বকশীবাজার রণক্ষেত্র
(ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হামলার সূত্রপাত, খালেদার গাড়িবহর, এমপি ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা, ভাঙচুর, আগুন, বিএনপির বিক্ষোভ কাল) বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে ঘিরে রাজধানীর বকশীবাজার এলাকায়
জড়ো হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাদের দেহ তল্লাশি
করে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাস্তায়
অবস্থান করায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। কিন্তু হঠাৎই শান্তিপূর্ণ এ চিত্র
বদলে যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে ধাওয়া করে হামলা চালায় বিএনপি
নেতাকর্মীদের ওপর। এ সময় অনেকটা নীরব দর্শকই ছিল পুলিশ। কিছুক্ষণ পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষণের পর অ্যাকশনে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাঁদানে গ্যাস
আর রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় তারা। ততক্ষণে
পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। রাস্তায় ফেলে ছাত্রলীগের কয়েকজন মিলে
বিএনপি ও ছাত্রদলের একেকজনকে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায়। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টা
থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্তত
কয়েক শ’ সাধারণ মানুষ। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে
সেখানে তাদের ওপর হামলা চালায় সরকারদলীয় কর্মচারীরা। এ সময় হাসপাতাল গেটে
ছাত্রদল কর্মীদের হামলার শিকার হন নেত্রকোনা-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি ছবি
বিশ্বাস। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল কর্মীরা তাকে গাড়ি থেকে বের করে মারধর করে। এতে
তার মাথা ফেটে যায়। এ সময় তার গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল
থেকে গ্রেপ্তার করেছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার
ঘটনায় আটককৃত দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক ছাত্রকে দুই বছরের কারাদণ্ড
দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যেই আলিয়া মাদরাসা মাঠের
বিশেষ আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এ সময় তার গাড়িকে লক্ষ্য করেও
ইট-পাটকেল ছোড়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল বের
করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল ও ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদল। ওদিকে হামলার
প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা শহরগুলোতে
বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তারা অভিযোগ করেছে, আক্রমণকারীদের
মূল পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা। তবে সাধারণ মানুষের
স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানের কারণে সেটা সম্ভব না হলেও হামলায় দলের নেতাকর্মীসহ
আহত হয়েছেন অন্তত ৬ শতাধিক।
যেভাবে হামলার সূত্রপাত: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকেই বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এদিকে চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আলিয়া মাদরাসামুখী প্রতিটি প্রবেশপথ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। আর্মড পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয় প্রতিটি প্রবেশপথে। মজুত রাখা হয় রায়ট কার, জলকামান, এপিসি ও পুলিশ ভ্যান। নিরাপত্তা ব্যারিকেড ডিঙিয়ে খণ্ড-খণ্ডভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হলের সামনের মোড়ে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী বকশীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। ওদিকে বেলা ১১টার দিকে পলাশীর মোড়ে অবস্থান নেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ওই এলাকা দিয়ে বিএনপির যে সব নেতাকর্মী বকশীবাজার মোড়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই ধরে মারধর করেন তারা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে পলাশীর মোড় থেকে কয়েক শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও রড নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন তারা। প্রথমদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও পরে বুয়েটের হল থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে আরও কয়েক শ’ কর্মী যোগ দেয়। সম্মিলিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন তারা। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর শটগানের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়া হয় ছাত্রলীগের অবস্থান থেকে। সশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে চানখাঁরপুলের দিকে পিছু হটতে থাকেন। এ সময় পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মীরা বেপরোয়া লাঠিপেটা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পলায়নপর কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীকে ধরে গণপিটুনি দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ৮-১০ জন মিলে এক একজনকে উপর্যুপরি পেটানোর সে দৃশ্য ছিল ভয়াবহ। মাথায় আঘাত করার পর রাস্তায় পড়ে যাওয়া এক ছাত্রদল কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয় দুই পা। রাস্তায় পড়ে যাওয়া আরেক ছাত্রদল কর্মীর মুখ ও মাথার ওপর লাফাতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। আরেক ছাত্রদল কর্মীকে মুমূর্ষু অবস্থায় বস্তার মতো রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছুড়ে ফেলা হয়। অর্ধমৃত অবস্থায় তারা পড়ে থাকেন রাস্তায়। এদিকে সংঘর্ষ শুরুর প্রথম ১০ মিনিট পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরে ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার শেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড, বকশীবাজার, পলাশী মোড়সহ আশপাশের এলাকায়। ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় চানখাঁরপুল ফ্লাইওভার মোড়ে। এসময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। তারা ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোতে থাকে। রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এসময় পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে মোটরসাইকেল ও টায়ারের আগুন নেভায়। এদিকে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চানখাঁরপুল দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। এসময় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়িকে চারপাশে কর্ডন করে আলিয়া মাদরাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পলাশীর মোড় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলে যায়। সংঘর্ষ থামার পর রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য স্যান্ডেল ও গুলির খোসা। আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরিফ হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন, তেজগাঁও কলেজের আরাফাত, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম, জগন্নাথ হলের ছাত্রদল কর্মী মিঠুন কুমার দাস, সূর্যসেন হলের শাফি, জহুরুল হক হলের মাসুদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল জলিল, ছাত্রদল কর্মী শামসুল আবেদিন, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মী এমএম ইমরান, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মৃণাল রায়, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী সোহেল রানা, আল-আমিন, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের কর্মী কাওসার, ফরহাদ হোসেন রাজন, তানজিল হাসান, যুবদলের মহানগর দক্ষিণের সদস্য এমএন ইসলাম, মোহাম্মদ সাইদ প্রমুখ। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল, সাত্তার, কাওসারসহ অন্তত ১০জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। হামলার সময় ছাত্রলীগের এসএম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান পিকুল ও একুশে হলের কর্মী রাজসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীও পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। এদিকে দেড়টার দিকে মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্ধারণ করলে খালেদা জিয়া আদালত থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যান।
এমপি ছবির ওপর হামলা
ওদিকে ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদলের একাংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। এসময় হাসপাতালের সরকার দলীয় কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। কর্মচারীদের ধাওয়া খেয়ে হাসপাতাল গেটে অবস্থান নেয় ছাত্রদল নেতকর্মীরা। এ সময় নেত্রকোনা-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি ছবি বিশ্বাস গাড়িতে করে মেডিকেলে ঢুকছিলেন। গাড়িতে সংসদ সদস্য স্টিকার দেখেই তার ওপর হামলা চালায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। হামলাকারীরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে। পরে তারা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় ছুটে যায় পুলিশ। এসময় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়ির আগুন নেভায়। হামলার একপর্যায়ে এমপি ছবি বিশ্বাসকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি বিশ্বাস মানবজমিনকে জানান, পাবলিক লাইব্রেরি থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে আসছিলেন। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে বলেন চালককে। এর মধ্যেই তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এমপি ছবি বিশ্বাসকে হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আফরিন জাহান জানান, ছবি বিশ্বাসের কানের পেছনের অংশ ফেটে গেছে। এছাড়া তিনি মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে পেয়েছেন। এ ঘটনায় দনিয়া কলেজের ছাত্র আফজাল হোসেনকে দুই বছরের সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম তাৎক্ষণিকভাবে এই সাজা দেন। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন জানান, হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আফজালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আফজাল। তিনি জানান, রোগী দেখার জন্য বন্ধুর সঙ্গে তিনি হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। একই ভাবে তার পিতা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, তার সন্তান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। গ্রেপ্তারকৃত আফজাল হোসেন দনিয়া কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। যাত্রাবাড়ী বউবাজার এলাকার কুতুবখালীর ১৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার চৌকিদারকান্দি গ্রামে। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের মিরপুর থানার সহ-সভাপতি ফিরোজ অভিযোগ করেন, কোন কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে মিছিল থেকে গুলি বর্ষণ করা হলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বুয়েটে হামলা চালায়। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বকশীবাজার মোড়ে ছাত্রদলের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে যায়। তখন তাদের নিবৃত্ত করার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি। ওদিকে সংঘর্ষের শুরুতে পুলিশের নীরবতার বিষয়ে লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে শুরুতে কিছু সময় লেগেছে। যে কারণে পুলিশ প্রথমে নীরব ছিল। পরে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
