হরতালে সহিংসতা, নিহত ৫

ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশি অ্যাকশন, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয়েছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন।
হরতাল সমর্থকদের  সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ ঘটেছে। নিহত হয়েছে সরকার ও বিরোধীদলীয় ৫ নেতাকর্মী। পুলিশের গুলিতে ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মারুফ হাসান ও পাবনার দাশুরিয়ায় শিবিরকর্মী জুলহাসউদ্দিন মুন্নাফ, ছাত্রলীগের হামলায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সিদ্দিক, যশোরের অভয়নগরে পৌর যুবলীগ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুল এবং পিরোজপুরের জিয়ানগরে যুবলীগ কর্মী স্বপন শীল নিহত হন। সংঘর্ষে ১৫০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিরোধী দল বিএনপি। হরতালের প্রথম দিন রাজধানীর নানা জায়গায় ঘটেছে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সিএমএম কোর্টের নথি শাখা, গাবতলী বিআরটিসি বাস ডিপো, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ফাঁড়ি ও যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। কাকরাইলে প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের বাসভবনের সামনে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসসহ রাজধানীর অর্ধ শতাধিক পয়েন্টে দুই শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫টি ককটেল ও বিপুল পরিমাণ গান পাউডার উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে হরতাল সমর্থনকারীরা। হরতালের বিপক্ষে পাল্টা মিছিল বের করে সরকার দলীয় সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া জয়পুরহাটে দুটি ট্রেন ভাঙচুরের পর হরতাল সমর্থকরা বগিতে আগুন দিয়েছে। চাঁদপুর, পাবনা, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, কক্সবাজার, ফেনী, গাইবান্ধা, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে হরতালকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হরতালে সারাদেশে একাধিক মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবসহ ১৫ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার এবং ১২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বলেও দাবি করেছে বিএনপি। এদিকে প্রথমদিনের হরতালে রাজধানীর বেশির ভাগ যানবাহন চলাচল করেনি। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ বিপনি বিতান ও শপিং মল। রাজধানী থেকে কোন দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। ব্যাহত হয়েছে রেল ও লঞ্চ চলাচল।

হরতাল সংলাপে প্রভাব ফেলবে না: ফখরুল
দুপুরে প্রথম দফার ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চলমান ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে তিন দিনের হরতাল শেষে জোটের পরবর্তী নতুন কর্মসূচি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি সংলাপের জন্য হরতাল অজুহাত বা প্রতিবন্ধকতা হবে না। আমাদের নেতা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তিনি বলেন, ২৮ তারিখ সংলাপ না হলে ২৯ তারিখের পরে হবে। হরতাল কোন অজুহাত নয়। আমরা আশাবাদী সরকারের উদ্যোগে সংলাপ শুরু হবে। আলোচনা হবে উন্মুক্ত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই দেরিতে হলেও তিনি ফোন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ফোন করায় আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। বিরোধীদলীয় নেতাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, হরতাল শেষে যে কোন সময়ে সংলাপে বসতে রাজি। মির্জা আলমগীর বলেন, একদিকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অন্যদিকে সভা-সমাবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোন রাজনৈতিক সংলাপ হতে পারে না। বহুদলীয়, একদলীয় বা সর্বদলীয় নয় বরং নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনা হতে হবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ২১শে অক্টোবর একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি নিজ উদ্যোগে সংলাপে বসতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে ফোনে কথা বলেছি। দুই বছর ধরে আমরা নির্দলীয় সরকার নিয়ে কথা বলে আসছি। সংলাপের গুরুত্ব আমরাই প্রথমে তুলে ধরেছিলাম।

অবরুদ্ধ বিএনপি কার্যালয়
হরতালের প্রথম দিন ভোর থেকেই রীতিমতো অবরুদ্ধ ছিল বিএনপি কার্যালয়। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশের কারণে দিনভর কার্যালয়ে যাননি দলের নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ দপ্তরের সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা সেখানে ছিলেন। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও র‌্যাবের ব্যাপক উপস্থিতি, রায়ট কার ও জলকামান থাকলেও অনেকটাই সংযত ছিল পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান সাবেক এমপি মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশের কথা জানিয়ে তাকে বাসায় চলে যেতে বলেন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এদিকে ২টার ঠিক আগে বিএনপি কার্যালয়ের বিপরীতে শেলটেক অ্যাপার্টমেন্টের গলিতে দু’টি এবং বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে নাইটিঙ্গেল রেস্তরাঁর মোড়ে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

