অ্যানাকোন্ডার পেটে ১ ঘণ্টা
মার্কিন
প্রকৃতিবিদ পল রসোলির মূল উদ্দেশ্য ছিল ধ্বংসের পথে থাকা অ্যামাজন রেইন
ফরেস্ট বা বৃষ্টিপ্রধান বনাঞ্চলকে সবার সামনে তুলে ধরা এবং এর মাধ্যমে রেইন
ফরেস্টটি রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করা। তিনি মনস্থ করলেন, এমন কিছু একটা করতে
হবে, যা মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করবেই। ব্যস! মৃত্যুর পরোয়া না করেই বিশ্বের
সবচেয়ে বড় সাপ অ্যানাকোন্ডার খাবার হয়ে তার পেটের ভেতর চলে গেলেন তিনি।
সাপটি তাকে আস্তে আস্তে গিলে ফেলার প্রতিটি মুহূর্ত ধারণ করা হলো
ক্যামেরায়। ১ ঘণ্টা পেটের মধ্যে রইলেন এবং অক্ষতভাবে বাইরে বেরিয়ে এলেন পল
রসোলি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। সাধারণভাবে, অ্যানাকোন্ডা
তার শিকারকে ধরার পর তাকে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং গিলে ফেলে। ফলে, পলের এ
সিদ্ধান্তটা নির্ঘাত মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো ছিল। তবে হার
মানেন নি তিনি। বেঁচে বেরিয়ে এসেছেন অ্যানাকোন্ডার পেট থেকে। সারা বিশ্বের
মানুষ এখন ডিসকভারি চ্যানেলের ‘ইটেন অ্যালাইভ’ অনুষ্ঠানের কল্যাণে সেই
দৃশ্য নিজের চোখে দেখতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রে রোববার রাত থেকেই অনুষ্ঠানটি
শুরু হয়েছে। এক ঘণ্টা অ্যানাকোন্ডার পেটের ভেতর ছিলেন পল। দম যাতে বন্ধ না
হয়ে যায়, সে জন্য বিশেষ ডিজাইনের কার্বন ফাইবারের তৈরি স্যুট বা পোশাক
পরিধান করেছিলেন। সঙ্গে ছিল শ্বাস নেয়ার যন্ত্র, ক্যামেরা ও যোগাযোগের
সরঞ্জাম। টানা ৬০ দিন চেষ্টা চালানোর পর পেরুর একটি জঙ্গলে প্রয়োজন অনুযায়ী
একটি অ্যানাকোন্ডা পান তিনি ও তার দলের সদস্যরা। এটি দৈর্ঘ্যে ৬ মিটার বা
২০ ফুট লম্বা। মাথার দিক থেকে পলকে গিলতে শুরু করে অ্যানাকোন্ডাটি এবং
দৈত্যাকৃতির সাপটির পেটে ১ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন তিনি। পুরো সময়টা দলের
সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন পল। এদিকে অ্যানাকোন্ডাটির যাতে
কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রেখেছিলেন পল রসোলি এবং তার দলের বাকি
সদস্যরা। অ্যানাকোন্ডাটিও সুস্থ রয়েছে বলে জানান তিনি। কিভাবে সাপটির পেট
থেকে মুক্ত হলেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানান নি পল। অ্যামাজন রেইন
ফরেস্ট ও এর জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে এক দশকেরও বেশি সময় একনিষ্ঠভাবে
কাজ করছেন পল। সেখান থেকেই ধারণাটি মাথায় আসে তার। পল রসোলি বলছিলেন,
বিশ্বের প্রত্যেকেই জানেন রেইন ফরেস্ট হারিয়ে যাচ্ছে এবং বেশির ভাগ মানুষই
আপনাকে বলতে পারেন রেইন ফরেস্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, তা সত্ত্বেও
যথেষ্ট মানুষ বিষয়টির দিকে নজর দিচ্ছেন না এবং এটাকে সেরকম সমস্যা হিসেবেও
অনুধাবন করতে পারছেন না। এদিকে বিভিন্ন প্রাণী অধিকার সংগঠন পলের তীব্র
সমালোচনা করেছে। সাপটিকে অযথা কষ্ট দেয়া হয়েছে বলে মনে করছে তারা। এমনকি
পলকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে। এতে তিনি অবশ্য দমে যান নি। বরং, তিনি সবার
দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে যা যা করা প্রয়োজন, সেটাই করেছেন বলে মনে করেন।
No comments