ডায়াবেটিস বাংলাদেশে আক্রান্ত ৯০ লাখ
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস এখন এক মহামারী আকার ধারণ করেছে। শুধু উন্নত বিশ্বই নয়, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত বিশ্বেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা মহামারী আকারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট ৯০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। যা মোট জনগোষ্ঠীর ১৮ ভাগ। এছাড়া এই রোগীর সংখ্যা শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে গ্রামেও। বর্তমানে শহরে ১০ ভাগ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামাঞ্চলে এ সংখ্যা ৮ ভাগ। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, এটি প্রতিরোধে এখনই জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। না হয় মহামারী আকার ধারণ করবে।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এমন তথ্য জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর এন্ডোক্রাইনোলজি মেডিসিন (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগ। গতকাল এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ডায়াবেটিস সংগঠন এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে গ্রামেও। বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ৫০ কোটিতে। বাংলাদেশে আশির দশকে ডায়াবেটিস রোগী সংখ্যা ছিল যেখানে মাত্র ২ শতাংশ এটি এখন শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে ৮ শতাংশ। এছাড়াও প্রি-ডায়াবেটিস (ডায়াবেটিস-এর আগের ধাপ)-এর হার আরও প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে আশির দশকে যেখানে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সেখানে এখন গ্রামাঞ্চলেও ডায়াবেটিসের সামগ্রিক প্রবণতা ৮ শতাংশের মতো। এভাবে ক্রমশ ডায়াবেটিস বাড়তে থাকলে শুধু ডায়াবেটিসের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য হবে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। শুধু দেশেই এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। সেই সঙ্গে প্রতি বছর ১ লাখ নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে পচন, এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত লাগতে পারে। এত বড় বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে দরকার জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা। সময়মতো ইন্টারভেনশন (খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন), নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু উন্নত বিশ্ব নয়, স্বল্পোন্নত দেশেও এ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশংকাজনক হারে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিস কেবল চিকিৎসার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেয়ে সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা জরুরি। ডায়াবেটিসের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘প্রাতঃরাশেই শুরু স্বাস্থ্যকর খাদ্যের’- এই স্লোগানে এবার পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বিএসএমএমইউ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। পরে দিবসটি উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
No comments