নীরব 'নিখোঁজ বাণিজ্য'-'টাকা দিবি নইলে লাশ যাবে আশুলিয়ায়' by সাহাদাত হোসেন পরশ
'তোর ছেলে আমাদের কাছে রয়েছে। ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করবি। টাকা দিলেই ছেলেকে ফেরত পাবি। ছেলে মুক্ত করতে চাইলে দ্রুত টাকা সংগ্রহ কর। আমাদের কথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে বললে তোর ছোট ছেলেকেও অপহরণ করা হবে। টাকা না দিলে তোর ছেলের লাশ যাবে আশুলিয়ায়।' দুর্বৃত্তরা এমন হুমকি দিয়ে ফোন করে এক হতভাগা বাবাকে তার ছেলেকে ফেরত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। গত ১৭ নভেম্বর রাজধানীর হাজীপাড়া থেকে
অপহৃত হন আরিফ নামে এক যুবক। এর পর ৪ ডিসেম্বর আরিফকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে তার বাবা সাম-ই-আসাদকে দুর্বৃত্তরা ফোন (০১৯৪৯৭৩৮৫৯৫) করে। আরও তিন দফা একই নম্বর থেকে ফোন করে আরিফকে
পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদ পাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু আরিফকে পাইয়ে দেওয়া নয়, নিখোঁজ হওয়া আরও একাধিক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে টাকার বিনিময়ে তাদের স্বজনদের পাইয়ে দেওয়ার কথা বলছে একটি চক্র। এমন অভাবনীয় ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে একের পর এক রহস্যজনক নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার পর আবার কারও কারও মিলছে লাশ। ভুক্তভোগী অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাদের স্বজনদের তুলে নেওয়া হয়েছে। মামলা কিংবা জিডি করা হলেও পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিখোঁজ ও পরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলেও তদন্তকাজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। স্বজনদের দীর্ঘদিনেও না পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মাঝেও চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
'টাকা দিবি, নইলে লাশ যাবে আশুলিয়ায়' : গত ১৭ নভেম্বর রমনা থানা ডিআইটি রোডের ১/২ পশ্চিম হাজিপাড়ার 'গ্রামীণ ঐতিহ্য' নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে আরিফ হোসেন নামে এক যুবককে অপহরণ করা হয়। তাকে সাদা একটি মাইক্রেবাসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আরিফের বাবা সাম-ই-সামাদ সমকালকে বলেন, ঘটনার দিন রমনা থানায় অপহরণের ব্যাপারে একটি জিডি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে আরিফের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ ছিল। সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আমার স্ত্রী আরিফের নম্বরে কল দিলে ফোন নম্বরটি খোলা পায়। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে আরিফকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে। একই নম্বর থেকে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ফোন করে বলা হয়, টাকার সংগ্রহ করেছিস? টাকা না দিলে তোর ছেলের লাশ যাবে আশুলিয়ায়। পুলিশ-র্যাব বা সংবাদ কর্মীদের জানালে তোর ছোট ছেলেকে তুলে নেওয়া হবে।
ছেলেকে ফেরত পাওয়ার আশায় হুমকিদাতাদের নির্দেশমতো ৪ লাখ সংগ্রহ করেন আরিফের বাবা। এরপর দুর্বৃত্তদের কথা মতো ছেলেকে ফেরত পেতে হাজীপাড়া বালুর মাঠে যান। তবে ছেলেকে ফেরত পাননি। এরপর দুর্বৃত্তদের ফোন নম্বর র্যাবের কাছে জানানো হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাব। বড় ছেলেকে ফিরে না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আরিফের বাবা। ভয়ে ছোট ছেলে তামজীদ হাসানকে পড়াশোনা বন্ধ রেখে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
