মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক- নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ by অরূপ দত্ত
(দুই
বছর ধরে নগরবাসীকে সাময়িক অসুবিধার কথা বলে সাবধান করছে ঢাকা ওয়াসা।
উড়ালসড়ক এলাকায় শনিবার দুপুরে এক পশলা বৃষ্টিতেই রাস্তার এই বেহাল দশা।
রাস্তা খুঁড়ে তোলা হচ্ছে ওয়াসার ফেটে যাওয়া পাইপ। মৌচাক এলাকা থেকে তোলা
ছবি l প্রথম আলো) রাজধানীর
‘মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার’–এর দুটি অংশ চালু হওয়ার কথা ছিল গত
ডিসেম্বরে। আরেকটি অংশের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের জানুয়ারিতে। তবে সার্বিক
কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। প্রায় সোয়া আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের
উড়ালসড়কটি বিস্তারিত নকশা ছাড়াই শুরু করা হয়। এ জন্য প্রকল্পে নির্মাণ
খরচও বেড়েছে শতাধিক কোটি টাকা। আগের হিসাবে ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৭৭২ কোটি
৭৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে
জনদুর্ভোগ। উড়ালসড়কটির বাংলামোটর-মৌচাক অংশের ৪৮ শতাংশ এবং তেঁজগাও
সাতরাস্তা-মগবাজার হলি ফ্যামিলি অংশের ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। যদিও এ দুটি অংশ
চালু হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। বাকি অংশটি হলো রামপুরা-শান্তিনগর। এটি
চালুর কথা এ বছরের ডিসেম্বরে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ হয়েছে ২০ শতাংশ।
এই তিনটি অংশ মিলে ‘মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার’। প্রকল্পটি
বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পটির
নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রকল্পের নথিপত্র ও
সরেজমিনে জানা যায়, উড়ালসড়কটিতে মোট এক হাজার ১০৩টি পাইল (মাটির নিচ থেকে
রাস্তা পর্যন্ত একধরনের স্তম্ভ) করার কথা। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০টি পাইল করা
হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতাজনিত জনদুর্ভোগ। নিয়মের
ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রকল্পে উপঠিকাদারও (সাব-কন্ট্রাক্টর) নিয়োগ করা হয়েছে।
পরামর্শক নিয়োগে রয়েছে নয় কোটি টাকার আর্থিক ঘাপলার অভিযোগ। বাংলাদেশ
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের একাধিক শিক্ষক মনে করেন,
কার্যকর পরিকল্পনা, সমন্বয়, অনুসন্ধান ছাড়া নগরের ব্যস্ততম এলাকায় যে
কাজটি করা হচ্ছে, তা নগরবাসীর দুর্ভোগ শুধু নয়, ভবিষ্যতের জন্যও তা খারাপ
হতে পারে। এর নির্মাণ ব্যয় যে কী পরিমাণ দাঁড়াবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
বিস্তারিত নকশার আগেই কাজ শুরু: অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিস্তারিত নকশা (ডিজাইন) ছাড়াই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ, দরপত্র আহ্বান ও নির্মাণকাজে হাত দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে এই উড়ালসড়ক নির্মাণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি সমীক্ষা করে নকশা করেছিল। আট বছর পর সেই নকশা ধরে কাজ শুরু হয়। এত বছরে প্রকল্পস্থলে অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপ ও তারের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ জন্য কাজের সময় বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয় এবং এখনো হচ্ছে। ফলে কাজের গতি কমে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। এলজিইডির প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. নাজমুল আলমও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সার্বিক কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এ বছরেই দুটি অংশ চালু হবে। সেবা খাতের লাইন স্থানান্তরের জন্য সেবা সংস্থাগুলোর ক্ষতিপূরণ বাবদ ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকারও বেশি বিল হয়েছে।
অনিয়ম করে উপঠিকাদার?: এলজিইডির নথি থেকে জানা যায়, উড়ালসড়কের বাংলামোটর-মৌচাক অংশের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ যৌথভাবে পায় চীনা কোম্পানি এমসিসিসি (নম্বর ৪) এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও শামীম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (এমইএল)। কিন্তু কাজ করছে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উড়ালসড়কের ওই অংশের ১০ শতাংশ কাজের জন্য তমাকে উপঠিকাদারি (সাব-কন্ট্রাক্ট) দেওয়া হয়। যদিও ক্রয় আইন, ২০০৬ এবং ক্রয় বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী এ কাজে উপঠিকাদারি দেওয়া যায় না। ইউডিসির কনস্ট্রাকশন লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাগজে কলমে বিল হচ্ছে এমসিসি, ইউডিসি ও এমইএলের নামে, পরে তাদের কোম্পানির মাধ্যমে তমার হিসাবে চলে যাচ্ছে। প্রকল্পস্থলে নির্মাণকাজে তমার সাইনবোর্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তমার প্রকৌশলী আশরাফুল আলমও স্বীকার করেন নির্মাণকাজের সব যন্ত্রপাতিতে তমার নাম বা সাইনবোর্ড রয়েছে। প্রকল্পের কাজে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধান অংশীদারের অংশগ্রহণ না থাকায় এ ধরনের কাজ প্রশ্নবিদ্ধ। কাজের ক্ষতি হলে বা বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে এটা প্রধান অংশীদারের প্রতি যেমন বর্তায়, তমার প্রতিও বর্তায়। জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করছি। নিচের সাব-স্ট্রাকচার প্রায় শেষ করে এনেছি। আসলে কে কাজটি করছে, তা মুখ্য বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে কাজটা কেমন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে। আজ আমরা যেভাবে যুদ্ধবিগ্রহ করে কাজটি করছি, আমার মনে হয় না বিদেশি কোনো কোম্পানি তা এভাবে করতে পারবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমরা যে কাজটি করছি, সে সম্পর্কে এলজিইডি সম্পূর্ণ অবগত। অফিশিয়ালি সাব-কন্ট্রাক্ট ছাড়া, আমরা কি ছাগল নাকি যে কাজ করতে যাব?’
পরামর্শক নিয়োগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ:
সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দেয়। এগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রত্যাহার করে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান স্মেক এবং বাংলাদেশের ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর দর ছিল ১৭ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে ছিল যৌথ অংশীদারির প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল মার্কিন প্রতিষ্ঠান এআইএ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, এ আই অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। তাদের দর ছিল ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রথম দরদাতা সরে যাওয়ায় পাঁচ কোটি টাকার ব্যবধানে কাজ পায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা স্মেক ও ক্রান্তি। তবে চুক্তির পর ডেপুটি টিম লিডার (ডিটিএল) ও স্ট্রাকচারাল প্রকৌশলী পরিবর্তন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রয়নীতির ১১৯(৫) ধারায় বলা আছে, কারিগরি প্রস্তাব গ্রহণ ও উন্মুক্ত করার পর প্রধান কর্মী পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে তা শিথিলযোগ্য হলেও শর্ত হচ্ছে, পরিবর্তিত জনবল সমান বা উচ্চমানের হতে হবে। তা ছাড়া প্রধান কর্মী বা বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব মূল্যায়নের পর ক্রয় কমিটি অথবা যে কর্তৃপক্ষ আগে অনুমোদন দিয়েছে, সেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও বাধ্যতামূলক।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কম যোগ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় চার কোটি টাকা খরচ করে নকশার একটি অংশের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) যুক্ত করতে হয়েছে। তা ছাড়া তুলনামূলক সর্বনিম্ন দরদাতা মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান সরে যাওয়ার পর পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আরও পাঁচ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজে চর্চা। তারা যে লোক দেখায়, তাঁদের আনতে পারে না। আবার এ-ও সত্য, যোগ্য বিশেষজ্ঞরা বছরভর বসে থাকবেন না। তিনি জানান, পরামর্শক দলকে এ পর্যন্ত দুই দফায় সাত কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রকল্প পরিচালক এ বিষয়ে অনিয়ম হয়নি দাবি করে বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে সামান্য পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ। তিনি দাবি করেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের শর্তে নকশার বিষয়টি ছিল না।
২০১১ সালের ১৮ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে নকশা ও নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। নকশা ও প্রাক্কলন ছাড়া নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগেরও সুযোগ নেই।
বিস্তারিত নকশার আগেই কাজ শুরু: অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিস্তারিত নকশা (ডিজাইন) ছাড়াই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ, দরপত্র আহ্বান ও নির্মাণকাজে হাত দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে এই উড়ালসড়ক নির্মাণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি সমীক্ষা করে নকশা করেছিল। আট বছর পর সেই নকশা ধরে কাজ শুরু হয়। এত বছরে প্রকল্পস্থলে অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপ ও তারের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত যাচাই-বাছাই না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ জন্য কাজের সময় বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয় এবং এখনো হচ্ছে। ফলে কাজের গতি কমে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। এলজিইডির প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. নাজমুল আলমও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সার্বিক কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এ বছরেই দুটি অংশ চালু হবে। সেবা খাতের লাইন স্থানান্তরের জন্য সেবা সংস্থাগুলোর ক্ষতিপূরণ বাবদ ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকারও বেশি বিল হয়েছে।
