অব্যবস্থাপনা ও যানজটে নাকাল- মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক by অরূপ দত্ত
(মৌচাক এলাকার এই ছবিটি দেখে সহজেই বোঝা যায় নগরবাসীর ভোগান্তি l ছবি: সাহাদাত পারভেজ) যেখানেই
কাজ চলছে, সেখানেই অব্যবস্থাপনা আর সমন্বয়হীনতা। নির্মাণস্থলের বাইরেও
রাস্তায় ছড়িয়ে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত নির্মাণসামগ্রী। অনেক স্থানে
নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। ধুলা ও কাদামটিতে সয়লাব প্রকল্প এলাকার রাস্তাঘাট।
মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক এলাকাস্থল ঘুরে এমন অবস্থা দেখা গেছে। টানা
অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজধানীতে যানবাহন সীমিত থাকলেও গতকাল রোববার
প্রকল্প এলাকায় ছিল দীর্ঘ যানজট। বিকেল চারটার দিকে দেখা যায়, মগবাজার
রেলক্রসিং থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন স্থবির হয়ে আছে। মৌচাক
মোড় এলাকায় দিনভরই যানজট ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া গতকাল বেলা একটার দিকে ঘটনাস্থলে
ছিলেন। তিনি বলেন, অবরোধের মধ্যে এমন যানজট ভাবা যায় না। এ অবস্থায়
নির্মাণকাজ চালাতে হচ্ছে। অবরোধের আগে ৩ জানুয়ারি বিকেলেও ছিল একই অবস্থা।
কাকরাইল রাজমণি মোড় থেকে পশ্চিম বরাবর প্রধান বিচারপতির বাসভবন ছাড়িয়ে
রমনা পার্ক, সেখান থেকে হোটেল কন্টিনেন্টাল এলাকায় যানবাহনের চলাচল ছিল
শম্বুকগতিতে। শাহবাগ মোড় থেকে বাংলামোটর, সোনারগাঁও মোড় সিগন্যালে
গাড়ি আটকে আছে। কাকরাইল মোড় ও বেইলি রোড থেকে রমনা থানার পাশ দিয়ে
মগবাজার মোড় হয়ে বাংলামোটর, তেজগাঁও এবং সোনারগাঁও মাড়ে যাওয়া যায়। সে
জন্য কিছু গাড়ি শহীদ মনসুর আলী সড়ক ব্যবহার করছিল। কিন্তু সেই পথে আরও
ভয়াবহ অবস্থা। কাকরাইলের দিক থেকে আসা গাড়িগুলো আটকে আছে পুলিশ কমিশনারের
কার্যালয়ের কাছে। সেখান থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত পুরো রাস্তা
বন্ধ হয়ে আছে। রাস্তার ওপর মাটির স্তূপ, পড়ে আছে ব্লকের অংশ, অগোছালো
রড। মগবাজার রেলক্রসিং দিয়ে ট্রেন চলে গেছে, তার পরও লেভেল ক্রসিংয়ের গেট
উঠছে না। লাইনম্যান আবদুর রহিম এই প্রতিবেদককে বলেন, বতর্মানে এমন অবস্থা
চলছে যে সার্বক্ষণিক সতর্ক থেকেও উপায় নেই। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা
ঘটতে পারে।
দেখা গেল, উত্তর দিক বরাবর তেজগাঁওয়ের দিকে কিছু পিলারের গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। কয়েকটি পিলার আগেই দাঁড়িয়ে গেছে। টঙ্গী ডাইভারশন রোডে ৩৭, ৩৮, ৩৯ নম্বর স্তম্ভের (পিলার) কাজ শেষ। ৪৬ নম্বরসহ আশপাশের স্তম্ভগুলোতে টিনের ঘেরাও দেওয়া। এর পরই এফডিসির মোড়। সেখানে দীর্ঘ যানজট। দিনে-রাতে যেকোনো সময়ে। কারণ ওই স্থানে হাতিরঝিলে ঢোকা ও বেরোনোর পথ। স্থানীয় একটি তালাচাবির দোকানি আবদুর রশীদ বলেন, মাঝে মাঝে হাতিরঝিলের প্রবেশপথ থেকে ভেতরে অন্তত এক কিলোমিটার পথ অবরুদ্ধ থাকে শুধু উড়ালসড়ক নির্মাণস্থলে অব্যবস্থাপনার কারণে।
পয়োবর্জ্য, পথের ওপর বাজার: মগবাজার মোড় থেকে পশ্চিম দিকে নিউ ইস্কাটন বরাবর ২৪৪ থেকে ২৬৫ নম্বর স্তম্ভ। প্রায় দুই বছর ধরে এখানে কাজ চলছে। স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ। কিন্তু আশপাশের দোকানপাট, পথচারীদের দুর্ভোগ শেষ হয়নি। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২৪৭ থেকে ২৪৯ নম্বর স্তম্ভ পর্যন্ত দক্ষিণ অংশের রাস্তায় পয়োবর্জ্যের পানিতে ভরে গেছে। সেই বর্জ্য মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে ইস্কাটন গার্ডেনের বাসিন্দা ছাড়াও অন্য পথচারীদের। নাসিমা ম্যানশন বিপণিবিতানের মোটর সরঞ্জামের দোকানিরা সার্বক্ষণিকভাবে নাকে মাস্ক পরে আছেন। আবদুল জলিল নামের এক দোকানি বলেন, দ্রুতগতিতে কোনো গাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তায় জমে থাকা পয়োবর্জ্যের পানি দোকানে এসে পড়ে। যার জন্য সামনের দোকানগুলোর শাটারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ বন্ধ রেখে কাজ চালানো হচ্ছিল।