'ফেরত আনার দায়িত্ব আমার' : গত ২৮ নভেম্বর খুলনায় বিএনপির রোডমার্চ থেকে ঢাকায় ফেরার পর হাতিরপুল এলাকা থেকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তুলে নিয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে আল আমিন ও মাসুম হোসেনকে। ঘটনার ১০ দিন পর ধলেশ্বরী নদী পুলিশ দুটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। ওই লাশের একটি ইসমাইল হোসেনের। নিখোঁজের পর ৮ ডিসেম্বর র্যাবের সোর্স পরিচয়ে টুন্ডা রহিম নামে এক ব্যক্তি ফোন করে শামীম ও অপর দু'জনকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। টুন্ডা রহিম নামের ওই ব্যক্তি শামীমের পরিবারকে বলেন, ওদের ফেরত আনার দায়িত্ব আমার। ৭ লাখ টাকা দেওয়া হলে তিনজন প্রাণে রক্ষা পাবে। এক কার্যালয়ে ওদের তিনজনকে আটকে রাখা হয়েছে। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে ওদের থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
শামীমের ভাই সুমন সমকালকে বলেন, টুন্ডা রহিম র্যাবের সোর্স পরিচয়ে ফোন করে (০১৬৮৩১৭৭২৭৫) ৭ লাখ টাকা দাবি করেছিল। আমরা অনেক কষ্ট করে তিন পরিবার মিলে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছিলাম। তবে পরে টুন্ডা রহিমের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসমাইলের মামা খালেক বলেন, ইসমাইলের লাশ মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে উদ্ধার করে দাফন করার সময় মোবাইলে ফোন করে টুন্ডা রহিম বলে, ভাগ্নের লাশ মনে করে কার লাশ দাফন করছ। টাকা দাও তোমার ভাগ্নেকে জীবিত এনে দিচ্ছি।
'ভাবি টাকা নিয়ে এহনই আইয়েন' : হাতিরপুল থেকে ব্যবসায়ী মাসুম নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী হাওয়া বেগম পাগলপ্রায়। স্বামীকে খুঁজে পেতে পুলিশ-র্যাব-হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছেন। হাওয়া বেগম সমকালকে জানান, অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে হঠাৎ রাতে কল আসে। ফোনের ও-পাশ থেকে বলা হয়, 'ভাবি মাসুম এখনও ভালো আছে। আপনারা এখনই টাকা নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন। যারা মাসুমকে আটকে রেখেছে, তাদের সঙ্গে আপনাদের মধ্যস্থতা করে দেব।' হাওয়া বেগম জানান, ভাই আমি রাতে কীভাবে সেখানে যাব। আমার স্বামীর বড় ভাইও (ভাশুর) অসুস্থ। এরপর আবারও ওই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, কাল সকালে আপনারা জেলখানায় খবর নেবেন। মাসুমকে কারাগারে পাঠানো হবে। ৭ লাখ টাকা দেওয়া হলে আপনার স্বামীকে মুক্ত করতে পারবেন। পরদিন কারাগারে খোঁজ নেওয়া হলেও মাসুমকে পাওয়া যায়নি।
পাইয়ে দেওয়ার ফাঁদ পাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু আরিফকে পাইয়ে দেওয়া নয়, নিখোঁজ হওয়া আরও একাধিক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফোন করে টাকার বিনিময়ে তাদের স্বজনদের পাইয়ে দেওয়ার কথা বলছে একটি চক্র। এমন অভাবনীয় ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে একের পর এক রহস্যজনক নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার পর আবার কারও কারও মিলছে লাশ। ভুক্তভোগী অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাদের স্বজনদের তুলে নেওয়া হয়েছে। মামলা কিংবা জিডি করা হলেও পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিখোঁজ ও পরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলেও তদন্তকাজ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। স্বজনদের দীর্ঘদিনেও না পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মাঝেও চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
