বাল্যবিয়ে- কিশোরী নির্যাতনেরই আর এক রূপ by খন্দকার মর্জিনা সাঈদ
বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের অতি পরিচিত একটি
ঘটনা, যা ক্রমেই পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি কিশোরী নির্যাতনেরই একটি রূপÑ যার সূত্র ধরে
সামাজিক জটিলতাও দিন দিনই বেড়ে চলছে। এবং শহরের তুলনায় গ্রামে এর আনুপাতিক
হার বেশি। আর এ বিষয়ে কথা হয় অনেকের সাথে। বরিশালের চরকডিয়া ইউনিয়নের
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আসমা বেগম। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, বাল্যবিয়ের
কারণে নারীরা তাদের প্রকৃত মেধা বিকশিত করতে পারেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা
পাওয়ায় পারেন না উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হতে। পারেন না পরবর্ত
সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জনসহ অভিভাবকের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে। এর
ফলে, অসময়ে লাগামহীনভাবে অধিক হারে মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে এবং বিভিন্ন
অজুহাতে বাল্যবিয়ের অর্পিত দায়িত্ব এই অসহায় মায়েদের ওপরই চাপিয়ে দেয়া হয়।
প্রয়োজনে তাদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা বলানো হয়। তবে এ ব্যাপারে
কঠোর আইন হয়েছে। তবু কিছু কিছু অসৎ বিয়ে রেজিস্ট্রিকারী কাজী টাকার লোভে
অপ্রাপ্তবয়সী মেয়েদের সঠিক জন্মসনদপত্র না দেখেই বিয়ে পড়াচ্ছেন। বিয়ে
রেজিস্ট্রি করছেন জাল জন্মসনদ অনুযায়ী, যেটা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। বিষয়টি
পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকদের সম্মতিক্রমেই হয় বলে দণ্ডনীয় এ অপরাধটি বরাবরই
চাপা পড়ে যায়। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে পরিবারের পাশাপাশি সমাজপতিদেরও
আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। এর সাথে অনলাইনভিত্তিক যাবতীয় সনদপত্রের
সাথে জন্মসনদপত্র সংযুক্ত থাকলে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতন অনেকাংশে কমে
আসবে। আইনের ভয়ে হলেও অভিভাবকেরা সচেতন হবেন বলেও জানান স্কুলশিক্ষক আসমা
বেগম।
এনজিওকর্মী দিলরুবা জাহান শম্পা। তিনি ঝালকাঠি জেলা শহরে দীর্ঘ দিন ধরে বাল্যবিয়ে রোধের পাশাপাশি কিশোরী নির্যাতন নিয়ে কাজ করে আসছেন। শম্পা বলেন, সম্প্রতি ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় কিশোরী নির্যাতনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বিষয়টি অবশ্য অনেক আগে থেকেই গণমাধ্যম, বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং সমাজের সংবেদনশীল মানুষেরা বলে আসছিলেন, যা ইউনিসেফের প্রতিবেদন চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়ে গেল। আর বিষয়টি যে একটা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় তাও সবার জানাÑ নির্যাতিত কিশোরীদের বেশির ভাগই বাল্যবিয়ের শিকার, যারা অসহায় দরিদ্র বাবা-মায়ের বোঝা কমাতেই দাম্পত্যজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়, যখন তারা মোটেই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকে না; যে অধ্যায়টি বিয়ে-পরবর্তী সময় তাদের কাছে একধরনের নির্যাতন বলেই চিহ্নিত হয়। পরিসংখ্যানে আরো জানা যায়, দু’জন বিবাহিত কিশোরীর মধ্যে একজন স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতিত হয়Ñ যা কারোই কাম্য নয়। যে কারণে দেশে বাল্যবিয়ে আইনত নিষিদ্ধ হয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। তবু সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাটি কার্যকর হচ্ছে না। এর সাথে নিশ্চিতও করা যাচ্ছে না, বাল্যবিয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিশোরী নির্যাতন বন্ধের অধ্যায়। যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র ও সমাজ, বিশেষ করে পরিবার বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতনের অধ্যায়টিকে চেপে রাখাই সমীচীন মনে করছে। ফলে নির্যাতকেরা আরো সাহসী হয়ে উঠছে এবং আইনিভাবে নির্যাতিত নারীরা তেমন সহানুভূতিও পাচ্ছেন না। যে কারণে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতনের অধ্যায়টি এখনো ঘরেবাইরে আতঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই আলোচিত হচ্ছে। এই বাস্তবতা এতটাই কঠিন এবং করুণ আর্তনাদ হিসেবে ফুটে উঠেছে যে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে তা শিরোনামে পরিণত হয়েছে। তা হলে আইনকে ছাপিয়ে হলেও আজকের কিশোরী আগামীর দেশ গড়ার এবং সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী হতে পারবেন। পারবেন নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করে প্রয়োজনে আইনলঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে বলেও জানান এনজিওকর্মী দিলরুবা জাহান শম্পা।
