অবহেলিত জীবনের কিছু কথা by তৌহিদুল ইসলাম
সমাজের
মানুষের জীবন যাত্রায় আলোচিত ব্যস্ততায় উন্নয়ন অবকাঠামো তা হতে পারে তার
নিজের, পরিবারের, সমাজের ও দেশের। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজটাকে ভাবতে
পছন্দ করি নিজের মত করে। তাও তো ভাবি এতেই বা কম কিসে। আমরা আমাদের সমাজকে
ভাবি শ্রেণী ভেদে যদিও শ্রেণী অবস্থানটা আমাদের সৃষ্ঠ আমাদের সুবিধায়। উচু
শ্রেণীর মানুষেরা চিন্তা করে মধ্যবিত্তদের মাধ্যমে কিভাবে নিচু শ্রেণীর
মানুষদেরকে ব্যাবহার করা যায়। আমরা কেবলই ভাবতে পারি নিচুদেরকে শুধুমাত্র
স্বার্থে ব্যবহারের কথা তারাও মানুষ তা আমরা কখনও চিন্তাও করিনা।
বাংলাদেশের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে যে স্থান ধরা হয় সেটি হল ”ঢাকা”। দেশের
বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় মানুষ কাজের সন্ধানে নিয়মিতই আসছে, লক্ষ্য হল
আয়ের মাধ্যমে খেয়ে পরে জীবন ধারণ করা। এরমধ্যে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, মূর্খ
এমনকি অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ ঢাকায় আসে কোন সঠিক পথ নির্ধারন না করেই, ৮০
বছরের বৃদ্ধ হতে শুরু করে ৭ বছরের শিশুরাও ঢাকা আসে কিছু একটা হবে আশায়। এর
কারন হিসেবে ধরা হয় ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মকান্ড ও কর্ম এলাকা বিকেন্দ্রি
করনে ব্যর্থতার কথা। আগতদের কেউ কেউ কোন না কোন পেশায় নিজেকে উপার্যনক্ষম
করে তোলে আবার কেউ ঘরে ফিরে যায় কোন কুল না পেয়ে আর যারা ফিরে যায় না তাদের
ভিতরে নিম্ন শ্রেনীর লোকেদের মধ্যে এই প্রবনতা বেশি যারা কিনা বাড়ি থেকে
একটা বড় ধরনের দূর্ঘঠনার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ঢাকা আসে। নদী ভাঙ্গন,
সংসারের অভাব, স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে, সৎমায়ের অত্যাচার, স্বামীর অত্যাচার,
পারিবারিক নির্যাতন ও কর্মসংস্থানের খোঁজে প্রধান কারন হিসেবে এগুলোর
প্রভাবই বেশি। ঢাকায় এসে কাজ পেতে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় সহ্য করতে
হয় সীমাহীন নির্যাতন, আর যারা কোন কাজের ঠিকানা পায় না তারা বাধ্য হয়ে
বিভিন্ন রেল স্টেশনে, বাসস্টান্ডে, বড় বড় কাঁচা বাজার, সরকারী ভবন ও সপিং
মলের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। পেশা হিসেবে বেছে শহরের মানুষের ব্যবহৃত
উচ্ছিষ্ঠাংশ সংগ্রহ যাদেরকে অনেকেই আমরা “টোকাই” বলে ডাকি, কেউ ভিক্ষা করে
কিছু টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে হকারি করে, কেউবা আবার
ভিক্ষাটাকেই পেশা হিসিবে গ্রহন করে। এত কিছুর মধ্যেও যারা নিজেকে সংগঠিত
করতে পারেনা তারা শহরের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে ছিনতাই, চুরি থেকে
শুরু করে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে
মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি প্রবনতা হচ্ছে যৌনকর্মী ও নেশাদ্রব্য বিক্রয় বিপনন
কাজে ব্যবহার। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ তাদেরকে ব্যবহার করে এসব অবৈধ
ব্যবসা চালিয়ে যায় নির্বিগ্নে। এক পর্যায়ে এসে এসব মানুষ রাস্তায় জীবন যাপন
নিয়তি হিসেবে মেনে নেয় এবং হয়ে যায় পথবাসী, পথই তাদের একমাত্র উৎকৃষ্ট
পরিচয়। শহরের জীবন যাপনের জন্য পথবাসীরা নিয়মিতই সংগ্রাম করে যা একজন
সমাজের সাধারণ মানুষ কল্পনাও করে না। তারা আমাদের শহরের অনেক
গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ করে যা একটি শহরকে সুন্দর রাখতে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখে,
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কতৃক নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য
অংশ পথবাসী তারা রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গৃহস্থালীর বর্জ্য সংগ্রহ এমন কি
শহরের গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ পরিচ্ছন্ন রাখতে দিনরাত হাড়ভাঙ্গা
পরিশ্রম করে। জীবন ধারণের জন্য যারা মানুষের ব্যবহৃত দ্রব্যাদির
উচ্ছিষ্টাংশ সংগ্রহ করে তাদের কৃত্ত্বিটা যেন একটু বেশি কারন সকলেই তার
প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি ব্যবহারের পর একটা অংশ মাটিতে ফেলে দেয় তারা তা সংগ্রহ
করে। করছে এ মানুষগুলো। ঢাকার বাসায় বাসায় অনেক পথবাসী মেয়েরা গৃহীনিদের
গৃহস্থালীর কাজে সহযেগীতা করে, বিশেষ করে ব্যসেলরদের জন্য এবং যারা স্বামী
স্ত্রী উভয়ই চাকুরি করেন তাদের সংসার জীবন তো একজন কাজের মানুষ ছাড়া অচল।
এসব পথবাসী মেয়েরাই কোনে কোন সময় উচ্চাভিলাসি মানুষের মনোরঞ্জনের খোরাকের
পন্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হকার নাম শুনলেই কেমন একটা অলসতা লাগে কারণ তারা
প্রয়োজনীয় সকল পণ্য আমাদের হাতের কাছে পেতে সহায়তা করে। তারা আমাদের নগর
জীবনের সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত, এই জানজট পূর্ণ শহরের জীবনকে সহজ করে দিতে
কত না প্রচেষ্টাই করছে তারা। হাজারও সংগ্রাম করে জীবিকার তাগিদে এসব মানুষ
বছরের পর বছর ধরে নুন্যতম নাগরিক অধিকার থেকে বঞিত হয়েও ঢাকা শহরে বসবাস
করছে। আমরা কি পারব তাদের অবস্থানে থেকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে? পারব
কি সমাজের অবহেলার মুখে সেই সমাজের জন্যই কিছু করতে? অন্তত ভাবতে তো পারবো
তারাও রক্তে মাংসে গড়া আমাদের মত মানুষ।
লেখক: শিক্ষার্থী, এগ্রিবিজনেস বিভাগ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ইমেইল: touhid_i@ymail.com
লেখক: শিক্ষার্থী, এগ্রিবিজনেস বিভাগ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ইমেইল: touhid_i@ymail.com
No comments