জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর হাতে! by সেলিম জাহিদ
৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে
জাতীয় পার্টিকে (জাপা) দ্বিধাবিভক্ত করেছিল সরকার। এরপর দলটি ধীরে ধীরে
সরকারের, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কবজায় চলে গেছে। এখন
পরিস্থিতি এমন যে, জাপার রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত, দলের নেতাদের
পদপদবি পাওয়া না-পাওয়াও অনেকাংশে নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
সর্বশেষ দলের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচন করা না-করা নিয়ে জাপার দুই পক্ষের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়েছেন। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। কাজী ফিরোজ রশীদকে উপনেতা করতে চান রওশন। আর, এরশাদ এর বিরুদ্ধে। এর জের ধরে এরশাদ গতকাল বুধবার রওশনপন্থী বলে পরিচিত দুই নেতা মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর আগে গত মাসে ফিরোজ রশীদকে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির পদ থেকে বাদ দেন এরশাদ।
দলীয় পদ হারানোর বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন রওশনপন্থী দুই নেতা প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান (রাঙ্গা) ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনের বিরতির সময় প্রধানমন্ত্রী আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে যান। তাঁদের পিছু নেন জাপার আরও দুই নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ। এ সময় মশিউরের কাঁধে হাত দিয়ে তাজুল প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমাকে আর রাঙ্গাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের জেলা কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘কেন এমন হলো? এরশাদ সাহেবকে ফোন দেন।’ এ সময় দর্শক গ্যালারিতে থাকা সাংবাদিকেরাও এসব কথোপকথন শুনতে পান। তখন এরশাদ সংসদে ছিলেন না। অবশ্য এর আগের দিন জাপার প্রধান এরশাদও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। জাপার একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দলের বেশির ভাগ সাংসদ রওশনের পক্ষে থাকায় বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে জেতার জন্য এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদকে (বাবলু) সঙ্গে নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সংসদের কার্যালয়ে দেখা করেন। খবর পেয়ে এরপর রওশনপন্থী নেতা মশিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানান, গত মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এরশাদ সম্পর্কে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেন মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম। মশিউর বলেছিলেন, এরশাদের একক কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না। আর তাজুল দলের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের আগে এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এতে এরশাদ অপমান বোধ করেন। এরপর দুজনের বিরুদ্ধে গতকাল ব্যবস্থা নেন এরশাদ।
নিজ বলয়ের দুই নেতার বিরুদ্ধে এরশাদ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় রওশন এরশাদ বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারী এক নেতা।
অব্যাহতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মশিউর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। সাধারণ সদস্যপদ থেকে বাদ দিলে আরও ভালো হয়। তখন আমি জাপার মন্ত্রী থাকব না। অন্য দলের বা স্বতন্ত্র মন্ত্রী হব। কেউ পদত্যাগ করতে বলবে না।’
জাপার কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ব্যক্তিগত অনেক দুর্বলতার পাশাপাশি জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা এবং রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলার খড়্গ থাকায় এরশাদ সরকারের কাছে নতজানু হয়ে পড়েছেন। আর, রওশন এরশাদ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ ও বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন, সেটাও প্রধানমন্ত্রীর আনুকূল্যে। সেই সুবাদে তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা উপভোগ করছেন। দলটি একই সঙ্গে সরকার, আবার বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া, এরশাদ নিজেও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন।
এরশাদ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করলেও সরকারি দল নাখোশ হয়, এমন কোনো কাজ করেননি; বরং জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া যেকোনো কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সর্বশেষ সংবিধান সংশোধন বিলের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েও দলটি শেষ মুহূর্তে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। গতকাল আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভা শেষে কমিটির সদস্য জাপার সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি প্রথমে বিলটির বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কমিটিতে আলাপ-আলোচনার পর আমরা জেনেছি, বিলটি যৌক্তিকভাবে আনা হয়েছে। জাপা এখন আর বিলটির বিরোধিতা করবে না।’