ঢাবিতে ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে গুলি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে, ফাঁকা গুলি করে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে বকশীবাজার এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর টিএসসিতে অবস্থান করে তারা এই মহড়া দেন। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, একুশে হল, ফজলুল হক হল, শহীদুল্লাহ হল এবং কার্জন হলের গেট শিকল দিয়ে বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের নেতারা। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হতে থাকে তারা। বুয়েটের পাশে ছাত্রদলের অবস্থানের কথা শুনে ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটের দিকে যায়। পরে বকশীবাজার মোড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব উদ্দীন, সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল। বকশীবাজার মোড়ে হামলার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে চলে আসে। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র মহড়া দেয়। দুপুর ১টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ কারণে নেতাকর্মীরা সবাই এক হয়ে তাদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এসেছে। সমাবেশ শেষ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টিএসসি সড়কদ্বীপে অবস্থান নেয়। সেখানে ছাত্রদল সন্দেহে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে নেতারা উদ্ধার করে রিকশায় তুলে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ঢাকা কলেজ মিছিল নিয়ে টিএসসিতে আসে। দুপুর দুইটায় মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে কালো জ্যাকেট পরা দু’জন একটা পিস্তল থেকে চার রাউন্ড এবং অপর একজন কাটা রাইফেল থেকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির শব্দে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ক্যাম্পাসে যেই অস্থিতিশীল অবস্থান সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হবে।
‘পরিকল্পনা ছিল খালেদার ওপর হামলার’
শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বকশীবাজার ও আশপাশের এলাকায় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের জন্য সরকারকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, এটা সবার কাছে স্পষ্ট, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। ক্ষমতাসীনদের ওই আক্রমণের মূল পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা। আপনারা দেখেছেন তার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগে থেকেই আক্রমণ শুরু হয়। তবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানের কারণে সরকার সমর্থকদের ওই আক্রমণ সফল হয়নি। যদিও তাদের এ হামলায় বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীসহ ৬০০ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। আমরা এ হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশের জেলা শহর ও ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবো। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে যান। এ সময় তাকে শুভেচ্ছা জানাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়া এজলাসে উপস্থিত হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। পুলিশ ও র?্যাবের ছত্রছায়ায় এ হামলা চালানো হয়। এতে ৬ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে শতাধিক লোকের অবস্থা মারাত্মক। সেখান থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, অবৈধ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমন করতে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক দিন ধরে অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশালীন উক্তি করছেন। পুরান ঢাকায় হামলার ঘটনায় তা মারাত্মকভাবে প্রকাশ ঘটেছে। হামলার ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, অন্যথায় যে কোন অবস্থার জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে। গাজীপুরের জনসভা সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গাজীপুরে আমরা জনসভা করার অনুমতি পেয়েছি। ছাত্রলীগ অন্যায়ভাবে মঙ্গলবার রাতে জনসভাস্থলে আক্রমণ চালিয়েছে। মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের মারধর করেছে। ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার কারা দিবস উপলক্ষে গাজীপুর যান। তিনি সেখান থেকে ফিরে আসার পর থেকে এ তাণ্ডব শুরু হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কি গণতন্ত্রবিরোধী এ কার্যকলাপ শুরু হলো? তিনি বলেন, সরকারের আসলে কোন নৈতিক ভিত্তি নেই বিধায় তারা ভিন্নমতের লোকজনকে দমন-নিপীড়ন করছে। গণআন্দোলন দমাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। সরকারের এমন কার্যকলাপে কোন ?অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার তাদের ওপরই বর্তাবে। তিনি বলেন, গাজীপুরের জনসভা যথাসময়েই হবে। একজন এমপির গাড়িতে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, এ হামলার দায় সরকার, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিতে হবে। গাড়ি তারা পুড়িয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি সদস্যসচিব হাবিব-উন খান নবী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যেভাবে হামলার সূত্রপাত: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকেই বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এদিকে চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আলিয়া মাদরাসামুখী প্রতিটি প্রবেশপথ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। আর্মড পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয় প্রতিটি প্রবেশপথে। মজুত রাখা হয় রায়ট কার, জলকামান, এপিসি ও পুলিশ ভ্যান। নিরাপত্তা ব্যারিকেড ডিঙিয়ে খণ্ড-খণ্ডভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হলের সামনের মোড়ে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী বকশীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। ওদিকে বেলা ১১টার দিকে পলাশীর মোড়ে অবস্থান নেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ওই এলাকা দিয়ে বিএনপির যে সব নেতাকর্মী বকশীবাজার মোড়ে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তাদেরকেই ধরে মারধর করেন তারা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে পলাশীর মোড় থেকে কয়েক শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও রড নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন তারা। প্রথমদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও পরে বুয়েটের হল থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে আরও কয়েক শ’ কর্মী যোগ দেয়। সম্মিলিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন তারা। এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর শটগানের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়া হয় ছাত্রলীগের অবস্থান থেকে। সশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে চানখাঁরপুলের দিকে পিছু হটতে থাকেন। এ সময় পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মীরা বেপরোয়া লাঠিপেটা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পলায়নপর কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীকে ধরে গণপিটুনি দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ৮-১০ জন মিলে এক একজনকে উপর্যুপরি পেটানোর সে দৃশ্য ছিল ভয়াবহ। মাথায় আঘাত করার পর রাস্তায় পড়ে যাওয়া এক ছাত্রদল কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয় দুই পা। রাস্তায় পড়ে যাওয়া আরেক ছাত্রদল কর্মীর মুখ ও মাথার ওপর লাফাতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। আরেক ছাত্রদল কর্মীকে মুমূর্ষু অবস্থায় বস্তার মতো রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছুড়ে ফেলা হয়। অর্ধমৃত অবস্থায় তারা পড়ে থাকেন রাস্তায়। এদিকে সংঘর্ষ শুরুর প্রথম ১০ মিনিট পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরে ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার শেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে চানখাঁরপুল, নাজিমউদ্দিন রোড, বকশীবাজার, পলাশী মোড়সহ আশপাশের এলাকায়। ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় চানখাঁরপুল ফ্লাইওভার মোড়ে। এসময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। তারা ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোতে থাকে। রাস্তায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এসময় পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে মোটরসাইকেল ও টায়ারের আগুন নেভায়। এদিকে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চানখাঁরপুল দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। এসময় বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়িকে চারপাশে কর্ডন করে আলিয়া মাদরাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পলাশীর মোড় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলে যায়। সংঘর্ষ থামার পর রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য স্যান্ডেল ও গুলির খোসা। আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শরিফ হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন, তেজগাঁও কলেজের আরাফাত, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম, জগন্নাথ হলের ছাত্রদল কর্মী মিঠুন কুমার দাস, সূর্যসেন হলের শাফি, জহুরুল হক হলের মাসুদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল জলিল, ছাত্রদল কর্মী শামসুল আবেদিন, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মী এমএম ইমরান, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মৃণাল রায়, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী সোহেল রানা, আল-আমিন, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের কর্মী কাওসার, ফরহাদ হোসেন রাজন, তানজিল হাসান, যুবদলের মহানগর দক্ষিণের সদস্য এমএন ইসলাম, মোহাম্মদ সাইদ প্রমুখ। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল, সাত্তার, কাওসারসহ অন্তত ১০জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। হামলার সময় ছাত্রলীগের এসএম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান পিকুল ও একুশে হলের কর্মী রাজসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীও পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন। এদিকে দেড়টার দিকে মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্ধারণ করলে খালেদা জিয়া আদালত থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যান।
এমপি ছবির ওপর হামলা
ওদিকে ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রদলের একাংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। এসময় হাসপাতালের সরকার দলীয় কর্মচারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। কর্মচারীদের ধাওয়া খেয়ে হাসপাতাল গেটে অবস্থান নেয় ছাত্রদল নেতকর্মীরা। এ সময় নেত্রকোনা-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি ছবি বিশ্বাস গাড়িতে করে মেডিকেলে ঢুকছিলেন। গাড়িতে সংসদ সদস্য স্টিকার দেখেই তার ওপর হামলা চালায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। হামলাকারীরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে। পরে তারা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে হাসপাতাল এলাকায় ছুটে যায় পুলিশ। এসময় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়ির আগুন নেভায়। হামলার একপর্যায়ে এমপি ছবি বিশ্বাসকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি বিশ্বাস মানবজমিনকে জানান, পাবলিক লাইব্রেরি থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে আসছিলেন। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে বলেন চালককে। এর মধ্যেই তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এমপি ছবি বিশ্বাসকে হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আফরিন জাহান জানান, ছবি বিশ্বাসের কানের পেছনের অংশ ফেটে গেছে। এছাড়া তিনি মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে পেয়েছেন। এ ঘটনায় দনিয়া কলেজের ছাত্র আফজাল হোসেনকে দুই বছরের সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম তাৎক্ষণিকভাবে এই সাজা দেন। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন জানান, হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আফজালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আফজাল। তিনি জানান, রোগী দেখার জন্য বন্ধুর সঙ্গে তিনি হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। একই ভাবে তার পিতা আবুল হোসেন জানিয়েছেন, তার সন্তান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। গ্রেপ্তারকৃত আফজাল হোসেন দনিয়া কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। যাত্রাবাড়ী বউবাজার এলাকার কুতুবখালীর ১৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার চৌকিদারকান্দি গ্রামে। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের মিরপুর থানার সহ-সভাপতি ফিরোজ অভিযোগ করেন, কোন কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে মিছিল থেকে গুলি বর্ষণ করা হলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বুয়েটে হামলা চালায়। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বকশীবাজার মোড়ে ছাত্রদলের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে যায়। তখন তাদের নিবৃত্ত করার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি। ওদিকে সংঘর্ষের শুরুতে পুলিশের নীরবতার বিষয়ে লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কি হচ্ছে তা বুঝে উঠতে শুরুতে কিছু সময় লেগেছে। যে কারণে পুলিশ প্রথমে নীরব ছিল। পরে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