২৫৩ নম্বর স্তম্ভের কাছে ওষুধের দোকান মো. আক্কাসের। তিনি বললেন, টানা দুই বছর ‘ধুলার দিনে ধুলা খাই, কাদার দিনে কাদা খাই’। তিনি বলেন, উন্নয়নকাজ করছে ভালো কথা, কিন্তু রাস্তায় ইট-সুরকি না রেখে চলাচলের ব্যবস্থা রাখলে সমস্যা কোথায়। একেই রাস্তায় চলা যায় না, তার ওপর পশ্চিম দিক বরাবর দিলু রোডের মুখে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। এতে চলাফেরায় আরও সমস্যা।
প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, কাঁচাবাজারটি উঠিয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) কয়েক দফায় অনুরোধ জানানো হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান এ বিষয়ে বলেন, করপোরেশন থেকে এ ধরনের বাজার উঠিয়ে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আবার বসে যায়। এর জন্য নাগরিক সচেতনতা দরকার।
মৌচাক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি না হলেও বিশাল গর্তজুড়ে পানি জমে আছে। ভাঙা রাস্তা আরও ভেঙে পড়েছে। ওই এলাকা ছাড়াও মগবাজার এলাকায় ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে। পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য একাকার হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণেই তাঁদের এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মাটি, বালু, সুরকি দিয়ে নর্দমা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নর্দমা ভরাট হলে ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনও বন্ধ হয়ে যায়। করপোরেশন সেগুলো পরিষ্কার করে না।
সেবা সংস্থার তারের বেড়াজাল: দীর্ঘ এই উড়ালসড়ক এলাকার মাটির নিচে জালের মতো ছড়িয়ে আছে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং টেলিফোন লাইন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মাটির নিচের বিদ্যুৎলাইন বা কেব্ল সরানোর জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ডিপিডিসি) বলার পর তারা দুই বছর সময় চেয়েছিল। ওয়াসাসহ অন্য সংস্থাগুলোও এ ধরনের সময় চায়। এ ছাড়া তার বা পাইপ সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি করা হয় অস্বাভাবিক ক্ষতিপূরণ। প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা করতে হলে প্রকল্পের নির্মাণ সময় অনেক পিছিয়ে যেত।
তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মাটির নিচে কাজ করতে হয়েছে বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে। মানিকনগর-উলন ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন চলে গেছে মৌচাক-মগবাজার হয়ে ধানমন্ডি।
দেখা গেল, উত্তর দিক বরাবর তেজগাঁওয়ের দিকে কিছু পিলারের গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। কয়েকটি পিলার আগেই দাঁড়িয়ে গেছে। টঙ্গী ডাইভারশন রোডে ৩৭, ৩৮, ৩৯ নম্বর স্তম্ভের (পিলার) কাজ শেষ। ৪৬ নম্বরসহ আশপাশের স্তম্ভগুলোতে টিনের ঘেরাও দেওয়া। এর পরই এফডিসির মোড়। সেখানে দীর্ঘ যানজট। দিনে-রাতে যেকোনো সময়ে। কারণ ওই স্থানে হাতিরঝিলে ঢোকা ও বেরোনোর পথ। স্থানীয় একটি তালাচাবির দোকানি আবদুর রশীদ বলেন, মাঝে মাঝে হাতিরঝিলের প্রবেশপথ থেকে ভেতরে অন্তত এক কিলোমিটার পথ অবরুদ্ধ থাকে শুধু উড়ালসড়ক নির্মাণস্থলে অব্যবস্থাপনার কারণে।
