সিলেট সিটি করপোরেশনের ‘সর্বনাশা’ বক্স ড্রেন প্রকল্প by উজ্জ্বল মেহেদী
সিলেট নগরের প্রাকৃতিক ছড়া পুনরুদ্ধারের সঙ্গে বক্স ড্রেন নামে নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পে একটি ছড়ার ওপর-নিচ পাকা করে পুরোপুরি ঢেকে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিকভাবে সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের ভিআইপি সড়ক লাগোয়া মঙ্গলীছড়ার একাংশে বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
>>সিলেট নগরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত মঙ্গলীছড়া দখলমুক্ত করার পর এবার সেখানে ‘বক্স ড্রেন’ করে রাস্তা বানানো হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
>>সিলেট নগরের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত মঙ্গলীছড়া দখলমুক্ত করার পর এবার সেখানে ‘বক্স ড্রেন’ করে রাস্তা বানানো হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
তবে এ ধরনের প্রকল্প পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীসহ বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী ঢাকাসহ পৃথিবীর পর্যটনকেন্দ্রিক শহরগুলোতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পর গলার কাঁটা হিসেবে বিঁধেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য, এ প্রকল্প পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য একটি ‘সর্বনাশা’ প্রকল্প।
ছড়ার সড়ক ওই এলাকার বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হলে ভিআইপি সড়ক দিয়ে যানজটও কমে যাবে বলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
নগরের চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত সড়কের এক পাশ দিয়ে প্রবাহিত মঙ্গলীছড়া। দখল-দূষণে ভিআইপি সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে মঙ্গলীছড়া ছোট্ট নালায় রূপ নেয়। সিটি করপোরেশন গত বছরের ৩০ অক্টোবর ছড়ার ওই অংশ দখলমুক্ত করে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবহমান নয়টি ছড়া উদ্ধার অভিযান। মঙ্গলীছড়ার অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করলে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছড়া পরিদর্শন করেন। দখল-দূষণে রুদ্ধ ছড়ার মুক্ত রূপ দেখে তিনি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রীর মুগ্ধতার সেই ছড়ার মুক্ত অংশে সিটি করপোরেশন নির্মাণ করছে ‘বক্স ড্রেন’।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানায়, মঙ্গলীছড়ার ৭০০ মিটার অংশে আরসিসি বক্স কালভার্টের আদলে বক্স ড্রেন নির্মাণের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর দরপত্রের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। কাজের অংশ হিসেবে ছড়ার নিচ পাকা করে ওপরে ঢাকনা দেওয়া হবে। ওই ঢাকনা দিয়ে চলাচল করবে ছোট-বড় যানবাহনসহ আশপাশ এলাকার মানুষজন।
বক্স ড্রেনে ছড়ায় বিকল্প রাস্তা হলে ভিআইপি সড়কের ওপর যানবাহন চলাচলের চাপও কমে যাবে বলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ সুবিধা ছড়ার আশপাশ এলাকার মুষ্টিমেয় বাসিন্দারা পাবেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছড়ার মুখে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্প কাজ প্রায় শেষের পথে। ভিআইপি সড়কের মুখে মঙ্গলীছড়া উদ্ধার অভিযান চলাকালে মাদার কেয়ার ক্লিনিক নামের যে বেসরকারি হাসপাতালের সম্মুখভাগ প্রায় দখল করে রেখেছিল, সেখানটা এখন ওই হাসপাতালের বড় একটি প্রাঙ্গণে রূপ নিয়েছে। ওই হাসপাতালসহ একটি আবাসিক রেস্তোরাঁ দুই দিকে রাস্তা বক্স ড্রেনের কারণেই হচ্ছে। আবাসিক এলাকার চেয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভবান হবে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও স্বীকার করেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ছড়া শুধু পানি বহন করে না, পানি শোষণও করে। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার উচ্চতাকেও যথাযথ রাখে। ছড়া মুক্ত রাখতে ঝুঁকি এলাকায় বড়জোর গার্ড ওয়াল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে পাকা করলে ছড়ার ইকো-সিস্টেম একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বক্স ড্রেন প্রকল্প সম্পর্কে মুশতাক আহমদ জানান, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে একসময় এভাবে প্রাকৃতিক নালাগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাকাকরণসহ নানা রকম সৌন্দর্য বৃদ্ধির কার্যক্রম করা হয়েছিল। এখন সেগুলো ভেঙে ফেলে আবার প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো উল্টো পথেই হাঁটছি!’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকাকে তিলোত্তমা নগর করতে একসময় বক্স ড্রেন দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছিল একাধিক প্রাকৃতিক নালা, খাল। এ কাজ করে ঢাকা এখন বিপদের সম্মুখীন। ভাঙতেও পারছে না, আবার মুক্ত অবস্থায় ফিরতেও পারছে না। সিলেট নগরবাসীর উচিত সর্বনাশা এ প্রকল্পের কাজ গোড়াতেই বন্ধ করে দেওয়া।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছড়া দখলমুক্ত রাখার স্থায়ী ব্যবস্থার পাশাপাশি বিকল্প রাস্তার বিষয়টি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি নতুন ও পুরোপুরি জনস্বার্থমূলক। বাস্তবায়ন হলে জনসাধারণই বেশি উপকৃত হবেন। স্থানীয় লোকজনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ কাজ করা হচ্ছে।