ঢাবিতে ছাত্রলীগের প্রকাশ্যে গুলি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে, ফাঁকা গুলি করে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে বকশীবাজার এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর টিএসসিতে অবস্থান করে তারা এই মহড়া দেন। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, একুশে হল, ফজলুল হক হল, শহীদুল্লাহ হল এবং কার্জন হলের গেট শিকল দিয়ে বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের নেতারা। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হতে থাকে তারা। বুয়েটের পাশে ছাত্রদলের অবস্থানের কথা শুনে ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটের দিকে যায়। পরে বকশীবাজার মোড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব উদ্দীন, সমাজসেবা সম্পাদক কাজী এনায়েত, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল। বকশীবাজার মোড়ে হামলার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে চলে আসে। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র মহড়া দেয়। দুপুর ১টায় রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ কারণে নেতাকর্মীরা সবাই এক হয়ে তাদের প্রতিহত করতে এগিয়ে এসেছে। সমাবেশ শেষ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টিএসসি সড়কদ্বীপে অবস্থান নেয়। সেখানে ছাত্রদল সন্দেহে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে নেতারা উদ্ধার করে রিকশায় তুলে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ঢাকা কলেজ মিছিল নিয়ে টিএসসিতে আসে। দুপুর দুইটায় মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে কালো জ্যাকেট পরা দু’জন একটা পিস্তল থেকে চার রাউন্ড এবং অপর একজন কাটা রাইফেল থেকে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির শব্দে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ক্যাম্পাসে যেই অস্থিতিশীল অবস্থান সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হবে।
‘পরিকল্পনা ছিল খালেদার ওপর হামলার’
শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বকশীবাজার ও আশপাশের এলাকায় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের জন্য সরকারকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, এটা সবার কাছে স্পষ্ট, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। ক্ষমতাসীনদের ওই আক্রমণের মূল পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা। আপনারা দেখেছেন তার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগে থেকেই আক্রমণ শুরু হয়। তবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানের কারণে সরকার সমর্থকদের ওই আক্রমণ সফল হয়নি। যদিও তাদের এ হামলায় বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীসহ ৬০০ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। আমরা এ হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশের জেলা শহর ও ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবো। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে যান। এ সময় তাকে শুভেচ্ছা জানাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়া এজলাসে উপস্থিত হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। পুলিশ ও র?্যাবের ছত্রছায়ায় এ হামলা চালানো হয়। এতে ৬ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে শতাধিক লোকের অবস্থা মারাত্মক। সেখান থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, অবৈধ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমন করতে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক দিন ধরে অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশালীন উক্তি করছেন। পুরান ঢাকায় হামলার ঘটনায় তা মারাত্মকভাবে প্রকাশ ঘটেছে। হামলার ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, অন্যথায় যে কোন অবস্থার জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে। গাজীপুরের জনসভা সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গাজীপুরে আমরা জনসভা করার অনুমতি পেয়েছি। ছাত্রলীগ অন্যায়ভাবে মঙ্গলবার রাতে জনসভাস্থলে আক্রমণ চালিয়েছে। মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের মারধর করেছে। ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার কারা দিবস উপলক্ষে গাজীপুর যান। তিনি সেখান থেকে ফিরে আসার পর থেকে এ তাণ্ডব শুরু হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কি গণতন্ত্রবিরোধী এ কার্যকলাপ শুরু হলো? তিনি বলেন, সরকারের আসলে কোন নৈতিক ভিত্তি নেই বিধায় তারা ভিন্নমতের লোকজনকে দমন-নিপীড়ন করছে। গণআন্দোলন দমাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। সরকারের এমন কার্যকলাপে কোন ?অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার তাদের ওপরই বর্তাবে। তিনি বলেন, গাজীপুরের জনসভা যথাসময়েই হবে। একজন এমপির গাড়িতে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, এ হামলার দায় সরকার, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিতে হবে। গাড়ি তারা পুড়িয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি সদস্যসচিব হাবিব-উন খান নবী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments