আর কত মৃত্যু, আর কত পোড়া মুখ- পেট্রলবোমায় পুড়ে অঙ্গার সাতজন by গাজীউল হক
(কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গত সোমবার গভীর রাতে বাসে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় ঘটনাস্থলেই সাতজন প্রাণ হারান। মরদেহগুলো উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয় l ছবি: প্রথম আলো) আবারও
পেট্রলবোমা, আবারও নিভে গেল তাজা প্রাণ। এবার দুর্বৃত্তদের ছোড়া
পেট্রলবোমার আগুন একসঙ্গে কেড়ে নিল নিরীহ সাধারণ সাতজন বাসযাত্রীর প্রাণ।
বাসের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন অনেকেই। এর মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা
আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবা-মেয়ে, মা-ছেলেসহ ওই সাতজন। আহত হন
আরও অন্তত ২৮ বাসযাত্রী। এঁদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম
উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জগমোহনপুর এলাকায় গত সোমবার দিবাগত রাত
সাড়ে তিনটার দিকে যাত্রীবাহী ওই বাসে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। আইকন পরিবহনের
বাসটি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল।
৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও মাঝেমধ্যে হরতাল চলছে ২০-দলীয় জোটের ডাকে। এ কর্মসূচির মধ্যে চলছে সহিংসতাও। প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ। তবে পেট্রলবোমায় একসঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনা এটাই সর্বোচ্চ।
পেট্রলবোমায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন যশোর শহরের সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা নুরুজ্জামান পপলু ও তাঁর মেয়ে যশোর পুলিশ লাইনস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা তাসনিম; কক্সবাজারের চকরিয়ার আবু তাহের ও আবু ইউসুফ; নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুচরপাড়া গ্রামের আসমা বেগম ও তাঁর ছেলে মো. শান্ত এবং ঢাকার কাপ্তানবাজার এলাকার মো. ওয়াসিম।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাসের বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিলেন। জগমোহনপুর এলাকায় পৌঁছামাত্র সেখানে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা বাস লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছোড়ে। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান। বাসযাত্রীদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সেখানে ১৯ জনকে ভর্তি করা হয়। এঁদের বেশির ভাগই বাস থেকে নামতে গিয়ে মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত পান। কেউ কেউ সামান্য দগ্ধ হন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে নয়জনকে নেওয়া হয়। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শফিকুল ইসলাম (২৯), মো. জিলফত (২২) ও মো. জিলকদ (২১), মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কমলনগরের ফারুক আহমেদ (৩৪), একই গ্রামের আলী হোসেন (২০), মো. শরিফুল (১৯), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার প্রহরকান্দা গ্রামের রাশেদুল ইসলাম (৪২), ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ার আরিফ হোসেন (১৮) ও মো. হানিফ (৩৪)। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শফিকুল, জিলফত ও রাশেদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্য ছয়জন নিজ উদ্যোগে ঢাকায় চলে যান।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মির্জা মু. তাইয়েবুল ইসলাম জানান, তাঁদের হাসপাতালে নয়জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। অন্য ছয়জনের শরীরের ৫ শতাংশের মতো করে পুড়ে গেছে।
পেট্রলবোমায় নিহত যশোরের নুরুজ্জামানের স্ত্রী মিতা মাহফুজা (৩৭) বলেন, ‘বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে আগুন দেখে চিৎকার দিয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ি। চেতনা ফিরে এলে দেখি, আমি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আমরা চট্টগ্রাম থেকে ওই বাসে উঠেছিলাম। ছেলে, মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এ যাত্রাই আমার কাল হলো। স্বামী ও মেয়েকে হারালাম।’
যশোরে নুরুজ্জামানের বাড়িতে বিলাপ করছিলেন তাঁর বোন আফরোজা পারভীন। তাঁর সব ক্ষোভ যেন চলমান রাজনীতির ওপর। ‘পেট্রলবোমা জামায়াত মেরেছে, না আওয়ামী লীগ মেরেছে, তা আমরা জানি না। আমরা কাউকে বিশ্বাস করি না। মানুষের জীবন নিয়ে ওরা নাটক করছে’, বলেন তিনি।
পেট্রলবোমায় মা আসমা ও ভাই শান্তকে হারিয়েছেন মো. মুন্না। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে বাসে উঠি। কাঁচপুর গিয়ে আমাদের নেমে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।’
চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট নাজিম উদ্দিন বলেন, পেট্রলবোমায় প্রায় পুরো বাস পুড়ে গেছে। যাত্রীরা ঘুমিয়ে থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ মহাসড়ক পুলিশের কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার জানান, পেট্রলবোমায় ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা গেছেন। লাশগুলো কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নেওয়া হয়। পরে সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসপি ও চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চক্রবর্তী গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট দেশব্যাপী অবরোধ ডেকেছে। ওই অবরোধকে কেন্দ্র করেই ঘৃণ্য এ ঘটনা ঘটেছে।
মিয়াবাজার এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একই রাত তিনটার দিকে মিয়াবাজার এলাকায় একটি লোকাল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এই ফাঁকে জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী ওই বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। চৌদ্দগ্রাম জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। তার পরও সেখানে পুলিশি তৎপরতা কম বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। মহাসড়কের নিরাপত্তায় আনসার নামানো হলেও ওই গুরুত্বপূর্ণ স্পটে কোনো আনসার সদস্যের দেখা মেলেনি বলে জানান তাঁরা।
