আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দুই নেত্রীর ফোনালাপ

দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের লক্ষ্যে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে  র টেলিফোন করার খবরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করেছে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ‘বাংলাদেশী পিএম হাসিনা ইনভাইটস রাইভাল জিয়া টু ডিনার এমিড স্ট্রাইক থ্রেট’ শিরোনামে লিখেছে, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে বেগম জিয়া আজ থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের হরতাল প্রত্যাহার করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী এ ফোনালাপ দুই নেত্রীর মধ্যে এক দশকের মধ্যে প্রথম আলাপ বলে পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন। দ্য গালফ টুডে ‘বাংলা পিএম হোল্ডস রেয়ার টকস উইথ রাইভাল’ শিরোনামে লিখেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ডিনারের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শনিবার দুই নেত্রীর মধ্যে এক বিরল টেলিফোন আলাপের সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উদভূত সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে টেলিফোন করেছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ‘সিনহুয়া’কে উদ্ধৃত করে  ‘শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া হোল্ড টকস টু এন্ড পলিটিক্যাল ইমপাস’ শিরোনামে লিখেছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের মধ্যে সম্ভাব্য সংলাপের ব্যাপারে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শনিবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। দুই নেত্রী একে অপরের সঙ্গে প্রায় ৩৭ মিনিট টেলিফোনে কথা বলেন। ২০০৯ সালের পর এটাই তাদের মধ্যে প্রথম সরাসরি কথা বলার ঘটনা। ভারতের আরেকটি প্রভাবশালী পত্রিকা হিন্দু ‘খালেদা রিজেক্টস হাসিনাস টক অফার’ শিরোনামে লিখেছে, বাংলাদেশে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার টেলিফোনে বিরোধদিলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। এতে তিনি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে তাকে সোমবার ডিনারের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং বিরোধী দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। তবে বেগম জিয়া ডিনারের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, বিরোধীদলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে তাকে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। বেগম জিয়ার এক সহযোগী আরও বলেছেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ীই রোববার সকাল থেকে হরতাল পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এক সহযোগী জানিয়েছেন নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী হতাশ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এখনও আশাবাদী বলে সহযোগী উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের দি নিউজ ইন্টারন্যাশনাল ‘হাসিনা ওয়াজেদ, অপজিশন লিডার হোল্ড টকস’ শিরোনামে লিখেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এক বিরল টেলিফোন আলাপে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ডিনারের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে উদ্ভূত সংকট নিরসনের লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। দুই নেত্রীর মধ্যে এ টেলিফোন আলাপ এক দশকের মধ্যে প্রথম ঘটনা বলে পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ‘হাসিনার ফোন খালেদাকে, তবু হরতাল বহাল’। এতে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত টেলিফোনে কথা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার। কিন্তু বরফ গললো না। শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেত্রীকে সোমবার তার বাসভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। বলেন, সেখানেই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করতে চান। খালেদা অন্য নেতাদের নিয়ে এলেও স্বাগত। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, আলোচনার দাবিতে আপনারা হরতালের ডাক দিয়েছেন। আমি নিজে আপনাকে ও আপনার দলের নেতাদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সোমবার আপনারা আসুন। তার আগে হরতাল প্রত্যাহার করে নিন। খালেদা জানান, তার আমন্ত্রণ নিয়ে তিনি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন, তার পরে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এই ফোনের পরে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন ডাকে। সাফ জানিয়ে দেয়, আগের ঘোষণা মতো মঙ্গলবার পর্যন্ত হরতাল চলবে। তারপরে আলোচনায় বসার কথা ভাববে বিএনপি। খালেদার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, বিরোধী নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সোমবারের বদলে হরতালের পরে কোনদিন তিনি আলোচনায় বসবেন। বিএনপির এক মুখপাত্র জানান, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আগেই সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছেন তারা। সরকার সেই প্রস্তাব পুরোপুরি মেনে নিলে তবেই হরতাল প্রত্যাহার করা হতো। কিন্তু হাসিনা সরকার সে প্রস্তাব এখনও মানেনি। ওদিকে অনলাইন আল জাজিরার শিরোনাম ‘অপোজিশন স্ট্রাইক বিগিনস ইন বাংলাদেশ’। এতে বলা হয়, শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ফোন করেন। এ সময় হাসিনা তাকে তিনদিনের হরতাল প্রত্যাহার করার আহ্বান জানালে খালেদা তা প্রত্যাখ্যান করেন। খালেদা চান ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন তদারক করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করুন হাসিনা। প্রায় ৪০ মিনিটের ওই ফোনালাপ ছিল দু’ নেত্রীর মধ্যে কমপক্ষে এক দশকের মধ্যে প্রথম কথা। এতে আরও বলা হয়, পরস্পরবিরোধী এ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কাছে দু’দশক বাংলাদেশের রাজনীতি জিম্মি হয়ে আছে।

No comments

Powered by Blogger.