রানা প্লাজা নিয়ে সিপিডির সংলাপ: পুনর্বাসন তদারকিতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব- পুনর্বাসনে পিছিয়ে সব পক্ষ
রানা প্লাজা ধসের পর সবাই মিলে প্রাথমিক
ব্যবস্থাপনা ভালোই করেছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি
কম। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষই পিছিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ কাজটিই এখন বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিপূরণের অর্থও বুঝে পায়নি হতাহতের পরিবার। আহত ব্যক্তিরা
প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
>>সিপিডি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। পাশে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: প্রথম আলো
বেসরকারি
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে এমন অভিমতই উঠে
এসেছে। এ সময় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান
পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তদারকি, সমন্বয় ও প্রতিশ্রুতি পূরণে একটি
উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে এই কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাংসদ শিরীন আখতার, শ্রমসচিব মিকাইল শিপার প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে যেসব অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও দরকার। এ জন্য প্রয়োজনে খরচের হিসাবগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে করে যে কেউ যেকোনো সময় এ-সংক্রান্ত তথ্য জানার সুযোগ পান।
একই সঙ্গে হতাহত ব্যক্তিদের যে আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বা হবে, সেগুলো যেন দৃশ্যমান ও অর্থবহ হয়, সেটি নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন ড. রেহমান সোবহান।
সিপিডি আহত ব্যক্তিদের জন্য দুই বছরের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা, দুর্ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা কেন্দ্র স্থাপনেরও প্রস্তাব করে।
শিরীন আখতার বলেন, যদি রানা প্লাজার ওই পাঁচ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকত, তবে শ্রমিকদের কাজে যেতে বাধ্য করা যেত না। ইউনিয়নের নেতারা কিছুটা হলেও বাধা দিতেন। তিনি বলেন, ‘স্পেকট্রামের পর সর্বশেষ দুর্ঘটনা ধরে নিয়ে আমরা সে সময় (২০০৫) বেশ কিছু দাবি তুলেছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিস্থিতির বদল হয়নি। এখন আবার সেই একই, ভবন ও শ্রমিকের নিরাপত্তার দাবি জানাতে হচ্ছে।’
মিকাইল শিপার বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার জন্য সরকারের দায়িত্ব সবার আগে। তিনি বলেন, ‘আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। আমরা আগেই যদি পর্যাপ্ত কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ ও ভবন নির্মাণে সব আইনকানুন মালিকদের মানতে বাধ্য করতে পারতাম, তবে এমন ঘটনা হয়তো ঘটত না।’
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন পোশাকশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিসহ পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত কাজ নেই। তাই অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এমের সিইও গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে মজুরি বাড়ালে মূল্য বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন। কিন্তু মজুরি বাড়ানো হলেও পোশাকের সিএম ও এফওবি বাড়াচ্ছে না ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা এক নয় তা স্পষ্ট করে বলেন, ক্ষতিপূরণ অবশ্যই কারখানা মালিক পক্ষ ও ক্রেতাদের দিতে হবে। দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন পক্ষ হতাহত ব্যক্তিদের যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তা ক্ষতিপূরণ নয়, অনুদান। প্রধানমন্ত্রীও যে সহায়তা দিয়েছেন তাও দান।
প্রবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকেরা কী পেল তার যোগফল মেলাতে হবে। লক্ষ্য স্থির করতে হবে, উৎপাদন, মূল্য পরিস্থিতিতে চলে গেলে হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দিক থেকে সরে গেলে হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার আওতায় আনা যায়নি। এককালীন চিকিৎসা হয়েছে, ধারাবাহিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। ৭৭৭ জন আহত ব্যক্তির কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনো এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজে যেতে পারেননি।
প্রবন্ধে বলা হয়, আইনগত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। ভবন ধসের জন্য প্রকৃতপক্ষে কারা দায়ী সে বিষয়ে তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি সিআইডি। ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্ট থেকেও সিদ্ধান্ত আসেনি। সেই সিদ্ধান্তে কার কত দায় সে বিষয়টি উল্লেখ থাকা দরকার। কারণ সবাই ক্ষতিপূরণের জন্য ক্রেতাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ও বেসরকারিভাবে যেসব আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে এক করা যাবে না। ক্ষতিপূরণ শ্রমিকের আইনি অধিকার। ক্ষতি যার কারণে, যাদের কারণে হয়েছে তাদেরকেই দিতে হবে।
