একটি মৃত্যু- অসংখ্য মানুষের মর্মবেদনা by মিলি যাকারিয়া
স্বাধীনতার
ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো
প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকারের রোষানলে পড়ে নানা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে
সাড়ে ছয় বছর মালয়েশিয়ায় নির্বাসন জীবন যাপন করছিলেন। অর্ধযুগেরও বেশি সময়
মাতৃস্নেহ ও ভালোবাসাবঞ্চিত কোকো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। চিন্তা করেছেন
মায়ের জন্য, ভাই-ভাবী, পরিজন ও দেশবাসীর জন্য। দুঃশাসনের স্মৃতি মন্থন করে
অবশেষে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুতে
বিএনপি পরিবার শুধু নয়, দেশের মানুষের মধ্যে শোকার্ত আবহ সৃষ্টি হয়।
বিদেশে অবস্থানরত স্বদেশীদের মাঝেও শোকের ছায়া নেমে আসে। বেগম জিয়া বেশ
কয়েকবার মূর্ছা গিয়েছেন। নামাজরত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা শোকাহত বিএনপি চেয়ারপারসনকে সমবেদনা জানানোর জন্য গুলশানে তার
অফিসে গিয়েছিলেন, কিন্তু বেগম জিয়াকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনজেকশন দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে রাখায় সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়েও এখন রাজনীতি হচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার দাবি জানানো হয়েছে; কিন্তু
কার কথা কে শোনে? অপপ্রচারের হোতাদের থামায় কে?
প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর জন্য খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে সাক্ষাতে শোকার্ত বেগম জিয়াকে কী বলতেন? তিনি কি এ কথা বলতেন যে, ‘আপনার ছেলেটা অনেক ভালো মানুষ ছিল, আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক। আপনার ছেলেটা বেঁচে থাকলে দেশের কল্যাণ বয়ে আনত। দেশ ও জাতি সম্ভাবনাময় এক কৃতী সন্তানকে হারাল।’ এসব কথা কি তিনি বলতে পারতেন? প্রায় এক যুগ ধরে তারা একটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন। এ বিষয়টি নিয়েই তিনি সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থেকেছেন। তার বেশির ভাগ ক্রোধ ও ভয়ই খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকে নিয়ে। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে। তারেক ও কোকোকে নিয়ে খিস্তিখেউর করতে গিয়ে আওয়ামী নেতারা মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছেন। খালেদা জিয়ার দুই পুত্র কুলাঙ্গার, চোর, বিদেশে টাকা পাচারকারী এসব বাক্য তো তাদের কাছে খুবই প্রিয়। দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা তাল মিলিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে অশ্লীল কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। কোকোর লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতির নতুন কৌশল আমরা দেখছি।
কোকো ছিলেন সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে বাবা রাজনীতি করতেন, একটি রাজনৈতিক দর্শনের স্রষ্টা। মা ও সহোদর রাজনীতিতে জড়িত। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে দেশ-জনগণ নিয়ে ভাবতেন। দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল। শান্ত মেজাজের ঝামেলাবিহীন মানুষ ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র হিসেবে মা খালেদা জিয়া হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তাকে লালন করেছেন। কিন্তু মৃত্যুকালে মা-ভাই কেউ-ই তার পাশে ছিলেন না। এটা মর্মান্তিক ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যে পরিবারটির সদস্যরা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে ও দেশ গঠনে কাজ করেছে, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে; সেই পরিবারের প্রতি খড়গ নেমে এসেছে। সেই পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীরা তামাশা করছেন।
কোকোর লাশ ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমে আসে। কান্নার রোল পড়ে যায়। শান্ত মেজাজের অতিশয় নিরীহ এ মানুষটিকে শেষ নজর দেখার জন্য উপস্থিত সবাই উদগ্রীব ছিলেন। পুলিশি বাধা, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ, নেতাকর্মীদের বিশাল উপস্থিতি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে লাশ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর অবিস্মরণীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। নেতাকর্মীদের কান্না, দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হয় কোকোর কফিন। মা খালেদা জিয়া কনিষ্ঠ পুত্রের লাশ দেখার সময় মর্মস্পর্শী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এমন দৃশ্য দেখে যেকোনো পাষাণহৃদয়ও গলে যায়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজার পর এত সুবিশাল জনসমাগম জাতি কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। পল্টন মোড়, জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত জানাজার লোকসমাগম ছিল কল্পনাতীত। জিয়া পরিবার জাতিকে যা কিছু দিয়েছে, জনগণ হয়তো তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই কোকোর নামাজে জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলেন। জিয়া-খালেদা জিয়া সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী কাজ করেছেন, মানুষের এমন ভালোবাসা দেখেই তা প্রমাণ হয়। সারা দেশে ছয় শতাধিক গায়েবানা জানাজা হয়েছে, যা ইতিহাসে বিরল। জিয়ার শাহাদত বরণের পরও সারা দেশে গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কোকোর ক্ষেত্রে সংখ্যার দিক দিয়ে শহীদ জিয়াকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন উপেক্ষা করে এমন জনস্রোত হবে তা কস্মিনকালেও কেউ ধারণা করেননি। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবতী যে, স্বচক্ষে জনতার সাগরের এই ঊর্মি দেখেছি, মানুষের ভালোবাসা দেখেছি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দেখেছি, দেখেছি বেদনাহত লাখো মানুষের ক্রন্দনরোল।