'টাকা দিবি, নইলে লাশ যাবে আশুলিয়ায়' : গত ১৭ নভেম্বর রমনা থানা ডিআইটি রোডের ১/২ পশ্চিম হাজিপাড়ার 'গ্রামীণ ঐতিহ্য' নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে আরিফ হোসেন নামে এক যুবককে অপহরণ করা হয়। তাকে সাদা একটি মাইক্রেবাসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আরিফের বাবা সাম-ই-সামাদ সমকালকে বলেন, ঘটনার দিন রমনা থানায় অপহরণের ব্যাপারে একটি জিডি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে আরিফের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ ছিল। সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আমার স্ত্রী আরিফের নম্বরে কল দিলে ফোন নম্বরটি খোলা পায়। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে আরিফকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে। একই নম্বর থেকে ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ফোন করে বলা হয়, টাকার সংগ্রহ করেছিস? টাকা না দিলে তোর ছেলের লাশ যাবে আশুলিয়ায়। পুলিশ-র্যাব বা সংবাদ কর্মীদের জানালে তোর ছোট ছেলেকে তুলে নেওয়া হবে।
ছেলেকে ফেরত পাওয়ার আশায় হুমকিদাতাদের নির্দেশমতো ৪ লাখ সংগ্রহ করেন আরিফের বাবা। এরপর দুর্বৃত্তদের কথা মতো ছেলেকে ফেরত পেতে হাজীপাড়া বালুর মাঠে যান। তবে ছেলেকে ফেরত পাননি। এরপর দুর্বৃত্তদের ফোন নম্বর র্যাবের কাছে জানানো হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাব। বড় ছেলেকে ফিরে না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আরিফের বাবা। ভয়ে ছোট ছেলে তামজীদ হাসানকে পড়াশোনা বন্ধ রেখে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
'ফেরত আনার দায়িত্ব আমার' : গত ২৮ নভেম্বর খুলনায় বিএনপির রোডমার্চ থেকে ঢাকায় ফেরার পর হাতিরপুল এলাকা থেকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তুলে নিয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান সোহেল, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে আল আমিন ও মাসুম হোসেনকে। ঘটনার ১০ দিন পর ধলেশ্বরী নদী পুলিশ দুটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। ওই লাশের একটি ইসমাইল হোসেনের। নিখোঁজের পর ৮ ডিসেম্বর র্যাবের সোর্স পরিচয়ে টুন্ডা রহিম নামে এক ব্যক্তি ফোন করে শামীম ও অপর দু'জনকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন। টুন্ডা রহিম নামের ওই ব্যক্তি শামীমের পরিবারকে বলেন, ওদের ফেরত আনার দায়িত্ব আমার। ৭ লাখ টাকা দেওয়া হলে তিনজন প্রাণে রক্ষা পাবে। এক কার্যালয়ে ওদের তিনজনকে আটকে রাখা হয়েছে। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে ওদের থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
শামীমের ভাই সুমন সমকালকে বলেন, টুন্ডা রহিম র্যাবের সোর্স পরিচয়ে ফোন করে (০১৬৮৩১৭৭২৭৫) ৭ লাখ টাকা দাবি করেছিল। আমরা অনেক কষ্ট করে তিন পরিবার মিলে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছিলাম। তবে পরে টুন্ডা রহিমের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসমাইলের মামা খালেক বলেন, ইসমাইলের লাশ মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে উদ্ধার করে দাফন করার সময় মোবাইলে ফোন করে টুন্ডা রহিম বলে, ভাগ্নের লাশ মনে করে কার লাশ দাফন করছ। টাকা দাও তোমার ভাগ্নেকে জীবিত এনে দিচ্ছি।
'ভাবি টাকা নিয়ে এহনই আইয়েন' : হাতিরপুল থেকে ব্যবসায়ী মাসুম নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী হাওয়া বেগম পাগলপ্রায়। স্বামীকে খুঁজে পেতে পুলিশ-র্যাব-হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছেন। হাওয়া বেগম সমকালকে জানান, অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে হঠাৎ রাতে কল আসে। ফোনের ও-পাশ থেকে বলা হয়, 'ভাবি মাসুম এখনও ভালো আছে। আপনারা এখনই টাকা নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন। যারা মাসুমকে আটকে রেখেছে, তাদের সঙ্গে আপনাদের মধ্যস্থতা করে দেব।' হাওয়া বেগম জানান, ভাই আমি রাতে কীভাবে সেখানে যাব। আমার স্বামীর বড় ভাইও (ভাশুর) অসুস্থ। এরপর আবারও ওই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, কাল সকালে আপনারা জেলখানায় খবর নেবেন। মাসুমকে কারাগারে পাঠানো হবে। ৭ লাখ টাকা দেওয়া হলে আপনার স্বামীকে মুক্ত করতে পারবেন। পরদিন কারাগারে খোঁজ নেওয়া হলেও মাসুমকে পাওয়া যায়নি।
No comments