সমঝোতা আর কত দূর by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম

ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে এক মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এ কারণে সবাই দারুণ শঙ্কিত। ২৪শে অক্টোবর সিলেটের গোলাপগঞ্জে গিয়েছিলাম বিকল্প ধারার এক জনসভায়।
লন্ডন প্রবাসী আলহাজ মোহাম্মদ অহিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অসময়ে জনসভা। ২৩ তারিখ আশুগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যেতে পারিনি। কার্তিকে সকাল-বিকাল বোঝা মুশকিল। আগেকার দিনে মরা কার্তিক বলা হতো। গ্রামের লোকজন কার্তিক গেলে মনে করতো হয়তো আর এক বছর বাঁচবে। এখন আর কার্তিক নিয়ে গ্রামের মানুষ অত ভাবে না। তবুও কার্তিক তো। তাই সকাল-বিকাল ঠিক নেই। ভাদ্রের বৃষ্টি বাড়ির একদিকে হলে অন্যদিকে হয় না। কার্তিকের আকাশ সব সময় মুখ বেজার করে থাকে। ২৩শে’র দুপুর থেকে আকাশ ছিল মেঘলা, ছিল বিপুল বৃষ্টি। কিন্তু ২৪ তারিখ সারাদিন ছিল দারুণ ঝলমলে। আমরা গিয়েছিলাম গোলাপগঞ্জ সদরে। হেলিকপ্টার জনাব সাদিকুর রহমানের ঘোষগাঁও গ্রামের বাড়ির ৫০ গজের মধ্যে নেমেছিল। সেখানে ঘণ্টাখানেক ছিলাম। তারপর গোলাপগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে মূল রাস্তায় জনসভা। ২টা ২০-২৫ মিনিটের দিকে সভা শুরু হয়েছিল। এমন অসময়েও লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন, ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। পাইলটের ভীষণ তাড়া ছিল। তাকে ৪টার আগে আকাশে উড়তেই হবে। আমি গ্রামের মানুষ, রাত পর্যন্ত সভা করার স্বভাব। পাইলটের বায়না মেনে সভা-সমাবেশ করার অভ্যাস নেই। যদিও ১-২ বার বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেনের কারণে বেলা ডোবার আগেই সভা শেষ করেছি। কিন্তু অন্তরে তৃপ্তি পাইনি। তাই সেদিন ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলাম। সেই কবে থেকে হেলিকপ্টারে চড়ি, যখন শুধু বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় লোকজন, জিনিসপত্র এদিক ওদিক নিতে কত হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছি। বঙ্গবন্ধুর সময় আমাদের মর্যাদা ছিল। তাই পানির বিমান, হেলিকপ্টার প্রয়োজন হলে ব্যবহার করেছি, কোন অসুবিধা হয়নি। ’৭৫-এর ১৭ই এপ্রিল সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সঙ্গে মুজিবনগর গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যান তার ৪-৫ দিন আগেও কোথায় যেন গিয়েছিলাম। হেলিকপ্টার যাত্রা আমার ভাল লাগে না। হেলিকপ্টারে চড়ার চেয়ে গরুর গাড়িতে চড়া অনেক ভাল। তবুও অনেক সময় চড়তে হয়। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে কুশিমনিকে কোলে নিয়ে বসে থাকা অনেক ভাল। সেদিন পাইলট আমাদের বড় বেশি বিভ্রান্ত করেছেন। তার জেদে ৪.০৫ মিনিটে আকাশে উড়েছিলাম।
তবে গোলাপগঞ্জের এই সফরে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে জনাব গিয়াস উদ্দিনের দু’বছরের মেয়ে সাঈদা আমার কোলে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়েছিল। টুকরো পেয়ারা, খেজুর, কয়েক ধরনের পিঠা মুখে দিয়েছিলাম। ছোট বাচ্চারা এমনিতেই দেখতে ফুলের মতো হয়। তাছাড়া, সে এমনিতেই খুব সুন্দর ছিল। আমার কোলে আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমন্ত বাচ্চাটিকে কেউ কেউ নিয়ে নিতে চাইছিল। কিন্তু তাকে দেইনি। কোন ফাঁকে ইকবাল সিদ্দিকী ছবি তুলেছিল। বাসায় ফিরে সেই ছবি কুশিমনি এবং তার মাকে দেখিয়ে আমার সর্বনাশ করেছে। অন্যদিনের মতো বাড়ি ফিরে সবার আগে কুশিমনিকে ডেকেছিলাম। প্রতিদিনের মতো ছুটে এসে জড়িয়েও ধরেছিল। কিন্তু একটু পর চা খেতে খেতে মা মা বলে যখন ডাকছিলাম সে আর আসে না। অনেক পরে বুঝেছিলাম ঘোষগাঁয়ের সাঈদা আমার কোলে ওভাবে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়েছে কেন? আমি তাকে কোলে নিলাম কেন? আমি যে শুধু কুশির আব্বু, অন্য কারও নই। অনেক বলে কয়ে মাফ মুক্তি চেয়ে কুশিমনিকে স্বাভাবিক করেছি। কিন্তু সারা দেশকে কিভাবে স্বাভাবিক করবো? পাইলট জানতেন আমরা আরও এক ঘণ্টা গোলাপগঞ্জে থাকতে পারতাম। কিন্তু কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে ফিরবেন, তার হেলিকপ্টার আকাশে থাকলে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোন আকাশযান থাকতে পারবে না। তাই ৪.