লেখিকা : সাংগঠনিক সম্পাদক
ঢাকা মহানগর মহিলা দল
প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর জন্য খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে সাক্ষাতে শোকার্ত বেগম জিয়াকে কী বলতেন? তিনি কি এ কথা বলতেন যে, ‘আপনার ছেলেটা অনেক ভালো মানুষ ছিল, আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক। আপনার ছেলেটা বেঁচে থাকলে দেশের কল্যাণ বয়ে আনত। দেশ ও জাতি সম্ভাবনাময় এক কৃতী সন্তানকে হারাল।’ এসব কথা কি তিনি বলতে পারতেন? প্রায় এক যুগ ধরে তারা একটি বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন। এ বিষয়টি নিয়েই তিনি সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থেকেছেন। তার বেশির ভাগ ক্রোধ ও ভয়ই খালেদা জিয়ার দুই পুত্রকে নিয়ে। অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের বিরুদ্ধে। তারেক ও কোকোকে নিয়ে খিস্তিখেউর করতে গিয়ে আওয়ামী নেতারা মাত্রাজ্ঞান হারিয়েছেন। খালেদা জিয়ার দুই পুত্র কুলাঙ্গার, চোর, বিদেশে টাকা পাচারকারী এসব বাক্য তো তাদের কাছে খুবই প্রিয়। দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা তাল মিলিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে অশ্লীল কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। কোকোর লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতির নতুন কৌশল আমরা দেখছি।
কোকো ছিলেন সম্পূর্ণরূপে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে বাবা রাজনীতি করতেন, একটি রাজনৈতিক দর্শনের স্রষ্টা। মা ও সহোদর রাজনীতিতে জড়িত। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে দেশ-জনগণ নিয়ে ভাবতেন। দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল। শান্ত মেজাজের ঝামেলাবিহীন মানুষ ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র হিসেবে মা খালেদা জিয়া হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তাকে লালন করেছেন। কিন্তু মৃত্যুকালে মা-ভাই কেউ-ই তার পাশে ছিলেন না। এটা মর্মান্তিক ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যে পরিবারটির সদস্যরা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে ও দেশ গঠনে কাজ করেছে, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে; সেই পরিবারের প্রতি খড়গ নেমে এসেছে। সেই পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীরা তামাশা করছেন।
কোকোর লাশ ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমে আসে। কান্নার রোল পড়ে যায়। শান্ত মেজাজের অতিশয় নিরীহ এ মানুষটিকে শেষ নজর দেখার জন্য উপস্থিত সবাই উদগ্রীব ছিলেন। পুলিশি বাধা, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ, নেতাকর্মীদের বিশাল উপস্থিতি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে লাশ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর অবিস্মরণীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। নেতাকর্মীদের কান্না, দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হয় কোকোর কফিন। মা খালেদা জিয়া কনিষ্ঠ পুত্রের লাশ দেখার সময় মর্মস্পর্শী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এমন দৃশ্য দেখে যেকোনো পাষাণহৃদয়ও গলে যায়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজার পর এত সুবিশাল জনসমাগম জাতি কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। পল্টন মোড়, জিরো পয়েন্ট মোড় থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত জানাজার লোকসমাগম ছিল কল্পনাতীত। জিয়া পরিবার জাতিকে যা কিছু দিয়েছে, জনগণ হয়তো তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই কোকোর নামাজে জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলেন। জিয়া-খালেদা জিয়া সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী কাজ করেছেন, মানুষের এমন ভালোবাসা দেখেই তা প্রমাণ হয়। সারা দেশে ছয় শতাধিক গায়েবানা জানাজা হয়েছে, যা ইতিহাসে বিরল। জিয়ার শাহাদত বরণের পরও সারা দেশে গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কোকোর ক্ষেত্রে সংখ্যার দিক দিয়ে শহীদ জিয়াকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মামলা-হামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন উপেক্ষা করে এমন জনস্রোত হবে তা কস্মিনকালেও কেউ ধারণা করেননি। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবতী যে, স্বচক্ষে জনতার সাগরের এই ঊর্মি দেখেছি, মানুষের ভালোবাসা দেখেছি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দেখেছি, দেখেছি বেদনাহত লাখো মানুষের ক্রন্দনরোল।
লেখিকা : সাংগঠনিক সম্পাদক
ঢাকা মহানগর মহিলা দল
No comments