জনকল্যাণ- এক প্রবাসীর অনন্য দৃষ্টান্ত by শরিফুজ্জামান
মোশার্রফ হোসেন খান চৌধুরী দেশে থাকেন না, কাজ করেন নিউইয়র্কে। কখনো ট্যাক্সিক্যাব চালান, কখনো ফাস্টফুডের দোকানে ও নির্মাণপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। দেশে না থাকলেও এলাকাবাসী তাঁকে সব সময় স্মরণ করেন গ্রামের একটি শতবর্ষী বটগাছ এবং পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে।
প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থে গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া, পরিবেশ রক্ষা ও নানা ধরনের জনহিতকর কাজের মধ্য দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের মোশার্রফ হোসেন। একটি-দুটি নয়, এলাকায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন তিনি। দুটি কলেজ, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে যেনতেনভাবে চলছে তা নয়। পড়ালেখার মান যথেষ্ট ভালো। ২০১২ ও ১৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোশার্রফ হোসেনের নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি কুমিল্লা জেলার শীর্ষ ২০টি কলেজের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর নামে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন মোশার্রফ। ২০১৩ সালে এই কলেজটিও সেরা ২০-এর তালিকায় ছিল।
প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থে গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া, পরিবেশ রক্ষা ও নানা ধরনের জনহিতকর কাজের মধ্য দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের মোশার্রফ হোসেন। একটি-দুটি নয়, এলাকায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন তিনি। দুটি কলেজ, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে যেনতেনভাবে চলছে তা নয়। পড়ালেখার মান যথেষ্ট ভালো। ২০১২ ও ১৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোশার্রফ হোসেনের নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি কুমিল্লা জেলার শীর্ষ ২০টি কলেজের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর নামে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন মোশার্রফ। ২০১৩ সালে এই কলেজটিও সেরা ২০-এর তালিকায় ছিল।
>>ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শ্রীশ্রী কালীমন্দির প্রাঙ্গণের এই শতবর্ষী বটগাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল মন্দির সংস্কারের খরচ মেটানোর জন্য। মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ক্রেতার কাছ থেকে গাছটি কিনে মন্দিরকে দান করায় এটি এখন বেঁচে আছে l ছবি: সংগৃহীত
মোশার্রফ হোসেনের বাবা আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী ছিলেন স্কুলশিক্ষক৷ প্রয়াত বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়’। মা ও দাদির নামে গড়েছেন ‘আশেদা-জোবেদা খান চৌধুরী ফোরকানিয়া মাদ্রাসা’৷ আর তাঁর দুই ছেলেমেয়ের নামে গড়েছেন ‘মুম-রোহান চাইল্ড প্রি-কাডেট স্কুল’৷
শিক্ষক বাবার সংসারে অভাব-অনটন ছিল। বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি মোশার্রফ। সেই আক্ষেপ থেকেই এলাকার শিক্ষা বিস্তারে তাঁর এই উদ্যোগ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি । টাকার অভাবে আমার এলাকার কোনো শিক্ষার্থীর লেখাপড়া যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য কিছু করার চিন্তা ছিল সব সময়। আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি, এটাই আমার বড় আনন্দ।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মোশার্রফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমি দিয়েছেন তিনি।
দেড় দশক ধরে মোশার্রফ হোসেন নিউইয়র্কে আছেন৷ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৮৩ সালে ২০ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে কাতার যান তিনি৷ সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে নিউইয়র্কে গিয়ে ট্যাক্সিক্যাব চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন জীবিকার প্রয়োজনে৷ সম্প্রতি সেখানে একটি ফাস্টফুডের দোকান চালুও করেছেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান দেশেই থাকেন৷
স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে নেননি কেন? মোশার্রফ হোসেনের জবাব, ‘আমি সেখানে একা কোনোরকমে থাকি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেলে খরচ বেড়ে যেত। তা ছাড়া গ্রামে যে কাজগুলো করছি, সেগুলো করা সম্ভব হতো না।’ এ জন্য তিনি স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ বলে জানালেন।
কঠোর পরিশ্রম করে জমানো টাকা যে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই ব্যয় করছেন তা নয়। মোশার্রফ হোসেন এলাকায় নিজ খরচে দুটি গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ ঈদগাহ, কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন; ডায়াবেটিস হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি কিনে দিয়েছেন। আবার টাকার অভাবে গরিব ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষাবঞ্চিত না হয়, সে জন্য নিজের নামে ফাউন্ডেশন গড়ে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছেন।
সম্প্রতি মোশার্রফ হোসেনের একটি ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নাড়া দিয়েছে মানুষের মনে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল ব্রাহ্মণপাড়া শ্রীশ্রী কালীমন্দির। উপাসনা ব্যাহত হচ্ছিল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের৷ মন্দির প্রাঙ্গণে ছিল শতবর্ষী প্রাচীন বটগাছ। সেই গাছটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রাচীন বটগাছটি বিক্রির খবর। খবরটি কানে যায় মোশার্রফের। দেরি না করে তিনি মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিক্রি হওয়া গাছটি এক লাখ টাকায় কিনে নিয়ে দান করেন মন্দিরকে।