০৫ মিনিটে গোলাপগঞ্জ থেকে উড়লেও ৪.৪০ মিনিটে আমাদের মাটিতে নামতে হয়েছিল। আগের দিন আশুগঞ্জে যেতে পারিনি। সেই আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির স্টাফ কলোনির মসজিদের মাঠে ৪.৪০ থেকে ৫.০৫ মিনিট পর্যন্ত ছিলাম, যতক্ষণ মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হেলিকপ্টার ঢাকা বিমানবন্দরে না নামে। বড় উদ্ভট ব্যাপার! দেশের শাসকদের নিরাপত্তার জন্য কত সতর্কতা। আবার ওইসব নিরাপত্তারক্ষী কি নির্মম নির্দয়ভাবে তাদের হত্যা করে। প্রসঙ্গটা এখানে এই জন্য আনলাম আমার নিজেরও জানা ছিল না। এত বড় উন্মুক্ত আকাশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কখনও থাকলে তার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কেউ থাকতে পারে না। ১০ই অক্টোবরও অমন হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের এলাসিন ও জামালপুরে। তার জন্য আমাদের যে পথে আসার কথা সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে সরে আসতে হয়েছিল। যাক যখন যে সরকার থাকে তার জন্য এসব তো হবেই। তা হোক। খুব তাড়াতাড়ি দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। সেই পুরনো পাকিস্তানি প্রশাসনের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। শোষকের পেটে মহামতি অশোকের জন্ম আশা করা যায় না। শোষকের গর্ভে শোষকই জন্মাবে। তাই পদে পদে দেশবাসী বিড়ম্বনার শিকার। সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরেই ড্রাইভার যীশুর কাছে শুনলাম, দুপুরে শহর একেবারে ফাঁকা ছিল। কি হয় কি হয় মনে করে প্রায় সবাই ঘরে ছিল। গোলমালের কোন আলামত না দেখে সন্ধ্যার দিকে আবার তারা বেরিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, বিরোধীদলীয় নেত্রীর সমাধানের ফর্মুলা, আবার ২৫শে অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার বৃষ্টিভেজা মাঠে ২৭ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটামে মানুষ দিশাহারা। সরকারি দলের মুখপাত্র জনাব মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিরোধী দল অত্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। পৃথিবীতে কোথাও বিরোধী দল অত্যাচারী হয়? অত্যাচার করে সরকার, সরকারি দল। দায়িত্বহীনের মতো সরকার ও সরকারি দল যে এভাবে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা করছে, এটা মহাজোট সরকার ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব না। যা মুখে আসে তা-ই তারা বলে। সরকার এবং সরকারি দলের মেপেজোকে কথা বলা দরকার। তাদের কথা এক সময় বুমেরাং হয়ে তাদের ওপর পড়তে পারে- এটা কেন যেন তারা ভাবতে চান না। আর কবে ভাববেন, সময় শেষ। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন, ২৭ তারিখ থেকে এ সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ। এক হিসেবে তার কথার যুক্তি আছে। ৪-৬ মাস আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাপণ্ডিতি করে বলেছিলেন, ২৪শে অক্টোবর সরকারের অথবা পার্লামেন্টের শেষ দিন। সেদিন তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন বা ভেঙে দিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। এখন হয়তো তার নতুন কিছু করার কথা মনে হয়েছে। তাই তিনি সরকারে বহাল আছেন। ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত অধিবেশন চালাবেন। তার বিবেচনায় ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত অবশ্যই সংসদ বহাল রাখতে পারেন। তারপর কি করবেন? ২৪শে জানুয়ারি সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে সংসদ আপনাআপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়ে যাবে। হারালে পাওয়া, আর মারা গেলে বাবা ডাকার মতো সংসদকে আর জীবিত বলা যাবে না। ২৪শে অক্টোবর শিক্ষকদের এক সমাবেশে বিরোধী দলের প্রধান নেত্রী বর্তমান সরকারকে ২৫ তারিখ থেকে অবৈধ বলেছেন। এক হিসাবে ২৫ তারিখ থেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বৈধ নয়। বিকল্প ব্যবস্থা হওয়া পর্যন্ত তিনি শুধু গতানুগতিক কাজ করতে পারেন। কিন্তু উপায় কি? একটা সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামানোর মতো বিরোধী দলের যে ঐক্যের প্রয়োজন স্বাভাবিকভাবেই সেই ঐক্য এখনও নেই। তাই এ সুবিধা সরকারি দল ভোগ করছে। অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন, নির্বাচন কবে হবে, কিভাবে হবে? একদম সোজা হিসাব, নির্বাচন হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব নেতৃত্ব ছাড়াই হবে। আমাদের অনেক কিছুতে মতের মিল নেই, কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন নয়- এটা কানার ভাই অন্ধও স্বীকার করে। যে যা-ই বলুন, গর্ব করে তিনি যত বক্তৃতাই করুন, একজন মানুষ যখন সব সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ান তখন তার আর কিছুই করার থাকে না। কত বছর আওয়ামী লীগ করি না। কিন্তু তবুও আওয়ামী লীগাররা ছাড়ে না। ‘আপনার বোন, আপনার বোন’ বলে কত বড় বড় নেতা অনুযোগ করে, ছোটরাও যে করে না তা নয়। এ মাসের গোড়ায় নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে এক রিকশাওয়ালা চেপে ধরেছিল, আপনার বোন এসব কি করে? তাকে একটু বোঝাতে পারেন না? এখন তাকে কি বোঝাই? বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে পরামর্শ করে কিছু করেন না। যা করেন নিজের বুদ্ধিতেই করেন। অল্পবিস্তর যৎসামান্য বুদ্ধিশুদ্ধি যদি কারও কাছ থেকে নেন, তা তার রান্নাঘরে যারা খুন্তি চালায় তাদের বুদ্ধিশুদ্ধি কালেভদ্রে নেন, কোন ভাল মানুষের কাছ থেকে কোন কিছু নেন না। আমি বুকে হাত দিয়ে, প্রয়োজনে মসজিদে দাঁড়িয়ে বলতে পারি- পৃথিবীর পরাশক্তি আমেরিকা কি নেত্রীকে কোন কিছু বলতে পেরেছে? প্রতিবেশী ভারত এত বড় দেশ, সবাই মনে করে সব কাজে ভারত তার পাশে, আগামীকাল নেত্রী কি করবেন ভারতের কোন রাজনৈতিক নেতা তো দূরের কথা, কোন মুনি ঋষিও যদি বলতে পারেন তাহলে হাতে চুড়ি পরবো। ভগবান রামচন্দ্রের জন্মের কয়েক হাজার বছর আগে ঋষিমুনি বাল্মিকী রামায়ণ লিখেছিলেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে তেমন মহামানবের জন্ম হয়নি যিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একদিনের কার্যকলাপ সঠিকভাবে একদিন আগে বলতে পারেন। ভীষণ খারাপ লাগে আওয়ামী ঘরানার বন্ধুদের অভিযোগের পাহাড় গুনে। আমি আওয়ামী লীগ ছেড়েছি ১৪ বছর। যে কোন মুহূর্তে আমি প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে জোট করতে পারতাম। করিনি তারা বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি একটা মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করার। তবুও গালাগাল। রাশিয়ার বিপ্লবের মতো শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণের এক মহাবিপ্লব ঘটে গেল। সেখানে কোন কাজ পেলো না- আমাকে রাজাকার বলে গালাগাল করা হলো। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলার পরিণতি কি তা তারা দেখেছে। ক’দিন ধরে শুনছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। এতদিনে বাধ্য হয়ে বিরোধী দলের নেত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা তার জন্য সম্মানের না অসম্মানের? শেষ পর্যন্ত ২৬ তারিখ সন্ধ্যা ৬-২০ মিনিটে কথা হয়েছে। একেবারেই অখুশি কন্যার কবুল বলার মতো। ৫ বছরে যে সরকারপ্রধান দেশের নিবন্ধিত কোন বিরোধী দলের সঙ্গে একবারের জন্য কথা বলতে পারেননি তার আবার নেতৃত্ব কোথায়? নেতৃত্বের যোগ্যতা কোথায়? ভারতের জুজুর ভয় দেখিয়ে বাঙালিদের দমানো যাবে না। আমরা বন্ধু চাই, কোন মুরুব্বি চাই না। অযথা অসত্য ভারতবিদ্বেষ যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, ঠিক তেমনি মহান ভারত আওয়ামী লীগের পেটে, একথাও মেনে নিতে মন সায় দেয় না। ১৬ কোটি মানুষের পেটে ১৫০ কোটি মানুষের ভারতের জায়গা হবে কি করে? আওয়ামী লীগের পেটে তো নয়-ই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার আঁচল অত বড় নয়, যে তিনি একাই ভারতকে বেঁধে রাখতে বা ছায়া দিতে পারেন। বহু বছর ভারতের সঙ্গে ওঠাবসা করে যা উপলব্ধি করেছি তাতে বলতে পারি মহান ভারত বাংলাদেশের কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থ রক্ষা করতে তাদের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলির কথা চিন্তাও করে না। জাতীয় এই চরম দুঃসময়ে কারও কথার দাঁড়ি-কমায় ভুল না ধরে সদিচ্ছা নিয়ে সবার এগিয়ে আসা উচিত। সত্যিই অবাধ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার নির্বাচিত হন তাহলে আমাদের আপত্তি কোথায়? আর যদি হেরে যান, ৩০-৩৫ সিট পান, সেখানে জোর করে শূন্য বসিয়ে সিট সংখ্যা কে বাড়িয়ে দেবে? আকাশে ওড়া ঘুড়ি গালি ধরলে ফেরানো যায় না। প্রয়োজনে সুতো ছেড়ে এক চক্কর ঘুরে আসতে দিতে হয়। বাঙালির মন এবং মনন এমন যে, তারা কাউকে একবার গ্রহণ করলে, আয়ুব-মোনায়েম-ইয়াহিয়ার কামান বন্দুক বুকের পাঁজর ঝাঁঝরা করতে পারলেও হৃদয় থেকে মুছতে পারে না। ঠিক তেমনি কাউকে অপছন্দ করলে কোন উপঢৌকনেই দেশবাসীর মন জয় করা যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে ঠেকেছে। সেখান থেকে তাকে উঠতে হলে কোন মই বেয়ে ওঠার সুযোগ নেই। আবার তাকে ধাপে ধাপে আমার মতো নিচে থেকে উঠতে হবে।
জানি আমাকে নিয়ে যারা গালাগাল করেন তাদের সঙ্গে মত ও পথের মিল নেই বলে তারা তা করেন। কিন্তু জাতীয় বিপদের সময় ওই সব অকৃতজ্ঞ নিন্দুককে যতটা ছায়া দিয়েছি বা আল্লাহ ছায়া দেয়ার তৌফিক দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যখন প্রকৃত আওয়ামী লীগ সমর্থকরা নির্যাতিত হবে তখন কোন হাইব্রিড নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমিই ছুটে যাবো সবার আগে, প্রয়োজনে তাদের ওপর আসা সব আঘাত বুক পেতে ফেরাবো। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী, কারও ব্যক্তিগত কর্মচারী হওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মাইনি। তাই সবার কাছেই রাজনৈতিক আচরণ আশা করি, সম্মানজনক আচরণ আশা করি। দলকানা আওয়ামী বন্ধুদের বলি, সেদিন গোলাপগঞ্জে হাজার মানুষের মধ্যেও উন্মাদ দু’ তিনটি ছেলে কপালে চুমু খাওয়ার জন্য টানাটানি করছিল। যে দু-তিনজনকে লক্ষ্য করেছি তারা আমার বুক অবধি হবে, ভাল করে মাথা নাগাল পাচ্ছিল না। প্রচুর ভিড়ের মধ্যে অমন করায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি হয়েছে তোমাদের? তারা চিৎকার করে বলছিল, কপালে চুমু দেবো। বলে এসেছি জনতার উত্তাল সংগ্রামে চুমু খাওয়াতেও আমি মাথা নত করি না। সম্ভব হলে বাড়ি যেও। টেবিল চেয়ারে কোথাও দাঁড়িয়ে কপালে চুমু দিতে চেষ্টা করো। কোন বড় কাজ বা ভাল কাজ করে বাড়ি ফিরলে কখনও সখনো বুকে টেনে মা যখন চুমু খেতেন, হৃদয় জুড়িয়ে যেতো। আমার ৭ বছরের কুশি-ও মাঝেসাঝে মাথা টেনে যখন কপালে চুমু দেয় তখন সারা দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের স্পর্শ অনুভব করি।

No comments

Powered by Blogger.