রাস্তা, নালা ফুঁড়ে বের হচ্ছে গ্যাস, আতঙ্কে বাসিন্দারা by মাহবুবুল হক ভূঁইয়া ও একরামুল হুদা
রাস্তা, রাস্তার পাশ ও নালা ফুঁড়ে বের
হচ্ছে গ্যাস। এ গ্যাস বের হচ্ছে তিতাস গ্যাসের সরবরাহ লাইনের ফুটোফাটা
দিয়ে। কোথাও চাপ বেশি, কোথাও কম। কখনো কখনো জ্বলে উঠছে আগুন, ঘটছে
দুর্ঘটনা। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।
রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১২টি রাস্তায় এখন এমন অবস্থা। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ওই আবাসিক এলাকার রাস্তা ও নালার ৪৭টি স্থান দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ নম্বর রাস্তায় ১০টি ও ১৩ নম্বর রাস্তায় ১১টি স্থান রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। ছয় মাস ধরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালেও স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এভাবে গ্যাস বের হওয়ার কারণে অপচয়ও হচ্ছে।
আর তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি বলেছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার মাঝখানে, পাশে ও রাস্তার পাশের নালা ফুঁড়ে গ্যাস বের হচ্ছে। রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও নালার পানিতে গ্যাসের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে বুদ্বুদের। পানি জমে নেই এমন স্থান দিয়েও গ্যাস বের হচ্ছে। তবে খালি চোখে তা বোঝা যায় না। পানি ঢেলে দিয়ে বা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি বোঝা যায়। এলাকার কয়েকজন এর প্রমাণও দিলেন। কয়েক স্থানে দেখা গেল, বালু ও মাটি দিয়ে গ্যাস চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, তিতাসের সরবরাহ লাইন দিয়ে এভাবে গ্যাস বের হওয়ায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি ঘটনায় তাঁরা বালু ও মাটিচাপা দিয়ে আগুন নিভিয়েছেন। বেশ কয়েকবার ফায়ার সার্ভিসকে এসেও আগুন নেভাতে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন) ভরত চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এভাবে গ্যাস বের হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বের হওয়া এ গ্যাস জ্বলন্ত সিগারেটসহ যেকোনো ধরনের আগুনের সংস্পর্শে এলেই বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে।’
৫ অক্টোবর ১৬ নম্বর রাস্তার ৪১ নম্বর বাড়ির রান্নাঘরে ভাড়াটে আমেনা বেগম পানির কল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুনে তাঁর শরীর ঝলসে যায়। আহত আমেনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা যায়, ওই পানির কলে আসা গ্যাস রান্নাঘরের আগুনের সংস্পর্শে এসেছিল। খবর পেয়ে তিতাসের লোকজন এসে মাটি খুঁড়ে দেখেন, কাছাকাছি থাকা গ্যাসের লাইন ও পানির লাইনে ছিদ্র থাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ছিদ্র ঠিক করা হয়। তবে গতকাল সেখান থেকে আবার গ্যাস বের হতে দেখা গেছে।
গতকাল আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমার স্বামীর ছোট একটা চায়ের দোকান আছে। চিকিৎসা করতে এ পর্যন্ত নয় হাজার টাকা খরচ হইছে। পারলে কিছু টাকা দিয়া যান।’
ওই স্থানে আবার গ্যাস বের হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ঠিক করে এসেছি, এখন আবার অভিযোগ করলে আবার ঠিক করা হবে।’
১৩ নম্বর রাস্তার ব্রাইট ফিউচার সেকেন্ডারি স্কুলের সামনে রাস্তা ফুঁড়ে বের হওয়া গ্যাসের কারণে সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বুদ্বুদ উঠছিল। ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর মা তাহমিনা পারভীন বললেন, এভাবে গ্যাস বের হওয়ায় বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে চলাফেরা করতে হয়।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে এ স্থান থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। দুবার আগুনও লেগেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি।
বিপজ্জনক অবস্থা দেখা গেল ১৪ নম্বর রাস্তায়। সেখানে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারের ঠিক নিচ থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। ওই রাস্তার একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাস দুয়েক আগে এখানে একবার আগুন ধরেছিল। তাঁরা ওই আগুন নিভিয়েছিলেন। খাম্বা ও ট্রান্সফরমারের গায়ে থাকা কালো দাগ সে আগুনের চিহ্ন বহন করছে।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম নাসিরুল্লাহ বলেন, ‘গ্যাস বের হওয়ার ব্যাপারে ছয় মাসে আমরা ১৯ বার তিতাসের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তাঁরা এসেছেন মাত্র একবার, ৫ অক্টোবর ১৬ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর বাড়িতে আগুনে এক গৃহবধূ ঝলসে যাওয়ার পর ৭ অক্টোবর। ওই লাইন মেরামত করলেও এখন আবার গ্যাস বের হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এভাবে গ্যাস বের হওয়ায় এখানে বসবাস করা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়দায়িত্ব তিতাসকেই নিতে হবে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ) রবিউল ইসলাম বলেন, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সরবরাহ লাইনের পাইপগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় এমন হচ্ছে। তাঁরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ওয়াসার পানির লাইনের কাজ করার সময়ও গ্যাসের কিছু পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
No comments