সফলতার আলো জ্বলার ক্ষেত্রে সাহস বড় শক্তি -ফ্রান কাপো by মো: আবদুস সালিম
বেশি কথা বলাদের অনেকেই পছন্দ করেন না।
অনেকে তাদেরকে বাচাল বা টকেটিভও বলে। কিন্তু অল্প সময়ে বেশি বা সর্বাধিক
পরিমাণে শব্দ বলতে পারাও যে একটা বড় ধরনের কৃতিত্ব বা কোয়ালিটি, যা অনেকেরই
জানা নেই। এ নিয়ে প্রতিযোগিতার নিয়ম চালু আছে বিশ্বে। এমনকি অনেকে গড়েন
বিশ্ব রেকর্ড। মিনিটে ৪৮৫টি শব্দ উচ্চারণ করে বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিলেন
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনউইচে জন্ম নেয়া নারী ফ্রান কাপো। একবার দুইবার নয়, বরং
তিন-তিনবার বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন সবচেয়ে দ্রুত কথা বলা নারী হিসেবে। এক
হিসাবে সংশ্লিষ্টরা জেনেছেন, কপো প্রতি সেকেন্ডে বলতে পারেন ১১টি শব্দ।
তিনি অনেক আগেই বলেছিলেন, সবচেয়ে দ্রুত কথা বলা নারী হিসেবে গিনেজ বুকের
রেকর্ড ভাঙতে হবে আমাকে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই সিরিয়াস। অনেক
সময়ে স্টপওয়াচ ধরেও এর চর্চা করেন। আরো অনেক পদ্ধতিতে তিনি এর প্র্যাকটিস
করেন। হয়তো সে কারণেই তিনি আজ এ ব্যাপারে এত দূর এগিয়ে গেছেন। এ নিয়ে তার
লাইভ অনুষ্ঠানও হয়েছে। তার পর থেকে এ ব্যাপারে তিনি আরো সিরিয়াস হন।
বিশ্বরেকর্ড গড়েন ১৯৮৬ সালের ৫ মার্চ। ফের রেকর্ড গড়তে লাস ভেগাসের এক টিভি
দর্শকের সামনে হাজির হন ১৯৯০ সালে। কপোর হাতে দেয়া হলো ব্রিটিশ ইংরেজিতে
লেখা একটি বই। এটি সপ্তদশ শতাব্দীর। ৪৮৫টি শব্দ পড়েন মাত্র এক মিনিটে। এতেই
ভেঙে গেল রেকর্ড। গিনেজ বুকের এখনকার রেকর্ড বলেছে, ফ্রান কপো ৬০৩ দশমিক
৩২ শব্দ পড়েন ৫৪ দশমিক ২ সেকেন্ডে।
সবচেয়ে দ্রুত কথা বলা মেয়ে হিসেবে কাপোর নাম কেবল গিনেজ বুকেই শুধু নয়, তা উল্লেখ আছে বুক অব অল্টারনেটিভ রেকর্ডস ও রিপলিস বিলিভ ইট অর নটে। এগুলো তাকে নিয়ে ফিচারও করেছে। তবে দ্রুত কথা বলতে পারা সম্বন্ধে তিনি বলেন, এর জন্য ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে নিউ ইয়র্কের। দ্রুত বা তাড়াতাড়ি কথা বলাদের বেশির ভাগই থাকে এখানে। দ্রুত কথা বলতে পারার কারণে অনেক তাকে বলে ‘মোটর মুখের নারী’। অসম্ভব দ্রুত রিপোর্ট পড়েন মাত্র আধা মিনিটে।
ফ্রান কপোর আরো পরিচয় আছে। রেডিওতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। কৌতুকানুষ্ঠান প্রচার করেন এফএম রেডিও স্টেশনে বা নাটকে কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠান উপস্থাপনারও ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিছু রিপোর্ট পড়েন বেশ রসাত্মক ভঙ্গিতে। তিনি মনে করেন, এমনভাবে কিছু বিষয় প্রচার করতে পারলে তা হৃদয়গ্রাহ্য একটু বেশিই হয়। গণমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলে ব্যাপক পরিচিতি পেতে থাকে।
