আসামে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত ৭৬
আবার রক্তে রঞ্জিত আসাম। বোড়ো জঙ্গিরা একে একে গুলি করে হত্যা করেছে ৭৬ আদিবাসীকে। মঙ্গলবার রাতে সোনিতপুর ও কোকরাঝাড় জেলায় আদিবাসীদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে গুলি করে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (এনডিএফডি)’র জঙ্গিরা। এর জবাবে গতকাল ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা বোড়োদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় সরকার সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আসামে পাঠিয়েছে অতিরিক্ত ৫০০০ আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক আইজিপি এসএন সিং বলেছেন, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬২। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সোনিতপুরে নিহত হয়েছেন ৩৭ জন। কোকরাঝাড়ে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। সোনিতপুরে নিহতদের সবাই আদিবাসী। এ এলাকাটি আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের আন্তঃসীমান্তের কাছাকাছি। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিরপরাধ মানুষকে হত্যার এ ঘটনাকে তিনি ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যায়িত করেছেন। গতকালই পরিস্থিতি দেখতে আসামে যাওয়ার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। আইজিপি এসএন সিং বলেছেন, শান্তি সংলাপের বিরুদ্ধে এনডিএফবি’র যে অংশ তারাই এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার সন্ত্রাসীদের হুমকিতে মাথা নত করবে না। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর একই সময়ে ৫-৬টি হামলা চালায় এনডিএফবি (সংবিজিৎ) সংগঠনের বোড়ো জঙ্গিরা। তারা আসাম-বাংলাদেশ সীমানার সোনিতপুরের বাতাসিপুর, পাভৈ, হাতিজুলি এবং কোকরাঝাড়ের পাখিরিগুড়ি, উল্টাপানি, মধুপুর, সেরফাংগুড়িতে তারা নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে ঝাঁঝরা হয় অসংখ্য মানুষ। ওই দিন মৃতের সংখ্যা ৪৮ থাকলেও বুধবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২তে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মানস ও নামেরি জাতীয় উদ্যান। ওই দু’এলাকায় জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে আসাম পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী। এনডিএফবি দমনে রাজ্যে বিশেষ অভিযান শুরুর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। এর আগে, যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজন সংবিজিৎপন্থি জঙ্গির। সে জন্য এনডিএফবি সশস্ত্র বদলার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু এনডিএফবি’র হুমকি উড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হুমকিই এবার সত্যি করে দেখালো সংবিজিৎপন্থি জঙ্গিরা। পুলিশ সূত্রে খবর, মানস জাতীয় উদ্যানে সংবিজিৎ গোষ্ঠীর জঙ্গিদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। আগেই গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের আঁচ পড়েছিল মানসের বিভিন্ন রেঞ্জে। তাদের হামলায় এ বছর মৃত্যু হয় অনেকেরই।
No comments