রম্য গল্প- এক দল এক দফা by আহসান হাবীব
অবশেষে সাইদুল সাহেব একটা রাজনৈতিক দল
খুলবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে সব
কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি খুবই সিরিয়াস। শেষ বয়সে একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তিনি।
নতুন একটা রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে। খবর পেয়ে কিছু সাংবাদিক এসে হাজির হলেন।
—স্যার, আপনি তাহলে নতুন একটা রাজনৈতিক দল খুলতে যাচ্ছেন?
—হ্যাঁ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
—ক্রান্তিলগ্ন বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?
—আসলে আমি যখন বুঝতে পারলাম দেশের জাতীয় বিষয়গুলো অবলুপ্ত হতে চলেছে, তখনই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
—অবলুপ্ত হতে চলেছে...মানে?
—যেমন ধরুন, আমাদের জাতীয় কবি নজরুলকে তো আমরা আগেই হারিয়েছি...তারপর আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল...এখন কী দেখতে পান? এ তো এনডেনজার্ড স্পেসিস হয়ে যাচ্ছে। তারপর ধরুন জাতীয় মাছ ইলিশ...দেশের টন টন ইলিশ বাইরে চলে যায়, আমরা বাজারে ইলিশ পাই না...জাটকা ধরা, নদীদূষণ এসবের কারণেও ইলিশ এখন দিল্লি দূরস্ত...
—কিন্তু জাতীয় ফল কাঁঠাল তো আছে। পেছন থেকে এক সাংবাদিক চেঁচালেন।
—কই আছে? দেশের সব কাঁঠাল একজন আরেকজনের মাথায় ভাঙছে টের পান না? খাওয়ার কাঁঠাল আর কয়টা আছে?
সাংবাদিকদের মধ্যে একটা হাসির হুল্লোড় ওঠে। সবাই বেশ মজা পাচ্ছেন।
—স্যার? পাশ থেকে এক তরুণী সাংবাদিক হাত তোলেন।
—বলুন, কী জানতে চান?
—জাতীয় পশু বাঘ?
—হ্যাঁ, ওটাও বিলুপ্ত হতে বেশি সময় নেবে না। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে গেছে যখন।
—তা স্যার, আপনার দলের নামটাই তো জানা হলো না।
—ওটা যথাসময়ে জানতে পারবেন...একটু রহস্য নাহয় থাক।
—তা স্যার, আপনার দলের দফা কয়টা হবে? আরেকজন প্রশ্ন করেন।
—একটাই দফা হবে। অনলি ওয়ান...এক দল...এক দফা...
—দফাটা কী?
—আমি দুর্নীতিকে দেশের জাতীয় কর্মকাণ্ড হিসেবে ঘোষণা করব। বলতে পারেন, দুর্নীতিকে লাইম লাইটে নিয়ে আসব। দুর্নীতি সবাই করবে...বাধ্যতামূলক, দুর্নীতির ওপর গেজেট বই বেরোবে...। প্রতিবছর সেরা দুর্নীতিবাজকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হবে...
সাইদুল সাহেব কতক্ষণ বলেছেন তার ঠিক খেয়াল নেই। হঠাৎ চোখ খুলে দেখেন কেউ নেই। সব সাংবাদিক উধাও, শুধু একজন শুঁটকোমতো লোক বসে আছেন তাঁর সামনে!
—একি! সবাই কোথায়?
—চলে গেছে।
—সেকি! কেন?
—ক্যামনে কই, তবে ওই যে মাত্র এক দফা শুনে মনে হয় আগ্রহ হারায়া ফেলছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এক দফায় ক্যামনে কী হবে...দেশটার আরও দফারফা হবে। তা ছাড়া ফাউ প্যাঁচাল কার ভাল্লাগে বলেন?