ঈশ্বরদীতে ১ জামায়াত কর্মী নিহত
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, পাবনায় ১৮ দলের ডাকা হরতাল চলাকালে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিসহ বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থনে পিকেটিং এর সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলায় এক জামায়াত কর্মী নিহতসহ ১৮ দলের ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ কর্মীদের ৮/১০টি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। নিহত জামায়াত নেতার নাম জুলহাস উদ্দিন মুন্নাফ (৩৫)। তিনি ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন শিবির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন (২৫) এবং শিবির কর্মী ইসলাম হোসেন (২৩) ও সোহাগ (২৬)। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী জানায়, ১৮ দলের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের ১ম দিনে পাবনার ঈশ্বরদী  মুলাডুলির শেখ পাড়ায় নাটোর-পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের উপর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পিকেটিং করছিল। সকাল ১১টার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একদল সন্ত্রাসী ১০/১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে পিকেটারদের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ সময় জুলহাস উদ্দিন মুন্নাফ (৩৫) নমের এক জামায়াত কর্মী নিহত ও ঈশ্বরদী দক্ষিণ শিবির সভাপতিসহ ৫ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত জুলহাস উদ্দীন একই উপজেলার শরইকান্দি গ্রামের শফিউদ্দিনের ছেলে। জুলহাস দুই পুত্রের জনক। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ঈশ্বরদী শিবির সভাপতি ও অ্যাডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি অনার্সের ছাত্র ফরিদ উদ্দিন (২৫) এবং শিবিরকর্মী ইসলাম হোসেন (২৩) ও সোহাগ (২৬)কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা যুবলীগ নেতা মিল্টনের বাড়িতে অগ্নিসংলযোগ করে। ১৮ দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় মিল্টন ও মিঠুর নেতৃত্বেই জামায়াত-শিবিরের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।

নগরকান্দায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে তিন দিনের হরতালের অংশ  হিসেবে গতকাল সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সহিংস ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে। এ সকল ঘটনায় এক স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন নেতাকর্মী। সকালে ফরিদপুর শহর ও কোমরপুরে হরতালের সমর্থনে বিএনপি একটি বিক্ষোভ মিছিল করে কানাইপুরে চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ছাড়াও কয়েকটি এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক ও আন্তঃসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালে জেলার নগরকান্দা উপজেলায় হরতালের সমর্থনে ১৮ দলের বিক্ষোভ মিছিল চালালে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ফারুক নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয় ৩০ জন নেতাকর্মী।
সকাল থেকেই রাস্তা গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দলের কর্মীরা। পুুলিশ বেড়িকেড তোলার চেষ্টা করলে এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুরে। পুলিশে গুলিতে বিএনপিকর্মী মারুফ সেখ গুরুত্ব আহত হন। আহত মারুফকে নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতের বাড়ি মীরের কান্দি। আহত গুলিবিদ্ধদের নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ভর্তি করা হয়। পুলিশের গুলিতে এক পথচারী মহিলা আহত হয়। দুপুরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকার দোকানপাট ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এলাকাটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

রাজপুরে নিহত ১
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরে হরতালের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ-জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ১৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ১১ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশ জেলায় ৪ জামায়াত ও ৫ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে। গতকাল ভোরে জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালায়। এ সময় তারা যুবলীগ কর্মী স্বপন শীলের বাড়িতে হামলা করে এবং তাকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তার স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তার শ্লীলতাহানী ঘটায় এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় বের করে দেয়। এ সময় তাদের দুই শিশু পুত্র আহত হয়। পরে হামলাকারীরা বালিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি বাপ্পি মোল্লা ও তার পিতা আলাউদ্দিন মোল্লাকে কুপিয়ে জখম করে। তাদের ৩ জনকেই গুরুতর আহত অবস্থায় পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে অবস্থার অবনতি দেখে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়ার পথে স্বপনশীল (২৭) মারা যান। অপর দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জিয়ানগরে হরতালকারীরা ঘোষেরহাট বাজারে  রাস্তা  কেটে ও দুই পাশের গাছ কেটে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ অবরুদ্ধ করে রাখেন। এদিকে দুপুর ১২টায় পিরোজপুর শহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষই দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে। পুলিশ বাধা দিলে ইটপাটকেলের আঘাতে ৫ পুলিশ ও চার সাংবাদিক ডেইলি স্টারের জেলা প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম, এস.এ টিভির জেলা প্রতিনিধি মশিউর রহমান রাহাত ও সংবাদের জেলা প্রতিনিধি একে আজাদসহ উভয় পক্ষের  ২০/২২ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহত নেতাকর্মীদের মধ্যে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শেখ বাদশা ও জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার (মেজর অব.) সরোয়ার হোসেন আহত হন। পুলিশ সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ৭ রাউন্ড শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে।

