এসেছে নবান্ন আজ by অরুণ কুমার বিশ্বাস
হে ম ন্ত>>
এ সংখ্যায় ছাপা হলো পাঠক ফিচার হেমন্ত। হেমন্ত ঋতু নিয়ে অনেকেই অনেক লেখা
পাঠিয়েছেন। বিদেশে বসেও দেশের এই ঋতু নিয়েস্মৃতিচারণা করেছেন।
সেই সব লেখা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
হেমন্ত দুয়ারে আজ। পেঁজা তুলার মতো ছন্নছাড়া মেঘমালা বিদায় নিয়েছে, হেসে উঠেছে কার্তিকের ঝকঝকে আকাশ। বাতাসে হিম হিম গন্ধ, ভোরের চেহারা আলাদা করে ঠাহর করা যায়। মাটির কাছাকাছি আলতো কুয়াশা জমে, ঘাসের ডগায় বুঝি বা মুক্তোদানার মতো শিশিরেরা অস্থায়ী নিবাস গড়ে।
গাঁয়ের দিকে ঋতুবদলের বৈচিত্র্য বেশ চোখে পড়ে। আমন ধানের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা কৃষকের মন। সোনারং ধানের ফলনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে গ্রামীণ জীবন। ফলন ভালো হলে কৃষাণির গায়ে উঠবে নতুন শাড়ি, নাকে নোলক, পায়ে মল, বাচ্চারা পাবে দুটো ভালোমন্দ খাবার, খেলনা ঘুড়ি, মিহিদানা, রসগোল্লা।
শরতের বিগত-যৌবনা কাশফুল হেমন্তে শান্ত-সমাহিত রূপ লাভ করে। বুনোকলমির আদুরে আবাহন মন কেড়ে নেয়। মাঠঘাট শুকোতে থাকে, ডোবা-জলাশয়ের পানিতে ধরে টান, অনাগত শীতের প্রস্তুতি নেয় প্রকৃতি। হেমন্তে ছন্দ-মাধুর্যের অন্ত নেই। অথচ গাছগাছালির পাতা ঝরার দিন আসছে। তাই শেষবারের মতো প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরে শ্রেষ্ঠ সাজে। পরিযায়ী পাখিরা গ্রামবাংলার আতিথেয়তা গ্রহণের উদ্দেশে নোঙর ফেলে অগ্রহায়ণের শেষে। ভুলোমন কোকিল মনের অজান্তেই হয়তো ‘কুহু’ স্বরে গেয়ে ওঠে। হেমন্তের পুলক শিহরণ স্পর্শ করে বিহগের মন!
নতুন ধানের আমেজে মাতোয়ারা গৃহকোণ। বছর শেষে নব উদ্দীপনায় আন্দোলিত হয় গাঁয়ের সহজ-সরল মানুষ। ফসল তোলা শেষ, এবার নবান্নের আয়োজনে মেতে ওঠে গৃহবধূ। ধনলক্ষ্মীর প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতার যেন কোনো শেষ নেই। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামবাসী তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অন্তরঙ্গতাকে আরও একবার নবায়ন করে নেয়। জীবনকে উদ্যাপন করে নতুনভাবে প্রাণের আলোয়।
দিনভর ব্যস্ততা শেষে সাঁঝের আলোয় বসে টপ্পাগানের আসর। গাঁয়ের দিকে এখনো হুঁকোর প্রচলন আছে। কৃষাণ-বউ কলকে সাজানোয় ব্যস্ত, পাছে গায়কের রসভঙ্গ হয়। বেশ রাত অবধি চলে গানের আসর। তারপর মাটির বিছানায় শুয়ে স্বপ্নবিভোর ঘুম।
No comments