মন্দির রক্ষা কমিটির সভাপতি তপন কান্তি দেব প্রথম আলোকে বলেন, এই গাছটি এখন বেঁচে থাকবে তার আয়ুষ্কাল অবধি। এলাকার হিন্দুধর্মাবলম্বীরা তো তাঁর এই বদান্যতার কথা সব সময় মনে রাখবেই, উপরন্তু এই গাছটির দিকে তাকালে এখন এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মোশার্রফ হোসেনের কথা মনে করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোশার্রফ হোসেনের স্কুল-কলেজের কোনো কাজ নিয়ে গেলে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সবাই জেনেছেন, প্রবাসে থেকে অনেক কষ্টের টাকায় নিঃস্বার্থভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নোমান উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মানুষটির অবদান শুনে অবাক হয়েছি। সবার উচিত এমন মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া।’
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু জানান, প্রত্যেক এলাকায় এমন দানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি থাকলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।
রাজনীতিতে আসছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পঞ্চাশ পেরোনো মোশার্রফ হোসেন বলেন, ‘রাজনীতির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে চাই।’
শিক্ষক বাবার সংসারে অভাব-অনটন ছিল। বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি মোশার্রফ। সেই আক্ষেপ থেকেই এলাকার শিক্ষা বিস্তারে তাঁর এই উদ্যোগ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি । টাকার অভাবে আমার এলাকার কোনো শিক্ষার্থীর লেখাপড়া যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য কিছু করার চিন্তা ছিল সব সময়। আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি, এটাই আমার বড় আনন্দ।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মোশার্রফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমি দিয়েছেন তিনি।
দেড় দশক ধরে মোশার্রফ হোসেন নিউইয়র্কে আছেন৷ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৮৩ সালে ২০ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে কাতার যান তিনি৷ সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে নিউইয়র্কে গিয়ে ট্যাক্সিক্যাব চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন জীবিকার প্রয়োজনে৷ সম্প্রতি সেখানে একটি ফাস্টফুডের দোকান চালুও করেছেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান দেশেই থাকেন৷
স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে নেননি কেন? মোশার্রফ হোসেনের জবাব, ‘আমি সেখানে একা কোনোরকমে থাকি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেলে খরচ বেড়ে যেত। তা ছাড়া গ্রামে যে কাজগুলো করছি, সেগুলো করা সম্ভব হতো না।’ এ জন্য তিনি স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ বলে জানালেন।
কঠোর পরিশ্রম করে জমানো টাকা যে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই ব্যয় করছেন তা নয়। মোশার্রফ হোসেন এলাকায় নিজ খরচে দুটি গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ ঈদগাহ, কবরস্থান ও মসজিদের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন; ডায়াবেটিস হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি কিনে দিয়েছেন। আবার টাকার অভাবে গরিব ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষাবঞ্চিত না হয়, সে জন্য নিজের নামে ফাউন্ডেশন গড়ে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছেন।
সম্প্রতি মোশার্রফ হোসেনের একটি ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নাড়া দিয়েছে মানুষের মনে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল ব্রাহ্মণপাড়া শ্রীশ্রী কালীমন্দির। উপাসনা ব্যাহত হচ্ছিল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের৷ মন্দির প্রাঙ্গণে ছিল শতবর্ষী প্রাচীন বটগাছ। সেই গাছটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রাচীন বটগাছটি বিক্রির খবর। খবরটি কানে যায় মোশার্রফের। দেরি না করে তিনি মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিক্রি হওয়া গাছটি এক লাখ টাকায় কিনে নিয়ে দান করেন মন্দিরকে।
মন্দির রক্ষা কমিটির সভাপতি তপন কান্তি দেব প্রথম আলোকে বলেন, এই গাছটি এখন বেঁচে থাকবে তার আয়ুষ্কাল অবধি। এলাকার হিন্দুধর্মাবলম্বীরা তো তাঁর এই বদান্যতার কথা সব সময় মনে রাখবেই, উপরন্তু এই গাছটির দিকে তাকালে এখন এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মোশার্রফ হোসেনের কথা মনে করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোশার্রফ হোসেনের স্কুল-কলেজের কোনো কাজ নিয়ে গেলে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সবাই জেনেছেন, প্রবাসে থেকে অনেক কষ্টের টাকায় নিঃস্বার্থভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নোমান উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মানুষটির অবদান শুনে অবাক হয়েছি। সবার উচিত এমন মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া।’
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু জানান, প্রত্যেক এলাকায় এমন দানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি থাকলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।
রাজনীতিতে আসছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পঞ্চাশ পেরোনো মোশার্রফ হোসেন বলেন, ‘রাজনীতির প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে চাই।’
No comments