‘পোড়া জায়গা হুগাইলে না কাম করমু’ by মানসুরা হোসাইন
(ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় মাসুম। ছবি: মনিরুল আলম) মাসুমের
বয়স মাত্র ১৫ বছর। পড়াশোনা করা ইচ্ছা ছিল প্রচণ্ড। কিন্তু বাবার রিকশা
চালানোর টাকায় ছয়জনের সংসারের খরচই জুটে না। তাই স্বপ্নকে পেছনে ফেলে
বাসে হেলপারের কাজ নেয় মাসুম। দিনে ১০০ বা ২০০ টাকার মতো পেত। নিজে না
পারলেও ছোট দুই বোনকে ঠিকই স্কুলে পাঠিয়েছে সে। আরেক বোন অনেক ছোট। কিন্তু
এখন বোনদের পড়ানো তো দূরের কথা, মাসুম আবার কাজ করতে পারবে কি না, তা-ই
অনিশ্চিত। ২০ -দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের মধ্যে ১৪ জানুয়ারি পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়েছে মাসুম। ঘটনার এক দিন আগে নরসিংদীতে সামিয়া পরিবহনে হেলপারের
কাজ নেয় মাসুম। ঘটনার দিন কাজ শেষে বাসেই ঘুমিয়ে ছিল। রাত সাড়ে নয়টার
দিকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় মুখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গা পুড়ে
যায় মাসুমের। ঘটনার পরপরই মাসুমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন
ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। এখানেই তার চিকিৎসা চলছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা
জানিয়েছেন, আগুনে মাসুমের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
গতকাল রোববার বার্ন ইউনিটে কথা হয় মাসুমের সঙ্গে। কালো হয়ে যাওয়া দগ্ধ মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘এখন একটু ভালা আছি। ’ কাজের প্রসঙ্গ আসতেই বলল, ‘পোড়া জায়গা হুগাইলে (শুকালে) না কাম করমু। কবে যে হুগাইবো কেডা জানে। ’
মাসুমের পাশে তার এক ফুফু ছিলেন। তিনি জানালেন, মাসুমের বাবা আলেক মিয়া রিকশাচালক। আর মা পিয়ারা বেগম গৃহিণী। মাসুমই তাঁদের একমাত্র ছেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। সুতা বানাত এক সময়। তারপর বাসের হেলপারের কাজ নেয়। ঘটনার পর থেকে পরিবারের কাউকে না কাউকে মাসুমের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতেই হচ্ছে। এতে করে চাচা, ফুফুসহ যাঁরাই থাকছেন, তাঁদের আয়ের পথও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু মাসুমের সঙ্গে না থেকেও উপায় নেই। মাসুমকে প্রস্রাব, পায়খানা করাতে নিয়ে যেতে হয়। খাইয়ে দিতে হয়। যন্ত্রণায় যখন অস্থির হয়ে পড়ে তখন তাকে সামলাতেও হয়।
মাসুমের সঙ্গে কথা বলার সময় তার পাশের বিছানার অবরোধে দগ্ধ হওয়া আরেকজনের আত্মীয় বলেন, ‘ও (মাসুম) যখন যন্ত্রণায় কাতরায় তখন ওয়ার্ডের আমরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। কী যে যন্ত্রণা, তা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়। ’
সামিয়া পরিবহনে মাসুম মাত্র এক দিন আগেই কাজ নিয়েছিল। এর আগে সে কাজ করত মেঘালয় পরিবহনে। সামিয়া পরিবহনের চালক কালাম টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ ঘটনার দিন সারা দিন গাড়ি চালাইছি। রাতে মাসুমরে খাওনের টাকা দিছি। দিনের বেতন দিছি। ও খাইয়া আইলে গাড়ি বুঝাইয়্যা দিয়া আমি বাড়ি যাই। ও গাড়িতেই ঘুমাইয়্যা পড়ে। তারপর শুনি গাড়ি পুইড়া গেছে। বাড়ি থেইক্যা আইতে আইতে দেহি খালি আগুন। তারপর শুনি মাসুমের শইলও পুইড়া গেছে। ঘটনার পর মালিক দুই হাজার টাকা দিছে। কইছে সুস্থ হইয়া আইলে কামের ব্যবস্থা কইরা দিব। ’