পয়োবর্জ্য, পথের ওপর বাজার: মগবাজার মোড় থেকে পশ্চিম দিকে নিউ ইস্কাটন বরাবর ২৪৪ থেকে ২৬৫ নম্বর স্তম্ভ। প্রায় দুই বছর ধরে এখানে কাজ চলছে। স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ। কিন্তু আশপাশের দোকানপাট, পথচারীদের দুর্ভোগ শেষ হয়নি। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২৪৭ থেকে ২৪৯ নম্বর স্তম্ভ পর্যন্ত দক্ষিণ অংশের রাস্তায় পয়োবর্জ্যের পানিতে ভরে গেছে। সেই বর্জ্য মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে ইস্কাটন গার্ডেনের বাসিন্দা ছাড়াও অন্য পথচারীদের। নাসিমা ম্যানশন বিপণিবিতানের মোটর সরঞ্জামের দোকানিরা সার্বক্ষণিকভাবে নাকে মাস্ক পরে আছেন। আবদুল জলিল নামের এক দোকানি বলেন, দ্রুতগতিতে কোনো গাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তায় জমে থাকা পয়োবর্জ্যের পানি দোকানে এসে পড়ে। যার জন্য সামনের দোকানগুলোর শাটারের অর্ধেকেরও বেশি অংশ বন্ধ রেখে কাজ চালানো হচ্ছিল।
২৫৩ নম্বর স্তম্ভের কাছে ওষুধের দোকান মো. আক্কাসের। তিনি বললেন, টানা দুই বছর ‘ধুলার দিনে ধুলা খাই, কাদার দিনে কাদা খাই’। তিনি বলেন, উন্নয়নকাজ করছে ভালো কথা, কিন্তু রাস্তায় ইট-সুরকি না রেখে চলাচলের ব্যবস্থা রাখলে সমস্যা কোথায়। একেই রাস্তায় চলা যায় না, তার ওপর পশ্চিম দিক বরাবর দিলু রোডের মুখে কাঁচাবাজার বসানো হয়েছে। এতে চলাফেরায় আরও সমস্যা।
প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, কাঁচাবাজারটি উঠিয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) কয়েক দফায় অনুরোধ জানানো হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান এ বিষয়ে বলেন, করপোরেশন থেকে এ ধরনের বাজার উঠিয়ে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আবার বসে যায়। এর জন্য নাগরিক সচেতনতা দরকার।
মৌচাক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি না হলেও বিশাল গর্তজুড়ে পানি জমে আছে। ভাঙা রাস্তা আরও ভেঙে পড়েছে। ওই এলাকা ছাড়াও মগবাজার এলাকায় ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে। পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালির বর্জ্য একাকার হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণেই তাঁদের এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মাটি, বালু, সুরকি দিয়ে নর্দমা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নর্দমা ভরাট হলে ওয়াসার ড্রেনেজ লাইনও বন্ধ হয়ে যায়। করপোরেশন সেগুলো পরিষ্কার করে না।
সেবা সংস্থার তারের বেড়াজাল: দীর্ঘ এই উড়ালসড়ক এলাকার মাটির নিচে জালের মতো ছড়িয়ে আছে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং টেলিফোন লাইন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মাটির নিচের বিদ্যুৎলাইন বা কেব্ল সরানোর জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ডিপিডিসি) বলার পর তারা দুই বছর সময় চেয়েছিল। ওয়াসাসহ অন্য সংস্থাগুলোও এ ধরনের সময় চায়। এ ছাড়া তার বা পাইপ সরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি করা হয় অস্বাভাবিক ক্ষতিপূরণ। প্রকল্প পরিচালক বলেন, এটা করতে হলে প্রকল্পের নির্মাণ সময় অনেক পিছিয়ে যেত।
তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মাটির নিচে কাজ করতে হয়েছে বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে। মানিকনগর-উলন ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন চলে গেছে মৌচাক-মগবাজার হয়ে ধানমন্ডি।
No comments