দেখা যাচ্ছে অনেকগুলো পেশার সাথেই জড়িত তিনি। টিভি অনুষ্ঠানের সহ-উপস্থাপকের পাশাপাশি তিনি ব্লগ রাইটার, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র। কাপো বেশ সুনাম অর্জন করেছেন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে। দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের হাসানো হয় কৌতুকাভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি কৌতুক পরিবেশন করেন রেস্টুরেন্টেও। কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো অনুষ্ঠান হবে খোঁজ পেলে সেখানে দ্রুত যান। তবে এককাভিনয় তার একটু বেশি পছন্দ।
বক্তা হিসেবেও রয়েছে তার বড় পরিচিতি। এ বিষয়ে তার রয়েছে প্রচুর বই। যখন মনে করেন তখনই লিখতে পারেন। অর্থাৎ এ ব্যাপারে তার নেই নির্দিষ্ট সময় বা ক্ষণ। এমনকি অনেক সময় লেখেন অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে। তিনি হাসপাতালে থেকেছেন রোগীর সাথে। লক্ষ্য, এখানকার বিভিন্ন্ অভিজ্ঞতা বা সুবিধা অসুবিধাগুলো বুঝতে পারা। এ নিয়ে তিনি বই লিখেছেন। এটি পড়লে মানুষ জানতে পারবে হাসপাতালে কোন সমস্যা হলে কী করতে হবে।
এরই মধ্যে ফ্রান কাপো করেছেন প্রায় তিনশ টিভি শো। কমেডি বক্তৃতায় নতুন নতুন গল্প জুড়ে দেন। যা অনেকের পক্ষে মোটেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, কৌতুকই কমেডির প্রাণ বা মূল। অবশ্য প্রতিটি গল্পের একটি কারণ থাকবে বক্তৃতায়। শেখার মতো কিছু থাকলে তা হয়ে ওঠে আরো প্রাণবন্ত।
কাপো বিখ্যাত অভিযাত্রী হিসেবেও। অভিযান নিয়ে বের করেছেন প্রচুর বই। একটি বইয়ে স্বাক্ষর করেন কিলিমানজারো পর্বতের চূড়ায়। এটি অদ্ভুত এক বিশ্বরেকর্ড বলা যায়। এটি ২০০৪ সালের কথা। ২০০৫ সালে সাগরের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের সামনে স্বাক্ষর দেন। তবে বিশ্বরেকর্ড গড়া তার আসল উদ্দেশ্য নয়। নিজের পরিচয় নিতেই বেশি ভালো লাগে। মানুষ যাতে অ্যাডভেনচারে নামে সেটাই তার উদ্দেশ্য। ভিডি ব্লগ চালু করেছেন ইউটিউবে। এটি বিনা পয়সার একটি সেবা। অবাক বিষয় হলো- হাঙরের পাশে সাঁতরেছেন। লাফিয়েছেন যুদ্ধবিমান থেকে। পড়েন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে। রেসিং কার চালানোর ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। অনেকে তাকে বেপরোয়া নারী হিসেবে জানেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অভিযান চালাতে হবে সাগরের হাইড্রোথারমাল ভেন্টগুলোতে। এগুলো রীতিমতো উষ্ণ প্রস্রবণ।
প্রচণ্ড সাহসী কাপোর পড়ালেখা কুইন্স কলেজে। পড়েছেন দর্শন ও হিসাববিজ্ঞানে। তবে স্বামীর সাথে জীবন কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি তার। অনেকের ধারণা অনেকগুলো পেশায় জড়িত থাকার কারণে তা সম্ভব হয়নি। প্রায় ১৯ বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস পুটন্যাম কাউন্টিতে। কাপো মনে করেন, জীবনে অনেক কিছুই স্থায়ী হয় না। যেমনটি হয়েছে আমার বেলায়ও। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকে যারা বিভিন্ন অ্যাডভেনচারে যোগ দেয় তাদের পক্ষে এমন কিছু ঘটা বা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কোনো কিছুকে ভয় না পাওয়াই যেন ফ্রান কাপোর জীবন দর্শন।
No comments