এবার আগাম তীব্র শীত by ইফতেখার মাহমুদ
এবার শীতকাল শুরু হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সাইবেরিয়া থেকে আগেভাগে আসা হিমেল হাওয়ার কারণে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ওই শীতল বায়ু এবং বাতাসে অতিরিক্ত ধুলার কারণে এবার কুয়াশাও বেশি। চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীত ও শীতজনিত রোগ বেড়ে গেছে এবং এসব রোগে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন স্থানে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া
গেছে। শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা ও আলুর চারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ ডিসেম্বরের শেষ দিকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার আভাস দিলেও তা শুরু হয়েছে মাঝামাঝি থেকেই। এ ছাড়া আবহাওয়াবিদেরা এবার অপেক্ষাকৃত কম শীত পড়বে বলে আভাস দিলেও ঘটেছে উল্টো।
আবহাওয়া দপ্তরের সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের পর দেশে এ রকম টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা এবারই প্রথম। সাত দিন ধরে চলা এই শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন চলতে পারে। দিনের বেলা সূর্যের দেখা না পাওয়ায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ স্থানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় ১১ ডিগ্রি, যশোরে ৯ দশমিক ২ ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ১৭ ডিসেম্বর যশোরে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ আলম জানান, এবার ডিসেম্বরের শুরুতে মনে হয়েছিল শীত তীব্র হবে না। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে, ১৭ ডিসেম্বর তা শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়। সাইবেরিয়া থেকে আগে চলে আসা হিমেল হাওয়ার গতি বেশি থাকায় এবার শীত বেশি।
আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, কুয়াশা সহসা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবার শীতের তীব্রতা একটু বেশি হবে। আবহাওয়া দপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষে সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল হাওয়া হিমালয়ে বাধা পেয়ে নেপাল-ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। সাধারণত ১০০ মাইলবেগে আসা এই হাওয়া এখানে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এবার সাইবেরিয়ার ওই হিমেল হাওয়া এসেছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এবং ১৮০ মাইলবেগে। ৩৪ হাজার ফুট ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই হাওয়ার তীব্রতার কারণে জলীয় বাষ্প ওপরের দিকে উঠতে পারছে না। ফলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এতে সব জলীয় বাষ্প ধূলিকণার ওপর ভর করে দৃষ্টিসীমায় কুয়াশা আকারে ভাসছে। আর কুয়াশার বাধায় সূর্যের আলো আসতে পারছে না। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাও সূর্যের আলো না আসা, রাতের কুয়াশা এবং সাইবেরিয়া থেকে আসা হাওয়া মিলেমিশে শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
ঘন কুয়াশার আরেক কারণ: বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘন কুয়াশার আরেক কারণ হচ্ছে বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা। তাঁদের মতে, কম গাছপালা, বৃক্ষ নিধনের ফলে মাটি থেকে ধুলা ওঠার পরিমাণ বৃদ্ধি, ইটভাটা ও ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের কারণে বাতাসে ধোঁয়া ও ধুলার পরিমাণ বাড়ছে।
সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণে ধুলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার পরিমাণ বাড়ছে।
এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা ও আলুর চারার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা এক সপ্তাহ উত্তরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় বোরোবীজে ‘ঠান্ডাজনিত রোগ’ (কোল্ড ইনজুরি) দেখা দিচ্ছে। একই কারণে আলুর চারায় ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ জন্য তাঁরা কৃষকদের জমিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এ কে জি মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরে দেশে কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। এতে দেশের প্রধান ফসল বোরো ধানের বীজতলা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখনই কৃষকেরা যদি চারার গোড়ায় পানি ধরে না রাখেন এবং পলিথিন দিয়ে বীজতলা রক্ষা না করেন, তাহলে মোট উৎপাদন কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসাবে, অক্টোবরে দেশে স্বাভাবিকভাবে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে এ বছর অক্টোবরে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মিলিয়ে যেখানে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, সেখানে চলতি বছর এই দুই মাসে বৃষ্টিপাতই হয়নি।
তবে চলমান আবহাওয়ায় শীতকালীন সবজি ও গমের উৎপাদন ভালো হবে।
আবহাওয়া দপ্তরের সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের পর দেশে এ রকম টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা এবারই প্রথম। সাত দিন ধরে চলা এই শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন চলতে পারে। দিনের বেলা সূর্যের দেখা না পাওয়ায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ স্থানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় ১১ ডিগ্রি, যশোরে ৯ দশমিক ২ ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ১৭ ডিসেম্বর যশোরে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ আলম জানান, এবার ডিসেম্বরের শুরুতে মনে হয়েছিল শীত তীব্র হবে না। কিন্তু ১৩ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে, ১৭ ডিসেম্বর তা শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়। সাইবেরিয়া থেকে আগে চলে আসা হিমেল হাওয়ার গতি বেশি থাকায় এবার শীত বেশি।
আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, কুয়াশা সহসা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবার শীতের তীব্রতা একটু বেশি হবে। আবহাওয়া দপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষে সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল হাওয়া হিমালয়ে বাধা পেয়ে নেপাল-ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। সাধারণত ১০০ মাইলবেগে আসা এই হাওয়া এখানে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এবার সাইবেরিয়ার ওই হিমেল হাওয়া এসেছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এবং ১৮০ মাইলবেগে। ৩৪ হাজার ফুট ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই হাওয়ার তীব্রতার কারণে জলীয় বাষ্প ওপরের দিকে উঠতে পারছে না। ফলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এতে সব জলীয় বাষ্প ধূলিকণার ওপর ভর করে দৃষ্টিসীমায় কুয়াশা আকারে ভাসছে। আর কুয়াশার বাধায় সূর্যের আলো আসতে পারছে না। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাও সূর্যের আলো না আসা, রাতের কুয়াশা এবং সাইবেরিয়া থেকে আসা হাওয়া মিলেমিশে শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
ঘন কুয়াশার আরেক কারণ: বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘন কুয়াশার আরেক কারণ হচ্ছে বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা। তাঁদের মতে, কম গাছপালা, বৃক্ষ নিধনের ফলে মাটি থেকে ধুলা ওঠার পরিমাণ বৃদ্ধি, ইটভাটা ও ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের কারণে বাতাসে ধোঁয়া ও ধুলার পরিমাণ বাড়ছে।
সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয়সহ নানা কারণে ধুলার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার পরিমাণ বাড়ছে।
এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা ও আলুর চারার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা এক সপ্তাহ উত্তরাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় বোরোবীজে ‘ঠান্ডাজনিত রোগ’ (কোল্ড ইনজুরি) দেখা দিচ্ছে। একই কারণে আলুর চারায় ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ জন্য তাঁরা কৃষকদের জমিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এ কে জি মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরে দেশে কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। এতে দেশের প্রধান ফসল বোরো ধানের বীজতলা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখনই কৃষকেরা যদি চারার গোড়ায় পানি ধরে না রাখেন এবং পলিথিন দিয়ে বীজতলা রক্ষা না করেন, তাহলে মোট উৎপাদন কমে যেতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসাবে, অক্টোবরে দেশে স্বাভাবিকভাবে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে এ বছর অক্টোবরে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মিলিয়ে যেখানে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, সেখানে চলতি বছর এই দুই মাসে বৃষ্টিপাতই হয়নি।
তবে চলমান আবহাওয়ায় শীতকালীন সবজি ও গমের উৎপাদন ভালো হবে।
No comments