আঘাত হেনেছে হুদহুদ
ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস টেনে নিয়ে যাচ্ছিল স্ত্রীকে। তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ওডিশা রাজ্যের গোপালপুর সৈকতের গতকালের দৃশ্য। |
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ ভারতের পূর্ব উপকূলে গতকাল রোববার সকালে আঘাত হেনেছে। এই দুর্যোগে গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ঝড় থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। খবর এএফপি, রয়টার্স, এনডিটিভি ও বিবিসির। হুদহুদের প্রভাবে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বইতে থাকে। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগর ২০ লাখ বাসিন্দার বিশাখাপট্টনাম ও আশপাশের এলাকায় জনজীবন ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পাখির নামে নামকরণ হওয়া ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলীয় তিনটি জেলায় আঘাত হানে। এর আগেই স্থানীয় প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনের কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, অন্ধ্র প্রদেশ ও ওডিশায় শনিবার ও গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক নারীসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। এর মধ্যে ভেঙে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজন এবং ভারী বর্ষণে দেয়ালধসে একজন মারা যায়।
হুদহুদ আঘাত হানার আগে থেকেই ভারতীয় নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড বিশেষ সতর্ক অবস্থায় ছিল। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল স্পর্শ করার পরবর্তী পাঁচ-ছয় ঘণ্টা খুবই বিপজ্জনক সময় বলে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছিল। স্থানীয় মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।ভারতের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) বলেছে, বিশাখাপট্টনামের প্রধান সড়কে বহু গাছপালা এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এখন এনডিআরএফের বড় কাজ হচ্ছে রাস্তা পরিষ্কার করা এবং উদ্ধার তৎপরতা চালানো। ঝড়ের কারণে উড়োজাহাজের বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এনডিআরএফের কর্মকর্তা অনিল শেখাওয়াত বিবিসিকে বলেছেন, ৪২টি দলে তাঁদের প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত এলাকায় কাজ করছেন। পিটিআই জানায়, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে ওডিশার বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে কেউ কেউ আপত্তি করেছে। তারা আগে কোনো ঝড়ের সময়ই এলাকা ছেড়ে যায়নি বলে দাবি করে। সরতে রাজি না হওয়া এ মানুষেরা মূলত আদিবাসী। ওডিশা রাজ্য আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক শরৎ সাহু বিবিসিকে বলেন, হুদহুদের প্রভাবে রাজ্যটির দক্ষিণাঞ্চল এবং পাশের দুই রাজ্য ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানায় ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যা হতে পারে। ভারতের পূর্ব উপকূল এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে প্রায় প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
No comments