ছাত্রী নিহতের প্রতিবাদে উত্তাল রাজশাহী
রাজশাহী
কলেজের ছাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ঝরে গেছে তিনটি
তাজা প্রাণ। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী। এরপর টনক নড়েছে কলেজ
কর্তৃপক্ষের। গতকাল সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের সড়ক
অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
ঘটে তাদের। তবে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে
নগরীর ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে দুপুর দেড়টার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ
অধ্যাপক মুহা. হবিবুর রহমান আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য
কলেজের নিজস্ব ৩টি বাস দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে কলেজের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সোমবার কলেজের সকল বিভাগের
ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়া, ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত
করেছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর
রউফ মিয়া। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে তারা কলেজের শোক
কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের কলেজ চত্বরে প্রবেশে বাধা
দেয়। এক পর্যায়ে তারা জোর করেই ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে সকাল ১০টায়
কালোব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে কলেজ চত্বর থেকে বের হওয়ার
প্রস্তুতি নিলে পুলিশ আবারও তাদের বাধা দিলে বাকবিত-া ও কয়েক দফা
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। বর্তমানে রাজশাহী কলেজ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ
মোতায়েন রয়েছে বলে বোয়ালিয়া থানার ওসি নূর হোসেন খন্দকার জানিয়েছেন। সূত্র
জানায়, রাজশাহী কলেজের প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে পরিবহনের জন্য রয়েছে
মাত্র ৮টি বাস। এর মধ্যে ৭টি চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেয়া হয়েছে। অপর একটি বাস
১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কলেজ শিক্ষার্থীদের
উপহার দিয়েছিলেন। এরপর কখনও রাজশাহীর এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের
পরিবহনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থে
প্রতিদিন ৭টি চুক্তিভিত্তিক বাসে যাতায়াত করতে হয়। বাসগুলোর ফিটনেস
সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছেন।
তবে কোন প্রতিকার মেলেনি। সূত্র আরও জানায়, ৬ শিফটে যাতায়াতের জন্য ৬২০০, ৫
শিফটের জন্য ৫৪০০, ৪ শিফটের জন্য ৪৭০০, ৩ শিফটের জন্য ৪২০০, ২ শিফটের জন্য
২৮০০ এবং অতিরিক্ত (পরীক্ষাকালীন) ৭২০০ টাকা প্রতিদিন দিতে হয়। ফলে ২০০৯
সাল থেকে লাখ লাখ টাকা অপচয় হলেও চুক্তি ভিত্তিক ভাড়া থেকে বেরিয়ে এসে
নিজস্ব পরিবহন বাসের ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী কলেজ
ছাত্রদলের সভাপতি মর্তুজা ফামিন মানবজমিনকে জানান, বছর দুই আগে ছাত্রদল,
ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবিরসহ সকল দলের নেতাকর্মীরা এক হয়ে কলেজের নিজস্ব বাসের
দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি। এর কারণ
হিসেবে তিনি বলেন, কলেজের নিজস্ব বাসের ব্যবস্থা করা হলে টাকা লুটপাটের
সুযোগ থেকে মহল বিশেষ বঞ্চিত হবে বলে এ ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে রাজশাহী
কলেজ পরিবহন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দায়েমউদ্দিন বলেন, কলেজের নিজস্ব বাসের
জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাসের
দাবি জানানো হয়েছিল। তবে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ফল আসেনি। আশা করা যাচ্ছে
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাসের জন্য অনুমোদনের ব্যবস্থা করা যাবে। এদিকে
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম মানবজমিনকে জানান, এ ঘটনায় মতিহার
থানার উপ-পরিদর্শক বাকি বিল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি
করা হয়েছে রাজশাহী কলেজের ছাত্রীবাহী লাকি পরিবহনের (ঢাকা-জ-৩৬৫১) চালক ও
হেলপার এবং সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ইসলাম পরিবহনের
(ঢাকা-জ-১১-০৮৪০) চালক ও হেলপারকে। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলাটি
রেকর্ড করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে কাটাখালি পুলিশ ফাঁড়ির
ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোস্তফা জামানকে। পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তারের
চেষ্টা চলছে।
নিহতদের লাশ দাফন: গত রোববার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ৩ শিক্ষার্থীর লাশ রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে নেয়া হয়। পরে সেখানে জানাজা শেষে নিহতের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। রোববার রাত ৯টার দিকে মতিহার থানার কাপাশিয়া এলাকার ফজলুল হকের মেয়ে মাহমুদা হক তানিয়ার (সমাজকর্ম, প্রথম বর্ষ) লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্স প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী পুঠিয়ার বড় ধাদাস এলাকার তোফাজ্জেলের স্ত্রী শারমিন সুলতানার লাশ দাফন করে তার পরিবার। এছাড়া, গতকাল সোমবার দুপুরে ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দুর্গাপুর উপজেলার নইপাড়া গ্রামের শাহজাহানের মেয়ে বিউটি সাথির লাশ দাফন করা হয়।
আহতরা আশঙ্কামুক্ত: সড়ক দুর্ঘটনায় আহত প্রায় ৩০ জনের মধ্যে ১৬ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ৮ জনড় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন রামেকের অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. বি কে দাম। তিনি বলেন, ২ ছাত্রীর অবস্থা একটু খারাপ ছিল। কিন্তু তারাও এখন আশঙ্কামুক্ত। বর্তমানে তারা হাসপাতালে ১ ও ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গত রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে রাজশাহী কলেজের ছাত্রীবাহী লাকি পরিবহনের (ঢাকা-জ-৩৬৫১) সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহীগামী ইসলাম ট্রাভেলসের যাত্রীবাহী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কলেজের ৩ ছাত্রী নিহতসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়।
নিহতদের লাশ দাফন: গত রোববার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ৩ শিক্ষার্থীর লাশ রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে নেয়া হয়। পরে সেখানে জানাজা শেষে নিহতের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। রোববার রাত ৯টার দিকে মতিহার থানার কাপাশিয়া এলাকার ফজলুল হকের মেয়ে মাহমুদা হক তানিয়ার (সমাজকর্ম, প্রথম বর্ষ) লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্স প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী পুঠিয়ার বড় ধাদাস এলাকার তোফাজ্জেলের স্ত্রী শারমিন সুলতানার লাশ দাফন করে তার পরিবার। এছাড়া, গতকাল সোমবার দুপুরে ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দুর্গাপুর উপজেলার নইপাড়া গ্রামের শাহজাহানের মেয়ে বিউটি সাথির লাশ দাফন করা হয়।
আহতরা আশঙ্কামুক্ত: সড়ক দুর্ঘটনায় আহত প্রায় ৩০ জনের মধ্যে ১৬ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ৮ জনড় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন রামেকের অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. বি কে দাম। তিনি বলেন, ২ ছাত্রীর অবস্থা একটু খারাপ ছিল। কিন্তু তারাও এখন আশঙ্কামুক্ত। বর্তমানে তারা হাসপাতালে ১ ও ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গত রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে রাজশাহী কলেজের ছাত্রীবাহী লাকি পরিবহনের (ঢাকা-জ-৩৬৫১) সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহীগামী ইসলাম ট্রাভেলসের যাত্রীবাহী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কলেজের ৩ ছাত্রী নিহতসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়।
No comments