রানী পারভীনের ‘রানিগিরি’ by শাহ্ আলম শাহী
দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর এলাকার রানী
পারভীন, তার ক্ষমতা অনেক। প্রশাসক ও মন্ত্রী-এমপিরা থাকেন ভ্যানিটি
ব্যাগে। বেপরোয়া চালচলন। ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী পরিচয় দানকারী এই রানী
পারভীনের ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। তার বিভিন্ন অপকর্মের
প্রতিবাদ করতে গিয়ে এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে
হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার। সে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদী
মানুষের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করছে। এছাড়া মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ
করে থানা-পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষদের। এই রানী
পারভীনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ
বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ ও সদয় অবগতির জন্য এই অভিযোগপত্রের অনুলিপি দিয়েছে স্থানীয়
সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমকে । প্রায় ৩৫ জন এলাকাবাসীর
স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, দিনাজপুর শহরের পশ্চিম রামনগর
মদিনা মসজিদ এলাকার সেলাই কারিগর দর্জি হুসেন আলীর স্ত্রী রানী পারভীন। তার
বাড়িতে দিন-রাত সন্ত্রাসী মাস্তান, যুবক, কতিপয় ঠিকাদার ও বিভিন্ন অফিসের
কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ছাড়াও অপরিচিত লোকজনের অবাধ যাতায়াত। তাদের সঙ্গে
বাহনে চড়ে প্রকাশ্যে বেরিয়ে যাওয়া, শহরের চিহ্নিত কিছু আবাসিক হোটেল এবং
পর্যটন মোটেলে অবস্থান ও বাইরে রাত কাটিয়ে ভোর বা সকালে বাড়িতে ফেরা নিয়ে
এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করে। এ বিষয়ে তার স্বামী হুসেন আলী প্রতিবাদ করার
সাহস পান না। একবার প্রতিবাদ করায় উল্টো তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশের কাছে
স্ত্রী নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করে। পুলিশ তদন্তে এসে এ বিষয়ে এলাকাবাসীর
কাছে জানতে চাইলে এলাকাবাসী প্রকৃত ঘটনা জানায়। এতে এলাকাবাসীর ওপর আরও
ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে কথিত নেত্রী রানী পারভীন। তার বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ
করায় রানী পারভীন ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী পরিচয় দিয়ে শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসীর
ওপর অত্যাচার চালানো শুরু করেছে। নিরীহ মানুষকে প্রতিনিয়ত করছে হয়রানি ও
লাঞ্ছনা। সন্ত্রাসী লেলিয়ে বাহিনী দিয়ে প্রতিবাদী মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা
চালিয়ে ভাঙচুর করছে। হত্যা ও এসিড নিক্ষেপ করারও হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যে।
এছাড়া মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করে থানা-পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে এলাকার
সাধারণ নিরীহ লোকজনদের। এলাকার সাইদুর রহমান ও বাবু’র পরিবারের ওপর শুরু
হরেছে জুলুম-নির্যাতন। তাদের বাড়ি-ঘরে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে
ভাঙচুর করেছে। সাইদুর রহমানকে প্রকাশ্য হত্যা এবং তার কিশোরী মেয়েকে এসিড
মেরে ঝলসে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ বিষয়ে মামলাও হয়েছে আদালতে। রানী পারভীন
এলাকার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করার জন্য মনগড়া ও
কাল্পনিক অভিযোগের সাক্ষী বানিয়েছে এলাকার নিরীহ মানুষদের। তারা এ বিষয়ে
কিছু জানে না, তাই সাক্ষ্য দিতে না চাইলে তাদেরও মারধর ও হত্যাসহ বিভিন্ন
হুমকি দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, কয়েকজনকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে গিয়ে হয়রানি
করারও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সালিশি বৈঠকও হয়েছে কয়েকবার। এর পরও
দাপট কমছে না কথিত নেত্রী রানী পারভীনের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রানী
পাভীনের স্বামী হুসেন আলী সেলাই কারিগর দর্জি’র কাজ করে শহরের ষষ্টিতলা
এলাকায়। স্বামী বেচারাও তার কাছে জিম্মি। প্রতিবাদ করতে পারছে না স্ত্রী’র
অপকর্মের। অত্যন্ত বাকপটু ধুরন্ধর এ রানী পারভীন ক্ষমতাসীন দলে কর্মী
হিসেবে যোগ দিয়ে অল্প সময়ে নেত্রীর সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে তার নামের সঙ্গে।
জেলা আওয়ামী মহিলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আসছে
সে। কেউ তার অন্যায় ও অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই সে বলে ওঠে “প্রশাসন ও
মন্ত্রী-এমপিরা আমার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকে” আমার বিরুদ্ধে টু-শব্দ করলে
জানে খেয়ে ফেলবো। লাল ঘরে পাঠিয়ে দেব। জানোনা ব্যাটা আমি কে? এ বিষয়ে জেলা
আওয়ামী মহিলা যুবলীগের সভাপতি ছবি সিনহার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, রানী
পারভীন একটা দায়িত্বে আছে। তবে কোন পদে আছে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। পরে
জানাতে পারব। তার বিষয়ে অনেক অভিযোগ আসছে। আমরা তা খতিয়ে দেখব। দিনাজপুর
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি
বলেন, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। জানি না, দলের সে কোন পদে আছে। অপকর্ম
করলে দায়দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। ছাড় না দিয়ে এলাকার মানুষকে তার
বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন বলেন, মহিলাটির বিরুদ্ধে অসংখ্য
অভিযোগ। তার আচরণও বাজে। সে নিজেকে সংশোধন না করলে অচিরেই তার বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) আলতাফ হোসেন জানান, ওই রানী পারভীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ
আমাদের কাছে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চায় না কারও ক্ষতি হোক। তাই তাকে
সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
No comments