টয়লেটে ১০ বছর by রফিকুল ইসলাম সাজু
পরিত্যক্ত
একটি টয়লেটে ১০ বছর কেটে গেছে ইসমতারার। নিঃসন্তান ইসমতারাকে স্বামী ছেড়ে
যাওয়ার পরই আস্তানা হয় টয়লেটে। তার বয়স এখন ৫৫ বছর। আবুল কালাম অন্যত্র
বিয়ে করে ইসমতারাকে ফেলে চলে যায়। এরপর তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
কোনদিকে যাবে সে। এরপর তার আশ্রয় হয় রৌমারীর পাটগুডাউন পাড়ায় একটি ইটখোলায়।
পরে ইটখোলার মালিক তাকে সরিয়ে দিলে তিনি আশ্রয় নেন উপজেলার সমাজসেবা
অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত একটি টয়লেটে। দুর্গন্ধকে সঙ্গী করে পরিত্যক্ত টয়লেট
কক্ষেই তার বিচিত্র জীবনের কাটে ১০ বছর। বর্তমানে উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন
নির্মাণের ফলে পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় ইসমতারার
আস্তানাও গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিপাকে পড়েন তিনি। বলেন, ‘এহন
মুই কুতি যামু গো।’ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের
পরিত্যক্ত ওই টয়লেটে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সঠিক করে দিন-তারিখ বলতে না
পারলেও ২০০২ সালে তাকে ছেড়ে যায় স্বামী আবুল কালাম। এরপর ২০০৪ সাল থেকে
পরিত্যক্ত ওই টয়লেটে জীবনযাপন শুরু করেন। উপজেলার নটানপাড়া গ্রামে তার
স্বামী আবুল কালামের বাড়ি। তার ওই ঘরে স্ত্রী সন্তান রয়েছে। রৌমারী
হাটবাজারের কিছু অংশের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে যা পান তা দিয়ে তার দিন
কাটে। তিনি বলেন, ‘এতদিন এহানে ছিলাম। হাটের যে স্থানে ধানসহ বিভিন্ন ফসল
কেনাবেচা হতো ওই স্থান পরিষ্কার করে দিতাম। আবার হাটে পড়ে থাকা ফসল
কুড়াতাম। হাটের মালিক মাসে এক হাজার করে টাকা দিত। তাই দিয়া তার খাবাদাবার
চলত। সরকারি লোকের কাপড়চোপড়ও পরিষ্কার করে দিতাম। তারাও খানা দাতা দিত,
টাকা দিত। এভাবে ১০ বছর কেটে গেছে।’ রৌমারী উপজেলা প্রশাসনের নতুন ভবন
নির্মাণ হওয়ার পর পুরাতন পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে বেশ কিছু পুরাতন ভবন ভেঙে পরিষ্কার করা হয়েছে
উপজেলা চত্বরে। পরিত্যক্ত ওই টয়লেটটি ভেঙে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছে। ইসমতারা
বেগমকে টয়লেট কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ইসমতারা
বেগম বলেন, ‘আমার কোন জায়গা জমি নেই। সরকার যদি একটু জায়গা জমি দিত তাতে
বাকি সময়টা থাকতে পারতাম। আপনরা কয়ে বলে আমাকে একটু থাকার জায়গা নিয়া দেন।’
রৌমারী সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মমতাজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানতাম
পরিত্যক্ত টয়লেট কক্ষে ওই মহিলা বসবাস করে। যেহেতু টয়লেটটি আমরা ব্যবহার
করতাম না, সে কারণে এতদিন তাকে কিছু বলাও হয়নি। কিন্তু এখন উপজেলা
প্রশাসনের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে জায়াগা বের করা
হচ্ছে। এখন তো তাকে টয়লেট ছাড়তেই হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা আবদুল হান্নান জানান, শুনেছি পরিত্যক্ত টয়লেট কক্ষে এক মহিলা
বসবাস করছে দীর্ঘদিন থেকে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।
No comments