মাসুমের মা-বাবা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলের হাল। এ ছাড়া আর যে কিছু করার নেই তাঁদের। তাঁরা বলেন, বার্ন ইউনিটে ছেলের চিকিৎসার জন্য কিছু সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে যে পথ্য দেওয়া হয় তা দিয়ে চলে না। চিকিৎসকেরা মাসুমকে ডিম, দুধসহ পুষ্টিকর খাবার দিতে বলেছেন। মাসুমের সঙ্গে যে যখন থাকে তাঁরও খাবারসহ বাড়তি খরচ আছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয় বহুল। এই রোগীরা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে বা আগের মতো কাজ করতে পারবে, তা বলা যায় না। তাই অবরোধের শিকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাটা জরুরি।
গতকাল রোববার বার্ন ইউনিটে কথা হয় মাসুমের সঙ্গে। কালো হয়ে যাওয়া দগ্ধ মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘এখন একটু ভালা আছি। ’ কাজের প্রসঙ্গ আসতেই বলল, ‘পোড়া জায়গা হুগাইলে (শুকালে) না কাম করমু। কবে যে হুগাইবো কেডা জানে। ’
মাসুমের পাশে তার এক ফুফু ছিলেন। তিনি জানালেন, মাসুমের বাবা আলেক মিয়া রিকশাচালক। আর মা পিয়ারা বেগম গৃহিণী। মাসুমই তাঁদের একমাত্র ছেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। সুতা বানাত এক সময়। তারপর বাসের হেলপারের কাজ নেয়। ঘটনার পর থেকে পরিবারের কাউকে না কাউকে মাসুমের সঙ্গে হাসপাতালে থাকতেই হচ্ছে। এতে করে চাচা, ফুফুসহ যাঁরাই থাকছেন, তাঁদের আয়ের পথও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু মাসুমের সঙ্গে না থেকেও উপায় নেই। মাসুমকে প্রস্রাব, পায়খানা করাতে নিয়ে যেতে হয়। খাইয়ে দিতে হয়। যন্ত্রণায় যখন অস্থির হয়ে পড়ে তখন তাকে সামলাতেও হয়।
মাসুমের সঙ্গে কথা বলার সময় তার পাশের বিছানার অবরোধে দগ্ধ হওয়া আরেকজনের আত্মীয় বলেন, ‘ও (মাসুম) যখন যন্ত্রণায় কাতরায় তখন ওয়ার্ডের আমরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। কী যে যন্ত্রণা, তা ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়। ’
সামিয়া পরিবহনে মাসুম মাত্র এক দিন আগেই কাজ নিয়েছিল। এর আগে সে কাজ করত মেঘালয় পরিবহনে। সামিয়া পরিবহনের চালক কালাম টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ ঘটনার দিন সারা দিন গাড়ি চালাইছি। রাতে মাসুমরে খাওনের টাকা দিছি। দিনের বেতন দিছি। ও খাইয়া আইলে গাড়ি বুঝাইয়্যা দিয়া আমি বাড়ি যাই। ও গাড়িতেই ঘুমাইয়্যা পড়ে। তারপর শুনি গাড়ি পুইড়া গেছে। বাড়ি থেইক্যা আইতে আইতে দেহি খালি আগুন। তারপর শুনি মাসুমের শইলও পুইড়া গেছে। ঘটনার পর মালিক দুই হাজার টাকা দিছে। কইছে সুস্থ হইয়া আইলে কামের ব্যবস্থা কইরা দিব। ’
মাসুমের মা-বাবা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলের হাল। এ ছাড়া আর যে কিছু করার নেই তাঁদের। তাঁরা বলেন, বার্ন ইউনিটে ছেলের চিকিৎসার জন্য কিছু সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে যে পথ্য দেওয়া হয় তা দিয়ে চলে না। চিকিৎসকেরা মাসুমকে ডিম, দুধসহ পুষ্টিকর খাবার দিতে বলেছেন। মাসুমের সঙ্গে যে যখন থাকে তাঁরও খাবারসহ বাড়তি খরচ আছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয় বহুল। এই রোগীরা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে বা আগের মতো কাজ করতে পারবে, তা বলা যায় না। তাই অবরোধের শিকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাটা জরুরি।
No comments