চতুর্থ প্রহরে ওবামার চার ছক্কা
তিন মাস আগেও ভাবা হয়েছিল, ইতিহাসে তাঁর নাম আমেরিকার ব্যর্থতম প্রেসিডেন্টের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু এই বছর শেষ হওয়ার আগেই, তাঁর ক্ষমতার চতুর্থ প্রহরে (দুই মেয়াদে আট বছরের শেষ দুই বছর), প্রবল ছক্কা হেঁকেছেন বারাক ওবামা। একটা নয়, পর পর চারটি। গত সপ্তাহে বর্ষশেষ সংবাদ সম্মেলনে ওবামা মৃদু হেসে বলেছেন, খেলা এখনো বাকি আছে। এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে ওবামার দল, ডেমোক্রেটিক পার্টি, প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের বেধড়ক মারে কার্যত ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেট চলে যায় রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। এই বিপর্যয়ের জন্য সব দোষ পড়েছিল ওবামার ঘাড়ে।
চার বছর আগে, ওবামার শাসনামলের দ্বিতীয় বছরে, মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়। সে পরাজয়ের জন্যও তর্জনী তুলে ওবামাকে নির্দেশ করা হয়েছিল। বিপুল ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হলে কি হবে, কংগ্রেসের সহযোগিতা ছাড়া তাঁর একার পক্ষে করার খুব সামান্যই আছে। ফলে, ধরেই নেওয়া হয়েছিল কংগ্রেসের উভয় কক্ষ হারিয়ে এই লোকটি এখন আস্ত জিন্দা লাশ। সবাইকে ভুল প্রমাণিত করলেন ওবামা। প্রথমে চীনের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করলেন। এরপর রিপাবলিকান প্রতিবাদ সত্ত্বেও কলমের এক খোঁচায় আমেরিকার ৫০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধকরণের পথ খুলে দিলেন। সে চমক কাটতে না কাটতেই কিউবার সঙ্গে ৫০ বছরের শত্রুতা মিটিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। ভাবা হয়েছিল, বছরের শেষ মাথায় এসে সরকার চালু রাখার জন্য নতুন বাজেট বরাদ্দে রিপাবলিকান নেতৃত্ব সম্মত হবে না। উল্টো, সামান্য গাঁইগুঁই করে সে বাজেটও পাস হলো। ওবামার থলিতে পড়ল চতুর্থ বিজয়। এর সঙ্গে যোগ করুন রাশিয়ার প্রতি ওবামার কঠোর অবস্থান। ওবামা ও তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররা ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগে পুতিনের রাশিয়ার বিরুদ্ধে একযোগে যে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেন, তার ফলে সে দেশের অর্থনীতির এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। পুতিন তাঁর হম্বিতম্বি থামাননি, তবে কোনো সন্দেহ নেই, মস্কো এখন সমঝোতার পথ খুঁজছে।
এই সাফল্যও ওবামার থলিতে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি থেকেও তাঁর জন্য ভালো খবর এসেছে। বেকারত্ব এখন ৬ শতাংশের কোঠায়, বাজেট ঘাটতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম, মুদ্রাস্ফীতি নামমাত্র। সবচেয়ে বড় কথা, ওবামার সময়ে প্রায় এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। গত চার বছরে প্রতি মাসে গড়ে সোয়া দুই লাখ নতুন চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। আমেরিকার মন্দাবস্থার এক বড় কারণই ছিল গৃহনির্মাণ খাতের কাহিল অবস্থা। সেই খাতেও নতুন গতি এসেছে। ফলে ওবামা মুচকি হাসি তো দিতে পারেনই। এখন ওবামা বেকার বিমা পুনরায় চালু করতে চান, জেলব্যবস্থার সংস্কার চান, ঘণ্টাপ্রতি সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করতে চান ও প্রাক-কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শিশু শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার চান। তবে এসব করা খুব সহজ হবে না। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এর কিছু কিছু অর্জন হয়তো সম্ভব, কিন্তু কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়া তিনি আর কতটুকুই এগোতে পারবেন। তবে মেঘের আড়ালে আলোকরেখাও রয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যেসব সিদ্ধান্ত ওবামা নিয়েছেন, আমেরিকার মানুষ তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রমাণ, ওবামার ঊর্ধ্বমুখী জনসমর্থন। দুই মাস আগেও ওবামার জনসমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ। বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশে।
No comments