ভিশনারি নেতা by আহমদ আল কবির
দেখতে দেখতে প্রায় দুই যুগ চলে গেল। অথচ এখনও মনে হয়, এই তো তিনি কাছেই রয়েছেন_ কিন্তু দৃষ্টি কাছে এবং দূরে, অনেক দূরের অনেক কিছুর ওপর। ৯ অক্টোবর তার ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পঞ্চগড়ের নিভৃত পল্লী বলরামহাটের বালিয়াপাড়ায় 'মোহাম্মদ ফরহাদ কমিউনিটি হাসপাতাল' প্রাঙ্গণে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটির কথা আমি বিশেষ করে উল্লেখ করব_ বৃক্ষরোপণ এবং স্বাস্থ্যক্যাম্প। মাত্র ১৪ বছর বয়সে
তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে প্রথম কারাবরণ। ১৯৬২ সালের যে ঐক্যবদ্ধ প্রবল ছাত্র আন্দোলন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে জয়ী হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বয়স তখন মাত্র ২৪ বছর। এখন যারা ছাত্র আন্দোলনে রয়েছেন, তারা মোহাম্মদ ফরহাদের জীবন-কথা পড়ে দেখতে পারেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে তিনি যখন আরও পাদপ্রদীপের আলোয়_ জাতীয় নেতার আসনে অধিষ্ঠিত তখন বয়স মাত্র ৩৩ বছর। কয়েক হাজার গেরিলা যোদ্ধার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দেশ গড়ার স্লোগান তুলেছেন। বৃক্ষরোপণ কিংবা স্বাস্থ্যক্যাম্প অথবা বয়স্কদের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলা_ এসব ধারণা তিনি ওই সময়েই সামনে নিয়ে এসেছিলেন এবং তা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন অনেকের মাঝে। এখন আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের সামনে যে ভিশন-২০২১, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন, তার অনেক কিছুই মোহাম্মদ ফরহাদ বাংলাদেশের নবযাত্রার সময়ে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তাকে আমি বলব ভিশনারি নেতা, যিনি প্রাঞ্জল ভাষায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরতে পারতেন। অনুসারীরা শুধুু নয়, দলমত নির্বিশেষে লাখ লাখ ছাত্র-তরুণকে তা অনুপ্রাণিত করত। আমি সে সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। তাকে জানাশোনা দূর থেকেই। কিন্তু সেখানে বসেও টের পেতাম তার দেশ-ভাবনা। তিনি ছাত্রদের ব্রিগেড গড়ে তুলে নিরক্ষরতা দূর করার কাজে গ্রামে গ্রামে ও শ্রমিকদের এলাকায় যেতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এমন ধরনের শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন নিজেকে, যার দুটি প্রধান লক্ষ্য ছিল_ মজুরি ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু। নারীদের সংগঠিত হওয়ার জন্য তিনি সহযোগিতা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার কথা ভেবেছেন। ১৯৭৪ সলে প্রলয়ঙ্করী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে তুলতে কৃষকদের জন্য অনেক শহর ও গ্রামে আমন ধানের বীজতলা করার নতুন ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৭ সালে জাতীয় সংসদে বাজেট ভাষণে তিনি বলেছিলেন, কৃষকদের ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এজন্য অর্থের জোগান দিতে হবে প্রধানত ব্যাংকিং খাতকে এবং সুদের হার রাখতে হবে নামমাত্র। এখন এটিই আমাদের সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিঘোষিত নীতি। কৃষকরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের জন্য সরকারি ভর্তুকি বেড়েছে। তারা বুঝতে পারছে, সরকার রয়েছে তাদের পাশে। তিনি ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করেছেন, বর্গাচাষিদের স্বার্থের জন্য লড়েছেন। ক্ষেতমজুরদের নূ্যনতম মজুরির জন্য আশির দশকের মাঝামাঝি যে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারের আমলে বর্গাচাষিদের জন্য ব্যাংক ঋণ সুবিধা চালু করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এ বিষয়ে তার ভাবনার কথা স্মরণ করতে পারেন।
মোহাম্মদ ফরহাদ ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল প্রণয়ন করেছেন। ঊনসত্তরের ছাত্র ও গণআন্দোলন পরিচালনায়ও অবদান রেখেছেন। পঁচাত্তরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতীয় জীবনে যে দুর্যোগ নেমে এসেছিল তা থেকে উত্তরণে সক্রিয় থেকেছেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কাজে লাগিয়েছেন ষাটের দশকের অভিজ্ঞতা। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন সামনের সারিতে। সমস্যা-সংকটে পথ দেখাতে পারেন তিনি_ এটা ছিল ১৫ দলের নেতাকর্মীদের একান্ত বিশ্বাস। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের ওপর তিনি সব সময় গুরুত্ব আরোপ করতেন। এজন্য দলীয় স্বার্থকে গৌণ করে দেখার জন্য তিনি অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন। এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন দেশবাসী এখন আরও বেশি করে অনুভব করে। বাংলাদেশকে উন্নত ও আধুনিক রূপ দিতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। কিন্তু এখনও তিনি রয়ে গেছেন প্রেরণা হয়ে, যার দৃষ্টি কেবলই সামনে। তার প্রতি জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য।
মোহাম্মদ ফরহাদ ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল প্রণয়ন করেছেন। ঊনসত্তরের ছাত্র ও গণআন্দোলন পরিচালনায়ও অবদান রেখেছেন। পঁচাত্তরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতীয় জীবনে যে দুর্যোগ নেমে এসেছিল তা থেকে উত্তরণে সক্রিয় থেকেছেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কাজে লাগিয়েছেন ষাটের দশকের অভিজ্ঞতা। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন সামনের সারিতে। সমস্যা-সংকটে পথ দেখাতে পারেন তিনি_ এটা ছিল ১৫ দলের নেতাকর্মীদের একান্ত বিশ্বাস। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের ওপর তিনি সব সময় গুরুত্ব আরোপ করতেন। এজন্য দলীয় স্বার্থকে গৌণ করে দেখার জন্য তিনি অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন। এমন নেতৃত্বের প্রয়োজন দেশবাসী এখন আরও বেশি করে অনুভব করে। বাংলাদেশকে উন্নত ও আধুনিক রূপ দিতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। কিন্তু এখনও তিনি রয়ে গেছেন প্রেরণা হয়ে, যার দৃষ্টি কেবলই সামনে। তার প্রতি জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য।
No comments