মত ও মন্তব্য-নৈরাজ্য মঙ্গলজনক হয় না, কখনোই নয় by হারুন হাবীব
পৃথিবীর অনেক সমাজেই নৈরাজ্য বা সহিংসতার মাধ্যমে দলীয় কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থ ও লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা চলেছে। এ ধরনের সহিংসতা হয়তো সাময়িক কিছু তুষ্টি অথবা ক্ষণস্থায়ী কিছু সাফল্য অর্জনের হাতিয়ার হয়েছে কোথাও কোথাও। কিন্তু বিশ্বের কোথাও এমন কোনো নজির নেই যে নৈরাজ্য বা সহিংসতা কোনো সমাজকে, কোনো দল বা গোষ্ঠীকে শেষ পর্যন্ত উপকৃত করেছে, কাউকে স্থিরতা ও সুস্থতা দান করেছে। কাজেই কোথাও যা ঘটেনি, কোথাও যা
সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি_তা আমাদের বাংলাদেশে হবে বলে ভাববার সুযোগ কোথায়? বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম হতে পারে না। মাত্র গত রবিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচার বোমাবাজি, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো সুবিবেচক মানুষই এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানাবেন। অতিসম্প্রতি এই সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকে সুপরিকল্পিত না বলে পরিস্থিতি-উদ্ভূত আকস্মিক প্রতিক্রিয়া বা ঘটনা বলে ভাববারও কারণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একই সময়ে ১৪টি স্থানে ঘটেছে ব্যাপক বোমাবাজি, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। মতিঝিলে কথিত বোমা বহনকারী বিস্ফোরণে নিজেই নিহত ও একজন পথচারী হন আহত। ঢাকার নানা স্থানে পুলিশভ্যান ও আটটি যাত্রীবাহী বাসে দেওয়া হয় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর! সিলেটে দুটি বাস, বরিশালে দুটি অটোরিকশা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং সিলেটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক নিরীহ বাসযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বলতেই হবে, এসব সংবাদ একটি সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
নানা সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেল, রবিবার ভোরবেলায়ই হঠাৎ করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিল, বিজয়নগর, ফকিরেরপুল, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর চালায়, আগুন ধরায় ও ককটেল হামলা করে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও জামায়াতের পাশাপাশি ছাত্রদল কর্মী অংশ নেয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে স্বাধীন গণমাধ্যমের খবরগুলোতে জানা গেছে।
রবিবার বিকেলে ছিল বিএনপির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা জমায়েত। স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের এমন আয়োজন অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। দলগত নীতি বা অবস্থান যা-ই হোক, ব্যক্তিগতভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন দলটিতে। কিন্তু এমন একটি আয়োজনও প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানা সংগত কারণে। সংগত কারণেই অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার অবিলম্বে বন্ধ করার প্রকাশ্য দাবি জানায়, অভিযুক্তদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলে, এমনকি বিচার বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়, তারাই আবার কোন নীতি-আদর্শে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে এমন একটি আয়োজন করে?
সে যা-ই হোক, একই দিন আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কয়েকজন শীর্ষ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার দিন ধার্য ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিচার ভণ্ডুল করতে অনেকটা বেপরোয়া হয়েই মাঠে নেমেছে জামায়াত। এ বিচারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে, বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লবিস্ট পর্যন্ত নিয়োগ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দলগত অবস্থান থেকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ দলটির সঙ্গে সরব ভূমিকা পালন করছে। সে কারণেই অনেকে সরাসরি ভাবতে শুরু করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অঘোষিত পূর্বপরিকল্পনা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিই তাদের অভিসন্ধি ছিল কি না। যাঁরা এমনটা ভাববেন, তাঁদের খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে সংঘর্ষের পর রাজধানীতে যেভাবে বোমাবাজি চলে, তাতে পুরো ঘটনা যে পরিকল্পিত এটা স্পষ্ট। পূর্বপরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়া এতগুলো বোমার বিস্ফোরণ এবং যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ সম্ভব নয়।
এমনও খবর পড়েছি যে নাশকতামূলক পরিকল্পনার কথা নাকি গোয়েন্দা বিভাগ থেকে পুলিশকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বলে প্রতিরোধ করা যায়নি। ভুলে যাওয়ার কথা নয়, গত সেপ্টেম্বর মাসেও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ এবং আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগর-কাকরাইল এলাকায় পুলিশের ওপর কমান্ডো স্টাইলে অতর্কিত হামলা চালানো হায়ছিল। ২০টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদের অতর্কিত তাণ্ডবের সামনে পুলিশ অনেকটাই ছিল প্রস্তুতিহীন ও অসহায়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় চালানো হয়েছিল একই তাণ্ডব।
যা হোক, গত রবিবারের নৃশংসতার তুলনা করা কষ্টকর। কোনো রাজনীতির নামেই এ অমানবিকতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ফলে একজন যাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কে এর দায় নেবে? দেশের দুটি বড় দলের মধ্যে এ নৈরাজ্য নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ বানচাল করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। তিনি আরো দাবি করেন, নিহত আরিফুজ্জামান বিএনপির কর্মী এবং তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের খবরে এ দাবি সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বোমাবাজি, ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাঁর মতে, বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের রায় নিয়ে গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনেই দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, রক্তপাত ঘটিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিরোধী দল এ ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজাগ ছিল বলেই আকস্মিক এ হামলা ভয়ংকর রূপ নিতে পারেনি। সে যা-ই হোক, বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় নয়। বিষয়টি ন্যায়নীতি ও সত্য-মিথ্যার।
