একটি ট্যাক্সিক্যাব ভ্রমণের গল্প by আনোয়ার হোসেন
২৩ এপ্রিল, ২০১৪। বিকেল তিনটা ৫০ মিনিট।
০১৭৫৫৬৬৭০৭০ নম্বরে ফোন দিতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল রিসিভ হয়। নির্দেশনা আসে,
বাংলায় শুনতে চাইলে ১ চাপুন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে অপর প্রান্তে তমা ট্যাক্সি
সার্ভিস থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া হয়।
>>গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ট্যাক্সিক্যাব সেবার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দেন।
একটি
ট্যাক্সিক্যাব লাগবে, জানানোর পর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। পান্থপথ ট্রাফিক
সিগন্যালে (পান্থপথ-গ্রিনরোড ক্রসিং) আছি, জানালে অপেক্ষা করার পরামর্শ
আসে। একটু পর জানানো হয়, কিছুক্ষণের মধ্যে চালক আপনাকে ফোন করবেন। এই
কথোপকথনে সময় যায় তিন মিনিট দুই সেকেন্ড।
বিকেল তিনটা ৫৮ মিনিট। ০১৭১২৭৩৯৫৬২ নম্বর থেকে ফোন আসে। তমা ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসের চালক পরিচয় দিয়ে আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে আছেন। ট্যাক্সি ভাড়া করার আগ্রহ জানানোর পর আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অপেক্ষা করুন স্যার, আসছি।’
চারটা পাঁচ মিনিট। আলমগীরের নম্বর থেকে মিসড কল আসে। ফিরতি ফোন করলে আবার জানতে চান, কোন জায়গায় আসতে হবে। পান্থপথ সিগন্যালে—বলার পর ফোন রেখে দেন আলমগীর।
চারটা ১০ মিনিট। পান্থপথ সিগন্যালের কাছে হলুদ রঙের একটি চকচকে টয়োটা প্রিমিও ট্যাক্সিক্যাব আসে। হাত তুলতেই চালক রাস্তার পাশে দাঁড়ান। গাড়িতে ওঠার পর গন্তব্য জানতে চাইলেন। প্রেসক্লাব, বলতেই চলতে শুরু করে গাড়ি।
বাইরে প্রচণ্ড খরতাপ। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতরে আরামপ্রদ শীতলতা। চালকের গায়ে সাদা পোশাক। গাড়ির ভেতরটা পরিচ্ছন্ন। ওঠার পরই চালক এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করলেন।
গা এলিয়ে বসার পর চোখ গেল মিটারে। ভাড়া উঠে আছে ১৩৬ টাকা। কীভাবে এই ভাড়া উঠল—জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘যাত্রী ফোন দেওয়ার পর মিটার চালু করে গাড়ি চলা শুরু হয়। যানজট আর যাত্রাপথ মিলিয়ে ইতিমধ্যে এই ভাড়া উঠেছে।’
—আজ কতজন যাত্রী পেলেন?
চালক: চারজন।
—কখন বের হয়েছেন?
চালক: সকাল আটটায়
—আয় কত হলো?
চালক: বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
—সবচেয়ে বড় দূরত্বে কোথায় গেছেন
চালক: পল্টন থেকে মিরপুরের মিল্ক ভিটা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে ফিরতি যাত্রায় বাংলামোটর।
—ভাড়া কত উঠল?
চালক: এক হাজার ১০০ টাকা।
—কী কী সুবিধা আছে গাড়িতে
চালক: গাড়িতে ক্যামেরা আছে। কোনো রকম এদিক-ওদিক করার সুযোগ নাই। অফিসে বসে কোম্পানির লোক সব দেখছে।
—সবই দেখলে তো যাত্রীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থাকছে না!