যশোরে যুবলীগকর্মী নিহত
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, হরতাল চলাকালে গতকাল যশোর শহরে ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। যশোরের চুড়ামনকাটি, সাতমাইল, কুয়াদাবাজার, রাজারহাট, রূপদিয়া, বসুন্দিয়া এলাকায় হরতাল সমর্থনকারী ও বিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকায় হরতাল সমর্থনকারীরা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। কুয়াদা বাজারে হরতাল সমর্থনকারীরা কোতোয়ালি পুলিশের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে ৫ জন আহত হয়। তবে গতকালের হরতালে সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটেছে যশোরের শিল্পশহর নওয়াপাড়ায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভয়নগরে ও নওয়াপাড়াস্থ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে হরতাল সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুলকে হত্যা করে। এই ঘটনায় আহত হয় আরমান, জনি, লিমন, এনামুল ও বায়েজিদ নামে ৫ জন আহত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ হরতাল সমর্থকরা শিমুলের  ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসেও অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নওয়াপাড়া বাজারে পর্যাপ্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে লিমন ও এনামুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে খুলনা আড়াইশ’ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নওয়াপাড়া থানার ওসি আবদুস সালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গতকাল সকাল ৮টার দিকে হরতাল ভেঙ্গে যযুবলীগ নেতা শিমুলের নেতৃত্বে একদল হরতালবিরোধী একটি মাইক্রোবাসে করে নওয়াপাড়া বাজারে মহড়া দিচ্ছিল। খবর পেয়ে একদল হরতাল সমর্থক মাইক্রোবাসটিকে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে যুবলীগ নেতা শিমুল মাইক্রোবাস থেকে নেমে পাশের একটি গুদাম ঘরে আশ্রয় নেন। এ সময় হরতাল সমর্থকরা ওই মাইক্রোবাসে অগ্নিসংযোগ করে এবং মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বেধড়ক মারপিট করে। এক পর্যায়ে হরতাল সমর্থকরা পাশের হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির একটি কক্ষে ঢুকে শিমুলকে গণপিটুনি দেয়। হরতাল সমর্থনকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিমুলের দেহ ক্ষতবিক্ষত করে। ঘটনাস্থলেই শিমুলের মৃত্যু হয়।

গাবতলীতে একজন নিহত
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে শাহজাহান (৩৫) নামের এক বিএনপি কর্মী প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৩জন। আহতদের নাম জানা যায়নি। গাবতলী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেয়র মোরশেদ মিল্টন জানান, হরতালের সমর্থনে স্টেশন রোড থেকে কলেজ রোডের দিকে একটি মিছিল নিয়ে আসছিলাম। বিএনপির হেলাল গ্রুপের সদ্য জাতীয় পার্টি থেকে আসা বিএনপি সমর্থক সাজেদুর রহমান মোহনের নেতৃত্বে মিছিলে হামলা চালায়। হামলার সময় সাজেদুর রহমান মোহন মিছিলকে লক্ষ্য করে ৬ রাউন্ড গুলি করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ সময় কে বা কারা ছুরিকাঘাতে শাহজাহান আলীকে হত্যা করে। উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম হেলাল জানান, হরতালের সমর্থনে মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়ার সময় মোরশেদ মিল্টনের লোকজন হঠাৎ করেই আক্রমণ চালায়। এতে ছুরিকাঘাতে শাহজাহান নামের বিএনপির এক কর্মী নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.