র ঙ বে র ঙ-আয় ঘুম আয়
সারাদিন রাষ্ট্রীয় নানা কাজে ব্যস্ত থাকার পর ঘরে ফিরলেন উইন্সটন চার্চিল। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মানুষের কথা শোনা, অভাব-অভিযোগ সমাধান করা ইত্যাদি বিষয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যাপক। জটিল সব রাজনৈতিক সমস্যা সমধানের আশায় বাইরের দেশ থেকেও কূটনীতিকরা আসেন নিয়মিত। অন্যায় আবদারগুলোও হাসিমুখে শোনেন তিনি। সেগুলো অবশ্য এমন কৌশলে এড়িয়ে যান, যা আবদারকারীও টের পান না। রাজ্যের সমস্যা সেরে নিজের ঘরে
ফিরেই বিচিত্র এক সমস্যায় পড়েন চার্চিল। মোটেও ঘুম আসে না চোখে! গভীর রাতে বাড়ি ফিরে প্রায়ই নিদ্রাহীনতার সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। সারারাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে আবার ভোরে উঠে কাজের সাগরে ডুবে যেতে হয় তাকে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে লাগলেন চার্চিল। তারপর একদিন এ সমস্যার বিচিত্র এক সমাধান বের করে ফেললেন নিজেই। শোবার ঘরে ঢোকালেন দুটি বিছানা। যখন একটাতে শুয়ে ঘুম আসত না, তখন অন্য বিছানায় এসে ঘুমানোর চেষ্টা করতেন!
রাতে ঘুম না হওয়ার সমস্যা কম-বেশি সবারই হয়। চিকিৎসাশাস্ত্র, মনোবিজ্ঞান এর নানা ধরনের ব্যাখ্যা ও সমাধান দিয়েছে। তারপরও এ সমস্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। জীবনযাত্রার আধুনিকায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনিদ্রা রোগী। বলা হয়, সুঅভ্যাস আর অনুশাসনের মাধ্যমে অনিদ্রারোগ দূর করা সম্ভব। এর একটি উদাহরণ হলেন বিখ্যাত সমরনায়ক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। প্রচণ্ড যুদ্ধ চলাকালেও তিনি প্রতি রাতে তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করেছিলেন।
কথা হচ্ছিল অনিদ্রা নিয়ে। অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগেছেন এ রকম আরেক মানুষ হলেন আর্ল অব রোজকির। এ ভদ্রলোক নিদ্রাহীনতার কারণে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন! অবসর নেওয়ার আট বছর পর এক লেখায় উল্লেখ করেন, 'আমি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দকে মোটেও ভুলতে পারি না। রাতের পর রাত শুয়ে থাকা, জেগে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, ঘুমের কোনো সম্ভাবনা নেই, স্নায়ুর ওপর পীড়াদায়ক যন্ত্রণা... এটা এমন এক অভিজ্ঞতা, বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো সুস্থ মানুষ কখনও যার পুনরাবৃত্তি চাইবে না।'
ঘুম নিয়ে দারুণ সমস্যায় ভুগতেন 'জাঙ্গলবুক'খ্যাত সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং। অনেক চেষ্টা করেও যখন ঘুম আসত না, তখন এ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ঘরের ভেতর আর বাইরের বাগানে ঘোরাফেরা করতেন। তিনি লিখে গেছেন, 'আমাদের করুণা কর ! ওহ্, আমাদের করুণা কর! আমরা নিদ্রাহীন।'
এদিকে ফ্রানৎস কাফকার ঘুম নিয়ে তেমন একটা সমস্যা ছিল না। কিন্তু যখনই নতুন কোনো লেখা শুরু করতেন কিংবা কোনো লেখার প্লট মাথায় ঘুরপাক খেত, তখনই নিদ্রাহীনতায় পেয়ে বসত তাকে। তার দিনপঞ্জিতে কাফকা ঘুম আনার খুব প্রিয় একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন_ যাকে আমি ঘুম আসার একটি ভালো উপায় মনে করি, নিজেকে যতটা সম্ভব ভারি করে নেওয়া। আর এ জন্য, আমি আমার দুই হাতকে আঁড়াআড়িভাবে কাঁধের ওপর রাখি। এর ফলে আমি শয্যায় বোঝাসহ সৈনিকের মতো শুয়ে থাকি।
এদিকে বিখ্যাত সুরকার ভিনসেন্ট ভ্যানগগের নিদ্রাহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কৌশলটা বেশ অদ্ভুত। তিনি ঘুমানোর সময় বালিশ ও তোশকে ইচ্ছামতো কর্পূর মাখিয়ে নিতেন, যা তাকে প্রশান্তিদায়ক ঘুমের স্বাদ লাভে সাহায্য করত। বিখ্যাত পিয়ানোবাদক অস্কার লিভেন্ট প্রতিরাতে পান করতেন এক বোতল প্যারালডিহাইড। তারপর তিনি যেতেন বিছানায়। বালিশের একপ্রান্তে মাথাটা রাখতেন এবং ঘুমের আশায় মনে মনে গুনতে শুরু করতেন। এভাবেই এক সময় তলিয়ে যেতেন ঘুমের অতলে!
আমির খসরু সেলিম
No comments