সহিংসতা পরিহার করে শান্তি বজায় রাখুন- ব্যাপক প্রাণহানি ও সহিংসতা

টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালকে কেন্দ্র করে গত দুই দিনে প্রায় ১৩ জনের প্রাণহানি একটি গুরুতর অশনিসংকেত।
এটা বড়ই অনুশোচনীয় যে, দুই শীর্ষ নেত্রীর মধ্যে সংলাপের সূচনা হওয়া সত্ত্বেও সহিংসতার রাশ টানা সম্ভব হয়নি।

খালেদা জিয়ার বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের উদ্যোগ নিলেন। এরপর হরতাল প্রত্যাহার করে নেওয়াই স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। ‘অন্তর্গত স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেও বিএনপি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর ফোনের জন্য ধন্যবাদ দিয়েছে। এমনকি হরতালের সময়সীমা পেরোলে সংলাপ শুরুর সম্ভাবনা কোনো পক্ষই নাকচ করেনি। এখন সংলাপের পরিবেশ উন্নত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনোযোগ দেওয়াটাই যৌক্তিক। অবশ্য ফোনালাপ লোক দেখানো হলে ভিন্ন কথা।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব হুঁশিয়ার না হলে দেশে আরও ব্যাপকভিত্তিক নাশকতা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আর অব্যাহত বা প্রলম্বিত নাশকতা দেশে নৈরাজ্য ডেকে আনতে পারে। সব পরিস্থিতিতে নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপানো আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়ানো এক নয়।
আগামী ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচন ঠেকানোর রাজনীতি চলমান। এর গোড়ায় নাশকতাপ্রবণ রাজনীতির উদগ্র চেহারা দেখে দেশবাসীর অতিশয় আতঙ্কিত বোধ করাই স্বাভাবিক। কিছুদিন আগেই আমরা জামায়াতের নাশকতায় উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি এবং পুলিশি অসহায়ত্ব দেখেছি। ঘাতকদের কারও শাস্তির নজির স্থাপন করা যায়নি। বিজিবির গুলিতে বিরোধীদলীয় দুজন কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতিদের বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ এবং আদালতের নথিতে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে এরপর কী? কারণ, হরতালের পর বিএনপির নেত্রী আরও ‘কঠোর কর্মসূচি’ দেওয়ার কথা বলেছেন।
সমঝোতা হোক বা না হোক, উভয় পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শান্তি বজায় রাখা পূর্বশর্ত। ব্যাপকভিত্তিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়লে সে জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপালে হবে না। মৃত ব্যক্তিরা প্রাণ পাবে না। ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে দুই বড় দলের কোনো নির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব আছে বলেও মনে হয় না। আমাদের রাজনীতিকেরা ধরেই নিয়েছেন, তাঁদের সংজ্ঞায়িত তথাকথিত গণতন্ত্রের লড়াইয়ে প্রাণহানি একটি মামুলি বিষয়। দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কোনো দরকার নেই। তাঁরা শুধু দেখেন, দায় স্থানান্তর সম্ভব হয়েছে কি না। বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁরা ত্রাণ বিলান, কিন্তু হরতালকেন্দ্রিক নাশকতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে তাঁরা ত্রাণ দিতেও কার্পণ্য করেন। এমনকি নিজ দলীয় কর্মী নিহত হলে ক্ষমতায় থেকেও তার বিচার করেন না।
দশম সংসদ গঠন এবং নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় কত মানুষ বলি হবে, ক্ষতির পরিমাণ কী দাঁড়াবে, তা অনুমান করেও আমরা শিউরে উঠছি। আশা করব, আলোচনা করে অচিরেই তাঁরা নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছে মানুষকে স্বস্তি দেবেন। যা-ই করুন, মানুষকে শান্তিতে রাখুন।
ছবি-আমার দেশ

No comments

Powered by Blogger.