উন্নয়ন সংস্থা নারীপক্ষের শিরিন হক দুর্ঘটনার পর বিদেশ থেকে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এতে হয়তো আরও কয়েকটি প্রাণ বাঁচানো যেতে পারত। তবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহম্মেদ খান এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে দুজন বিদেশি ছিলেন। যাঁদের ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতরে যাওয়ার প্রস্তাব করলে বিদেশিরা তাতে রাজি হননি। তবে তিনি বিদেশি উদ্ধার দল এলে যন্ত্রপাতির সুবিধা পাওয়া যেতে পারত বলে মত দেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হামিদা হোসেন বলেন, আহত অনেক শ্রমিকই কাজে যোগ দিতে পারেননি। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এটি দুঃখজনক যে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি।
সংলাপ চলাকালে মুঠোফোনে আহত শ্রমিক রিমা আক্তার ও উদ্ধারকর্মী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলা হয়। রিমা বলেন, তাঁর হাত ভেঙে গেছে। ব্যথার জন্য কাজ করতে পারেন না। তিন মাস ধরে সিআরপিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাইমার্ক ৪৫ হাজার ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
উদ্ধারকর্মী আলতাফ হোসেন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। তিনি ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পরই উদ্ধারকাজে লেগে যান। তিনি বলেন, টানা ২১ দিন কাজ করেছেন। তারপর অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই-তিন মাস হাসপাতালে ছিলেন। হাত-পা অবশ ছিল। এখন ভালো হলেও কাজ করতে পারেন না।
রানা প্লাজা ধসে নিহত হন শ্রমিক আবদুল করিম। তবে তাঁর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন করিমের স্ত্রী সোনাবানু। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি খোঁজখবর নেন না। দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব জানি না।’ ডিএনএ পরীক্ষা করেও লাশ শনাক্ত হয় নাই। তিনি প্রাইমার্কের ৪৫ হাজার ও বিলসের ৩৬ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
সোনাবানু ছাড়াও আহত নূরজাহান ও আরও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে রানা প্লাজা ধসের পর নানা ধরনের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পৃথক পৃথক স্টলে তাদের কার্যক্রমগুলো তুলে ধরে। এর মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্ট, অ্যাকশন এইড, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বিলস উল্লেখযোগ্য।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কামরুন নাহার, শ্রমিকনেতা তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাংসদ শিরীন আখতার, শ্রমসচিব মিকাইল শিপার প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে যেসব অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও দরকার। এ জন্য প্রয়োজনে খরচের হিসাবগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে করে যে কেউ যেকোনো সময় এ-সংক্রান্ত তথ্য জানার সুযোগ পান।
একই সঙ্গে হতাহত ব্যক্তিদের যে আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বা হবে, সেগুলো যেন দৃশ্যমান ও অর্থবহ হয়, সেটি নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন ড. রেহমান সোবহান।
সিপিডি আহত ব্যক্তিদের জন্য দুই বছরের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, ২৪ এপ্রিলকে শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা, দুর্ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা কেন্দ্র স্থাপনেরও প্রস্তাব করে।
শিরীন আখতার বলেন, যদি রানা প্লাজার ওই পাঁচ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন থাকত, তবে শ্রমিকদের কাজে যেতে বাধ্য করা যেত না। ইউনিয়নের নেতারা কিছুটা হলেও বাধা দিতেন। তিনি বলেন, ‘স্পেকট্রামের পর সর্বশেষ দুর্ঘটনা ধরে নিয়ে আমরা সে সময় (২০০৫) বেশ কিছু দাবি তুলেছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরিস্থিতির বদল হয়নি। এখন আবার সেই একই, ভবন ও শ্রমিকের নিরাপত্তার দাবি জানাতে হচ্ছে।’
মিকাইল শিপার বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার জন্য সরকারের দায়িত্ব সবার আগে। তিনি বলেন, ‘আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। আমরা আগেই যদি পর্যাপ্ত কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ ও ভবন নির্মাণে সব আইনকানুন মালিকদের মানতে বাধ্য করতে পারতাম, তবে এমন ঘটনা হয়তো ঘটত না।’