এনজিওকর্মী দিলরুবা জাহান শম্পা। তিনি ঝালকাঠি জেলা শহরে দীর্ঘ দিন ধরে বাল্যবিয়ে রোধের পাশাপাশি কিশোরী নির্যাতন নিয়ে কাজ করে আসছেন। শম্পা বলেন, সম্প্রতি ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় কিশোরী নির্যাতনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বিষয়টি অবশ্য অনেক আগে থেকেই গণমাধ্যম, বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং সমাজের সংবেদনশীল মানুষেরা বলে আসছিলেন, যা ইউনিসেফের প্রতিবেদন চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়ে গেল। আর বিষয়টি যে একটা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় তাও সবার জানাÑ নির্যাতিত কিশোরীদের বেশির ভাগই বাল্যবিয়ের শিকার, যারা অসহায় দরিদ্র বাবা-মায়ের বোঝা কমাতেই দাম্পত্যজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়, যখন তারা মোটেই মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকে না; যে অধ্যায়টি বিয়ে-পরবর্তী সময় তাদের কাছে একধরনের নির্যাতন বলেই চিহ্নিত হয়। পরিসংখ্যানে আরো জানা যায়, দু’জন বিবাহিত কিশোরীর মধ্যে একজন স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নির্যাতিত হয়Ñ যা কারোই কাম্য নয়। যে কারণে দেশে বাল্যবিয়ে আইনত নিষিদ্ধ হয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। তবু সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাটি কার্যকর হচ্ছে না। এর সাথে নিশ্চিতও করা যাচ্ছে না, বাল্যবিয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিশোরী নির্যাতন বন্ধের অধ্যায়। যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র ও সমাজ, বিশেষ করে পরিবার বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতনের অধ্যায়টিকে চেপে রাখাই সমীচীন মনে করছে। ফলে নির্যাতকেরা আরো সাহসী হয়ে উঠছে এবং আইনিভাবে নির্যাতিত নারীরা তেমন সহানুভূতিও পাচ্ছেন না। যে কারণে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতনের অধ্যায়টি এখনো ঘরেবাইরে আতঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই আলোচিত হচ্ছে। এই বাস্তবতা এতটাই কঠিন এবং করুণ আর্তনাদ হিসেবে ফুটে উঠেছে যে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে তা শিরোনামে পরিণত হয়েছে। তা হলে আইনকে ছাপিয়ে হলেও আজকের কিশোরী আগামীর দেশ গড়ার এবং সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী হতে পারবেন। পারবেন নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করে প্রয়োজনে আইনলঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে বলেও জানান এনজিওকর্মী দিলরুবা জাহান শম্পা।
এ বিষয়ে বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপিকা সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কমবয়সীদের শিশু বলা হয়। সেই অনুযায়ী ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর না হলে এই বিয়ে বাল্যবিয়ে বলেই বিবেচিত হবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে অনেক অভিভাবক ও সমাজপতিরা ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর কথা বলছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আইনি যাচাইও শুরু হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স হবে ১৮ এবং মেয়েদের ১৬ বছর। এর পাশাপাশি উল্লিখিত বয়সের আগে যদি কারো বিয়ে হয়, তা বাল্যবিয়ের আওতায় পড়বে, যা কঠিনতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর। জরিমানা বাড়িয়েও ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে। অধ্যায়টি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন। বর্তমানে বাল্যবিয়ের বহুল প্রচলিত আইনটি ১৯২৯ সালের। যে কারণে এর সাজা ও জরিমানা দুটিই কম। যা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে এবং সঠিক জন্মনিবন্ধন ছাড়া যদি বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়, এ ক্ষেত্রে বিয়ে রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। সেই সাথে এই বিয়েতে জড়িত ব্যক্তিকে সাজা ও জরিমানাও করা হবে। আর এই আইনি কার্যক্রমগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া গেলে অনেকাংশেই বাল্যবিয়ে ও কিশোরী নির্যাতন কমে আসবে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা আইনের ভয়ে হলেও অধ্যায়টি এড়িয়ে চলবেন। কমবে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের জটিলতা বলে জানান অধ্যাপিকা সাবিনা ইয়াসমিন।
No comments