ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ব্যয় ২২ কোটি টাকা-শ্রমিকদের বিমা হবে
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের
জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ২২ কোটি ১৩ লাখ
৫৫ হাজার ৭২০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সাভারের রানা প্লাজার মর্মান্তিক
দুর্ঘটনার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক
সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেওয়া হয়। তবে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে কত অর্থ জমা পড়েছে তার কোনো তথ্য গতকাল দেওয়া হয়নি।
অবশ্য গত বছরের ১৪ জুলাই জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী
জানিয়েছিলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ
তহবিলে জমা পড়েছে ১২৭ কোটি ৬৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৯ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও
ব্যক্তি এ অর্থ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে ‘অসত্য প্রচারণা’ চালালে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে দুজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের দেওয়া আর্থিক সহায়তার চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি বিজিএমইএ তাদের পক্ষ থেকে নেওয়া আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানায়।
রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধারকাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, চিকিৎসাসহ যাবতীয় কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আগামীতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, কোনো কিশোর বা কিশোরীর যেন অকালমৃত্যু না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মাহবুবুল হক বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে। এ ঘটনায় সরকারের যে সহায়তা, তা কোনো আর্থিক নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। এটা মানুষ হিসেবে শেখ হাসিনার মমত্ববোধের পরিচয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার দায়িত্ববোধের পরিচয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম দেশের তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার উদ্যোগের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন আগে তথ্য পেয়েছি, আগামীকাল (আজ) দেশের কিছু এনজিও ও শ্রমিক সংগঠন জেনেভা, জার্মানিসহ ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাবে।...বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উল্টো করে গায়ে দিয়ে তারা বলবে, “ডোন্ট বাই বাংলাদেশ গার্মেন্ট”।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বলেন, ‘যাঁরা নিজেদের স্বার্থে রপ্তানিমুখী এই শিল্পের বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালাচ্ছেন, একবারও ভেবে দেখেছেন কি, কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? রপ্তানি-আয় যদি কমে যায়, তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেবেন। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয় অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে করা হয়। কারা কত অর্থ দেয় তা যেমন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, ঠিক তেমনি কাকে কত অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তাও প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আহতদের চিকিৎসাসেবা এখনো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। আর কারখানায় কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মালিকপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাভারের এনাম মেডিকেলের মালিক সাংসদ এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার, বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা।
শ্রমিকদের জন্য বিমার কথা বিবেচনা করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক বিমা চালুর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ফিল্ড অপারেসন্স অ্যান্ড পার্টনারশিপ-বিষয়ক উপমহাপরিচালক গিলবার্ট ফোসুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইএলও এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আইএলওর উপমহাপরিচালক রানা প্লাজা ধসের পর সরকারের পদক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে কারখানাগুলোতে কর্মবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ এড়ানো যেতে পারে।’
No comments