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন পোশাকশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিসহ পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত কাজ নেই। তাই অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ (ওভারটাইম) করানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এমের সিইও গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে মজুরি বাড়ালে মূল্য বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন। কিন্তু মজুরি বাড়ানো হলেও পোশাকের সিএম ও এফওবি বাড়াচ্ছে না ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তার ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা এক নয় তা স্পষ্ট করে বলেন, ক্ষতিপূরণ অবশ্যই কারখানা মালিক পক্ষ ও ক্রেতাদের দিতে হবে। দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন পক্ষ হতাহত ব্যক্তিদের যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তা ক্ষতিপূরণ নয়, অনুদান। প্রধানমন্ত্রীও যে সহায়তা দিয়েছেন তাও দান।
প্রবন্ধে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকেরা কী পেল তার যোগফল মেলাতে হবে। লক্ষ্য স্থির করতে হবে, উৎপাদন, মূল্য পরিস্থিতিতে চলে গেলে হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দিক থেকে সরে গেলে হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার আওতায় আনা যায়নি। এককালীন চিকিৎসা হয়েছে, ধারাবাহিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। ৭৭৭ জন আহত ব্যক্তির কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনো এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজে যেতে পারেননি।
প্রবন্ধে বলা হয়, আইনগত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। ভবন ধসের জন্য প্রকৃতপক্ষে কারা দায়ী সে বিষয়ে তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি সিআইডি। ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্ট থেকেও সিদ্ধান্ত আসেনি। সেই সিদ্ধান্তে কার কত দায় সে বিষয়টি উল্লেখ থাকা দরকার। কারণ সবাই ক্ষতিপূরণের জন্য ক্রেতাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ও বেসরকারিভাবে যেসব আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে এক করা যাবে না। ক্ষতিপূরণ শ্রমিকের আইনি অধিকার। ক্ষতি যার কারণে, যাদের কারণে হয়েছে তাদেরকেই দিতে হবে।
উন্নয়ন সংস্থা নারীপক্ষের শিরিন হক দুর্ঘটনার পর বিদেশ থেকে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ না করার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এতে হয়তো আরও কয়েকটি প্রাণ বাঁচানো যেতে পারত। তবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহম্মেদ খান এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে দুজন বিদেশি ছিলেন। যাঁদের ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতরে যাওয়ার প্রস্তাব করলে বিদেশিরা তাতে রাজি হননি। তবে তিনি বিদেশি উদ্ধার দল এলে যন্ত্রপাতির সুবিধা পাওয়া যেতে পারত বলে মত দেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হামিদা হোসেন বলেন, আহত অনেক শ্রমিকই কাজে যোগ দিতে পারেননি। অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এটি দুঃখজনক যে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি।
সংলাপ চলাকালে মুঠোফোনে আহত শ্রমিক রিমা আক্তার ও উদ্ধারকর্মী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলা হয়। রিমা বলেন, তাঁর হাত ভেঙে গেছে। ব্যথার জন্য কাজ করতে পারেন না। তিন মাস ধরে সিআরপিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রাইমার্ক ৪৫ হাজার ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
উদ্ধারকর্মী আলতাফ হোসেন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। তিনি ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পরই উদ্ধারকাজে লেগে যান। তিনি বলেন, টানা ২১ দিন কাজ করেছেন। তারপর অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই-তিন মাস হাসপাতালে ছিলেন। হাত-পা অবশ ছিল। এখন ভালো হলেও কাজ করতে পারেন না।
রানা প্লাজা ধসে নিহত হন শ্রমিক আবদুল করিম। তবে তাঁর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এসেছিলেন করিমের স্ত্রী সোনাবানু। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি খোঁজখবর নেন না। দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব জানি না।’ ডিএনএ পরীক্ষা করেও লাশ শনাক্ত হয় নাই। তিনি প্রাইমার্কের ৪৫ হাজার ও বিলসের ৩৬ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
সোনাবানু ছাড়াও আহত নূরজাহান ও আরও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে রানা প্লাজা ধসের পর নানা ধরনের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পৃথক পৃথক স্টলে তাদের কার্যক্রমগুলো তুলে ধরে। এর মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্ট, অ্যাকশন এইড, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বিলস উল্লেখযোগ্য।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কামরুন নাহার, শ্রমিকনেতা তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
No comments