বোলারদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ by ইশতিয়াক পারভেজ
প্রথমদিন ৩০৩ সংগ্রহ মাত্র ২ উইকেটে। দ্বিতীয় দিন তার সঙ্গে আরও ২০২ রান যোগ। বাংলাদেশের ক্রিক্রেটে এই নজির নেই। চট্টগ্রাম টেস্টে গতকাল বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৫০৩ রানে, যা এখন পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আর সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৩৮ ও ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫৬ রান যথাক্রমে এখনও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে দুই বৃহত্তর সংগ্রহই দ্বিতীয় ইনিংসে। ম্যাচের প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এর আগে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ ছিল ৪৮৮ রান। এই রেকর্ডটিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সকালে সাগরিকায় ৪৬ রানে মুমিনুল ও ৫ রান নিয়ে মাহমুদুল্লাহ মাঠে নামেন। কিন্তু খুব দ্রুত এই দু’জন ফিরে গেলে হোঁচট খায় মুশফিক বাহিনী। তবে সাকিব আল হাসান সেই বিপর্যয় সামাল দিলে বাংলাদেশের স্কোর ৪শ’ পার হয়। সাকিব ৭১ রানে আউট হওয়ার পর মনে হচ্ছিল ৫শ’ আর সম্ভব নয়। পেসার রুবেল হোসেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেন। চট্টগ্রামে এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে ৫০১ ছিল সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের ৫০৩ রানের জবাব ভালভাবেই দিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। মাত্র ৯ রানের মাথায় ব্রায়ান চারিকে হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন রয়েছেন সিকান্দার রাজা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। রুবেল হোসেনের প্রথম ওভারের শেষ বলটি চারির ব্যাট ছুয়ে আশ্রয় নেয় উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। এরপর বাংলাদেশের বোলাররা ২৪ ওভার বল করলেও সফরকারীদের টলাতে পারেনি। ক্রিজে থাকা দু’জনই স্বচ্ছন্দে ফিফটি পুরো করে ফেলেন। সিকান্দার ৬৫ বলে ৫৪ আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ৮৬ বলে ৫১ করেছেন। ২-০ তে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে চাইবে জয় না পেলেও অন্তত হার যেন না হয়। বাংলাদেশের চেয়ে ওভার প্রতি গড়ে ১ রান করে বেশি নিয়েছে জিম্বাবুইয়ানরা। বাংলাদেশের লক্ষ্য এ টেস্টও জিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করা। এ জন্য বোলারদের দিকেই তাকিয়ে সবাই। পিচ সম্পূর্ণ ব্যাটিং সহায়ক। আজ যদি উইকেটের চরিত্রে পরিবর্তন না আসে তবে ম্যাচের ফল বের করা কঠিনই হবে। গতকাল খেলা শেষে দু’দলের পক্ষে কথা বলতে এসে এমনই মন্তব্য করেন রুবেল হোসেন ও সিকান্দার রাজা।
সকালে ব্যাট করতে নেমে মুমিনুল হক ৪৮ রান করে পানিয়াঙ্গারার বলে ক্যাচ দেন টেইলরের হাতে। দলীয় স্কোর তখন ৩১২ রান। মুমিনুলের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৪০ রানের জুটি ভাঙলে সাকিবকে নিয়ে ২৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। চলতি সিরিজে চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদুল্লাহ প্রথম দুই টেস্টে ৩টি ফিফটি হাঁকালেও গতকাল খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। সিঙ্গি মাসাকদজার বলে এলবিডব্লিউ’র শিকার হয়ে তিনিও ফিরেন সাজঘরে। এরপর বাকি লড়াইটা সাকিব আল হাসানের। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ১৫ রান করে আউট হওয়ার আগে এই দু’জনের জুটি ছিল ৩৯ রানের। তবে সাকিবের সঙ্গে বড় জুটিটি গড়েন শুভাগত হোম। ৬ষ্ঠ উইকেটে ৫০ রানের জুটিতে শুভাগত হোমের অবদান ২২ রান। দলীয় ৪২৮ রানে সাকিব যখন আউট হন তখন তার নামের পাশে যোগ হয়েছে ৭১টি রান। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার ১৭তম ফিফটি এটি। খুলনা টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকালেও চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি ২৯ রান দূরে থেকেই আউট হন। ১১০ বল খেলে তিনি ৭টি চারের মারে ইনিংস সাজান। সাকিবের আউটের পর মাত্র ১ রান যোগ হতে আউট হন তাইজুল ইসলাম। এরপর শফিউলের সঙ্গে ২২ রানের জুটি গড়েছিলেন শুভাগত। তাইজুল দলীয় ৪৫১ ও শফিউল ও ৪৫২ রানের সময় শুভগত আউট হলে বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন ঘটে।
এরপর মাঠে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন রুবেল হোসেন। ১০ম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতে তার সঙ্গী জুবায়ের হোসেন লিখনের অবদান মাত্র ৫ রান। তবে রুবেল তার দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলেন ৪৪ বলে। ২টি চার ও ৪টি ছয়ের মার তছনছ করে দেন জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণ। এর আগে বাংলাদেশ দলের পক্ষে ১০ম উইকেটে সর্বোচ্চ ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন মো. রফিক ও শাহাদাত হোসেন রাজীব। এই রেকর্ডটিও ছিল ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ৫ ইনিংস:
স্কোর ওভার ইনিংস প্রতিপক্ষ ভেন্যু/সাল
৬৩৮ ১৯৬ ২ শ্রীলঙ্কা গল/২০১৩
৫৫৬ ১৪৮.৩ ২ ও. ইন্ডিজ ঢাকা/২০১২
৫০৩ ১৫৩.৪ ১ জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম/২০১৪
৫০১ ১৪৮.৫ ২ নিউজিল্যান্ড চট্টগ্রাম/২০১৩
৪৮৮ ১৪৯.৩ ১ জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম/২০০৫
No comments