আমার দৃঢ়বিশ্বাস, জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক-দালাল বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে বাঁচাতে কোনো রাজনৈতিক কৌশলই দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণজাগরণ লক্ষ করা গেছে, তাকে সব মহলেরই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা উচিত। নতুন প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতার সত্যিকার ইতিহাস আজ অবগত। তারা স্বাধীনতার শত্রু-মিত্রের চেহারা অবগত। কোন দলের রাজনীতি কতটা গ্রহণযোগ্য বা নয়, কতটা তারা সরকারের সমর্থক, সমালোচক বা নয়, তার চেয়ে বড় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের, যারা নির্বিচারে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন করেছিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে যারা জাতীয় স্বাধীনতার প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ করেছিল, তাদের তারা ঘৃণা করে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক
নানা সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেল, রবিবার ভোরবেলায়ই হঠাৎ করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিল, বিজয়নগর, ফকিরেরপুল, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর চালায়, আগুন ধরায় ও ককটেল হামলা করে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও জামায়াতের পাশাপাশি ছাত্রদল কর্মী অংশ নেয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে স্বাধীন গণমাধ্যমের খবরগুলোতে জানা গেছে।
রবিবার বিকেলে ছিল বিএনপির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা জমায়েত। স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের এমন আয়োজন অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। দলগত নীতি বা অবস্থান যা-ই হোক, ব্যক্তিগতভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন দলটিতে। কিন্তু এমন একটি আয়োজনও প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানা সংগত কারণে। সংগত কারণেই অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার অবিলম্বে বন্ধ করার প্রকাশ্য দাবি জানায়, অভিযুক্তদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলে, এমনকি বিচার বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়, তারাই আবার কোন নীতি-আদর্শে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে এমন একটি আয়োজন করে?
সে যা-ই হোক, একই দিন আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কয়েকজন শীর্ষ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার দিন ধার্য ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিচার ভণ্ডুল করতে অনেকটা বেপরোয়া হয়েই মাঠে নেমেছে জামায়াত। এ বিচারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে, বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লবিস্ট পর্যন্ত নিয়োগ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দলগত অবস্থান থেকে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ দলটির সঙ্গে সরব ভূমিকা পালন করছে। সে কারণেই অনেকে সরাসরি ভাবতে শুরু করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অঘোষিত পূর্বপরিকল্পনা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিই তাদের অভিসন্ধি ছিল কি না। যাঁরা এমনটা ভাববেন, তাঁদের খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে সংঘর্ষের পর রাজধানীতে যেভাবে বোমাবাজি চলে, তাতে পুরো ঘটনা যে পরিকল্পিত এটা স্পষ্ট। পূর্বপরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়া এতগুলো বোমার বিস্ফোরণ এবং যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ সম্ভব নয়।
এমনও খবর পড়েছি যে নাশকতামূলক পরিকল্পনার কথা নাকি গোয়েন্দা বিভাগ থেকে পুলিশকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বলে প্রতিরোধ করা যায়নি। ভুলে যাওয়ার কথা নয়, গত সেপ্টেম্বর মাসেও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ এবং আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগর-কাকরাইল এলাকায় পুলিশের ওপর কমান্ডো স্টাইলে অতর্কিত হামলা চালানো হায়ছিল। ২০টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদের অতর্কিত তাণ্ডবের সামনে পুলিশ অনেকটাই ছিল প্রস্তুতিহীন ও অসহায়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় চালানো হয়েছিল একই তাণ্ডব।
যা হোক, গত রবিবারের নৃশংসতার তুলনা করা কষ্টকর। কোনো রাজনীতির নামেই এ অমানবিকতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ফলে একজন যাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কে এর দায় নেবে? দেশের দুটি বড় দলের মধ্যে এ নৈরাজ্য নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ বানচাল করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। তিনি আরো দাবি করেন, নিহত আরিফুজ্জামান বিএনপির কর্মী এবং তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের খবরে এ দাবি সঠিক বলে প্রমাণিত হয় না। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বোমাবাজি, ভাঙচুর ও হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাঁর মতে, বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের রায় নিয়ে গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনেই দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, রক্তপাত ঘটিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল এবং খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিরোধী দল এ ঘটনা ঘটিয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সজাগ ছিল বলেই আকস্মিক এ হামলা ভয়ংকর রূপ নিতে পারেনি। সে যা-ই হোক, বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় নয়। বিষয়টি ন্যায়নীতি ও সত্য-মিথ্যার।
আমার দৃঢ়বিশ্বাস, জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক-দালাল বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে বাঁচাতে কোনো রাজনৈতিক কৌশলই দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকীর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণজাগরণ লক্ষ করা গেছে, তাকে সব মহলেরই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা উচিত। নতুন প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতার সত্যিকার ইতিহাস আজ অবগত। তারা স্বাধীনতার শত্রু-মিত্রের চেহারা অবগত। কোন দলের রাজনীতি কতটা গ্রহণযোগ্য বা নয়, কতটা তারা সরকারের সমর্থক, সমালোচক বা নয়, তার চেয়ে বড় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের, যারা নির্বিচারে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন করেছিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে যারা জাতীয় স্বাধীনতার প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ করেছিল, তাদের তারা ঘৃণা করে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক
No comments