—ফাউ প্যাঁচাল?? তা তুমি কে বাপ? এখনো বসে আছো...নিশ্চয়ই বলবা না যে সাউন্ড সিসটেমের লোক। মাইক্রোফোন, মাইক এসবের জন্য বসে আছো?
—না।
—তাহলে?
—আপনার দলে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতে চাই।
—এত পদ থাকতে দলের ক্যাশিয়ার কেন?
—ওই যে বললেন... দুর্নীতি সবাই করবে বাধ্যতামূলক...তখনই ওই পদে জয়েন করার ইচ্ছা হলো।
সাইদুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন, ‘কিন্তু কেন এই এক দফা, সেটা জানতে চাইল না কেউ? আর দফাটাই বা কী? কেন? কেউ জানতে চাইল না!’
—স্যার, আমি জানতে চাই, বলেন।
—শুধু একজন জানলে কীভাবে হবে?
—কী বলেন স্যার, বাঙালি একাই এক শ।
—হুম...তবে ওই এক শ বাঙালি আবার এক হতে পারে না যে সব সময়।
—স্যার বলেন...
সাইদুল সাহেব দম নিলেন। তারপর বললেন—
—একটু আগে কী বললাম? জাতীয় বিষয়গুলো সব অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে...এখন দুর্নীতিটাকে যদি জাতীয় ইস্যু করা হয়। তাহলে...
—বুঝতে পেরেছি স্যার...আর বলতে হবে না, দুর্নীতিও অবলুপ্ত হবে...দুর্নীতি অবলুপ্ত হওয়ার এটাই একমাত্র কৌশল...স্যার, অসাধারণ আইডিয়া, দিন, আপনার পদধূলি দিন, মাথায় ছোঁয়াই বলে সেই লোকটা এগিয়ে যান। কিন্তু একি! পদধূলি নিতে গিয়ে দেখেন স্যারের পা দুটো ভূতের মতো উল্টো!
—একি স্যার!
—অবাক হওয়ার কিছু নেই হে...দেশ নিয়ে ভালো কিছু করতে গেলেই যে আমাদের এমনটা হচ্ছে আজকাল। সামনে এগোতে গেলে যে পেছাতে থাকি আমরা...!
নতুন একটা রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে। খবর পেয়ে কিছু সাংবাদিক এসে হাজির হলেন।
—স্যার, আপনি তাহলে নতুন একটা রাজনৈতিক দল খুলতে যাচ্ছেন?
—হ্যাঁ, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
—ক্রান্তিলগ্ন বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন?
—আসলে আমি যখন বুঝতে পারলাম দেশের জাতীয় বিষয়গুলো অবলুপ্ত হতে চলেছে, তখনই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
—অবলুপ্ত হতে চলেছে...মানে?
—যেমন ধরুন, আমাদের জাতীয় কবি নজরুলকে তো আমরা আগেই হারিয়েছি...তারপর আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল...এখন কী দেখতে পান? এ তো এনডেনজার্ড স্পেসিস হয়ে যাচ্ছে। তারপর ধরুন জাতীয় মাছ ইলিশ...দেশের টন টন ইলিশ বাইরে চলে যায়, আমরা বাজারে ইলিশ পাই না...জাটকা ধরা, নদীদূষণ এসবের কারণেও ইলিশ এখন দিল্লি দূরস্ত...
—কিন্তু জাতীয় ফল কাঁঠাল তো আছে। পেছন থেকে এক সাংবাদিক চেঁচালেন।
—কই আছে? দেশের সব কাঁঠাল একজন আরেকজনের মাথায় ভাঙছে টের পান না? খাওয়ার কাঁঠাল আর কয়টা আছে?
সাংবাদিকদের মধ্যে একটা হাসির হুল্লোড় ওঠে। সবাই বেশ মজা পাচ্ছেন।
—স্যার? পাশ থেকে এক তরুণী সাংবাদিক হাত তোলেন।
—বলুন, কী জানতে চান?
—জাতীয় পশু বাঘ?
