ে রীতিমত আতঙ্ক নেমে এসেছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। পুলিশের এ অভিযানের পাশাপাশি গোটা শহরজুড়েই বিরাজ করছে ককটেল আতঙ্ক। সিলেট নগরীতে পুলিশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেও ককটেল পার্টির কারণে ভয়কাতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। সোমবার বিকালে নগরীর বারুতখানা এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা পরপর ৫টি ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়। নগরীর স্টেডিয়াম এলাকায় ককটেলবাজির সময় দায়িত্ব পালন করছিলেন দৈনিক সিলেটের ডাকের সিনিয়র ফটো সাংবাদিক আব্দুল বাতিন ফয়সল। দুবর্ৃৃত্তরা তার ওপর ককটেল ছুড়ে মারে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনি আহত হন। এর আগে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় দৈনিক উত্তরপূর্বের ফটো সাংবাদিক নুরুল ইসলামের পায়ে ককটেল ছুড়ে মেরেছিলো দুর্বৃত্তরা। এতে তিনিও গুরুতর আহন হন। পাশাপাশি অবিরাম ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রতিদিনই ৪-৫জন সাধারণ মানুষ গুরুতর আহত হন। পাশাপাশি হাইওয়ে এলাকাগুলোতে নিয়মিত চলছে পেট্রলবোমা হামলা। গেলো কয়েক দিনে সিলেটে অন্তত ১০টি যানবাহন পেট্রলবোমায় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে দুই জন ট্রাকচালক দগ্ধ হয়ে মারাও গেছেন। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মরণযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আহতরা। পুলিশের অভিযান জোরদার করা হলেও নাগরিক স্বস্তির জন্য ককটেল কিংবা পেট্রলবোমা হামলাকারীদের রুখা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে সিলেটের জনমনে ক্ষোভও বাড়ছে। ইতিমধ্যে সহিংসতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসছে মানুষ। জীবন হুমকির মুখে রেখেও চালাচ্ছে আন্দোলন। গতকালও সিলেটে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করেছেন। বিএনপি ও জামায়াত বলয়ের নেতারা জানান, সিলেটের মাঠে আন্দোলন চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যে ২০০ নেতাকর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। বিএনপির মধ্যে এখন হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সিনিয়র অনেকেই কারাবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন বিএনপির সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। আর সিলেটে গ্রেপ্তার হন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম, মহানগর জামায়াত সভাপতি এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, মহানগর নেতা ফখরুল ইসলাম ফারুক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ময়নুল হক, ছাত্রদল নেতা আহমদ চৌধুরী ফয়েজ, মাহফুজুল করিম জেহিন, বিএনপি নেতা সেলিম আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল সহ অনেকেই। তারা আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। এদিকে, পুলিশ ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, এডভোকেট সামুজ্জামান জামান, আলী আহমদ, আজমল বখত সাদেক সহ অনেকেই বাসা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এসময় পুলিশ ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নেতারা। সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান গতকাল জানিয়েছেন, সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শ’ শ’ মামলা দেয়া হচ্ছে। যাকে যেখানেই পাচ্ছে গ্রেপ্তার করছে। রাতে বাসা বাড়িতে তল্লাশির নামে চালানো হচ্ছে অরাজকতা। তিনি বলেন, এ অবস্থায় বসে নেই বিএনপির কর্মীরা। আন্দোলনের সুফল পেতে সিলেটের রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, মামলা-হামলা চালিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে সেটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে, পুলিশের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিলেট পুলিশ নাশকতাকারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তারা বলেন, যারাই সিলেটে নাশকতা চালাতে চেষ্টা করবে তাদের রুখা হবে। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মো. রহমতুল্লাহ জানিয়েছেন, পুলিশ সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। যারাই শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে চাইবে পুলিশ তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
দিনে গ্রেপ্তার ১৪: সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০দলীয় জোটের ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মিছিল ও নাশকতার প্রস্তুতিকালে তাদেরকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রস্তুতিকালে আটক করা হয় মহানগর ছাত্রদল নেতা জাহেদ তালুকদারকে। জাহেদ তালুকদার চলমান অবরোধ ও হরতালে রাজপথে সক্রিয় থেকে প্রতিদিন মিছিল করছিলেন। এছাড়া, নগরীর জল্লারপাড় থেকে ৫ জন, কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড় থেকে ৬ জন ও বন্দরবাজারস্থ আবু তুরাব জামে মসজিদের সামনে থেকে ২ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন দিনার, রুহেল হোসেন, রাজন আহমদ, হাকিম আকিব, মিনহাজ আবেদীন, রিফাত আলম, নূর ইসলাম, আহমদ সাদী, মাসুদ রানা, আহমেদ জিলু, আলী আব্বাস ও জাহেদ আহমদ তালুকদার। সিলেট কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার সাজ্জাদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাশকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিনে গ্রেপ্তার ১৪: সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২০দলীয় জোটের ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মিছিল ও নাশকতার প্রস্তুতিকালে তাদেরকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রস্তুতিকালে আটক করা হয় মহানগর ছাত্রদল নেতা জাহেদ তালুকদারকে। জাহেদ তালুকদার চলমান অবরোধ ও হরতালে রাজপথে সক্রিয় থেকে প্রতিদিন মিছিল করছিলেন। এছাড়া, নগরীর জল্লারপাড় থেকে ৫ জন, কুমারপাড়া ঝর্ণারপাড় থেকে ৬ জন ও বন্দরবাজারস্থ আবু তুরাব জামে মসজিদের সামনে থেকে ২ জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন দিনার, রুহেল হোসেন, রাজন আহমদ, হাকিম আকিব, মিনহাজ আবেদীন, রিফাত আলম, নূর ইসলাম, আহমদ সাদী, মাসুদ রানা, আহমেদ জিলু, আলী আব্বাস ও জাহেদ আহমদ তালুকদার। সিলেট কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার সাজ্জাদ আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাশকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments