মোদি-ওবামার ফ্যাশন কূটনীতি by গৌতম লাহিড়ী
বারাক
ওবামা বলছিলেন, 'নিউইয়র্কের ম্যাডিসন গার্ডেন স্কয়ারে মোদির অভ্যর্থনা
বলিউড স্টারের মতোই।' হায়দ্রাবাদ হাউসের ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক বৈঠকে তখনও
চোখে পড়েনি প্রধানমন্ত্রীর পিনস্ট্রাইপ সুটের দিকে। ক্যামেরাম্যানদের লেন্স
জুম করতেই নজরে পড়ল স্ট্রাইপগুলো আসলে মোদির নিজের নাম 'নরেন্দ্র দামোদর
দাস মোদি।' বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকজনই এমন সুট পরেন। আসলে এবার কূটনীতিতে
বিবৃতি-চুক্তির হিসেবি শব্দ-কমা-অর্থবহ ফুলস্টপের সঙ্গে লাগল রঙ। কূটনীতি
হলো রঙিন। এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে প্রেসিডেন্ট ওবামা-ফার্স্ট লেডি মিশেল হাতে
হাত ধরে যখন নামলেন, তখন নিউইয়র্কের ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার বিভু মহাপাত্র
টুইট করলেন ফার্স্ট লেডি উইথ মাই ডিজাইন। হাঁটু ছাড়ানো গাউনে কালো-সাদা
জ্যামিতিক প্রিন্ট আর নীল ফুলের মোটিফ। পালাম এয়ারফোর্স বিমানবন্দর থেকে
হায়দ্রাবাদ হাউস-রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজ-রাজপথের কুচকাওয়াজ থেকে রিয়াদের
জন্য প্লেনে ওঠা পর্যন্ত তিন দিনের মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরল সফরের মধ্যে
মোদি বনাম ফার্স্ট লেডি মিশেলের নিঃশব্দ ফ্যাশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কূটনীতির
আঙিনা অতিক্রম করল। ভারতের কোনো সংবাদমাধ্যম এমন সাহস দেখায়নি। কিন্তু
পশ্চিমা সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-ওয়াশিংটন পোস্ট পাঠকদের মধ্যে কুইক
সমীক্ষা করে ঘোষণা করল, ফ্যাশনে মিশেল পরাজিত রাজনীতির সুপার মডেল মোদির
কাছে। সফররত হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের একজন বলছিলেন, এমন একটা চ্যালেঞ্জের
কথা মোদি গত বছর ওবামাকে বলে এসেছিলেন। বোধহয় এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোদি
বলছিলেন, 'আমি আর ওবামা ব্যক্তিগত বন্ধু। অনেক সময় টেলিফোনে গপ্পো করি,
হাসি, মজাও করি।' সন্ধ্যায় নৈশভোজের সময় ওবামা বলছিলেন, 'আপনারা জানেন কি?
মোদি ছেলেবেলায় কুমিরের মুখে পড়েছিল। লড়াই করে কোনো রকমে বেঁচে যায়। ও
আমাকে এই গল্প করেছে।'
ভারত-আমেরিকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চুলচেরা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে পণ্ডিত মহলে চর্চা চলবেই। কিন্তু এবারের সফরের মোদি-ওবামার সখ্য এক বাড়তি সংযোজন_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কূটনৈতিক দেনা-পাওনার ক্ষেত্রে বডি ল্যাংগুয়েজ এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে কূটনৈতিক মহলে এই নিয়ে ততটা উৎসাহ নেই। এক কূটনীতিবিদ বলেছিলেন, 'জর্জ বুশ একবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে করমর্দন করে বলেছিলেন, তার চোখেই তিনি নিজের হৃদয় দেখতে পান। কিন্তু তারপর শীতযুদ্ধের নামে এখনও ঘটছে_ তাতে বলতে হয় পুতিনের চোখেই বোধহয় 'সর্বনাশ' লেখা ছিল। নিয়ম বদলে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্ট পেঁৗছে গেলেন। মিশেল ওবামার পোশাক ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ফ্যাশন স্টেটমেন্ট' বলে ঝড় তুলে দিয়েছে। কিন্তু মোদি? ধূসর রঙের ফুলহাতা শার্ট-কঠিন রোমান কলারের কুর্তা। এটাই মোদি-কুর্তা। গায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এলোমেলো করা বুটিক প্রিন্ট গৈরিক শাল-আঁচলটা পার্সি ডিজাইন এমব্রয়ডারি। এমনটাই তিনি পরেছিলেন কাঠমান্ডুতে পরেশনাথ মন্দির দর্শনের সময়। এটাই শুভকর্মের বোধন-পোশাক।
জনতার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এমন পোশাকসচেতন রাজনৈতিক নেতা ইদানীং মেলা ভার। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলালের 'নেহরুর কুর্তার' পরে আর কোনো নেতার নামে কোনো পোশাক ব্র্যান্ড হয়েছে কি-না সন্দেহ। বহু নেতা-নেত্রীর পরিধান অনেক সময়েই ব্র্যান্ড হয়ে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নীল পাড়ের আঁচলের সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চপ্পল ছাড়া ভাবা যায় কি? সোনিয়া গান্ধীর শাড়ির ওয়ারড্রোব ফ্যাশন ডিজাইনারদের গবেষণার বিষয়। জয়ললিতার ফ্যান্সি স্যান্ডেল কিংবদন্তি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির সভা-মিটিং-কনভেনশন-সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার মধ্যে এক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে। ইদানীং কোনো জনসভায় বা রাষ্ট্রপতির ব্যাংকোয়েটে প্রধানমন্ত্রী মোদি কোন পোশাক পরবেন, তাই নিয়ে জল্পনা চলে। কখনও পুতিনের ব্যাংকোয়েটে লাল মাফলারের সঙ্গে ট্যুইড, কখনও পীত রঙের হালকা চালে উড়িয়ে দেওয়া স্কার্ফ। ধূসর হাঁস রঙের জ্যাকেট। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের দিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে উপস্থিত হলেন কালো গলাবন্ধ, মাথায় গুজরাতি 'বাঁধনি' পাগড়ি। লাল-সবুজ-কমলা রঙের সঙ্গে বিন্দু বিন্দু সাদা রঙ। ডাই করা হাতে বাঁধা পাগড়ি সাধারণত রাজস্থান ও গুজরাটের উৎসবের পোশাক। ভারতের ভোটারদের সিংহভাগ যুবা। সম্ভবত তাদের মনের ছোঁয়া পেতেই বোধ হয় রাজনীতিতে এমন রঙের দাঙ্গা লাগালেন মোদি।
প্রেসিডেন্ট ওবামার পোশাক সে তুলনায় অনেকটা সাদামাটা। বোধ হয় পোশাকের আভিজাত্য তার কাছে বেমানান। শিকাগো শহরে পুরনো পাড়ার একশ' বছরের বেশি সময়ের এক টেইলারিং শপ থেকেই এখনও তিনি সুট তৈরি করান। দুটি বোতাম খোলা একই ধরনের ডার্ক সুট পরেন বলে এটারও নাম হয়েছে ওবামা সুট। দিলি্লতে যে পোশাকে ওবামাকে দেখলাম সেটাই। সাদা শার্টের ওপরে কোট। গাঢ় নীল এবং লাল টাই। এবার দিলি্লতে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। না হলে অনেক সময়ে পরনের কোটটা খুলে ফুল শার্টের হাতা দুটি থ্রি-কোয়ার্টার গুটিয়ে নেন। স্লিম-বয়ের চেহারা। তাই বোধহয় এত জনপ্রিয়।
তবে এবার সুপার হিট মোদি। 'নেমসেক' ফিল্মের আমেরিকান অভিনেতা কাল পেনের কথা মনে আছে? কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্ট ওবামার সাংস্কৃতিক সচিব ছিলেন। এবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এসেছেন। হায়দ্রাবাদ হাউসের বাগানে মিটিংয়ের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে 'সেলফি' তুলে টুইট করে দিলেন_ 'ইন্ডিয়ান মোদির সঙ্গে আমেরিকার মোদি।' কাল পেনের আসল নাম সুরেশ কলপেন মোদি। একদা গুজরাটের বাসিন্দা। মোদি-ওবামার বৈঠক নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণ করে পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। কীভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে মুগ্ধ করলেন। তার একটা বিষয় হলো ফ্যাশন।
সমকাল প্রতিনিধি, নয়াদিলি্ল
ভারত-আমেরিকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চুলচেরা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে পণ্ডিত মহলে চর্চা চলবেই। কিন্তু এবারের সফরের মোদি-ওবামার সখ্য এক বাড়তি সংযোজন_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। কূটনৈতিক দেনা-পাওনার ক্ষেত্রে বডি ল্যাংগুয়েজ এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে কূটনৈতিক মহলে এই নিয়ে ততটা উৎসাহ নেই। এক কূটনীতিবিদ বলেছিলেন, 'জর্জ বুশ একবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে করমর্দন করে বলেছিলেন, তার চোখেই তিনি নিজের হৃদয় দেখতে পান। কিন্তু তারপর শীতযুদ্ধের নামে এখনও ঘটছে_ তাতে বলতে হয় পুতিনের চোখেই বোধহয় 'সর্বনাশ' লেখা ছিল। নিয়ম বদলে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশ্বের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্ট পেঁৗছে গেলেন। মিশেল ওবামার পোশাক ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ফ্যাশন স্টেটমেন্ট' বলে ঝড় তুলে দিয়েছে। কিন্তু মোদি? ধূসর রঙের ফুলহাতা শার্ট-কঠিন রোমান কলারের কুর্তা। এটাই মোদি-কুর্তা। গায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এলোমেলো করা বুটিক প্রিন্ট গৈরিক শাল-আঁচলটা পার্সি ডিজাইন এমব্রয়ডারি। এমনটাই তিনি পরেছিলেন কাঠমান্ডুতে পরেশনাথ মন্দির দর্শনের সময়। এটাই শুভকর্মের বোধন-পোশাক।
জনতার সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এমন পোশাকসচেতন রাজনৈতিক নেতা ইদানীং মেলা ভার। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলালের 'নেহরুর কুর্তার' পরে আর কোনো নেতার নামে কোনো পোশাক ব্র্যান্ড হয়েছে কি-না সন্দেহ। বহু নেতা-নেত্রীর পরিধান অনেক সময়েই ব্র্যান্ড হয়ে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নীল পাড়ের আঁচলের সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চপ্পল ছাড়া ভাবা যায় কি? সোনিয়া গান্ধীর শাড়ির ওয়ারড্রোব ফ্যাশন ডিজাইনারদের গবেষণার বিষয়। জয়ললিতার ফ্যান্সি স্যান্ডেল কিংবদন্তি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির সভা-মিটিং-কনভেনশন-সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার মধ্যে এক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে। ইদানীং কোনো জনসভায় বা রাষ্ট্রপতির ব্যাংকোয়েটে প্রধানমন্ত্রী মোদি কোন পোশাক পরবেন, তাই নিয়ে জল্পনা চলে। কখনও পুতিনের ব্যাংকোয়েটে লাল মাফলারের সঙ্গে ট্যুইড, কখনও পীত রঙের হালকা চালে উড়িয়ে দেওয়া স্কার্ফ। ধূসর হাঁস রঙের জ্যাকেট। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের দিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে উপস্থিত হলেন কালো গলাবন্ধ, মাথায় গুজরাতি 'বাঁধনি' পাগড়ি। লাল-সবুজ-কমলা রঙের সঙ্গে বিন্দু বিন্দু সাদা রঙ। ডাই করা হাতে বাঁধা পাগড়ি সাধারণত রাজস্থান ও গুজরাটের উৎসবের পোশাক। ভারতের ভোটারদের সিংহভাগ যুবা। সম্ভবত তাদের মনের ছোঁয়া পেতেই বোধ হয় রাজনীতিতে এমন রঙের দাঙ্গা লাগালেন মোদি।
প্রেসিডেন্ট ওবামার পোশাক সে তুলনায় অনেকটা সাদামাটা। বোধ হয় পোশাকের আভিজাত্য তার কাছে বেমানান। শিকাগো শহরে পুরনো পাড়ার একশ' বছরের বেশি সময়ের এক টেইলারিং শপ থেকেই এখনও তিনি সুট তৈরি করান। দুটি বোতাম খোলা একই ধরনের ডার্ক সুট পরেন বলে এটারও নাম হয়েছে ওবামা সুট। দিলি্লতে যে পোশাকে ওবামাকে দেখলাম সেটাই। সাদা শার্টের ওপরে কোট। গাঢ় নীল এবং লাল টাই। এবার দিলি্লতে বেশ ঠাণ্ডা ছিল। না হলে অনেক সময়ে পরনের কোটটা খুলে ফুল শার্টের হাতা দুটি থ্রি-কোয়ার্টার গুটিয়ে নেন। স্লিম-বয়ের চেহারা। তাই বোধহয় এত জনপ্রিয়।
তবে এবার সুপার হিট মোদি। 'নেমসেক' ফিল্মের আমেরিকান অভিনেতা কাল পেনের কথা মনে আছে? কিছুদিন আগেও প্রেসিডেন্ট ওবামার সাংস্কৃতিক সচিব ছিলেন। এবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এসেছেন। হায়দ্রাবাদ হাউসের বাগানে মিটিংয়ের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে 'সেলফি' তুলে টুইট করে দিলেন_ 'ইন্ডিয়ান মোদির সঙ্গে আমেরিকার মোদি।' কাল পেনের আসল নাম সুরেশ কলপেন মোদি। একদা গুজরাটের বাসিন্দা। মোদি-ওবামার বৈঠক নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণ করে পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। কীভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে মুগ্ধ করলেন। তার একটা বিষয় হলো ফ্যাশন।
সমকাল প্রতিনিধি, নয়াদিলি্ল
No comments