—হ্যাঁ, ওটাও বিলুপ্ত হতে বেশি সময় নেবে না। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে গেছে যখন।
—তা স্যার, আপনার দলের নামটাই তো জানা হলো না।
—ওটা যথাসময়ে জানতে পারবেন...একটু রহস্য নাহয় থাক।
—তা স্যার, আপনার দলের দফা কয়টা হবে? আরেকজন প্রশ্ন করেন।
—একটাই দফা হবে। অনলি ওয়ান...এক দল...এক দফা...
—দফাটা কী?
—আমি দুর্নীতিকে দেশের জাতীয় কর্মকাণ্ড হিসেবে ঘোষণা করব। বলতে পারেন, দুর্নীতিকে লাইম লাইটে নিয়ে আসব। দুর্নীতি সবাই করবে...বাধ্যতামূলক, দুর্নীতির ওপর গেজেট বই বেরোবে...। প্রতিবছর সেরা দুর্নীতিবাজকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হবে...
সাইদুল সাহেব কতক্ষণ বলেছেন তার ঠিক খেয়াল নেই। হঠাৎ চোখ খুলে দেখেন কেউ নেই। সব সাংবাদিক উধাও, শুধু একজন শুঁটকোমতো লোক বসে আছেন তাঁর সামনে!
—একি! সবাই কোথায়?
—চলে গেছে।
—সেকি! কেন?
—ক্যামনে কই, তবে ওই যে মাত্র এক দফা শুনে মনে হয় আগ্রহ হারায়া ফেলছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এক দফায় ক্যামনে কী হবে...দেশটার আরও দফারফা হবে। তা ছাড়া ফাউ প্যাঁচাল কার ভাল্লাগে বলেন?
—ফাউ প্যাঁচাল?? তা তুমি কে বাপ? এখনো বসে আছো...নিশ্চয়ই বলবা না যে সাউন্ড সিসটেমের লোক। মাইক্রোফোন, মাইক এসবের জন্য বসে আছো?
—না।
—তাহলে?
—আপনার দলে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতে চাই।
—এত পদ থাকতে দলের ক্যাশিয়ার কেন?
—ওই যে বললেন... দুর্নীতি সবাই করবে বাধ্যতামূলক...তখনই ওই পদে জয়েন করার ইচ্ছা হলো।
সাইদুল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন, ‘কিন্তু কেন এই এক দফা, সেটা জানতে চাইল না কেউ? আর দফাটাই বা কী? কেন? কেউ জানতে চাইল না!’
—স্যার, আমি জানতে চাই, বলেন।
—শুধু একজন জানলে কীভাবে হবে?
—কী বলেন স্যার, বাঙালি একাই এক শ।
—হুম...তবে ওই এক শ বাঙালি আবার এক হতে পারে না যে সব সময়।
—স্যার বলেন...
সাইদুল সাহেব দম নিলেন। তারপর বললেন—
—একটু আগে কী বললাম? জাতীয় বিষয়গুলো সব অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে...এখন দুর্নীতিটাকে যদি জাতীয় ইস্যু করা হয়। তাহলে...
—বুঝতে পেরেছি স্যার...আর বলতে হবে না, দুর্নীতিও অবলুপ্ত হবে...দুর্নীতি অবলুপ্ত হওয়ার এটাই একমাত্র কৌশল...স্যার, অসাধারণ আইডিয়া, দিন, আপনার পদধূলি দিন, মাথায় ছোঁয়াই বলে সেই লোকটা এগিয়ে যান। কিন্তু একি! পদধূলি নিতে গিয়ে দেখেন স্যারের পা দুটো ভূতের মতো উল্টো!
—একি স্যার!
—অবাক হওয়ার কিছু নেই হে...দেশ নিয়ে ভালো কিছু করতে গেলেই যে আমাদের এমনটা হচ্ছে আজকাল। সামনে এগোতে গেলে যে পেছাতে থাকি আমরা...!
No comments