দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার আবদুল লতিফ সিদ্দিকী
দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার হলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। দিনে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের পর রাতে দলের প্রেসিডিয়াম থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও স্থগিত করা হয়েছে। তার সদস্য পদ বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না মিললে দলের প্রাথমিক সদস্য পদের সঙ্গে এমপি পদও হারাবেন তিনি। গতকাল দুপুরে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাতে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসে। এতে তাকে প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে হজ ও মহানবী (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার ১৫ দিনের মাথায় লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে দল ও সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিত্ব থেকে বহিষ্কার সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ তৈরি করে বেলা দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বঙ্গভবনে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সই নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্ব থেকে অবসান সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পড়ে শুনিয়ে বলেন- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান ঘটানোর জন্য প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের (১) দফার (গ) উপ-দফা অনুসারে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রী পদে নিয়োগের অবসান ঘটানোর নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অন্য কাউকে অর্পণ না করা পর্যন্ত রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর বিধি ৩(৪) অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে। কেন লতিফ সিদ্দিকীর অবসান- এ বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে এসেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তার মন্ত্রিত্বের ‘অবসান’ কেন ঘটানো হলো- ওই বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখের আবশ্যকতাও নেই। সংবিধানেও এ বিষয়ে বলা নেই। এর বাইরে আমি কিছু বলতে চাই না। লতিফের মন্ত্রিত্ব থেকে অবসানের অর্থ ‘অপসারণ’ না ‘অব্যাহতি’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দু’টো একই বিষয়। মিনিং একই। আমরা প্রজ্ঞাপনে সংবিধানের ভাষা ব্যবহার করেছি। শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশু রদবদলের তথ্য তার জানা নেই। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সফরে থাকার সময় গত ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলীগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। এরপর তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। লতিফ সিদ্দিকী সেদিন বলেছিলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রমশক্তির অপচয় হয়। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি ইসলামী দল আন্দোলনের হুমকি দেয়। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের দাবিও তোলে বিএনপি। নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে গত ৩রা অক্টোবরই এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। তবে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ হজ পালনে সৌদি আরবে থাকায় এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা ঝুলে থাকে আরও এক সপ্তাহ। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু বিদায় দিতে হলে প্রেসিডেন্টের কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। প্রেসিডেন্ট হজে গেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হজে গেছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ফাইল তৈরি করে রাখতে বলেছি, অফিস খুললে ফাইল চলে আসবে। হজ পালন শেষে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত শুক্রবার দেশে ফিরে আসেন। শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভূঁইঞা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে (লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ) একটি ফাইল আসবে। আমরা একটি সামারি তৈরি করে তা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে পাঠাবো। প্রেসিডেন্ট তাতে সাইন করার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সঙ্গে নিয়েই বঙ্গভবনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে বৈঠক করেন পুরো এক ঘণ্টা। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের সই নিয়ে সচিবালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
দলের প্রেসিডিয়াম থেকেও অব্যাহতি: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। গতকাল সন্ধ্যায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাকে কেন প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না- এ মর্মে নোটিশ দেয়া হবে। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ী অব্যাহতি কার্যকর হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ হারালে সংসদ সদস্যপদ হারাবেন লতিফ সিদ্দিকী। সৈয়দ আশরাফ জানান, নিউ ইয়র্কে মহানবী (সা.) হজ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দলের গঠনতন্ত্র ও নীতিবিরোধী। এ জঘন্য অপরাধের কারণে তার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী কোথায় অবস্থান করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা দলীয় গঠনতন্ত্র হিসেবে নেয়া হয়েছে বলে জানান সৈয়দ আশরাফ।
সাংবিধানিকভাবেই লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ: প্রধানমন্ত্রী
সাংবিধানিকভাবেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের একজন মন্ত্রী (লতিফ সিদ্দিকী), এখন তো উনি প্রাক্তন মন্ত্রী; যেভাবে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এ ধরনের কটূক্তি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমি জানি না তিনি কেন এ কথা বলেছেন। তবে তিনি যা বলেছেন তা গর্হিত অপরাধ। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। সব ধর্মের মানুষ মর্যাদা নিয়ে চলবে- এটাই আমরা চাই। তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) এমন সময় এ মন্তব্য করেছেন যখন প্রেসিডেন্ট, ক্যাবিনেট সেক্রেটারিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হজ পালনে ছিলেন। আমাদের দলের কেউ এমন মানসিকতা পোষণ করুক তা আমরা চাই না। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি যখন এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তখন আমি (শেখ হাসিনা) দেশের বাইরে ছিলাম। আমার নির্দেশে ফাইল (অপসারণের) তৈরি করা ছিল। কালকে (গত শনিবার) বসে সই করেছি। আজ (গতকাল) গিয়েছি প্রেসিডেন্টের কাছে। সেখানে প্রেসিডেন্টের সইয়ের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ বৈঠকে মূল এজেন্ডা ছিল লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। বৈঠকে এ বিষয়ে দলের নেতারা মতামত দেন। সভার শুরুতেই কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২২শে অক্টোবর জাতীয় সংসদে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু হত্যা ঘটনাকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়া হবে। যখনই এ ধরনের অপরাধ ঘটবে তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রকম আন্দোলনের হুমকি-ধমকি থাকা ভাল। সবাই একটু সজাগ থাকবে। তবে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে সহ্য করা হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগের আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে নির্বাচনই নাকি হতে দেবে না। নির্বাচন হলে গৃহযুদ্ধ হবে। কিন্তু কি হয়েছে। কিছুই হয়নি। যা হয়েছে তা আমরা দমন করেছি। এখন মানুষের মধ্যে আস্থা-স্বস্তি, বিশ্বাস ফিরে এসেছে। নির্বাচনের বিপক্ষে কারা ছিল। সামান্য কিছু লোক ছিল। যাদের কোন ভোট নেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সার্কাসের গাধার গল্প উল্লেখ করে বলেন, ওই গাধার মতো কিছু লোক দড়ি ছিঁড়ার অপেক্ষায় থাকে। এ দেশে ইয়াহিয়ার কিছু দোসর আছে যারা দড়ি ছিঁড়ার অপেক্ষায় আছে। দড়ি ছিঁড়লে পতাকা পাবে, ক্ষমতা পাবে। কিছু সুদখোর, ঘুষখোর, ইয়াহিয়ার পদলেহনকারী আছে যারা দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দড়ির দিকে তাকিয়ে থাকুক। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলার পথে ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে আমরা তা শোধরাতে পারি। তা আমরা প্রমাণ করেছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বৈঠকে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, নূহ-উল আলম লেনিন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সতীশ চন্দ্র রায়, সাহারা খাতুনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
দলের প্রেসিডিয়াম থেকেও অব্যাহতি: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। গতকাল সন্ধ্যায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার প্রাথমিক সদস্যপদও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাকে কেন প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না- এ মর্মে নোটিশ দেয়া হবে। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ী অব্যাহতি কার্যকর হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ হারালে সংসদ সদস্যপদ হারাবেন লতিফ সিদ্দিকী। সৈয়দ আশরাফ জানান, নিউ ইয়র্কে মহানবী (সা.) হজ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দলের গঠনতন্ত্র ও নীতিবিরোধী। এ জঘন্য অপরাধের কারণে তার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী কোথায় অবস্থান করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা দলীয় গঠনতন্ত্র হিসেবে নেয়া হয়েছে বলে জানান সৈয়দ আশরাফ।
সাংবিধানিকভাবেই লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ: প্রধানমন্ত্রী
সাংবিধানিকভাবেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের একজন মন্ত্রী (লতিফ সিদ্দিকী), এখন তো উনি প্রাক্তন মন্ত্রী; যেভাবে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এ ধরনের কটূক্তি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমি জানি না তিনি কেন এ কথা বলেছেন। তবে তিনি যা বলেছেন তা গর্হিত অপরাধ। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। সব ধর্মের মানুষ মর্যাদা নিয়ে চলবে- এটাই আমরা চাই। তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) এমন সময় এ মন্তব্য করেছেন যখন প্রেসিডেন্ট, ক্যাবিনেট সেক্রেটারিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হজ পালনে ছিলেন। আমাদের দলের কেউ এমন মানসিকতা পোষণ করুক তা আমরা চাই না। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি যখন এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তখন আমি (শেখ হাসিনা) দেশের বাইরে ছিলাম। আমার নির্দেশে ফাইল (অপসারণের) তৈরি করা ছিল। কালকে (গত শনিবার) বসে সই করেছি। আজ (গতকাল) গিয়েছি প্রেসিডেন্টের কাছে। সেখানে প্রেসিডেন্টের সইয়ের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এ বৈঠকে মূল এজেন্ডা ছিল লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। বৈঠকে এ বিষয়ে দলের নেতারা মতামত দেন। সভার শুরুতেই কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২২শে অক্টোবর জাতীয় সংসদে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু হত্যা ঘটনাকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়া হবে। যখনই এ ধরনের অপরাধ ঘটবে তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রকম আন্দোলনের হুমকি-ধমকি থাকা ভাল। সবাই একটু সজাগ থাকবে। তবে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে সহ্য করা হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের আগের আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে নির্বাচনই নাকি হতে দেবে না। নির্বাচন হলে গৃহযুদ্ধ হবে। কিন্তু কি হয়েছে। কিছুই হয়নি। যা হয়েছে তা আমরা দমন করেছি। এখন মানুষের মধ্যে আস্থা-স্বস্তি, বিশ্বাস ফিরে এসেছে। নির্বাচনের বিপক্ষে কারা ছিল। সামান্য কিছু লোক ছিল। যাদের কোন ভোট নেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সার্কাসের গাধার গল্প উল্লেখ করে বলেন, ওই গাধার মতো কিছু লোক দড়ি ছিঁড়ার অপেক্ষায় থাকে। এ দেশে ইয়াহিয়ার কিছু দোসর আছে যারা দড়ি ছিঁড়ার অপেক্ষায় আছে। দড়ি ছিঁড়লে পতাকা পাবে, ক্ষমতা পাবে। কিছু সুদখোর, ঘুষখোর, ইয়াহিয়ার পদলেহনকারী আছে যারা দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দড়ির দিকে তাকিয়ে থাকুক। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলার পথে ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে আমরা তা শোধরাতে পারি। তা আমরা প্রমাণ করেছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বৈঠকে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, নূহ-উল আলম লেনিন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সতীশ চন্দ্র রায়, সাহারা খাতুনসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
No comments