জাপার কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, দলের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিয়ে এরশাদ ও স্ত্রী রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব যত বাড়ছে, ততই প্রধানমন্ত্রীর ওপর দুজনের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি নালিশ নিয়ে সরকারের কাছে দৌড়াচ্ছে।
জাপার ওপর সরকারের প্রভাব কতটা, তা এরশাদের বক্তব্যেও প্রতীয়মান হয়। তিনি মন্ত্রিসভা থেকে দলের তিন সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘...প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশেষ দূত করেছেন। প্রয়োজনে উনার (প্রধানমন্ত্রী) অনুমতি নিয়ে আমিও পদত্যাগ করব।’
তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ মনে করে, দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এরশাদ ও রওশন লড়াই করছেন বটে, বাস্তবে এ দুজনের কারও হাতেই এখন আর জাপার নিয়ন্ত্রণ নেই। দলের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চলে গেছে।
জাপায় দুই পক্ষের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা বলেন, কাজী ফিরোজকে উপনেতা করা না-করার বিষয়টি এখন স্পিকারের টেবিলে। তবে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তিনি যাঁর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেবেন, তিনিই বিরোধী দলের উপনেতা হবেন।
ফিরোজ রশীদ নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিরোধী দলের উপনেতা কালই করতে পারেন। এটা উনার জন্য এক সেকেন্ডের ব্যাপার।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফিরোজ বলেন, ‘আমি উনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝার চেষ্টা করছি।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জাপাকে বিভক্ত রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে রওশনকে প্রাধান্য দিয়ে দলে তাঁর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সরকারের উচ্চ মহল সচেষ্ট। কারণ, এরশাদের প্রতি সরকারের শীর্ষ মহলের আস্থার সংকট আছে। তবে এরশাদকে কখনো চাপে, কখনো হাতে রাখার কৌশল থাকবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সরকারেই অংশ। তাদের ভেতরকার কোনো সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করতেই পারে। তবে তা একেবারেই তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও জাপার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া কী ইঙ্গিত করে—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতির স্বাভাবিক বা চলমান ধারা রাজনীতিকদের বুঝতে হবে। জাতীয় পার্টির নেতারও নিশ্চয় বুঝেশুনে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ দলের সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচন করা না-করা নিয়ে জাপার দুই পক্ষের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়েছেন। এ নিয়ে কিছুদিন ধরে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। কাজী ফিরোজ রশীদকে উপনেতা করতে চান রওশন। আর, এরশাদ এর বিরুদ্ধে। এর জের ধরে এরশাদ গতকাল বুধবার রওশনপন্থী বলে পরিচিত দুই নেতা মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এর আগে গত মাসে ফিরোজ রশীদকে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির পদ থেকে বাদ দেন এরশাদ।
দলীয় পদ হারানোর বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন রওশনপন্থী দুই নেতা প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান (রাঙ্গা) ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনের বিরতির সময় প্রধানমন্ত্রী আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে যান। তাঁদের পিছু নেন জাপার আরও দুই নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ। এ সময় মশিউরের কাঁধে হাত দিয়ে তাজুল প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমাকে আর রাঙ্গাকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের জেলা কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, ‘কেন এমন হলো? এরশাদ সাহেবকে ফোন দেন।’ এ সময় দর্শক গ্যালারিতে থাকা সাংবাদিকেরাও এসব কথোপকথন শুনতে পান। তখন এরশাদ সংসদে ছিলেন না। অবশ্য এর আগের দিন জাপার প্রধান এরশাদও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। জাপার একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দলের বেশির ভাগ সাংসদ রওশনের পক্ষে থাকায় বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে জেতার জন্য এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহম্মেদকে (বাবলু) সঙ্গে নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সংসদের কার্যালয়ে দেখা করেন। খবর পেয়ে এরপর রওশনপন্থী নেতা মশিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানান, গত মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এরশাদ সম্পর্কে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেন মশিউর রহমান ও তাজুল ইসলাম। মশিউর বলেছিলেন, এরশাদের একক কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না। আর তাজুল দলের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের আগে এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এতে এরশাদ অপমান বোধ করেন। এরপর দুজনের বিরুদ্ধে গতকাল ব্যবস্থা নেন এরশাদ।
