গরিব রোগীর ভরসাস্থল- গোলাম-বানু হাসপাতাল by শাহ আলম
ঘটনাটি ১৯৬৬ সালের। সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার পাকিস্তানের শিয়ালকোট থেকে এলেন গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহে। কাদামাটির দীর্ঘ পথ ধরে গ্রামে এসেই পেলেন মন খারাপ করা খবর। আগের রাতে নিকট-প্রতিবেশী মঙ্গল মল্লিক পেটের ব্যথায় মারা যান। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের অসুবিধা ও টাকার অভাব—সব মিলিয়ে এক রকম বিনা চিকিৎসায় মারা যান মঙ্গল। ঘটনাটি তরুণ সেনা কর্মকর্তার মনকে নাড়া দেয়। সিদ্ধান্ত নেন, কখনো সামর্থ্য হলে গ্রামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন।
এর মধ্যে পার হয়ে গেছে ৪৬ বছর। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন শামসুল আলম। হৃদয়ের গভীরে লালন করা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন ২০১২ সালে। গ্রামে প্রায় এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন বাবা গোলাম রসুল ও মা শাহার বানুর নাম মিলিয়ে ‘গোলাম-বানু হাসপাতাল’। ১০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন নামমাত্র খরচে। এটি এখন নাগদাহসহ আশপাশের ২০টি গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে চিকিৎসাধীন রোগী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা হয়। ইসিজি করতে আসা নাগদাহ গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (৬৫) জানান, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গায় ইসিজি করতে লাগে ২০০ টাকা, এখানে ১০০ টাকা। যাতায়াতের খরচও লাগেনি। সিরাজুল বলেন, ‘নাগদাহ বা আশপাশের গ্রামের মানুষ অ্যাদ্দিন অসুখ-বিসুখ হলি চিকিস্সার জন্যি আলমড্যাঙা বা চুয়াড্যাঙা যাইতো। যাতি-আসতি যে ট্যাকা খরজ হইতো, তারুও চাইয়ে কম ট্যাকায় অ্যাকন গোলাম-বানু হাসপাতালে ভালো চিকিস্সা পাওয়া যাচ্চে।’
হাসপাতালে ভর্তি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত খোদেজা বেগম (৫০) জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি জখম হন। প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে তাঁকে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারে খরচ হবে ছয় হাজার টাকা। গোলাম-বানু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার আর প্রয়োজনীয় ওষুধসহ মোট খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকা।
জানা গেল, ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এখানে দুজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক, দুজন ডিপ্লোমা সেবিকা, দুজন প্রশিক্ষিত আয়া ও ধাত্রী এবং বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য দক্ষ লোকবল রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই এক থেকে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও শল্যবিশেষজ্ঞ রোগী দেখেন এবং অস্ত্রোপচার করেন। এখানে প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞ শল্যবিদদের আনা হয়। তাঁরা স্বল্প খরচে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। তা ছাড়া ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে কর্মরত শামসুল আলমের ছোট ছেলে ও পুত্রবধূ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জে এম এইচ কওছার আলম-ফারজানা দম্পতি প্রায়ই এসে এলাকার রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা এবং ওষুধপথ্য দিয়ে যান।
শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার জানান, ১৯৯০ সালে তিনি লে. কর্নেল হিসেবে অবসর নিয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে প্রতি শুক্রবার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁর বাড়িতেই বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন। পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে দুই দিন, তারপর তিন দিন করে চিকিৎসা দেওয়া হতো। এভাবে চলেছে ২০১১ সাল পর্যন্ত। ২০১২ সালে প্রায় এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন গোলাম-বানু হাসপাতাল। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকালে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সিভিল সার্জন ওয়াহিদ আশরাফ দেলওয়ার। গত বছর তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর ছেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ওয়াহিদ মাহমুদ এখন গোলাম-বানু হাসপাতাল পরিচালনায় সহায়তা দিচ্ছেন।
হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করতে এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরকালীন এককালীন পাওয়া এবং জমি বিক্রির টাকা খরচ করে হাসপাতালটি করেছেন শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার। বছরে সব মিলিয়ে পরিচালনা ব্যয় হচ্ছে ১০-১১ লাখ টাকা। আয় হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বাকি টাকা নিজের তহবিল থেকে দান করেন। তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও পুত্রবধূসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের কাজে তাঁকে উৎসাহ জোগান এবং সহায়তা করেন। এ ছাড়া ছোট ভাইয়ের মেয়ে হিরা সুলতানা অবৈতনিক ব্যবস্থাপক হিসেবে হাসপাতালটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন।