আটক ও তদন্ত কমিটি: চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি জানান, পেট্রলবোমা ছোড়ার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ২০ হাজার করে টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ধরিয়ে দিলে পুরস্কার: জগমোহনপুর এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, মহাসড়ক পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ও কুমিল্লার পুলিশ সুপার। সভায় রেলপথমন্ত্রী ওই ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবির এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে দায়ী করেন। পুলিশ সুপার পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। প্রতিবাদ সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও বিপুলসংখ্যক জনতা উপস্থিত ছিল।
৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও মাঝেমধ্যে হরতাল চলছে ২০-দলীয় জোটের ডাকে। এ কর্মসূচির মধ্যে চলছে সহিংসতাও। প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ। তবে পেট্রলবোমায় একসঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনা এটাই সর্বোচ্চ।
পেট্রলবোমায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন যশোর শহরের সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা নুরুজ্জামান পপলু ও তাঁর মেয়ে যশোর পুলিশ লাইনস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা তাসনিম; কক্সবাজারের চকরিয়ার আবু তাহের ও আবু ইউসুফ; নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুচরপাড়া গ্রামের আসমা বেগম ও তাঁর ছেলে মো. শান্ত এবং ঢাকার কাপ্তানবাজার এলাকার মো. ওয়াসিম।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাসের বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিলেন। জগমোহনপুর এলাকায় পৌঁছামাত্র সেখানে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা বাস লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছোড়ে। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান। বাসযাত্রীদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সেখানে ১৯ জনকে ভর্তি করা হয়। এঁদের বেশির ভাগই বাস থেকে নামতে গিয়ে মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত পান। কেউ কেউ সামান্য দগ্ধ হন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে নয়জনকে নেওয়া হয়। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শফিকুল ইসলাম (২৯), মো. জিলফত (২২) ও মো. জিলকদ (২১), মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কমলনগরের ফারুক আহমেদ (৩৪), একই গ্রামের আলী হোসেন (২০), মো. শরিফুল (১৯), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার প্রহরকান্দা গ্রামের রাশেদুল ইসলাম (৪২), ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়ার আরিফ হোসেন (১৮) ও মো. হানিফ (৩৪)। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শফিকুল, জিলফত ও রাশেদুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্য ছয়জন নিজ উদ্যোগে ঢাকায় চলে যান।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মির্জা মু. তাইয়েবুল ইসলাম জানান, তাঁদের হাসপাতালে নয়জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। অন্য ছয়জনের শরীরের ৫ শতাংশের মতো করে পুড়ে গেছে।
পেট্রলবোমায় নিহত যশোরের নুরুজ্জামানের স্ত্রী মিতা মাহফুজা (৩৭) বলেন, ‘বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে আগুন দেখে চিৎকার দিয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ি। চেতনা ফিরে এলে দেখি, আমি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আমরা চট্টগ্রাম থেকে ওই বাসে উঠেছিলাম। ছেলে, মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এ যাত্রাই আমার কাল হলো। স্বামী ও মেয়েকে হারালাম।’
যশোরে নুরুজ্জামানের বাড়িতে বিলাপ করছিলেন তাঁর বোন আফরোজা পারভীন। তাঁর সব ক্ষোভ যেন চলমান রাজনীতির ওপর। ‘পেট্রলবোমা জামায়াত মেরেছে, না আওয়ামী লীগ মেরেছে, তা আমরা জানি না। আমরা কাউকে বিশ্বাস করি না। মানুষের জীবন নিয়ে ওরা নাটক করছে’, বলেন তিনি।
পেট্রলবোমায় মা আসমা ও ভাই শান্তকে হারিয়েছেন মো. মুন্না। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে বাসে উঠি। কাঁচপুর গিয়ে আমাদের নেমে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।’
চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট নাজিম উদ্দিন বলেন, পেট্রলবোমায় প্রায় পুরো বাস পুড়ে গেছে। যাত্রীরা ঘুমিয়ে থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ মহাসড়ক পুলিশের কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপার জানান, পেট্রলবোমায় ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা গেছেন। লাশগুলো কুমিল্লার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নেওয়া হয়। পরে সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এসপি ও চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চক্রবর্তী গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট দেশব্যাপী অবরোধ ডেকেছে। ওই অবরোধকে কেন্দ্র করেই ঘৃণ্য এ ঘটনা ঘটেছে।
মিয়াবাজার এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একই রাত তিনটার দিকে মিয়াবাজার এলাকায় একটি লোকাল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এই ফাঁকে জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী ওই বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। চৌদ্দগ্রাম জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। তার পরও সেখানে পুলিশি তৎপরতা কম বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। মহাসড়কের নিরাপত্তায় আনসার নামানো হলেও ওই গুরুত্বপূর্ণ স্পটে কোনো আনসার সদস্যের দেখা মেলেনি বলে জানান তাঁরা।
আটক ও তদন্ত কমিটি: চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি জানান, পেট্রলবোমা ছোড়ার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ২০ হাজার করে টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ধরিয়ে দিলে পুরস্কার: জগমোহনপুর এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, মহাসড়ক পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ও কুমিল্লার পুলিশ সুপার। সভায় রেলপথমন্ত্রী ওই ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবির এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে দায়ী করেন। পুলিশ সুপার পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। প্রতিবাদ সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও বিপুলসংখ্যক জনতা উপস্থিত ছিল।
No comments