চালক: না, ও রকম কিছু হলে যাত্রীদের আগেই বলে দিতে হবে।
এই কথোপকথনের ফাঁকে চালকের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন আসে। আলাপে বোঝা গেল, অন্য যাত্রী বহনের জন্য তাড়া আসছে।
চালক: আসলে ফোনেই বেশির ভাগ যাত্রী গাড়ি বুক করছে। রাস্তায় যাত্রী তোলার সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনে পৌঁছে যায় গাড়ি। এখানে নেমে যাব জানালে চালক গাড়ি থামিয়ে মিটারের একটি বাটনে চাপ দিয়ে দুটি ভাড়ার স্লিপ বের করলেন। একটাতে সই নিয়ে অন্যটি হাতে দিলেন। ভাড়া ২৬৩ টাকা ৫০ পয়সা। যাত্রাকাল ৩২ মিনিট। দূরত্ব ৪.৬৬ কিলোমিটার (গাড়ির যাত্রার স্থান ধানমন্ডি-১৫ থেকে)। পান্থপথ ট্রাফিক সিগন্যাল (যেখান থেকে এই প্রতিবেদক গাড়িতে উঠেছেন) থেকে শাহবাগের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের সামান্য বেশি। যাত্রাবিরতি (যানজট ও সংকেত) ১৯ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। ভাড়া মেটালে হাসিমুখে বিদায় দেন চালক।
এই হচ্ছে ঢাকার বহুল আলোচিত ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসে এই প্রতিবেদকের যাত্রার অভিজ্ঞতা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ট্যাক্সিক্যাব সেবার উদ্বোধন করেন। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৮৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ৩৪ টাকা। প্রতি দুই মিনিট যাত্রাবিরতির জন্য সাড়ে আট টাকা।
অবশ্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ১০০ টাকা ভাড়া ঠিক করেছিল। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দেন।
ফোন করে ট্যাক্সিতে ওঠার আগে পান্থপথে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো ট্যাক্সিক্যাবের দেখা মেলেনি। শাহবাগে নেমেও প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আর কোনো ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া যায়নি।
আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ঢাকায় ৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নামানোর অনুমতি পায়। দুটি কোম্পানি প্রথম দফায় ৪৭টি ট্যাক্সিক্যাব নামিয়েছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাস্তায় হাত ইশারায় ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া গেলে ভাড়া কিছুটা কম আসবে। কারণ, ফোন দিয়ে আনলে যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেন চালক, সেখান থেকেই ভাড়া গুনতে হয়।
শাহবাগ থেকে অন্য একটি ট্যাক্সিক্যাবে কারওয়ান বাজারে আসার ইচ্ছা ছিল। তা সম্ভব না হওয়ায় বাসকেই ভরসা করতে হলো। সেনানিবাস-মতিঝিল পথের একটি খালি বাস এসে থামল। হুড়োহুড়ি করে এতে ওঠার সুযোগ হলো। মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁকা বাসটির সব আসন পূর্ণ হয়ে গেল। দুই-তিন মিনিটের মধ্যে দাঁড়ানোর জায়গাও ভিড়ে ঠেসে গেল।
শাহবাগ থেকে সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে পাঁচ টাকা ভাড়া মিটিয়ে যাত্রা শেষ করলাম। এখান থেকে পশ্চিম দিকে চোখে দেখার দূরত্বে পান্থপথ ট্রাফিক সিগন্যাল, যেখান থেকে এই ট্যক্সিক্যাবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়া হলো।
বিকেল তিনটা ৫৮ মিনিট। ০১৭১২৭৩৯৫৬২ নম্বর থেকে ফোন আসে। তমা ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসের চালক পরিচয় দিয়ে আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে আছেন। ট্যাক্সি ভাড়া করার আগ্রহ জানানোর পর আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অপেক্ষা করুন স্যার, আসছি।’
চারটা পাঁচ মিনিট। আলমগীরের নম্বর থেকে মিসড কল আসে। ফিরতি ফোন করলে আবার জানতে চান, কোন জায়গায় আসতে হবে। পান্থপথ সিগন্যালে—বলার পর ফোন রেখে দেন আলমগীর।
চারটা ১০ মিনিট। পান্থপথ সিগন্যালের কাছে হলুদ রঙের একটি চকচকে টয়োটা প্রিমিও ট্যাক্সিক্যাব আসে। হাত তুলতেই চালক রাস্তার পাশে দাঁড়ান। গাড়িতে ওঠার পর গন্তব্য জানতে চাইলেন। প্রেসক্লাব, বলতেই চলতে শুরু করে গাড়ি।
বাইরে প্রচণ্ড খরতাপ। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভেতরে আরামপ্রদ শীতলতা। চালকের গায়ে সাদা পোশাক। গাড়ির ভেতরটা পরিচ্ছন্ন। ওঠার পরই চালক এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করলেন।
গা এলিয়ে বসার পর চোখ গেল মিটারে। ভাড়া উঠে আছে ১৩৬ টাকা। কীভাবে এই ভাড়া উঠল—জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘যাত্রী ফোন দেওয়ার পর মিটার চালু করে গাড়ি চলা শুরু হয়। যানজট আর যাত্রাপথ মিলিয়ে ইতিমধ্যে এই ভাড়া উঠেছে।’
—আজ কতজন যাত্রী পেলেন?