নিজ বলয়ের দুই নেতার বিরুদ্ধে এরশাদ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় রওশন এরশাদ বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারী এক নেতা।
অব্যাহতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মশিউর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। সাধারণ সদস্যপদ থেকে বাদ দিলে আরও ভালো হয়। তখন আমি জাপার মন্ত্রী থাকব না। অন্য দলের বা স্বতন্ত্র মন্ত্রী হব। কেউ পদত্যাগ করতে বলবে না।’
জাপার কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ব্যক্তিগত অনেক দুর্বলতার পাশাপাশি জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা এবং রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলার খড়্গ থাকায় এরশাদ সরকারের কাছে নতজানু হয়ে পড়েছেন। আর, রওশন এরশাদ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ ও বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন, সেটাও প্রধানমন্ত্রীর আনুকূল্যে। সেই সুবাদে তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা উপভোগ করছেন। দলটি একই সঙ্গে সরকার, আবার বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া, এরশাদ নিজেও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন।
এরশাদ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করলেও সরকারি দল নাখোশ হয়, এমন কোনো কাজ করেননি; বরং জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া যেকোনো কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সর্বশেষ সংবিধান সংশোধন বিলের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েও দলটি শেষ মুহূর্তে সরকারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। গতকাল আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভা শেষে কমিটির সদস্য জাপার সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি প্রথমে বিলটির বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু কমিটিতে আলাপ-আলোচনার পর আমরা জেনেছি, বিলটি যৌক্তিকভাবে আনা হয়েছে। জাপা এখন আর বিলটির বিরোধিতা করবে না।’
জাপার কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, দলের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিয়ে এরশাদ ও স্ত্রী রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব যত বাড়ছে, ততই প্রধানমন্ত্রীর ওপর দুজনের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি নালিশ নিয়ে সরকারের কাছে দৌড়াচ্ছে।
জাপার ওপর সরকারের প্রভাব কতটা, তা এরশাদের বক্তব্যেও প্রতীয়মান হয়। তিনি মন্ত্রিসভা থেকে দলের তিন সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘...প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশেষ দূত করেছেন। প্রয়োজনে উনার (প্রধানমন্ত্রী) অনুমতি নিয়ে আমিও পদত্যাগ করব।’
তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ মনে করে, দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এরশাদ ও রওশন লড়াই করছেন বটে, বাস্তবে এ দুজনের কারও হাতেই এখন আর জাপার নিয়ন্ত্রণ নেই। দলের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চলে গেছে।
জাপায় দুই পক্ষের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা বলেন, কাজী ফিরোজকে উপনেতা করা না-করার বিষয়টি এখন স্পিকারের টেবিলে। তবে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তিনি যাঁর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেবেন, তিনিই বিরোধী দলের উপনেতা হবেন।
ফিরোজ রশীদ নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিরোধী দলের উপনেতা কালই করতে পারেন। এটা উনার জন্য এক সেকেন্ডের ব্যাপার।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফিরোজ বলেন, ‘আমি উনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝার চেষ্টা করছি।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জাপাকে বিভক্ত রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে রওশনকে প্রাধান্য দিয়ে দলে তাঁর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সরকারের উচ্চ মহল সচেষ্ট। কারণ, এরশাদের প্রতি সরকারের শীর্ষ মহলের আস্থার সংকট আছে। তবে এরশাদকে কখনো চাপে, কখনো হাতে রাখার কৌশল থাকবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল সরকারেই অংশ। তাদের ভেতরকার কোনো সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করতেই পারে। তবে তা একেবারেই তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও জাপার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া কী ইঙ্গিত করে—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতির স্বাভাবিক বা চলমান ধারা রাজনীতিকদের বুঝতে হবে। জাতীয় পার্টির নেতারও নিশ্চয় বুঝেশুনে যাচ্ছেন।
No comments