শেরেবাংলায় নোংরা খেলা
(হোম
অব ক্রিকেটে নোংরা রাজনীতির আঁচড়। মিছিল ও অশালীন স্লোগানে মুখর, আর
কুরুচিপূর্ণ ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছিল কাল মিরপুরের বিসিবি প্রাঙ্গণ l প্রথম
আলো) বিসিবির
মূল ফটকের বাইরে বড়সড় এক জটলা। আন্তর্জাতিক ম্যাচের দিন যেমন থাকে। কিন্তু
আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো নয়ই, কাল খেলা ছিল না ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেরও! সেই
বিস্ময় আকাশ ছুঁল ভেতরে ঢুকে। বিসিবি আঙিনায় বিশাল জটলা, শত শত লোক! তরুণ,
যুবক, কিশোর, এমনকি স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজনকেও দেখা গেল। বিসিবি
অফিসের প্রায় ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত টাঙানো লম্বা দুটি ব্যানার। বিসিবি
অফিসের দেয়ালেও সাঁটানো কিছু ব্যানার, কিছু ব্যানার মিডিয়া ব্লকে যাওয়ার
পথে, এমনকি ফ্লাডলাইট টাওয়ারের সঙ্গেও। ব্যানার লাগানো ছিল স্টেডিয়ামের
মূল ফটকের লোহার গ্রিলে, বাইরের সীমানাদেয়ালেও।
ব্যানারের ভাষাগুলোই বলে দিচ্ছিল সব। একটু পরই খণ্ড খণ্ড মিছিল আর স্লোগানে উচ্চকিত বিসিবি প্রাঙ্গণ। স্লোগানের ভাষা ব্যানারের চেয়েও আক্রমণাত্মক। ‘চামড়া তুলে নেওয়ার’ সেই ঐতিহ্যবাহী স্লোগান তো ছিলই। সঙ্গে বৈচিত্র্যময় সব অশালীন স্লোগানও। সবকিছুর লক্ষ্যবস্তু একজনই—লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ক্লাবের কর্ণধার লুৎফর রহমান। একটি মিছিলে স্লোগানে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল বিসিবিরই এক কর্মচারীকে!
এর ঘণ্টা খানেক পরের ছবি। শেরেবাংলার মিডিয়া ব্লকের বাইরে জ্বলছিল উনুন। ভেতরে আহারকক্ষ লোকে লোকারণ্য। গলা ফাটিয়ে, হাত-পা ছুড়ে যারা একটু আগে দেশের ক্রিকেট ‘রক্ষায়’ ঘাম ঝরিয়ে এলেন, তাঁদের জন্য ভূরিভোজের ব্যবস্থা। আয়োজন যেন বিয়েবাড়ির। পোলাও-রোস্ট খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে অনেকে চলে গেলেন বাইরে, অনেকে ঢুকলেন ভেতরে। শেরেবাংলার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে আনন্দ-আড্ডা, ছবি তোলা, খোশগল্প, ঘোরাঘুরি চলতে থাকল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে বলা হয় ‘হোম অব ক্রিকেট।’ বাংলাদেশ ক্রিকেটের পবিত্রতম স্থান। সেই ‘হোম’ কাল ক্ষতবিক্ষত ক্রিকেট-রাজনীতির নোংরা থাবায়। বিসিবি অফিস যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়!
মিছিলের প্রস্তুতি যখন চলছে, কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল তাঁদের নানা পরিচয়। কেউ কেউ গর্ব ভরে বললেন, ‘আমরা বিসিবির লোক।’ বিসিবির কোন বিভাগের লোক, কোন পদে চাকরি—এসব জিজ্ঞেস করতেই আমতা আমতা করে অন্যদিকে তাকিয়ে সবাই। কারও কারও দাবি, তাঁরা ক্লাবের সমর্থক। কোন ক্লাবের সমর্থক—জিজ্ঞেস করতেই না শোনার ভান করে নিজেদের মধ্যে গল্প শুরু করা বা মিছিল শুরুর তৎপরতা। আশপাশের দোকানি কিংবা পেশিশক্তির এই মহড়া দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের দাবি, ওই ‘বিসিবির লোক’ বা ‘ক্লাব সমর্থকদের’ প্রায় সবাই আসলে ভাড়ায় মিছিলে খাটা ছেলেপেলে। ভূরিভোজ-ফেরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত জানেন না। তবে এটা জানেন, ‘বাদল ক্রিকেটের জন্য খুব খারাপ লোক।’
এমনিতে বিসিবি প্রাঙ্গণে জনসাধারণের প্রবেশ মানা। সেখানে বিনা বাধায় ঢুকছে শত শত লোক। বিশাল বিশাল ব্যানার টাঙাতে, লাগাতে অনেক সময় লাগার কথা। বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীদের চোখের সামনেই নিশ্চয়ই হয়েছে এসব? অসহায় নিরাপত্তাকর্মীরা এসব নিয়ে কথা বলতে চাইলেন না। একজন শুধু আমতা আমতা করে বললেন, ‘মনে হয়, আজকে নির্দেশ আছে গেট ওপেন করে দিতে।’
ওই মিছিল-স্লোগান আর ভূরিভোজের মাঝে হয়ে গেছে দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলন। পরশু রাতে ‘সংবাদ সম্মেলন-ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (কোয়াব) শিরোনামে একটি মেইল পাঠিয়ে আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির। কোয়াবের অফিশিয়াল মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে নয়, ‘সুজন মাহমুদ’ একটি নামে অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে মেইলটি। নয় কোয়াবের প্যাডেও, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির নিচে ছিল না কারও নাম। সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে অবশ্য দেখা গেল শুধু কোয়াব নয়, ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজক হিসেবে আছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন ও আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও। ৪ ডিসেম্বর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচ শেষে বিসিবি-প্রধান, দুজন পরিচালক, আম্পায়ারদের নিয়ে যে ‘উদ্ভট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নৈতিকতা-বিবর্জিত’ বক্তব্য দিয়েছিলেন লুৎফর রহমান, সেটির ‘তীব্র নিন্দা’ জানাতে এবং ‘লুৎফর রহমান ও তাঁর দলকে ক্রীড়াজগৎ থেকে বহিষ্কার করার জন্য ক্রীড়ামন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি’ জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলন। এই সংবাদ সম্মেলনেও যথারীতি সাংবাদিকদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছিল বাইরের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো ওই মিছিল-স্লোগান-ব্যানার নিয়ে। বোর্ড পরিচালক ও কোয়াবের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদের ব্যাখ্যা, ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে কীভাবে ব্যানারগুলো টাঙানো হয়েছে...সংক্ষুব্ধ ক্রিকেট সাপোর্টার থাকতে পারে, ক্লাবের সাপোর্টার থাকতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডে অনেকেই আসে, আমরা তো আটকাতে পারি না। আমাদের ৭০-৮০টা ক্লাব আছে, সবাইকে তো চেনা সম্ভব নয়। হয়তো সিকিউরিটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের।’ বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর চোখের সামনেই সব হয়েছে। প্রথমে মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে বললেন, ‘স্টেডিয়ামে বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন সময়ে ব্যানার আসে। এখন আজকে কেন লাগানো হয়েছে বা লোকজন এসেছে, আগে দেখে পরে কথা বলি।’ বোর্ড পরিচালক ও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান নাজমুল করিমের দাবি, ‘মাত্রই আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো, এসব অপসারণ করব আমরা।’
কিন্তু বিকেল চারটাতেও ওই ব্যানারগুলো সগৌরবে ভ্রূকুটি করছিল হোম অব ক্রিকেটকে। দেশের ক্রিকেটকেও!
ব্যানারের ভাষাগুলোই বলে দিচ্ছিল সব। একটু পরই খণ্ড খণ্ড মিছিল আর স্লোগানে উচ্চকিত বিসিবি প্রাঙ্গণ। স্লোগানের ভাষা ব্যানারের চেয়েও আক্রমণাত্মক। ‘চামড়া তুলে নেওয়ার’ সেই ঐতিহ্যবাহী স্লোগান তো ছিলই। সঙ্গে বৈচিত্র্যময় সব অশালীন স্লোগানও। সবকিছুর লক্ষ্যবস্তু একজনই—লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ক্লাবের কর্ণধার লুৎফর রহমান। একটি মিছিলে স্লোগানে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল বিসিবিরই এক কর্মচারীকে!
এর ঘণ্টা খানেক পরের ছবি। শেরেবাংলার মিডিয়া ব্লকের বাইরে জ্বলছিল উনুন। ভেতরে আহারকক্ষ লোকে লোকারণ্য। গলা ফাটিয়ে, হাত-পা ছুড়ে যারা একটু আগে দেশের ক্রিকেট ‘রক্ষায়’ ঘাম ঝরিয়ে এলেন, তাঁদের জন্য ভূরিভোজের ব্যবস্থা। আয়োজন যেন বিয়েবাড়ির। পোলাও-রোস্ট খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে অনেকে চলে গেলেন বাইরে, অনেকে ঢুকলেন ভেতরে। শেরেবাংলার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে আনন্দ-আড্ডা, ছবি তোলা, খোশগল্প, ঘোরাঘুরি চলতে থাকল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে বলা হয় ‘হোম অব ক্রিকেট।’ বাংলাদেশ ক্রিকেটের পবিত্রতম স্থান। সেই ‘হোম’ কাল ক্ষতবিক্ষত ক্রিকেট-রাজনীতির নোংরা থাবায়। বিসিবি অফিস যেন কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়!
মিছিলের প্রস্তুতি যখন চলছে, কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেল তাঁদের নানা পরিচয়। কেউ কেউ গর্ব ভরে বললেন, ‘আমরা বিসিবির লোক।’ বিসিবির কোন বিভাগের লোক, কোন পদে চাকরি—এসব জিজ্ঞেস করতেই আমতা আমতা করে অন্যদিকে তাকিয়ে সবাই। কারও কারও দাবি, তাঁরা ক্লাবের সমর্থক। কোন ক্লাবের সমর্থক—জিজ্ঞেস করতেই না শোনার ভান করে নিজেদের মধ্যে গল্প শুরু করা বা মিছিল শুরুর তৎপরতা। আশপাশের দোকানি কিংবা পেশিশক্তির এই মহড়া দেখতে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীদের দাবি, ওই ‘বিসিবির লোক’ বা ‘ক্লাব সমর্থকদের’ প্রায় সবাই আসলে ভাড়ায় মিছিলে খাটা ছেলেপেলে। ভূরিভোজ-ফেরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত জানেন না। তবে এটা জানেন, ‘বাদল ক্রিকেটের জন্য খুব খারাপ লোক।’
এমনিতে বিসিবি প্রাঙ্গণে জনসাধারণের প্রবেশ মানা। সেখানে বিনা বাধায় ঢুকছে শত শত লোক। বিশাল বিশাল ব্যানার টাঙাতে, লাগাতে অনেক সময় লাগার কথা। বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীদের চোখের সামনেই নিশ্চয়ই হয়েছে এসব? অসহায় নিরাপত্তাকর্মীরা এসব নিয়ে কথা বলতে চাইলেন না। একজন শুধু আমতা আমতা করে বললেন, ‘মনে হয়, আজকে নির্দেশ আছে গেট ওপেন করে দিতে।’
ওই মিছিল-স্লোগান আর ভূরিভোজের মাঝে হয়ে গেছে দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলন। পরশু রাতে ‘সংবাদ সম্মেলন-ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (কোয়াব) শিরোনামে একটি মেইল পাঠিয়ে আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির। কোয়াবের অফিশিয়াল মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে নয়, ‘সুজন মাহমুদ’ একটি নামে অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে মেইলটি। নয় কোয়াবের প্যাডেও, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির নিচে ছিল না কারও নাম। সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে অবশ্য দেখা গেল শুধু কোয়াব নয়, ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজক হিসেবে আছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন ও আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও। ৪ ডিসেম্বর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এক ম্যাচ শেষে বিসিবি-প্রধান, দুজন পরিচালক, আম্পায়ারদের নিয়ে যে ‘উদ্ভট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নৈতিকতা-বিবর্জিত’ বক্তব্য দিয়েছিলেন লুৎফর রহমান, সেটির ‘তীব্র নিন্দা’ জানাতে এবং ‘লুৎফর রহমান ও তাঁর দলকে ক্রীড়াজগৎ থেকে বহিষ্কার করার জন্য ক্রীড়ামন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি’ জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলন। এই সংবাদ সম্মেলনেও যথারীতি সাংবাদিকদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছিল বাইরের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো ওই মিছিল-স্লোগান-ব্যানার নিয়ে। বোর্ড পরিচালক ও কোয়াবের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদের ব্যাখ্যা, ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে কীভাবে ব্যানারগুলো টাঙানো হয়েছে...সংক্ষুব্ধ ক্রিকেট সাপোর্টার থাকতে পারে, ক্লাবের সাপোর্টার থাকতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডে অনেকেই আসে, আমরা তো আটকাতে পারি না। আমাদের ৭০-৮০টা ক্লাব আছে, সবাইকে তো চেনা সম্ভব নয়। হয়তো সিকিউরিটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের।’ বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর চোখের সামনেই সব হয়েছে। প্রথমে মন্তব্য করতে না চাইলেও পরে বললেন, ‘স্টেডিয়ামে বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন সময়ে ব্যানার আসে। এখন আজকে কেন লাগানো হয়েছে বা লোকজন এসেছে, আগে দেখে পরে কথা বলি।’ বোর্ড পরিচালক ও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান নাজমুল করিমের দাবি, ‘মাত্রই আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো, এসব অপসারণ করব আমরা।’
কিন্তু বিকেল চারটাতেও ওই ব্যানারগুলো সগৌরবে ভ্রূকুটি করছিল হোম অব ক্রিকেটকে। দেশের ক্রিকেটকেও!
No comments