ভারতে বছরে ৩০০ রেলকর্মী প্রাণ হারান
ভারতে রেললাইন নিরাপদ রাখতে গিয়ে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ রেলকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়। এসব কর্মী রেললাইন পরীক্ষা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে প্রাণ হারান। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হল, রেল চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত এসব কর্মীর বেশিরভাগই ট্রেনে কাটা পড়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতের রেলওয়ের এ জাতীয় চাকরি দেশটির মাওবাদী গেরিলা অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর চাকরির চেয়ে বিপজ্জনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছর দেশটিতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৫ রেলকর্মী। অন্যদিকে, একই সময়ে মাওবাদী গেরিলাদের হামলায় নিহত হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৩৭ সদস্য। অর্থাৎ যুদ্ধ অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যত সিআরপিএফ সদস্য নিহত হয়েছেন তার চেয়ে ৮ গুণ বেশি রেলকর্মী নিহত হয়েছেন বেসামরিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে।
দেশটিতে গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে গড়ে এ হারে রেলকর্মীরা নিহত হচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের সদস্য (প্রকৌশলী) এসকে জৈন। এছাড়া ভারতের এক লাখ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত বছর আহত হয়েছেন আরাও ৮০০ রেলকর্মী। অবশ্য, কোনও কোনও বছর নিহতের সংখ্যা ৫০০ পর্যন্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র। দিনরাত বা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কখনোই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান না ভারতের রেলকর্মীরা। রাতের অন্ধকার টর্চ জ্বেলে তাদের পরীক্ষা করতে হয় রেললাইন। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ট্রেনে চাপা পড়ার ঘটনা ঘটে। অবশ্য, আগে প্রতি বছর ৪০০ রেলকর্মী নিহত হলেও এর সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমানো গেছে। এ সম্পর্কে এসকে জৈন বলেন, বর্তমান সংখ্যাটিও গ্রহণযোগ্য নয় এবং রেললাইন পরীক্ষার একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার।ম এদিকে ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ লোকবল ব্যবহার করে রেললাইন পরীক্ষা করার পুরনো পদ্ধতির বদলে ‘রেলসোনিক’ নামের আধুনিক একটি পদ্ধতি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। এ পদ্ধতিতে রেললাইনের মাধ্যমে আলট্রসোনিক ওয়েব বা অতিশব্দের তরঙ্গ পাঠানো হবে। এ শব্দতরঙ্গ বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ধারণ করলে বোঝা যাবে, লাইনের কোথাও ফাটল বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কি-না। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার নৌবাহিনীর কাছ থেকে এ পদ্ধতি কিনেছে ভারত। তথ্যসূত্র : দ্য হিন্দু।
No comments