পোশাকশিল্পকে আরও মানবিক হতে পরামর্শ
ক্রেতা
প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদকেরা মুনাফা, মূল্য আর মানসম্পন্ন কারখানা বিষয়ে নিজ
নিজ অবস্থান নিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার আলোচনায়
অংশ নিয়ে বলেন, ‘এটা খুবই লজ্জাজনক বিষয় যে, তোমরা (ক্রেতা প্রতিষ্ঠান)
১০০ শতাংশ মুনাফা করছ, আর শ্রমিকেরা ক্ষুধার্ত থাকে।’ এর পরই তাঁর এই
বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আলোচনা চলতে থাকে। নাজমা আক্তার বাণিজ্যকে মানবিক,
শিল্পকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মুনাফা, মুনাফা আর মুনাফা
চাইলে ভালো শিল্প হবে না।’ তিনি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা, বিদেশি ক্রেতা
প্রতিষ্ঠান—সবাইকে দায়িত্বশীল বাণিজ্য করার আহ্বান জানান।
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’-এর দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার ‘শিল্প মালিক-ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এই অধিবেশনে সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) নির্বাহী পরিচালক তৌফিক আলী। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আরও বলেন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম গত বছর ২৬০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। ১৫০ শতাংশ মুনাফা করেছে প্রাইমার্ক। কিন্তু কতটা আসছে বাংলাদেশে?
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অধিবেশনে শেষ বক্তা ছিলেন। তিনি নিজের ব্যবসার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি ১৮ ডলারে এক ডজন শার্ট তৈরি করে ক্রেতাদের দিতেন। ২০০২ সালে সেই পোশাক তৈরি করেন মাত্র আট ডলারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হতাম, যদি নাজমার মতো কথা বলতে পারতাম। কিন্তু, আমি সরকারের মন্ত্রী।’ তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে কম মূল্যের এ বাজারে। তিনি দর-কষাকষিতে পোশাকমালিকদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কিন্তু এটা ঠিক, বাংলাদেশের মতো কোথাও ক্রেতারা এভাবে পোশাক কিনতে পারবে না।’
শুরুতেই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক রিচার্ড পি অ্যাপেলবোম বলেন, ব্র্যান্ড ও কারখানাগুলোকে আইনগতভাবে যৌথ দায়দায়িত্বের মধ্যে আনতে হবে। আর শ্রমিক প্রতিনিধিদের কারখানাতে যুক্ত করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনে (এএএফএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট নেট হারম্যান বলেন, তাঁরা এ দেশে শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করছেন। ২০০ কারখানা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকার বাজারে পোশাকের মূল্য ১৪ শতাংশ কমে গেছে।
নরওয়ের সাসটেইনেবল ট্রেডের প্রধান নির্বাহী গুনেলি উইনাম এশিয়ার এক হাজার ৫০০ সরবরাহকারীর ওপর কাজ করেছেন। তিনি বলেন, সরবরাহকারীদের (পোশাক উৎপাদক) অভিযোগ হচ্ছে, ক্রেতারা মূল্য ক্রমশই কমাচ্ছে। কিন্তু তারা খরচ বাড়ার দিকটা বুঝতে চান না। মূল্য কমাতে না পারলে পার্শ্ববর্তী দেশে কাজ নিয়ে যান। আর ক্রেতারা বলেন, তাঁরা বাজার ধরে, লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে মূল্য নির্ধারণ করেন। গুনেলি স্বচ্ছতার সঙ্গে মূল্যের হিসাবগুলো নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
এ পর্যায়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, তাঁরা কারখানার মানসংক্রান্ত ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত (কমপ্লায়েন্স) পালন করে ব্যবসা করেছেন। ২০০৬ সালে স্পেকট্রাম দুর্ঘটনার পর কারখানার পরিবেশ নিয়ে সরকার, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বিজিএমইএ কিছু শর্ত দেয়। ক্রেতারা ন্যূনতম মজুরি, কারখানার পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাঁরা ‘এথিক্যাল আউটসোর্সিং’ বা নৈতিক ক্রয়ের কথা বললেও মূল্য আর বাড়াননি। কিন্তু কারখানার পরিবেশ, ন্যূনতম মজুরি, শ্রমিকের দক্ষতা ও মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে খরচ যোগ করেছেন। তার পরও প্রবৃদ্ধি, ভাবমূর্তি, উৎপাদন—সবই চমৎকারভাবে চলছিল। কিন্তু, ২০১২ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তিনি ক্রেতাদের নৈতিক ক্রয়ের বিষয়টি চর্চার মধ্যে আনতে পরামর্শ দেন।
এ পর্যায়ে নাজমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে ‘সস্তা শ্রমিক’ বলবেন না। শ্রমিকের পাওনা সম্মান দিতে হবে, ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। এ সস্তা শ্রমের কারণেই রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি কারখানাতে আমাদের কথা বলতে পারি, তাহলে মালিকেরাও তাঁদের কথা জানাতে পারবেন।’ এতে একটা উন্নত শ্রম পরিবেশ হবে।
ক্রেতাদের জয়েন্ট এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের (ইটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পার এন বন্ডেভিক বলেন, তাঁরা টেকসই ব্যবসা করতে চান। তা না হলে তাঁদের ব্যবসা থাকবে না। সে জন্যই তাঁরা মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় করেন। তিনি আরও বলেন, তবে উৎপাদন থেকে ব্র্যান্ড পর্যন্ত সর্বত্রই একটা স্বচ্ছতা আসা দরকার। যেখানে শ্রমিকের প্রতিনিধিত্বও থাকতে হবে।
আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির শরিফ অ্যাজ-সাবের বলেন, দুই দিনে আলোচনায় মজুরি, মূল্য ও খরচের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একক কোনো ধারণাও নেই। তিনি প্রস্তাব করেন, বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতের জন্য একটা সচিবালয় হতে পারে। তিনি বলেন, আমেরিকা সরকার যদি খুচরা বিক্রেতাদের মূল্য বাড়াতে বলে, তাহলে বাড়বে। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও এটা করা যায়।
ওইসিডির টাইলার গিলার্ডর বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। সবার জন্য একটা দায়িত্ব-কর্তব্যের নির্দেশিকা তৈরি করা যেতে পারে। সবাইকে তা মেনে চলতে হবে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মায়াদু পিয়ের বলেন, তাঁরা শ্রমিকের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে, নারী ক্ষমতায়নে তাঁরা ভূমিকা নিচ্ছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠা, হাসপাতাল তৈরি করছেন তাঁরা।
তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট’-এর দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার ‘শিল্প মালিক-ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এই অধিবেশনে সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) নির্বাহী পরিচালক তৌফিক আলী। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আরও বলেন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম গত বছর ২৬০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। ১৫০ শতাংশ মুনাফা করেছে প্রাইমার্ক। কিন্তু কতটা আসছে বাংলাদেশে?
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অধিবেশনে শেষ বক্তা ছিলেন। তিনি নিজের ব্যবসার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি ১৮ ডলারে এক ডজন শার্ট তৈরি করে ক্রেতাদের দিতেন। ২০০২ সালে সেই পোশাক তৈরি করেন মাত্র আট ডলারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হতাম, যদি নাজমার মতো কথা বলতে পারতাম। কিন্তু, আমি সরকারের মন্ত্রী।’ তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে কম মূল্যের এ বাজারে। তিনি দর-কষাকষিতে পোশাকমালিকদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কিন্তু এটা ঠিক, বাংলাদেশের মতো কোথাও ক্রেতারা এভাবে পোশাক কিনতে পারবে না।’
শুরুতেই আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক রিচার্ড পি অ্যাপেলবোম বলেন, ব্র্যান্ড ও কারখানাগুলোকে আইনগতভাবে যৌথ দায়দায়িত্বের মধ্যে আনতে হবে। আর শ্রমিক প্রতিনিধিদের কারখানাতে যুক্ত করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনে (এএএফএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট নেট হারম্যান বলেন, তাঁরা এ দেশে শ্রমিকের নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করছেন। ২০০ কারখানা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকার বাজারে পোশাকের মূল্য ১৪ শতাংশ কমে গেছে।
নরওয়ের সাসটেইনেবল ট্রেডের প্রধান নির্বাহী গুনেলি উইনাম এশিয়ার এক হাজার ৫০০ সরবরাহকারীর ওপর কাজ করেছেন। তিনি বলেন, সরবরাহকারীদের (পোশাক উৎপাদক) অভিযোগ হচ্ছে, ক্রেতারা মূল্য ক্রমশই কমাচ্ছে। কিন্তু তারা খরচ বাড়ার দিকটা বুঝতে চান না। মূল্য কমাতে না পারলে পার্শ্ববর্তী দেশে কাজ নিয়ে যান। আর ক্রেতারা বলেন, তাঁরা বাজার ধরে, লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে মূল্য নির্ধারণ করেন। গুনেলি স্বচ্ছতার সঙ্গে মূল্যের হিসাবগুলো নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
এ পর্যায়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, তাঁরা কারখানার মানসংক্রান্ত ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত (কমপ্লায়েন্স) পালন করে ব্যবসা করেছেন। ২০০৬ সালে স্পেকট্রাম দুর্ঘটনার পর কারখানার পরিবেশ নিয়ে সরকার, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বিজিএমইএ কিছু শর্ত দেয়। ক্রেতারা ন্যূনতম মজুরি, কারখানার পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাঁরা ‘এথিক্যাল আউটসোর্সিং’ বা নৈতিক ক্রয়ের কথা বললেও মূল্য আর বাড়াননি। কিন্তু কারখানার পরিবেশ, ন্যূনতম মজুরি, শ্রমিকের দক্ষতা ও মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে খরচ যোগ করেছেন। তার পরও প্রবৃদ্ধি, ভাবমূর্তি, উৎপাদন—সবই চমৎকারভাবে চলছিল। কিন্তু, ২০১২ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তিনি ক্রেতাদের নৈতিক ক্রয়ের বিষয়টি চর্চার মধ্যে আনতে পরামর্শ দেন।
এ পর্যায়ে নাজমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে ‘সস্তা শ্রমিক’ বলবেন না। শ্রমিকের পাওনা সম্মান দিতে হবে, ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। এ সস্তা শ্রমের কারণেই রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি কারখানাতে আমাদের কথা বলতে পারি, তাহলে মালিকেরাও তাঁদের কথা জানাতে পারবেন।’ এতে একটা উন্নত শ্রম পরিবেশ হবে।
ক্রেতাদের জয়েন্ট এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের (ইটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পার এন বন্ডেভিক বলেন, তাঁরা টেকসই ব্যবসা করতে চান। তা না হলে তাঁদের ব্যবসা থাকবে না। সে জন্যই তাঁরা মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় করেন। তিনি আরও বলেন, তবে উৎপাদন থেকে ব্র্যান্ড পর্যন্ত সর্বত্রই একটা স্বচ্ছতা আসা দরকার। যেখানে শ্রমিকের প্রতিনিধিত্বও থাকতে হবে।
আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির শরিফ অ্যাজ-সাবের বলেন, দুই দিনে আলোচনায় মজুরি, মূল্য ও খরচের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একক কোনো ধারণাও নেই। তিনি প্রস্তাব করেন, বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতের জন্য একটা সচিবালয় হতে পারে। তিনি বলেন, আমেরিকা সরকার যদি খুচরা বিক্রেতাদের মূল্য বাড়াতে বলে, তাহলে বাড়বে। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও এটা করা যায়।
ওইসিডির টাইলার গিলার্ডর বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। সবার জন্য একটা দায়িত্ব-কর্তব্যের নির্দেশিকা তৈরি করা যেতে পারে। সবাইকে তা মেনে চলতে হবে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মায়াদু পিয়ের বলেন, তাঁরা শ্রমিকের কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে, নারী ক্ষমতায়নে তাঁরা ভূমিকা নিচ্ছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠা, হাসপাতাল তৈরি করছেন তাঁরা।
No comments