গোলাম-বানু হাসপাতালে এখন বহুতল ভবন তৈরির কাজ চলছে। শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার জীবদ্দশায় হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে চান। তাঁর অবর্তমানেও যেন চিকিৎসাসেবার কাজ অব্যাহত থাকে, সে ব্যবস্থা করার প্রবল চেষ্টা করছেন তিনি। তাই চাকরি থেকে অবসরে গেলেও কাজ থেকে অবসর মেলেনি তাঁর। রোগী-চিকিৎসা এসব নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।
এর মধ্যে পার হয়ে গেছে ৪৬ বছর। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন শামসুল আলম। হৃদয়ের গভীরে লালন করা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন ২০১২ সালে। গ্রামে প্রায় এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন বাবা গোলাম রসুল ও মা শাহার বানুর নাম মিলিয়ে ‘গোলাম-বানু হাসপাতাল’। ১০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন নামমাত্র খরচে। এটি এখন নাগদাহসহ আশপাশের ২০টি গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবার প্রধান ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে চিকিৎসাধীন রোগী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা হয়। ইসিজি করতে আসা নাগদাহ গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (৬৫) জানান, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গায় ইসিজি করতে লাগে ২০০ টাকা, এখানে ১০০ টাকা। যাতায়াতের খরচও লাগেনি। সিরাজুল বলেন, ‘নাগদাহ বা আশপাশের গ্রামের মানুষ অ্যাদ্দিন অসুখ-বিসুখ হলি চিকিস্সার জন্যি আলমড্যাঙা বা চুয়াড্যাঙা যাইতো। যাতি-আসতি যে ট্যাকা খরজ হইতো, তারুও চাইয়ে কম ট্যাকায় অ্যাকন গোলাম-বানু হাসপাতালে ভালো চিকিস্সা পাওয়া যাচ্চে।’
হাসপাতালে ভর্তি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত খোদেজা বেগম (৫০) জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি জখম হন। প্রয়োজন হয় অস্ত্রোপচারের। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে তাঁকে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারে খরচ হবে ছয় হাজার টাকা। গোলাম-বানু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার আর প্রয়োজনীয় ওষুধসহ মোট খরচ হয়েছে দুই হাজার টাকা।
জানা গেল, ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য এখানে দুজন ডিপ্লোমা চিকিৎসক, দুজন ডিপ্লোমা সেবিকা, দুজন প্রশিক্ষিত আয়া ও ধাত্রী এবং বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য দক্ষ লোকবল রয়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই এক থেকে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও শল্যবিশেষজ্ঞ রোগী দেখেন এবং অস্ত্রোপচার করেন। এখানে প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞ শল্যবিদদের আনা হয়। তাঁরা স্বল্প খরচে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। তা ছাড়া ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে কর্মরত শামসুল আলমের ছোট ছেলে ও পুত্রবধূ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জে এম এইচ কওছার আলম-ফারজানা দম্পতি প্রায়ই এসে এলাকার রোগীদের বিনা খরচে চিকিৎসা এবং ওষুধপথ্য দিয়ে যান।
শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার জানান, ১৯৯০ সালে তিনি লে. কর্নেল হিসেবে অবসর নিয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে প্রতি শুক্রবার একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁর বাড়িতেই বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন। পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে দুই দিন, তারপর তিন দিন করে চিকিৎসা দেওয়া হতো। এভাবে চলেছে ২০১১ সাল পর্যন্ত। ২০১২ সালে প্রায় এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন গোলাম-বানু হাসপাতাল। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকালে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সিভিল সার্জন ওয়াহিদ আশরাফ দেলওয়ার। গত বছর তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর ছেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ওয়াহিদ মাহমুদ এখন গোলাম-বানু হাসপাতাল পরিচালনায় সহায়তা দিচ্ছেন।
হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করতে এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরকালীন এককালীন পাওয়া এবং জমি বিক্রির টাকা খরচ করে হাসপাতালটি করেছেন শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার। বছরে সব মিলিয়ে পরিচালনা ব্যয় হচ্ছে ১০-১১ লাখ টাকা। আয় হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বাকি টাকা নিজের তহবিল থেকে দান করেন। তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও পুত্রবধূসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের কাজে তাঁকে উৎসাহ জোগান এবং সহায়তা করেন। এ ছাড়া ছোট ভাইয়ের মেয়ে হিরা সুলতানা অবৈতনিক ব্যবস্থাপক হিসেবে হাসপাতালটির পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন।
গোলাম-বানু হাসপাতালে এখন বহুতল ভবন তৈরির কাজ চলছে। শামসুল আলম জোয়ার্দ্দার জীবদ্দশায় হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে চান। তাঁর অবর্তমানেও যেন চিকিৎসাসেবার কাজ অব্যাহত থাকে, সে ব্যবস্থা করার প্রবল চেষ্টা করছেন তিনি। তাই চাকরি থেকে অবসরে গেলেও কাজ থেকে অবসর মেলেনি তাঁর। রোগী-চিকিৎসা এসব নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।
No comments