চালক: চারজন।
—কখন বের হয়েছেন?
চালক: সকাল আটটায়
—আয় কত হলো?
চালক: বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
—সবচেয়ে বড় দূরত্বে কোথায় গেছেন
চালক: পল্টন থেকে মিরপুরের মিল্ক ভিটা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে ফিরতি যাত্রায় বাংলামোটর।
—ভাড়া কত উঠল?
চালক: এক হাজার ১০০ টাকা।
—কী কী সুবিধা আছে গাড়িতে
চালক: গাড়িতে ক্যামেরা আছে। কোনো রকম এদিক-ওদিক করার সুযোগ নাই। অফিসে বসে কোম্পানির লোক সব দেখছে।
—সবই দেখলে তো যাত্রীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থাকছে না!
চালক: না, ও রকম কিছু হলে যাত্রীদের আগেই বলে দিতে হবে।
এই কথোপকথনের ফাঁকে চালকের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন আসে। আলাপে বোঝা গেল, অন্য যাত্রী বহনের জন্য তাড়া আসছে।
চালক: আসলে ফোনেই বেশির ভাগ যাত্রী গাড়ি বুক করছে। রাস্তায় যাত্রী তোলার সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনে পৌঁছে যায় গাড়ি। এখানে নেমে যাব জানালে চালক গাড়ি থামিয়ে মিটারের একটি বাটনে চাপ দিয়ে দুটি ভাড়ার স্লিপ বের করলেন। একটাতে সই নিয়ে অন্যটি হাতে দিলেন। ভাড়া ২৬৩ টাকা ৫০ পয়সা। যাত্রাকাল ৩২ মিনিট। দূরত্ব ৪.৬৬ কিলোমিটার (গাড়ির যাত্রার স্থান ধানমন্ডি-১৫ থেকে)। পান্থপথ ট্রাফিক সিগন্যাল (যেখান থেকে এই প্রতিবেদক গাড়িতে উঠেছেন) থেকে শাহবাগের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের সামান্য বেশি। যাত্রাবিরতি (যানজট ও সংকেত) ১৯ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। ভাড়া মেটালে হাসিমুখে বিদায় দেন চালক।
এই হচ্ছে ঢাকার বহুল আলোচিত ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসে এই প্রতিবেদকের যাত্রার অভিজ্ঞতা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ট্যাক্সিক্যাব সেবার উদ্বোধন করেন। প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ৮৫ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ৩৪ টাকা। প্রতি দুই মিনিট যাত্রাবিরতির জন্য সাড়ে আট টাকা।
অবশ্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ১০০ টাকা ভাড়া ঠিক করেছিল। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮৫ টাকা করার পরামর্শ দেন।
ফোন করে ট্যাক্সিতে ওঠার আগে পান্থপথে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো ট্যাক্সিক্যাবের দেখা মেলেনি। শাহবাগে নেমেও প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আর কোনো ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া যায়নি।
আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ঢাকায় ৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নামানোর অনুমতি পায়। দুটি কোম্পানি প্রথম দফায় ৪৭টি ট্যাক্সিক্যাব নামিয়েছে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাস্তায় হাত ইশারায় ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া গেলে ভাড়া কিছুটা কম আসবে। কারণ, ফোন দিয়ে আনলে যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেন চালক, সেখান থেকেই ভাড়া গুনতে হয়।
শাহবাগ থেকে অন্য একটি ট্যাক্সিক্যাবে কারওয়ান বাজারে আসার ইচ্ছা ছিল। তা সম্ভব না হওয়ায় বাসকেই ভরসা করতে হলো। সেনানিবাস-মতিঝিল পথের একটি খালি বাস এসে থামল। হুড়োহুড়ি করে এতে ওঠার সুযোগ হলো। মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁকা বাসটির সব আসন পূর্ণ হয়ে গেল। দুই-তিন মিনিটের মধ্যে দাঁড়ানোর জায়গাও ভিড়ে ঠেসে গেল।
শাহবাগ থেকে সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে পাঁচ টাকা ভাড়া মিটিয়ে যাত্রা শেষ করলাম। এখান থেকে পশ্চিম দিকে চোখে দেখার দূরত্বে পান্থপথ ট্রাফিক সিগন্যাল, যেখান থেকে এই ট্যক্সিক্যাবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়া হলো।
No comments