হুমায়ূনের স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ by মজিবুর রহমান
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এক কিংবদন্তির নাম। যার প্রতিভার বিচরণ ছিল সর্বত্র। এগিয়ে ছিলেন সমাজসেবাতেও। শিক্ষাবিস্তারে পশ্চাৎপদ নিজ গ্রাম নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ পিতা ফয়জুর রহমান ও স্বাধীনতাযুদ্ধে নাম না জানা লাখো শহীদের স্মৃতি নিয়ে স্বপ্নের ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’। ১৯৯৬ সালের ১২ই জানুয়ারি বিদ্যাপীঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ স্বপ্নযাত্রা। কিন্তু বিধিবাম। দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বরেণ্য লেখক ও স্বপ্ন সাধকের মৃত্যু ঘটে ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই। কিন্তু আজও এ বিদ্যাপীঠ এমপিওভুক্ত করা হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ নিজ গ্রামে ৩ একর ৩৩ শতক ভূমি খরিদ করেন। ১৯৯৬ সালে সে ভূমিতে স্থাপন করেন বিদ্যাপীঠে ভিত্তিপ্রস্তর। ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও খ্যাতিমান অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। একই সময়ে মাঠের কোনায় শহীদ স্মৃতিফলক উন্মোচন করেছিলেন প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১১ বছর। ২০০৬ সালে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনে শুরু পাঠদান। শুরুর প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেণীর ৪৮ শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠদানের কার্যক্রম যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন তিনি চলে যাওয়ার পর অনেক কিছু কমে গেছে। দরজা-জানালা ভেঙে ভঙ্গুরদশা হতে চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ১৭ ও শিক্ষার্থী ৩০৮। বিদ্যালয়ের খরচ বহন করছে নুহাশপল্লী। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, হুমায়ূন স্যার বেঁচে থাকতে অভিনেতা ডা. এজাজুল ইসলাম আমাদের নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন কিন্তু স্যার চলে যাওয়ার পর তিনি আর আসেননি। এখন আমাদের বিনামূল্যে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দেন পল্লীচিকিৎসক ডা. নিখিল চন্দ্র বিশ্বশর্মা। প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, স্যার বিদ্যালয়টির প্রতি ছিলেন খুবই মনোযোগী। বিদ্যালয়ে এলে হারিয়ে যেতেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসেই তিনি আসতেন। সর্বশেষ তিনি ২০১১ সালের এপ্রিলে তারই বন্ধু সাবেক শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। সে ঘোষণা ঘোষণাই রয়ে গেছে। স্যারের মৃত্যুর পর এ বিদ্যালয় নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নানা আলোচনা হয়েছে। এসেছে অনেক আশার বাণী। কিন্তু বাস্তবে কোন কাজই হয়নি। এ বছর জেলার ২৬০ বেসরকারি স্কুলের মধ্যে ফলাফলে প্রথম হয়েছে। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের চাচা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি আলতাফুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন হুমায়ূন আহমেদের পত্নী ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মেহের আফরোজ শাওন। প্রতিবছর জিপিএ ৫-সহ শতভাগ সফলতা অর্জন করছে স্কুলটি। আজ তিনি নেই। কিন্তু তার বিদ্যাপীঠ আছে। আছে তার ভালবাসা। গ্রামের মানুষ তাকে যেমন ভালবাসতেন, তেমনি ভালবাসেন তার গড়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠকে।
No comments