দলের বোঝা প্রশাসনের ঘাড়ে
জনপ্রশাসনে
একজন বিতর্কিত সচিবের নাম ড. খোন্দকার শওকত হোসেন। ক্ষমতার অপব্যবহারসহ
তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। জ্ঞাত
আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের (দুর্নীতি দমন
কমিশন) অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। এছাড়া নামে ও বেনামে তিনটি প্লট নিয়ে
একাধিকবার আকার বাড়ানোর ঘটনায় দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
সম্প্রতি এ মামলার পুনঃতদন্তে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এত
কিছুর পরও সচিব শওকত বহাল তবিয়তে আছেন। অনেক আগে ওএসডি হওয়ার কথা থাকলেও
তিনি সরকারি দলের বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে মোটেই বেগ পেতে
হয়নি। তবে অনেকটা বিলম্বে হলেও রোববার এক আদেশে তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে
পোস্টিং (ডাম্পিং) দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রণালয়ের এই সচিব এখন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক। এদিকে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তথা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকেও ভালোভাবে গ্রহণ করেননি
প্রশাসনের দলমত নিরপেক্ষ সচেতন কর্মকর্তারা। তাদের অনেকে সোমবার যুগান্তরকে
বলেন, শুধু সরকারি দলের ঘরের কর্মকর্তা হওয়ায় সচিব শতকত এখনও সচিবগিরি
করতে পারছেন। অন্যথায় সচিব পদে বহাল থাকা তো দূরের কথা, তাকে ওএসডি হওয়াসহ
আইনের হাতে সোপর্দ হতে হতো। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বলেন, ড. শওকতের মতো
কর্মকর্তারা আসলে সরকারি দলের কখনও আশীর্বাদ নয়, বোঝা। আরও সহজ করে বললে
বলতে হবে, দলের বোঝা প্রশাসনের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে শুধু
সরকারি দলের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হচ্ছে না, প্রশাসনেরও নানামুখী ক্ষতি
হচ্ছে। তারা বলেন, ক্ষমতায় থাকার কারণে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এখন
প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করতে পারছে না। কিন্তু বাস্তবে সচিব শওকত সম্পর্কে
ইতিমধ্যে জনমনে যে ধারণা তৈরি হয়েছে তাতে বেশিরভাগ মানুষ বিষয়টিকে ভালোভাবে
নেয়নি। এভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তার স্কোর কমে যায়। যার
প্রমাণ মেলে নির্বাচনে।
জানা গেছে, চাকরিজীবনে সচিব ড. শওকত হোসেন যেসব কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন তার প্রায় সব স্থানেই তার বিরুদ্ধে কম-বেশি ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তিনি গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার পর নিজেকে একেবারে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করে ফেলেন। একদিকে সরকারি দল সমর্থক কর্মকর্তার তকমা অর্জন, অন্যদিকে এই মন্ত্রণালয়ে থাকাবস্থায় তিনি সরকারের একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম হন। বলা যায়, এরপর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ক্ষমতার দম্ভে সচিব শওকত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা ওই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তিনি এতটাই অপ্রতিরোধ্য ছিলেন যে, সমাজের বহু গণমান্য ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে বহুবার হেনস্তা হয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ ছিল সবার মুখে মুখে। সচিবের সঙ্গে তার পিএসও কম যাননি। পিএস রতন চন্দ্র পণ্ডিতও সুযোগ পেলে দর্শনার্থীদের নানাভাবে হয়রানি, নাজেহাল আর অপমান করতেন।
অভিযোগ রয়েছে, সে সময় সচিবের দফতরে নিষ্পত্তিহীন শত শত ফাইলের স্তূপ পড়ে থাকত। অনেক ফাইল তিনি পিএসের মাধ্যমে শাখা থেকে সরাসরি এনে দফতরে ফেলে রাখতেন। এছাড়া বহু মানুষের ন্যায্য কাজকে তিনি মাসের পর মাস অহেতুক ঘুরিয়েছেন। মুখে যা বলতেন, কাজে তা করতেন না। অনেক দর্শনার্থীকে তিনি সাক্ষাৎ দেয়ার কথা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন। আবার এভাবে বসিয়ে রেখেও তিনি সাক্ষাৎ না দিয়ে চলে যেতেন। মোদ্দা কথা, ড. শওকত পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাবস্থায় সরকারি দলের প্রভাবশালী লোকজন ছাড়া তার কাছ থেকে কেউ দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত সার্ভিস পাননি। ওই সময় পূর্ত মন্ত্রণালয়ে আসা বহু সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ড. শওকতের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর তাকে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়। এরপর নামে ও বেনামে ৩টি প্লট নেয়া ও একাধিবার এসব প্লটের আকার পরিবর্তন করার অভিযোগে অনুসন্ধান শেষে দুদক থানায় দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। অভিযোগ রয়েছে, এ মামলায় সচিব ড. শওকত যখন ফেঁসে যাচ্ছিলেন তখন মহল বিশেষের হস্তক্ষেপে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দুদকের একটি দায়িত্বশীল পক্ষ শক্ত অবস্থান নেয়ায় শেষমেশ সম্প্রতি এই মামলার মোড় ঘুরে যায়। পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। অপরদিকে সচিব শওকতের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানও অব্যাহত আছে।
এদিকে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সচিব যুগান্তরকে বলেন, সচিব শওকতের মতো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশাসনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছেন। তারা বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মানেই তিনি দুর্নীতিবাজ নন। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কারও ওপর এমন দায় চাপানোও যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু এখানে নৈতিকতা ও ইমেজ রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জরুরি। তারা মনে করেন, যখনই একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় এবং দুদক তদন্ত শুরু করে, তখন প্রথমে উচিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বেচ্ছায় ওএসডি হওয়া। দ্বিতীয়ত, সরকারের দায়িত্ব ছিল অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে পোস্টিংয়ের বাইরে রাখা। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হলে সেখানে অনেক আগেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হতো। তাদের মতে, দলের লোক কিংবা আত্মীয় হলেও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের উচিত হবে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তার ভার আর বহন না করা। সময় তো আছে, ড. শওকত অবসরে যাবেন আগামী বছর এপ্রিলে। যদি তদন্ত শেষ হতে এপ্রিল মাসও পার হয়ে যায় তাহলে সরকার চাইলে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পুনরায় সচিবের দায়িত্ব দিতে পারে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাস্তব অবস্থা এখন এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ বিদায়ী মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত কারও সময়মতো বোধোদয় হচ্ছে না।
জানা গেছে, চাকরিজীবনে সচিব ড. শওকত হোসেন যেসব কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন তার প্রায় সব স্থানেই তার বিরুদ্ধে কম-বেশি ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তিনি গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার পর নিজেকে একেবারে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করে ফেলেন। একদিকে সরকারি দল সমর্থক কর্মকর্তার তকমা অর্জন, অন্যদিকে এই মন্ত্রণালয়ে থাকাবস্থায় তিনি সরকারের একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম হন। বলা যায়, এরপর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ক্ষমতার দম্ভে সচিব শওকত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা ওই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তিনি এতটাই অপ্রতিরোধ্য ছিলেন যে, সমাজের বহু গণমান্য ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে বহুবার হেনস্তা হয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ ছিল সবার মুখে মুখে। সচিবের সঙ্গে তার পিএসও কম যাননি। পিএস রতন চন্দ্র পণ্ডিতও সুযোগ পেলে দর্শনার্থীদের নানাভাবে হয়রানি, নাজেহাল আর অপমান করতেন।
অভিযোগ রয়েছে, সে সময় সচিবের দফতরে নিষ্পত্তিহীন শত শত ফাইলের স্তূপ পড়ে থাকত। অনেক ফাইল তিনি পিএসের মাধ্যমে শাখা থেকে সরাসরি এনে দফতরে ফেলে রাখতেন। এছাড়া বহু মানুষের ন্যায্য কাজকে তিনি মাসের পর মাস অহেতুক ঘুরিয়েছেন। মুখে যা বলতেন, কাজে তা করতেন না। অনেক দর্শনার্থীকে তিনি সাক্ষাৎ দেয়ার কথা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন। আবার এভাবে বসিয়ে রেখেও তিনি সাক্ষাৎ না দিয়ে চলে যেতেন। মোদ্দা কথা, ড. শওকত পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাবস্থায় সরকারি দলের প্রভাবশালী লোকজন ছাড়া তার কাছ থেকে কেউ দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত সার্ভিস পাননি। ওই সময় পূর্ত মন্ত্রণালয়ে আসা বহু সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ড. শওকতের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর তাকে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়। এরপর নামে ও বেনামে ৩টি প্লট নেয়া ও একাধিবার এসব প্লটের আকার পরিবর্তন করার অভিযোগে অনুসন্ধান শেষে দুদক থানায় দুর্নীতির মামলা দায়ের করে। অভিযোগ রয়েছে, এ মামলায় সচিব ড. শওকত যখন ফেঁসে যাচ্ছিলেন তখন মহল বিশেষের হস্তক্ষেপে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দুদকের একটি দায়িত্বশীল পক্ষ শক্ত অবস্থান নেয়ায় শেষমেশ সম্প্রতি এই মামলার মোড় ঘুরে যায়। পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। অপরদিকে সচিব শওকতের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানও অব্যাহত আছে।
এদিকে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সচিব যুগান্তরকে বলেন, সচিব শওকতের মতো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশাসনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছেন। তারা বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মানেই তিনি দুর্নীতিবাজ নন। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কারও ওপর এমন দায় চাপানোও যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু এখানে নৈতিকতা ও ইমেজ রক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জরুরি। তারা মনে করেন, যখনই একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় এবং দুদক তদন্ত শুরু করে, তখন প্রথমে উচিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বেচ্ছায় ওএসডি হওয়া। দ্বিতীয়ত, সরকারের দায়িত্ব ছিল অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে পোস্টিংয়ের বাইরে রাখা। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হলে সেখানে অনেক আগেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হতো। তাদের মতে, দলের লোক কিংবা আত্মীয় হলেও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের উচিত হবে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তার ভার আর বহন না করা। সময় তো আছে, ড. শওকত অবসরে যাবেন আগামী বছর এপ্রিলে। যদি তদন্ত শেষ হতে এপ্রিল মাসও পার হয়ে যায় তাহলে সরকার চাইলে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পুনরায় সচিবের দায়িত্ব দিতে পারে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাস্তব অবস্থা এখন এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ বিদায়ী মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত কারও সময়মতো বোধোদয় হচ্ছে না।
No comments