নেতাদের সতর্ক করলেন খালেদা
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে এ ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। সূত্র জানায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির ভূমিকায় আন্দোলন কর্মসূচি ও তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত পরামর্শ ও সহায়তা না দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন খালেদা জিয়া। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পদ এবং দায়িত্ব অনুযায়ী যথাযথ ভূমিকা পালনে গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে নেতাদের সতর্ক করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে আসা একটি ভুল ছিল। কিন্তু আপনারা কেউ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেননি। সারা দেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা সবাই প্রস্তুত। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। আন্দোলন কর্মসূচি দিলে আপনারা কেউ মাঠে নামছেন না। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেননি। বিদেশীরা বলছে, বিরোধী দল হিসেবে সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে বিএনপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। এতবড় একটি ঘটনার পর আপনারা প্রতিবাদ করেননি। কিভাবে আন্দোলনকে জোরালো করা যায় আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোন ভূমিকা নেই। নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে আপনাদের ভূমিকা হতাশাজনক। আপনাদের এই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে সারা দেশের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। খালেদা জিয়া বলেন, সারা দেশে আপনারা শীর্ষ নেতারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেননি। ঢাকা মহানগর কমিটি অগোছালোর কারণে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এর ব্যাখ্যা দিতে চাইলে খালেদা জিয়া ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন। এবং এ বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার একের এক মিথ্যা মামলা দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের আইনি জটিলতায় জড়িয়ে ফেলছে। সর্বশেষ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-ের ঘটনায় সিলেট সিটি মেয়রসহ বিএনপির কয়েকজন নেতাকে জড়িয়েছে। এরকম স্পর্শকাতর কিছু মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকে জড়িয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও মিথ্যা দুর্নীতির মামলার বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু আপনারা কেউ এর সোচ্চার প্রতিবাদ করতে পারেননি। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন সরকার এত বড় বড় দুর্নীতি করছে সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হচ্ছে। কিন্তু আপনারা এসব বিষয়ে তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। দলীয় ফোরামে পর্যালোচনা এবং প্রমাণ জোগাড় করে সহযোগিতা করছেন না। পুরো বৈঠকে খালেদা জিয়া ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, আন্দোলন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কোন কর্মসূচির কথা আলোচনায় আসেননি। এসময় কয়েকজন সদস্য ঢাকায় মহাসমাবেশের পরামর্শ দিলে খালেদা জিয়া বলেন, এখনও ঢাকা মহানগর অগোছালো। আগে আপনারা ঢাকা মাহনগর কেন্দ্রিক গণসংযোগ বাড়ান। তিনি ঢাকা মহানগরে আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে জনসংযোগের ওপর জোর দেন। এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আগামীতে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়া বলেন, বিগত আন্দোলনে আপনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে পারেননি। আগামী দিনে আপনারা নামেন আর না নামেন দেশবাসীকে নিয়ে আমি রাজপথে নামবো।
বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এর আগে দলের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আরও দু’টি বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন কয়েক বছর আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন এম. শামসুল ইসলাম। যশোরে নিজ জেলায় অবস্থানের কারণে তরিকুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮’ শীর্ষক বইটির মোড়ক উন্মোচনের পর সেখানে প্রকাশিত নানা তথ্য নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর অনেকটা আড়ালে সময় পার করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। দীর্ঘদিন পর গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
No comments