অনিয়ম করে উপঠিকাদার?: এলজিইডির নথি থেকে জানা যায়, উড়ালসড়কের বাংলামোটর-মৌচাক অংশের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ যৌথভাবে পায় চীনা কোম্পানি এমসিসিসি (নম্বর ৪) এবং ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও শামীম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (এমইএল)। কিন্তু কাজ করছে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উড়ালসড়কের ওই অংশের ১০ শতাংশ কাজের জন্য তমাকে উপঠিকাদারি (সাব-কন্ট্রাক্ট) দেওয়া হয়। যদিও ক্রয় আইন, ২০০৬ এবং ক্রয় বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী এ কাজে উপঠিকাদারি দেওয়া যায় না। ইউডিসির কনস্ট্রাকশন লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কাগজে কলমে বিল হচ্ছে এমসিসি, ইউডিসি ও এমইএলের নামে, পরে তাদের কোম্পানির মাধ্যমে তমার হিসাবে চলে যাচ্ছে। প্রকল্পস্থলে নির্মাণকাজে তমার সাইনবোর্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তমার প্রকৌশলী আশরাফুল আলমও স্বীকার করেন নির্মাণকাজের সব যন্ত্রপাতিতে তমার নাম বা সাইনবোর্ড রয়েছে। প্রকল্পের কাজে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধান অংশীদারের অংশগ্রহণ না থাকায় এ ধরনের কাজ প্রশ্নবিদ্ধ। কাজের ক্ষতি হলে বা বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে এটা প্রধান অংশীদারের প্রতি যেমন বর্তায়, তমার প্রতিও বর্তায়। জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করছি। নিচের সাব-স্ট্রাকচার প্রায় শেষ করে এনেছি। আসলে কে কাজটি করছে, তা মুখ্য বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে কাজটা কেমন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে। আজ আমরা যেভাবে যুদ্ধবিগ্রহ করে কাজটি করছি, আমার মনে হয় না বিদেশি কোনো কোম্পানি তা এভাবে করতে পারবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমরা যে কাজটি করছি, সে সম্পর্কে এলজিইডি সম্পূর্ণ অবগত। অফিশিয়ালি সাব-কন্ট্রাক্ট ছাড়া, আমরা কি ছাগল নাকি যে কাজ করতে যাব?’
পরামর্শক নিয়োগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ:
সংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট চারটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দেয়। এগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রত্যাহার করে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান স্মেক এবং বাংলাদেশের ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানগুলোর দর ছিল ১৭ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে ছিল যৌথ অংশীদারির প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল মার্কিন প্রতিষ্ঠান এআইএ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, এ আই অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। তাদের দর ছিল ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রথম দরদাতা সরে যাওয়ায় পাঁচ কোটি টাকার ব্যবধানে কাজ পায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা স্মেক ও ক্রান্তি। তবে চুক্তির পর ডেপুটি টিম লিডার (ডিটিএল) ও স্ট্রাকচারাল প্রকৌশলী পরিবর্তন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি।
ক্রয়নীতির ১১৯(৫) ধারায় বলা আছে, কারিগরি প্রস্তাব গ্রহণ ও উন্মুক্ত করার পর প্রধান কর্মী পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে তা শিথিলযোগ্য হলেও শর্ত হচ্ছে, পরিবর্তিত জনবল সমান বা উচ্চমানের হতে হবে। তা ছাড়া প্রধান কর্মী বা বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব মূল্যায়নের পর ক্রয় কমিটি অথবা যে কর্তৃপক্ষ আগে অনুমোদন দিয়েছে, সেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও বাধ্যতামূলক।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কম যোগ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় চার কোটি টাকা খরচ করে নকশার একটি অংশের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) যুক্ত করতে হয়েছে। তা ছাড়া তুলনামূলক সর্বনিম্ন দরদাতা মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান সরে যাওয়ার পর পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আরও পাঁচ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজে চর্চা। তারা যে লোক দেখায়, তাঁদের আনতে পারে না। আবার এ-ও সত্য, যোগ্য বিশেষজ্ঞরা বছরভর বসে থাকবেন না। তিনি জানান, পরামর্শক দলকে এ পর্যন্ত দুই দফায় সাত কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রকল্প পরিচালক এ বিষয়ে অনিয়ম হয়নি দাবি করে বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে সামান্য পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ। তিনি দাবি করেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের শর্তে নকশার বিষয়টি ছিল না।
২০১১ সালের ১৮ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে নকশা ও নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। নকশা ও প্রাক্কলন ছাড়া নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগেরও সুযোগ নেই।
No comments