সুন্দরবনের দুর্ঘটনা নিয়ে দুই সংসদীয় কমিটির পাল্টাপাল্টি
সুন্দরবনের
শেলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার দুর্ঘটনার জন্য নৌ-মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাকে
দায়ী করেছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এবার
উল্টো পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে বলে দাবি করেছে
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে
ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেলের খননকাজ দ্রুত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই
ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
আগামী জুনের মধ্যে শেলা নদীর পরিবর্তে এই নৌরুটটি চালু করা সম্ভব হবে বলে
কমিটি আশা করছে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মেজর
(অব.) রফিকুল ইসলাম। বৈঠকে কমিটির সদস্য মন্ত্রী মো. শাজাহান খান, তালুকদার
আব্দুল খালেক, মো. হাবিবুর রহমান, রণজিৎ কুমার রায় ও মো. আনোয়ারুল আজীম
(আনার) এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য
তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ট্যাঙ্কার ডুবি ও তেল ছড়িয়ে পড়ার পর নৌ-পরিবহন
মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম নেয়নি। কিন্তু আমি তো মনে করি, সুন্দরবন
ধ্বংসের জন্য বন মন্ত্রণালয়ই বেশি দায়ী। তারা সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ কেটে
শেষ করে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে ছোট-বড় ৫ হাজারের
বেশি নদ-নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা হয়। পরিবেশ
মন্ত্রণালয় তখন কি করে? আর তেল ট্যাঙ্কার ডুবির পর আমরা না হয় যথাযথ
কার্যক্রম নেয়নি, কিন্তু তারা কি করেছেন? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের পরিবেশ কিছু ক্ষতি হবে। তবে তা
খুব বেশি নয়। মিডিয়াতে এটা নিয়ে বেশিই বলা হচ্ছে। বৈঠকে জানানো হয়, শেলা
নদীর পরিবর্তে পুরানো মংলা-ঘাষিয়াখালী রুট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই
নৌ-পথে চলতি বছর ২২শে মে ও ২১শে জুন দুটি ড্রেজার ড্রেজিং শুরু করেছে।
পরবর্তীতে কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য আরো তিনটি ড্রেজার পাঠানো হয়েছে। এই ৫টি
ড্রেজার গত ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৫৬ ঘনমিটার পলির ড্রেজিং শেষ করেছে।
এসময় আরো জানানো হয়, এই নৌ-পথটি চালু করতে প্রায় এক কোটি ঘন মিটার মাটি
খনন করতে হবে। এই খনন কাজের জন্য আরো দু’টি লটের (৭০ লাখ ঘন মিটার) মধ্যে
একটি লটের মাটি খননের টেন্ডার গ্রহণ করা হয়েছে। যা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত
মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ওই দরপত্রে চায়না হারবার
ড্রেজিং কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। অপর লটটির
পুনঃদরপত্র ২৪শে ডিসেম্বর গ্রহণ করা হয়েছে। এই দু’টি টেন্ডারের কার্যাদেশের
পর আরো ৮টি বেসরকারি ড্রেজার কাজ শুরু করবে। আর সেটা হলে আগামী জুন মাসের
মধ্যে নৌ-পথটির খনন কাজ শেষ হবে। বৈঠকে চীনের আর্থিক সহায়তায় ৬টি জাহাজ
সংগ্রহের জটিলতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, ভবিষ্যতে যাতে
নৌ-দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
No comments