কিন্তু পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী জানান, সিলেটকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে নগরবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির মতামত নিয়েই এটি করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
তবে কমিটির সদস্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের প্রধান জহির বিন আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি মাত্র। নকশাটি এখনো দেখা হয়নি। নকশা না দেখে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
ছড়ার সড়ক ওই এলাকার বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হলে ভিআইপি সড়ক দিয়ে যানজটও কমে যাবে বলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
নগরের চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার পর্যন্ত সড়কের এক পাশ দিয়ে প্রবাহিত মঙ্গলীছড়া। দখল-দূষণে ভিআইপি সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে মঙ্গলীছড়া ছোট্ট নালায় রূপ নেয়। সিটি করপোরেশন গত বছরের ৩০ অক্টোবর ছড়ার ওই অংশ দখলমুক্ত করে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবহমান নয়টি ছড়া উদ্ধার অভিযান। মঙ্গলীছড়ার অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করলে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছড়া পরিদর্শন করেন। দখল-দূষণে রুদ্ধ ছড়ার মুক্ত রূপ দেখে তিনি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। অর্থমন্ত্রীর মুগ্ধতার সেই ছড়ার মুক্ত অংশে সিটি করপোরেশন নির্মাণ করছে ‘বক্স ড্রেন’।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানায়, মঙ্গলীছড়ার ৭০০ মিটার অংশে আরসিসি বক্স কালভার্টের আদলে বক্স ড্রেন নির্মাণের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর দরপত্রের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। কাজের অংশ হিসেবে ছড়ার নিচ পাকা করে ওপরে ঢাকনা দেওয়া হবে। ওই ঢাকনা দিয়ে চলাচল করবে ছোট-বড় যানবাহনসহ আশপাশ এলাকার মানুষজন।
বক্স ড্রেনে ছড়ায় বিকল্প রাস্তা হলে ভিআইপি সড়কের ওপর যানবাহন চলাচলের চাপও কমে যাবে বলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ সুবিধা ছড়ার আশপাশ এলাকার মুষ্টিমেয় বাসিন্দারা পাবেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছড়ার মুখে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্প কাজ প্রায় শেষের পথে। ভিআইপি সড়কের মুখে মঙ্গলীছড়া উদ্ধার অভিযান চলাকালে মাদার কেয়ার ক্লিনিক নামের যে বেসরকারি হাসপাতালের সম্মুখভাগ প্রায় দখল করে রেখেছিল, সেখানটা এখন ওই হাসপাতালের বড় একটি প্রাঙ্গণে রূপ নিয়েছে। ওই হাসপাতালসহ একটি আবাসিক রেস্তোরাঁ দুই দিকে রাস্তা বক্স ড্রেনের কারণেই হচ্ছে। আবাসিক এলাকার চেয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভবান হবে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও স্বীকার করেন।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ছড়া শুধু পানি বহন করে না, পানি শোষণও করে। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার উচ্চতাকেও যথাযথ রাখে। ছড়া মুক্ত রাখতে ঝুঁকি এলাকায় বড়জোর গার্ড ওয়াল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে পাকা করলে ছড়ার ইকো-সিস্টেম একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।’
বক্স ড্রেন প্রকল্প সম্পর্কে মুশতাক আহমদ জানান, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে একসময় এভাবে প্রাকৃতিক নালাগুলোর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাকাকরণসহ নানা রকম সৌন্দর্য বৃদ্ধির কার্যক্রম করা হয়েছিল। এখন সেগুলো ভেঙে ফেলে আবার প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো উল্টো পথেই হাঁটছি!’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকাকে তিলোত্তমা নগর করতে একসময় বক্স ড্রেন দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছিল একাধিক প্রাকৃতিক নালা, খাল। এ কাজ করে ঢাকা এখন বিপদের সম্মুখীন। ভাঙতেও পারছে না, আবার মুক্ত অবস্থায় ফিরতেও পারছে না। সিলেট নগরবাসীর উচিত সর্বনাশা এ প্রকল্পের কাজ গোড়াতেই বন্ধ করে দেওয়া।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছড়া দখলমুক্ত রাখার স্থায়ী ব্যবস্থার পাশাপাশি বিকল্প রাস্তার বিষয়টি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি নতুন ও পুরোপুরি জনস্বার্থমূলক। বাস্তবায়ন হলে জনসাধারণই বেশি উপকৃত হবেন। স্থানীয় লোকজনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ কাজ করা হচ্ছে।
কিন্তু পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী জানান, সিলেটকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে নগরবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির মতামত নিয়েই এটি করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
তবে কমিটির সদস্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের প্রধান জহির বিন আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি মাত্র। নকশাটি এখনো দেখা হয়নি। নকশা না দেখে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
>>এভাবে মঙ্গলীছড়া ‘বক্সবন্দী’ করছে খোদ সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
No comments